কফি আবিস্কার

 

আচ্ছা আপনাদের সবার জীবনেই নিশ্চয় এমন অনেক দিন আছে যখন অনেক ক্লান্ত অনুভব করেন, কাজের ব্যস্ততা আর চাপে অসহ্য লাগে, শরীর শ্রান্ত হয়ে পড়ে, প্রচন্ড মাথা ব্যথা করে, সবকিছু অসহ্য লাগে। কিন্তু বিশ্রাম নেয়ার সময়টুকুও নেই আপনার। কখনো কি ভেবেছেন, এ অবস্থায় আপনার জন্য সাময়িক প্রশান্তি দিতে পারে এমন কিছুর কথা। অথবা ঝুম বৃষ্টি পড়ছে। আপনি বারান্দায় বা ছাদে দাড়িয়ে আছেন এবং প্রকৃতির অমায়িক সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। তখন আপনারা কি এমন কিছু ভাবেন যে এই ঠান্ডা আবহাওয়ার মাঝে কিছুটা উষ্ণতা সঙ্গী হলে কেমন হবে।এই দুই ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে যে জিনিসটি আপনার ব্যস্ততায় আপনাকে প্রশান্তি দিবে এবং অলস সময়কে উপভোগ্য বানাবে তা হচ্ছে এক কাপ ধোঁয়া উঠা সুমিষ্ট কফি। কফি হচ্ছে এমন একটি পানীয় যা আপনার শরীর এবং মনকে নিমিষেই চাংঙ্গা করে দিবে এবং আপনার মধ্যে প্রানবন্ত আমেজের সৃষ্টি করবে। হোক সেটা আপনার ক্লান্ত অফিস সময়ে পান করা কফি কিংবা প্রকৃতির সাথে কাটানো সময়ে আয়েশ করে পান করা কফি। কিন্তু কখনও ভেবেছেন এই কফি আবিস্কার হল কিভাবে?

কফি সমাচার ব্লগে কফি নিয়ে আমি যে বিষয়গুলোর অবতারনা করব তা এক ঝলক দেখে নেই-

  • কফি আবিস্কারের ইতিহাস।
  • কফির বিভিন্ন প্রকারভেদ।
  • কফির উপকারিতা এবং অপকারিতা।
  • কফি নিয়ে বিভিন্ন মজার তথ্য।
  • কিভাবে সহজেই বাসায় কফি বানাতে পারবেন।

তো আজকের ব্লগে আমি শুধু কফির উৎপত্তির ইতিহাস আপনাদের সামনে তুলে ধরব। আসুন শুরু করা যাক।

কফি আবিস্কার কে করেন?

কফির উৎপত্তি নিয়ে কয়েকটি প্রচলিত ইতিহাস আছে। একটি হচ্ছে ইথিওপিয়ার একজন রাখাল বালকের কাহিনী, এবং অন্যটি হচ্ছে ইয়েমেনের এক সুফির কাহিনী। আবার আছে একজন শেখের কাহিনী।  তবে যিনিই কফির প্রথম আবিষ্কারক হোক না কেন, আজকে এই প্রচলিত সব ইতিহাসের কথাই আমি আপনাদেরকে জানাবো।

ইথিওপিয়ার মুসলিম রাখাল বালক এবং কফি আবিস্কার

ইতিহাস থেকে পাওয়া যায়, নবম শতকে আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণ ইথিওপিয়ায় কাফা অঞ্চলে খালেদ নামক এক আরব রাখাল বালক ছিল। একদিন ছাগল চরানোর সময় সে দেখতে পেল, তার ছাগল গুলো অন্যরকম আচরন করছে। অনুসন্ধানের পরে সে খুঁজে পেল যে লাল রঙের ছোট ছোট জামের মত কিছু ফল খাওয়ার কারনেই তার ছাগলগুলো এমন করছিল।

এরপর খালিদ এই ফল সংগ্রহ করে এবং সাথে সাথে সেই ফল নিয়ে মসজিদের ইমামের কাছে হাজির হয়। ফলগুলো কাঁচা খাওয়া সম্ভব ছিল না বিধায় সেই ইমাম ফলগুলোকে আগুনে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে দেখা যায় যে এই ফলগুলো থেকে দারুণ সুগন্ধ বের হয়। পরে ইমাম এবং তার ছাত্ররা এ ফল সিদ্ধ করে দেখার চিন্তা করে। এরপর এই ফল সিদ্ধ করে পানীয় তৈরি করেছিল এবং এভাবেই প্রথম কফির আবিষ্কার হয়েছিল বলে ধারনা করা হয়। সে সময়ের অনেক পরে, এই কফি ইয়েমেনে রপ্তানি করা শুরু হয়েছিল।

ইয়েমেনের একজন সুফিই কি কফি আবিস্কার করেন?

কফির উৎপত্তির ইতিহাসের অন্য প্রচলিত কাহিনীটি হচ্ছে ইয়েমেনের একজন সুফির নামে। অনেকে বলেন, ইয়েমেনের ঘোতুল আব্দুল নুরুদ্দীন আবুল আল-হাসান আল-সাদিলি নামক এক সুফি সাধকই প্রথম কফি আবিষ্কার করেছিলেন। এই সুফি সাধক একবার ইথিওপিয়ায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। তখন তিনি সুন্দর একটি পাখিকে নাম না জানা লাল রঙের একটি ফল খেতে দেখেন। ফলটি দেখে তিনি কৌতুহল প্রকাশ করেন এবং নিজে সেটাকে খেয়ে দেখেন। এরপর অনেক চাঙ্গা এবং সতেজ অনুভব করার পর তিনি সিদ্ধ পানিতে কফি বানানের কথা ভাবেন।

কফি আবিস্কার-ইয়েমেনের শেখ

কফি নিয়ে আরো একটি কাহিনী প্রচলিত আছে। অনেকের মতে, ওমর নামের ইয়েমেনে একজন শেখ ছিল। তিনি অসুস্থ ব্যক্তিদের সুস্থ করতেন এবং এজন্য তার অনেক খ্যাতি ছিলো । একবার তাকে মোকা থেকে ওসাবের মরুভূমিতে নির্বাসন দেয়া হয়েছিল। তার নির্বাসনের সময়কার একদিন ক্ষুধার জ্বালায় ঘুরতে ঘুরতে তিনি কফিগাছের আবিষ্কার করেন। লাল রঙের ফলগুলো মুখে দেয়ার পর তিতা অনুভব হওয়ায় তিনি সেগুলোকে পুড়িয়ে ফেলেন। এরপর কোনোভাবে তা পানিতে মিশে গেলে দারুণ সুগন্ধ ছড়ায় এবং তা পান করার পর তিনি অনেক সতেজ অনুভব করেন। এরপর তিনি যখন এ আবিষ্কারের কথা প্রচার করেন তখন তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয় এবং তার এই উদ্ভাবিত পানীয় সকলে সাদরে গ্রহণ করে। এভাবেই কফির প্রচলন ঘটে।

কফি উৎপত্তির এই উপকথাগুলো অনেক প্রচলিত। পরবর্তী পর্বে ফিরে আসবো কফি সংক্রান্ত অন্যান্য মজার নতুন তথ্য নিয়ে। ভাল থাকুন, ধন্যবাদ সবাইকে।

Photo by Mike Kenneally on Unsplash

Previous articleHow to convert word to pdf file without online website help
Next articleজহির রায়হান- একজন শব্দের জাদুকর
আমি আমিনা খাতুন তিশা। আমি লিখালিখিতে অসামান্য কেউ না, তবে লিখতে ভালই লাগে। গদবাধা লেখালেখির চেয়ে আমি নিজের জীবনের কাহিনি বা গল্প লিখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। জীবনে কিছু ভালো করার ইচ্ছা আছে। জানি না কতটুকু সফল হব, তবে আশাহত হতে চাই না।