আজ ৭ এপ্রিল ২০২০ পর্যন্ত করোনা ভাইরাস দ্বারা পৃথিবীব্যাপী আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ৪ মিলিয়ন মানুষ, মারা গেছে প্রায় ২,৬৭০০০ মানুষ। এক্টিভ কেস ২ মিলিয়নেরও বেশি। এটা অফিসিয়াল সংখ্যা, প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হওয়া বিচিত্র নয়। এথেকে এটা সহজেই অনুমান করা যাচ্ছে সহসাই করোনা ভাইরাস আমাদের সবুজ পৃথিবী থেকে বিদায় নিচ্ছে না। ভ্যাক্সিন আবিস্কার এবং তার সফল প্রয়োগ ইত্যাদি সবকিছু মিলে অনেক সময়ের ব্যাপার। এইসময়টুকু আমাদের করোনা ভাইরাসকে নিয়েই আমাদের চলতে হবে। আমাদেরকে মানিয়ে নিতে হবে, আমাদেরকে শিখে নিতে হবে কিভাবে এই ভাইরাসকে আমাদের সমাজে রেখেই আমরা সুস্থ্য জীবন-যাপন করতে পারি।
গত ৩/৪ মাসে অলরেডি আমরা করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর গঠন, কিভাবে কাজ করে, এর অনুসর্গ উপসর্গ জেনে গেছি। হোম কুয়ারেন্টাইন, লক ডাউন, আই সি ইউ, ভেন্টিলেটর এই সব শব্দের সাথে আমরা এখন অতিপরিচিত হয়ে উঠেছি। সুতরাং এগুলো নিয়ে আর বিস্তর আলোচনায় না যাই। করোনা ভাইরাস এর সংক্রমণকে কেন এপিডেমিক না বলে প্যান্ডোমিক বলা হচ্ছে তা জানার জন্য আমার এই ব্লগ পড়তে পারেন।
প্রথমেই আমারা বুঝতে চেষ্টা করি এই ভাইরাস যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় তাহলে আমাদের ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক জীবনে এর কি প্রভাব পরতে পারে। তারপর আলোচনা করব ওই পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমরা কি কি পদক্ষেপ নিতে পারি।
একটা কথা মনে রাখবেন, বাংলাদেশের মত জনবহুল এবং দরিদ্র দেশে এবস্যলিউট লক ডাউন কখনই সম্ভব না, লক ডাউন নামে যা চলছে তা শুধু মাত্র ভাইরাসের সংক্রমণের গতিকে ধীর করার একটা প্রচেষ্টা বা প্রক্রিয়া মাত্র। এর কারণ হিসেবে কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করতে পারি- আমাদের মোট জনসংখ্যার একটা বড় অংশ দরিদ্র যারা দিন আনে দিন খায় প্রকৃতির, একটা অংশ এখনও শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত এবং সর্বোপরি জাতি হিসেবে আমরা খুবই অসচেতন- আমরা কোনকিছুকেই গুরুত্বসহকারে নেইনা। আমার ধারণা বাংলাদেশ সরকার এবস্যলিউট লক ডাউনের পরবর্তী প্রভাব সামাল দিতে না পারার ভয় থেকেই বিভিন্ন সেক্টর শিথিল করে দিচ্ছে এবং ভবিষ্যতে আরও দিবে। যাই হোক এটা আমাদের আলোচনার বিষয় নয়। আমাদের আলোচনার বিষয় হল- আজ অথবা কাল এই লক ডাউন উঠে যাবে- আমরা চাইব আবার কর্মচঞ্চল হয়ে উঠতে, কিন্তু আমরা কি চাইলেই তা পারব? না, তা পারব না। আমাদের জীবন ধারাকে বদলে নিতে হবে, কিছু পেশা হয়ত আপাতত আর থাকবে না যতদিন করোনা ভাইরাস বিদায় না নেয় কিংবা থাকলেও সীমিত আকারে থাকবে, কিছু নতুন পেশার উদ্ভব হতে পারে-দ্রুত সেই পেশায় পারদর্শী হতে হবে। কিছু পেশায় আর আগের মত আয় নাও থাকতে পারে।
আপনি যদি অঢেল সম্পত্তির মালিক না হন, তাহলে আজই আপনাকে অপ্রয়োজনীয় জিনিষ কেনা থেকে বিরত থাকুন। আপনার প্রতিটি পয়সা শুধুমাত্র প্রয়োজনেই খরচ করুন।
বাংলাদেশের অতীতের সব দুর্ভিক্ষের রেকর্ড জানার জন্য পড়ুন আমার এই ব্লগ।
আমরা সহজেই বুঝতে পারছি, লোক সমাগম হয় এরকম সকল কার্যকলাপ আগামী ২ বছর বা তার চেয়েও বেশি সময় বন্ধ থাকছে, তার মানে যে কোন রকম সভা-সমিতি, কালচারাল এক্টিভিটি, বিয়ে সাদির প্রোগ্রাম, ফুটবল-ক্রিকেট সহ যেকোন খেলা সব কিছুই বন্ধ থাকবে। এরমানে এইসব কাজের সাথে সম্পৃক্ত একটা বিশাল জনগোষ্ঠী তাদের চাকরি হারাবে কিংবা যারা ব্যবসায় সংশ্লিষ্ট তারা ব্যবসা হারাবে।
মানুষজন আগামী ২ বছর ঘুরতে যাবে খুব কম, হয়ত যাবেই না। অতি উৎসাহীরা কিছু মানুষ হয়তবা যেতে পারে। এমন কি প্রায় শতভাগ লোক নিজস্ব লোকালয় ছেড়ে অন্য কোথাও যাবার সম্ভাবনা নাই। এক্ষেত্রে বলাই যায়- দেশের যত পর্যটন এলাকা আছে সেখানকার অনেক মানুষ কাজ হারাবে একই সাথে পরিবহন শ্রমিকদেরও অবস্থা খারাপের দিকে যাবে।
মানুষ অপ্রয়োজনে বাসা থেকে বের হবেনা, এর বাড়ি, তার বাড়ি যাওয়াও অনেক কমে যাবে। মানুষ শুধু মাত্র বিশেষ প্রয়োজনেই বের হবে। আত্মীয়-স্বজনের সাথে দেখা সাক্ষাত সহ সব কিছু ভিডিও কলের মাধ্যমে হবে। ভয়েস কলের পাশাপাশি ডাটার ব্যবহার বাড়লেও কিছু পেশাজীবি মানুষ তাদের কাজ হারাবে, কিছু ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হবে।
সাধারন মানুষের হাতে টাকা-পয়সা কমতে থাকবে। বিলাসবহুল পণ্যের বেচাকেনা কমে যাবে, এলাকার মোড়ে ছোট্ট দোকান দিয়ে যারা মোবাইল ফোন বেচে বেশ ভালই সংসার চালাচ্ছিল, তাদের হয়তবা দোকান গুটিয়ে নিতে হতে পারে।
লক ডাউন শুরুর পর থেকে (কোন কোন কোম্পানি আগে থেকেই) ওয়ার্ক এট হোম বা ঘরে বসেই কাজ করার একটা প্রচলন চালু করে দিয়েছে। তারমানে রিমোটলি কাজের প্রবনতা বেড়ে যাবে এবং অনলাইন বেজড বিজনেস এর প্রবনতাও ব্যাপক হারে বেড়ে যেতে পারে। মানুষজন মার্কেটে না গিয়ে বাসায় বসে ওয়ার্ডার দিতেই বেশি সচ্ছন্দ্য বোধ করবে। এতে ইন্টারনেট বেজড পেশাজীবিদের কাজের পরিধি বেড়ে যেতে পারে। সুতরাং যারা বর্তমান কাজ থেকে অব্যাহতি পাবেন এখনই সময় দ্রুত নিজেকে তৈরি করে নেয়া। যাদের ব্যবসার সাথে অনলাইনের সম্পৃক্ততা নাই তাদের উচিত হবে তাদের প্রোডাক্টকে অনলাইনে তাদের টার্গেট কাস্টমারের কাছে পরিচিত করে দেয়া। যেসব পরিবহন শ্রমিক কিংবা সাধারণ কর্মী চাকুরি হারাবেন তারাও প্রোডাক্ট ডেলিভারির সাথে সম্পৃক্ত হতে পারে। যেমন পাঠাও, ফুডপান্ডা ইত্যাদি।
এখন যেহেতু বাসায় বসেই আছেন, আপনার ইন্টারনেট রিলেটেড স্কিল্গুলো আরেকবার ঝালিয়ে নিন। অথবা আপনার যেই স্কিল্গুলো আছে তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিন, নিজের মার্কেটিং আপনি নিজেই করুন, নিজের প্রচারনা নিজেই করুন অনলাইনে। আপনি ভাল ব্যায়াম পারলে ইউটিউব চ্যানেল খুলুন, সেখান থেকেও আয় করা সম্ভব। ভাল রান্না জানলে সেটাও কাজে লাগান। মোটকথা সামনের কঠিন সময়ের জন্য এখন থেকেই নিজেকে প্রস্তুত করুন ইনশাল্লাহ।
অনলাইনে আপনি কিভাবে আয় করতে পারেন আসুন তার শুরুটা করি, নিজেকে কিভাবে তৈরি করবেন তার জন্য আমার এই ব্লগটি পড়ুন। হয়ত কাজে লাগতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে শহরের অধিকাংশ লোক যারা গায়ে খেটে খায় তারা গ্রামে চলে যাবে, তারাও নিদারুন অর্থকষ্টে থাকবে। যাদের সামান্য জমিও আছে তাদের উচিত হবে পুরা জমিটা ইউটিলাইজ করা। বসে না থেকে এখনই শুরু করা উচিত। চাষবাসের মাধ্যমে সব্জি উৎপাদন করলেও বিপদের সময় কাজে লাগবে। এই দুঃসময়টা পার করে দিতে পারলে ইনশাল্লাহ সামনে আবার সব আগেরমত স্বাভাবিক হলে শহরে চলে আসতে পারবে তারা।
এবার আসুন লকডাউন উঠে গেলে আপনি কিভাবে নিজেকে নিরাপদ রাখবেন, একই সাথে নিজের পরিবারকে সেই আলোচনা করা যাক। আপনাকে অবশ্যই কিছু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। আল্লাহ সবকিছুর মালিক, তারপরও আমাদেরকে চেষ্টা করে যেতে হবে। প্রতিদিন কিছু কিছু ব্যায়াম করুন। যেটুকু পারেন, যা পারেন। প্রতিদিন কিছুটা সময় ছাদে কাটান। গায়ে একটু রোদ লাগান। খাবারে ভিটামিন সি আছে এমন খাবার আপনার মেনুতে রাখুন। এতে আপনার ইমিউনিটি সিস্টেম শক্তিশালী হবে। কি কি খাবারে ভিটামিন সি আছে, আপনার জন্য কতটুকু দরকার সেটা জানার জন্য এই পোস্ট পড়ুন।সব্জি জাতীয় খাবার বেশি খান। পর্যাপ্ত ঘুমান, মানষিকভাবে সুস্থ থাকার চেষ্টা করুন। নিজেদের মাঝে বাসায় প্রচুর কথা বলুন, এটা মানষিকভাবে সুস্থ থাকতে আপনাকে সহযোগিতা করবে। এসি তে থাকার অভ্যাস থাকলে সেটা ত্যাগ করুন।
এছাড়া প্রতিদিন ২/৩ বার মসলা চা খান। লবংগ, দারুচিনি, তেজপাতা, মধু, আদা, কালোজিরা ইত্যাদি দিয়ে চা বানান। কিভাবে বানাবেন? আমার এই ব্লগে পড়ে দেখুন, কাজে দিবে। ভিডিও দেখতে চাইলে আমার ইউটিউব চ্যানেলে গিয়ে দেখে আসতে পারেন। সাবস্ক্রাইব করতে ভুলবেন না।
খাবারে হলুদ, জিরা, ধনিয়া বাড়িয়ে দিন। এগুলো ন্যাচারাল এন্টিবায়োটিক। সুতরাং মসলাযুক্ত খাবার বাসায় প্রস্তুত করে খান। বাইরের খাবার সম্পূর্ণ বাদ দিন।
বাইরে বের হলে মাস্ক, গ্লভস পরুন। পকেটে স্যানিটাইজার রাখুন। নাকে, মুখে, চোখে হাত দেবার অভ্যাস ত্যাগ করুন। বার বার হাত ধুয়ে ফেলুন। এগুলো অভ্যাসে পরিণত করে ফেলুন। আপনার আসেপাশে করোনা রুগি থাকবেই, সুতরাং আপনাকে সতর্ক থাকতেই হবে। নিজেদের লাইফ স্টাইলকে চেঞ্জ করে ফেলতে হবে। উপায় নাই ভাই। বাঁচতে হলে এগুলো লাগবেই।
বাসায় মুরুব্বী শ্রেণির লোকজন থাকলে তাদের এক্সট্রা কেয়ার নিন। তাদের বাইরে বের হওয়া একদম বন্ধ করে দিন। আপনার ইমিউন সিস্টেম যতটা শক্তিশালী তারটা ততটা নাও হতে পারে, সে কিন্তু সহজেই আক্রান্ত হবে। কিংবা আপনি খাবার খেয়ে নিজেকে যতটা তৈরি করতে পারবেন তার ক্ষেত্রে সেটা নাও হতে পারে। সুতরাং তাদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কেয়ার নিন।
যেহেতু আমি ডাক্তার কিংবা এই ব্যাপারে অভিজ্ঞ নই আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে যেটুকু কুলায় আপনাদের মাঝে শেয়ার করার উদ্দেশ্যে এটা লিখেছি। আপনিও চাইলে এটা শেয়ার করে অন্যদেরকে জানাতে পারেন। এতে তারাও উপকৃত হতে পারেন। কিছু ভুল থাকলে কিংবা কোন কিছু বাদ দিয়ে থাকলে নিচের কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না। আমি পরে এডিট করে বিয়োগ কিংবা যোগ করে দিব। ধন্যবাদ।
👌 অত্যন্ত সময় উপযোগী ১ টি আর্টিকেল। ধন্যবাদ
ধন্যবাদ কমেন্ট করার জন্য। ফেসবুকে শেয়ার দিয়ে সবাইকে জানানোর অনুরোধ রইল।
ভাই আপনার মুখ ঢাকা কেনো? আপনি কি মানবসমাজে মুখ দেখাতে চান্না????
না ভাই, ব্যাপারটা তা নয়। এটা মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করতেছিলাম- ধুলা-বালি থেকে বাঁচার জন্য, সেই সময় তোলা ছবি। ধন্যবাদ কমেন্ট করার জন্য। ভাল থাকবেন।