ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম

বর্তমান সময়ের অর্থনীতিতে ব্যাংক একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং তা শুধু রাষ্ট্রীয় নয় ব্যক্তিগত জীবনেও। তাই প্রত্যকেরই ব্যাংকে একটি একাউন্ট থাকাটা অনেক জরুরী। আর অনেকেই জানেন না ব্যাংকে কিভাবে একাউন্ট খুলতে হয়, ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে কি কি ডকুমেন্ট লাগে, কোথায় গিয়ে একাউন্ট খুলবেন, ব্যাংকে একাউন্ট খোলার সুবিধা অসুবিধা কি কি ইত্যাদি নানা বিষয়। এসব বিষয় নিয়েই আমাদের আজকের এই লেখা ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম, আশা করি কারও কারও হয়ত কাজে আসবে।

ব্যাংক একাউন্ট কেন খুলবেন

আপনার মনে প্রথম যে প্রশ্নটি আসবে তা হল, আপনি কেন ব্যাংক একাউন্ট খুলবেন? আপনার জীবনে ব্যাংক একাউন্টের কেন প্রয়োজন? আপনি যদি বেশ ভাল ভাবে চিন্তা করেন তাহলে ব্যাংক একাউন্ট থাকার কারণে নিচের সুবিধাগুলো দেখতে পাবেনঃ

আর্থিক নিরাপত্তাঃ ব্যাংক আপনার সঞ্চিত অর্থের আর্থিক নিরাপত্তা দেয়। আপনার জীবন ধারনের পর যে পরিমান টাকা আপনি সঞ্চয় করতে পারেন তা বাসার সিন্দুক কিংবা আলমারিতে রাখলে তা মোটেই নিরাপদ থাকেনা। যেকোন সময় চুরি কিংবা ডাকাতির কারণে আপনার এত কষ্টে অর্জিত টাকা নিমিষেই হারাতে পারেন। তাই, ব্যাংক আপনার টাকার নিরাপদ জায়গা। আপনি চাহিবা মাত্র আবার সেই টাকা যেকোন প্রয়োজনে চেকের মাধ্যমে অথবা অন্য উপায়ে পেয়ে যেতে পারেন। চেক লেখার নিয়ম জানতে এই ব্লগ পড়ুন।

স্বচ্ছ আর্থিক রেকর্ডঃ ব্যাংকে টাকা রাখলে আপনার টাকার একটি স্বচ্ছ আর্থিক রেকর্ড থাকে যা কিনা ব্যক্তিগত পর্যায়ে রাখা সম্ভব হয়না। এটা যেমন ব্যক্তিগত পর্যায়ে তেমনি প্রতিষ্ঠানের জন্য সত্যি।

আর্থিক লেনদেনঃ যেকোন প্রকার আর্থিক লেনদেন করতেও আপনি সুবিধা পাবেন। যেমন আপনি কাওকে বড় কোন এমাউন্ট প্রদান করতে চাইলে বা কারও কাছ থেকে নিতে চাইলে এই লেনদেন সহজেই চেকের মাধ্যমে করতে পারবেন। টাকা বহনের ঝুঁকি থেকে আপনি রেহাই পেয়ে গেলেন।

মুনাফা অর্জনঃ আপনার জমানো টাকার উপর ব্যাংক আপনাকে মুনাফা দেবে, বাসার আলমারিতে টাকা পরে থাকলে আপনি এই মুনাফা থেকে বঞ্চিত হবেন। এতে বছর শেষে একটা ভাল এমাউন্টের টাকা আপনার একাউন্টে যোগ হবে।

অর্থের প্রবাহ ঠিক থাকাঃ একটি রাষ্ট্রে যদি সবাই টাকা জমিয়ে তার আলমারিতে রেখে দেয় তাহলে দেশের দেশে টাকার প্রবাহ কমে যায় এবং রাষ্ট্র ক্ষতির সম্মুখিন হয়। বরং টাকার লেনদেন হলে রাষ্ট্র লাভবান হয়। আপনি টাকা ব্যাংকে রাখলে ব্যাংক সেই টাকা কোথায় বিনিয়োগ করে থাকে যেখান থেকে অনেক লোকের কর্ম সংস্থান হয় রাষ্ট্র লাভবান হয়।

ব্যাংক একাউন্ট কোথায় খুলবেন

ব্যাংক একাউন্ট অবশ্যই ব্যাংকে খুলবেন। আমাদের দেশ বাংলাদেশে সরকার অনুমোদিত যেকোন ব্যাংকে আপনি একাউন্ট খুলতে পারেন। আপনি বাংলাদেশের নাগরিক হলে যেকোন ব্যাংক আপনাকে তাদের ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে সহযোগিতা করবে।

একাউন্ট খোলার সময় অবশ্যই আপনার আবাসিক অবস্থানের কথা বিবেচনা করবেন। আপনি যেখানে থাকেন তার আসেপাশের শাখায় একাউন্ট খুলবেন। কেননা, আপনাকে হয়ত কিছু কাজে ব্যাংকে উপস্থিত থাকতে হতে পারে। তাই আপনার বাসা যদি হয় ঢাকার রামপুরা তাহলে আমি আপনাকে সাজেষ্ট করব রামপুরার আসেপাশের কোন ব্যাংকের শাখায় একাউন্ট খুলবেন।

কোন ব্যাংকে একাউন্ট খুলবেন

ব্যাংক একাউন্ট খোলার সময় কিছু কিছু ব্যাপারে আপনি অবশ্যই নজর রাখবেন। আপনাকে বুঝতে হবে কোন ব্যাংকে একাউন্ট খুললে আপনি সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবেন। মনে রাখবেন, বাংলাদেশে যেসব ব্যাংক ব্যাংকিং সার্ভিস দেয় তার সবই বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত। এরপরেও আপনাকে যেসব বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে বলে আমি মনে করছি সেগুলো নিচে দেয়া হলঃ

ব্যাংকের সুনামঃ সবার আগে দেখুন ব্যাংকের সুনাম কেমন, কতদিন ধরে সেই ব্যাংক বাংলাদেশে সার্ভিস দিচ্ছে। তার অতীত ইতিহাস কেমন, ইত্যাদি।

কাস্টোমার সার্ভিসঃ আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে যে ব্যাংকে একাউন্ট খুলবেন তার কাষ্টোমার সার্ভিস কেমন। যদি কোন ব্যাংকের কাষ্টোমার সার্ভিস ভাল না হয়, আমি সাজেস্ট করব সেই ব্যাংকে একাউন্ট খুলবেন না।

এটিএম বুথ সংখ্যাঃ খেয়াল করে দেখুন যে ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে চাচ্ছেন সেই ব্যাংকের এটিএম বুথ সংখ্যা কেমন। আপনি সচরাচর যে এলাকায় মুভ করেন সেখানে ঐ ব্যাংকের বুথ আছে কিনা? যদিও আজকাল ভিসা বা মাস্টার কার্ড থাকলে যেকোন ব্যাংকের টাকা অন্য ব্যাংকের বুথ থেকে তোলা যায়। যদিও এতে প্রতি ট্রানজেকশনে কিছু খরচ হবে।

মেইনটেন্যান্স ফিঃ মনে রাখবেন আপনার একাউন্ট মেইনটেন্যান্স করার জন্য যেকোন ব্যাংক আপনার একাউন্ট থেকে নির্দিষ্ট পরিমান ফি কেটে রাখবে। কিন্তু এই ফি এর পরিমান একেক ব্যাংকে একেক রকম হতে পারে। একাউন্ট খোলার আগে জেনে নিবেন আপনার ব্যাংকে আপনাকে বছরে কত মেইনটেন্যান্স ফি দিতে হবে।

অন্যান্য সার্ভিস চার্জঃ শুধু মেইনটেন্যান্স ফি নয়, একটি ব্যাংকে একাউন্ট খুললে আপনাকে আরও কিছু চার্জ দিতে হতে পারে যা নির্ভর করছে আপনি কি কি সার্ভিস নিচ্ছেন তার উপর। যেমন- আপনি যদি চেক বই নেন, এটিএম কার্ড নেন তাহলে তার জন্য আপনাকে সার্ভিস চারজ দিতে হবে। আপনি যদি ব্যাংক স্টেটমেন্ট নেন তারজন্য আপনাকে সার্ভিস চার্জ দিতে হবে। এমন বিষয়গুলো আগে থেকে জেনে নিবেন অবশ্যই।

ইন্টারেস্ট হারঃ যদিও সেভিংস একাউন্টের ইন্টারেস্টের হার বাংলাদেশ ব্যাংক ঠিক করে দেয়, তারপরেও আপনি একাউন্ট কোলার আগে বিষয়টি জেনে নিবেন। সেভিংসের ইন্টারেস্ট, ডিপিএস এর ইন্টারেস্ট ইত্যাদি।

অনলাইন ব্যাংকিংঃ এখনকার যুগ হচ্ছে ইন্টারনেটের যুগ। তাই অনলাইন ব্যাংকিং আছে কিনা, থাকলে অনলাইন ব্যাংকিং এ কি কি সুযোগ সুবিধা আছে তা জেনে নিতে পারবেন। সাধারণত অনলাইন ব্যাংকিং এ অনালাইন ট্রান্সফার, ডিপিএস ওপেন করা, মোবাইল ফ্লেক্সিলোড, বিকাশ/নগদে টাকা ডিপোজিট ইত্যাদি সুবিধা থাকে। অনলাইন ব্যাংকিং সেবা সাধারণত ফ্রি হয়ে থাকে।

ক্রেডিট কার্ড সুবিধাঃ ক্রেডিট কার্ড বর্তমান সময়ের একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রোডাক্ট। একাউন্ট খোলার আগে জেনে নিন আপনি যেই ব্যাংকে একাউন্ট খুলছেন সেই ব্যাংকে কোন ব্রান্ডের ক্রেডিট কার্ড দিচ্ছে। যদিও ক্রেডিট কার্ড নিয়ে অনেক লাভ-লসের হিসেব রয়েছে।

লোন সুবিধাঃ  আগে থেকেই জেনে নিন আপনি যেই ব্যাংকে একাউন্ট খুলছেন সেখানে লোন সুবিধা রয়েছে কিনা? থাকলে তারা কি কি কারণে লোন দিয়ে থাকে এবং সুদের হার কত? এখন প্রয়োজন না হলেও ভবিষ্যতে আপনার লোনের প্রয়োজন হতেও পারে।

স্মার্ট ব্যাংকিং সুবিধাঃ আগেই খেয়াল করে দেখুন আপনার ব্যাংকা কতটা আধুনিক। মনে রাখবেন, আপনার ব্যাংক যদি আধুনিক না হয় নতুন টেকনোলজি আসলে সে অনেক দেরিতে সেই সার্ভিস আপনাকে দিতে শুরু করবে। আর আপনার ব্যাংক যদি আধুনিক হয় খুব দ্রুত আপনাকে নতুন টেকনোলজির সার্ভিস দেয়া শুরু করবে।

একাউন্ট অপেনিং ব্যালেন্সঃ জেনে নিন একাউন্ট ওপেন করতে কত টাকা লাগবে। কেননা এমন কিছু ব্যাংক আছে যেখানে একাউন্ট খুলতে ৫০,০০০ টাকা লাগে আবার কিছু ব্যাংক আছে যেখানে ৫০০ টাকা হলেই একাউন্ট খুলতে পারবেন। আপনার সাধ্য অনুযায়ি ব্যাংক নির্বাচন করুন।

নূন্যতম ব্যালেন্সঃ জেনে নিন, আপনার ব্যাংকে নূন্যতম কত ব্যালেন্স রাখতে হবে। অনেক ব্যাংক আছে যেখানে নিয়ম হচ্ছে আপনাকে একটা নির্দিষ্ট পরিমান টাকা জমা রাখতে হবে। আবার এমন কিছু ব্যাংক আছে যেখানে কোন নূন্যতম ব্যালেন্স রাখার প্রয়োজন নেই। এই ইনফরমেশন আগে থেকেই জেনে রাখুন।

ব্যাংক একাউন্ট কত প্রকার

আপনাকে জানতে হবে ব্যাংক একাউন্ট কত প্রকার, এবং আপনার জন্য কোন ধরনের একাউন্ট খোলা প্রয়োজন। সাধারণত চার ধরনের ব্যাংক একাউন্ট হয়ে থাকে। যেমন-

  • চলতি একাউন্ট (Current Account)
  • সঞ্চয়ী একাউন্ট (Savings Account)
  • রিকারিং ডিপোজিট একাউন্ট (Recurring Deposit Account)
  • ফিক্সড ডিপোজিট একাউন্ট (Fixed Deposit Account)

চলতি একাউন্ট (Current Account)

যেকোন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি বা যেকোন প্রতিষ্ঠান চলতি হিসাব বা একাউন্ট খুলতে পারেন। সাধারণত চলতি একাউন্টের সুদের হার কম থাকে। কারেন্ট একাউন্ট এক বা একাধিক ব্যক্তি কিংবা কোন প্রতিষ্ঠানের নামে হয়ে থাকে। ব্যবসার ক্ষেত্রে এই ধরনের একাউন্ট বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

সাধারণত চলতি একাউন্টে কোন এটিএম কার্ড দেয়া হয়না, শুধুমাত্র চেকের মাধ্যমেই এই ধরনের একাউন্ট থেকে লেনদেন করা হয়। এধরনের একাউন্টের টিপি বা ট্রানজেকশন প্রোফাইল বেশি দেয়া থাকে।

সঞ্চয়ী একাউন্ট (Savings Account)

এই ধরনের একাউন্ট আসলে ব্যক্তিগত সঞ্চয়ের জন্য খোলা হয়। এতে সুদের হার তুলনামূলক বেশি থাকে। সঞ্চয়ী একাউন্টও এক বা একাধিক ব্যক্তির নামে খোলা যায়। চাইলে এটিএম কার্ড কিংবা চেকবই নেয়া যেতে পারে।

সাধারণত যেকোন ব্যক্তি, কোন প্রতিষ্ঠানের বেতনভুক্ত কর্মচারী, ছাত্র-ছাত্রী, গৃহিণী ইত্যাদি যেকেও এই ধরনের একাউন্ট খুলতে পারে।  সঞ্চয়ী একাউন্ট হলেও এই একাউন্ট থেকে প্রয়োজনে টাকা তোলা ও জমা দেয়া যায়। তবে এ ধরনের একাউন্টের টিপি কম থাকে।

ব্যাংক ভেদে সঞ্চয়ী একাউন্টে সুদের হার বিভিন্ন হয়ে থাকে।

রিকারিং ডিপোজিট একাউন্ট (Recurring Deposit Account)

এটি একটি বিশেষ ধরনের একাউন্ট। সাধারণত নির্ধারিত সময়ের জন্য প্রতি মাসে মাসিক ভিত্তিতে নির্দিষ্ট পরিমান টাকা জমা করে গ্রাহক উচ্চহারে সুদ সহ আসল ফেরত পেতে পারেন। সাধারণত গ্রাহক প্রতি মাসে ৫০০, ১০০০ বা আরও বেশি টাকা প্রতি মাসে জমা করতে পারেন এবং তা ৩ বা তার চেয়ে বেশি ১০ বছরের জন্য এই স্কিম নিতে পারেন। একে অনেক সময় টার্ম ডিপোজিটও বলা হয়।

এ ধরনের একাউন্টের সুদের হার বেশি হয়ে থাকে।

ফিক্সড ডিপোজিট একাউন্ট (Fixed Deposit Account)

এ ধরনের একাউন্টে গ্রাহককে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমান টাকা জমা রাখতে হয়। সাধারণত গ্রাহক ঐ নির্দিষ্ট সময়ের আগে টাকা তুলতে পারেন না, কিন্তু যদি তুলে ফেলেন তাহলে তাকে কিছু জরিমানা গুনতে হয়। সুদের টাকা গ্রাহক চাইলে প্রতি মাসে বা প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর তুলে নিতে পারেন বা তিনি চাইলে সেই টাকা আবার মুলধনের সাথে যুক্ত করে দিতে পারেন।

এই ধরনের একাউন্টের সুদের হার সবচেয়ে বেশি হয়। গ্রাহক চাইলে ডিপোজিট স্কিম না ভেঙ্গে মোট ডিপোজিটের ৯০% টাকা লোন হিসেবে নিতে পারেন। তবে মনে রাখবেন, লোনের সুদের টাকা আপনার সুদের টাকার চেয়ে বেশি হবে।

ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে

বাংলাদেশের যেকোন ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে মোটামুটি একই ধরনের কাগজ পত্র লাগে। সাধারণত যেসব ডকুমেন্ট আপনার লাগতে পারে তার একটি লিষ্ট নিচে দেয়া হলঃ

ব্যাংক একাউন্ট খুলতে  যেসব ডকুমেন্ট দরকার হতে পারে
আবেদন ফর্ম যথাযথভাবে স্বাক্ষরসহ পূরণ  টিআইএন এর কপি
আবেদনকারীর ফটোগ্রাফ / ছবি। পাসপোর্ট / ড্রাইভিং লাইসেন্সের অনুলিপি
জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি অন্যান্য আয়ের প্রুফ ডকুমেন্টস
অফিস আইডি এবং  ভিজিটিং কার্ড নমিনির ন্যাশনাল আইডি কার্ড
 স্যালারি সার্টিফিকেট / পে স্লিপ নমিনির ছবি
 ইউটিলিটি বিলের কপি নমিনির স্বাক্ষর

নমিনি (Nominee) কি

নমিনি হল আপনার অবর্তমানে আপনার একাউন্ট কে পরিচালনা করতে পারবেন সেই হচ্ছেন আপনার নমিনি। নমিনি নিয়ে একটি ভুল ধারনা আমাদের দেশে প্রচলিত আছে, আপনি মারা গেলে আপনার নমিনি আপনার একাউন্টের সকল অর্থের মালিক হয়ে যাবে।

আসলে ব্যাপারটি মোটেই তা নয়। নমিনি আপনার অবর্তমানে আপনার একাউন্টের সকল দায়িত্ব পালন করবেন, তিনি আপনার অবর্তমানে আপনার মৃত্যুর পর আপনার অংশিদারদের টাকা বুঝিয়ে দিবেন। আপনার টাকা নিয়ে নেয়া এত সহজ ব্যাপার নয়। আপনার মৃত্যুর পর আইনগতভাবে যার টাকা পাওয়ার কথা তিনিই আপনার টাকা পাবেন।

তবে, সাধারণত নমিনি রক্তের সম্পর্কের কেও হলে ভাল হয়। ব্যাংকও তাই প্রিফার করে।

ব্যাংকের রেফারেন্স

সাধারণত একাউন্ট খুলতে গেলে একই ব্যাংকে একাউন্ট আছে আমন একটি রেফারেন্সের প্রয়োজন পরে। নিজের পরিচিতদের মধ্যে কেও থাকলে তাকে খুঁজে নিন। যদি একান্তই কাওকে না পান, ব্যাংকের কোন কর্মকর্তাকে অনুরোধ করে দেখতে পারেন। তিনি রাজি হলে তিনি রেফারেন্স হতে পারেন।

ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম

ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য আপনার যা যা জানা প্রয়োজন আমি চেষ্টা করেছি তার সবই আপনাদের জানাতে। উপরের লেখাগুলো যদি আপনি ভালমত পড়ে থাকেন, সবই আপনার বুঝে ফেলার কথা। এবার আসুন ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম নিয়ে আলোচনা করা যাক। ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য্য আপনি নিচের ধাপগুলো অনুসরন করুনঃ

  • প্রথমে আপনি কোন ব্যাংকের কোন শাখায় একাউন্ট খুলবেন তা নির্বাচন করুন।
  • সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা এই সময়ের মধ্যে যেকোন সময় প্রয়োজনীয় সকল ডকুমেন্ট নিয়ে ব্যাংকে চলে যান।
  • ব্যাংকে ঢুকেই টোকেন সংগ্রহ করুন এবং অপেক্ষা করুন।
  • যখন আপনার টোকেন নাম্বার অনুযায়ি সিরিয়াল আসলে নির্ধারিত কাউন্টারে চলে যান।
  • কাউন্টারে যিনি থাকবেন তাকে একাউন্ট খোলার ব্যাপারে জানান। তিনি আপনাকে সাহায্য করবেন।
  • অফিসারকে জিজ্ঞেস করে একাউন্ট বিষয়ে সকল প্রশ্ন জেনে নিন।
  • এরপর অফিসার আপনাকে একাউন্ট খোলার ফর্ম দিলে তার সহযোগিতা নিয়ে ফর্মটি ফিলাপ করুন।
  • প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলো তার কাছে দিন।
  • নমিনি যদি আপনার সাথে এসে থাকেন তাহলে তার স্বাক্ষর নিয়ে নিন। তা নাহলে আপনাকে বাসায় এসে নমিনির স্বাক্ষর নিয়ে আবার ব্যাংকে যেতে হবে।
  • আপনার নিজের নমুনা স্বাক্ষর দেবার সময় ভাল করে খেয়াল করুন কিভাবে স্বাক্ষর দিচ্ছেন। পরবর্তীতে চেকে আপনাকে এই স্বাক্ষর দিয়েই টাকা তুলতে হবে।
  • ব্যাংক কর্মকর্তাকে রিকোয়েস্ট করুন রেফারেন্স হিসেবে তার সিগনেচার দিয়ে দিতে। যদি তিনি না দেন তাহলে ঐ ব্যাংকে একাউন্ট আছে এমন কাওকে খুঁজে নিন।
  • সবশেষে আপনার ফর্মটি ভালমত পরীক্ষা করে ব্যাংক কর্ম কর্তার কাছে জমা দিয়ে দিন।
  • এখনকার ডিজিটাল যুগে সাথে সাথে একাউন্ট খোলা হয়ে যায়। তারপরেও কোন কোন ব্যাংকে ২-৩ কর্ম দিবস লাগতে পারে।

চেক বই, এটিএম কার্ড ও অন্যান্য

ব্যাংক একাউন্ট হবার পরেই আপনাকে আপনার একাউন্ট নাম্বার দিয়ে দেয়া হবে। কিন্তু চেক বই, এটিএম কার্ড পেতে ৩-৫ কর্ম দিবস লাগতে পারে। কারণ এগুলো আপনার নামে প্রিন্ট করে নিতে হয়।

চেক বই, এটিএম কার্ড এগুলো আপনার বাসায় ডাকযোগে পাঠিয়ে দেয়া হবে। অপেক্ষা করুন পেয়ে যাবেন। চেক বই কিংবা এটিএম কার্ড হাতে পাবার পরে অবশ্যই একটিভ করে নিতে হয়। কাস্টোমার কেয়ারে কল করে এগুলো একটিভ করে নিতে ভুলবেন না।

এটিএম কার্ডের পিন কোড

এটিএম কার্ড একটিভ করার পর দেখবেন আপনাকে একটি পিন কোড দেয়া হয়েছে। এই পিন কোড ব্যবহার করে আপনি এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে পারবেন। পিন নাম্বার কারও সাথে শেয়ার করবেন না।

পিন কোড যদি আপনাকে ডাকযোগে পাঠানো হয় তাহলে পিন কোডটি মুখস্ত করে কাগজটি নষ্ট করে ফেলে দিন। অনেক ব্যাংকে কাস্টোমার কেয়ার  থেকে ফোন কলের মাধ্যমে অটো জেনারেট করা হয়। এটিও একটি সহজ পদ্ধতি।

এটিএম কার্ডের সুবিধা কি

ব্যাংক একাউন্ট খুলেছেন অথচ এটিএম কার্ড নেই। এটা হতেই পারেনা। একাউন্ট খোলার কয়েক দিনের মধ্যেই আপনি একটি এটিএম কার্ড পেয়ে যাবেন। এটিএয়াম কার্ড পেলে আপনি কি কি সুবিধা পাবেন তার একটা লিষ্ট আমি এখানে দিয়ে দিচ্ছি-

  • যখন তখন বুথ থেকে টাকা তুলতে পারবেন, দৈনিক লিমিট ৫০,০০০.০০-১৫০,০০০.০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
  • যেকোন ব্যাংকের বুথ থেকে টাকা তুলতে পারবেন যদি আপনার এটিএম কার্ডটি ভিসা বা মাস্টার কার্ড হয়ে থাকে।
  • এটিএম কার্ড এর মাধ্যমে বুথ থেকে আপনার একাউন্ট থেকে একই ব্যাংকের অন্য একাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করতে পারবেন।
  • যেসব দোকানে পজ মেশিন আছে সেখানে আপনি আপনার এটিএম কার্ড ব্যবহার করে পেমেন্ট করতে পারবেন। ক্ষেত্রবিশেষে ডিস্কাউন্টও পেতে পারেন।

ইন্টারনেট ব্যাংকিং

ব্যাংক একাউন্ট খোলার সময় একই সাথে ইন্টারনেট ব্যাংকিং এর জন্য আবেদন করে ফেলতে ভুলবেন না। ইন্টারনেট ব্যাংকিং থাকলে আপনি মোবাইলে এপ্সের মাধ্যমে কিংবা কম্পিউটারের ব্রাউজারের মাধ্যমে আপনার একাউন্টে লগইন করতে পারবেন।

ইন্টারনেট ব্যাংকিং এর সুবিধা কি

আধুনিক ডিজিটাল যুগে ইন্টারনেট ব্যাংকিং না থাকলে আপনাকে অনেক কাজ করার জন্য আপনাকে ব্যাংকে যাবার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু আপনার যদি ইন্টারনেট ব্যাংকিং থাকে তাহলে আপনি সেসব কাজ ২/৪ মিনিটেই সেরে ফেলতে পারবেন। ইন্টারনেট ব্যাংকিং থাকলে কি কি করতে পারবেন? আসুন জেনে নেই।

  • আপনি যেকোন সময় আপনার একাউন্ট ব্যালেন্স জানতে পারবেন।
  • কারও একাউন্টে টাকা পাঠাতে পারবেন ঘরে বসেই।
  • মোবাইল বিল দিতে পারবেন, মানে ফ্লেক্সিলোড করতে পারবেন একাউন্ট থেকেই।
  • বিকাশ/নগদ/রকেট ইত্যাদি একাউন্টে টাকা দিতে পারবেন।
  • ঘরে বসেই ডিপিএস বা ফিক্স ডিপোজিট খুলতে পারবেন।
  • বিভিন্ন ইউটিলিটি বিল দিতে পারবেন ঘরে বসেই।

আসলে এখনকার আধুনিক যুগে ব্যাংক একাউন্ট ছাড়া কোন মানুষ চলতে পারেনা। ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম নিয়ে লেখা আমার এই ব্লগটি আশা করি আপনাদের কাজে লাগবে, ধন্যবাদ সবাইকে। ভাল থাকবেন সবাই।

Previous articleচেক লেখার নিয়ম এবং চেক ছাড়া টাকা তোলার সকল উপায়।
Next articleপ্রতিদিন ১০০০ টাকা ইনকাম – গুগলের সেরা ১০ সাইট (২০২২)
যে ব্যর্থ সে অজুহাত দেখায়, যে সফল সে গল্প শোনায়। আমি অজুহাত নয় গল্প শোনাতে ভালবাসি। আসুন কিছু গল্প শুনি, নিজের গল্প অন্যকে শুনাই।