আশেপাশে বেড়ানোর জায়গা

 

ঢাকার মধ্যে এবং অদূরে ঘুরে বেড়ানোর জায়গা কিন্তু অনেক। তবে আমরা অনেকেই হয়ত হাতে গোনা কিছু জায়গা বাদে অন্যান্য ঘুরবার জায়গা গুলো সম্পর্কে জানি না বা অনেক কম জানি কিংবা শুনি। হয়ত আমাদের খুব কাছেই অনেক সুন্দর ঘুরার স্থান থাকে, কিন্তু সময় এবং অজ্ঞতার কারনে আমাদের এসব জায়গায় যাওয়া হয় না।  আগের দুটি পর্বে, এমন কিছু আশেপাশে বেড়ানোর জায়গা নিয়েই আপনাদেকে জানানোর চেষ্টা করেছি। এই পর্বেও, আমি আপনাদের কাছে আরো এমন কিছু জায়গার সাথে পরিচয় করাবো যেগুলো ঢাকার মধ্যে বা অদূরেই অবস্থিত।

আগের দুই পর্ব পড়ে নিনঃ

ঢাকার আশেপাশে বেড়ানোর জায়গা – কম সময়ে ঘুরে আসুন পর্ব- ০২

ঢাকার আশেপাশে বেড়ানোর জায়গা – কম সময়ে ঘুরে আসুন পর্ব- ০১

আশেপাশে বেড়ানোর জায়গাঃ চন্দ্রিমা উদ্যান

চন্দ্রিমা উদ্যানের অবস্থান ঢাকার শেরে বাংলা নগরে। জাতীয় সংসদ ভবনের একদম পিছনেই এই উদ্যানের অবস্থান। এ উদ্যানটি অনেকের কাছে জিয়া উদ্যান নামেও সুপরিচিত। সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানকে এখানেই দাফন করা হয়েছিল। যার কারনে বিএনপি দলের ক্ষমতাকালীন সময়ে চন্দ্রিমা উদ্যানের নাম জিয়া উদ্যান রাখা হয়। পরে সরকার বদলের পরে এই উদ্যানের নাম ও পরিবর্তন করা হয়েছে এবং পুনরায় চন্দ্রিমা উদ্যান রাখা হয়েছে।

ইট পাথরের এই যান্ত্রিক শহরে চন্দ্রিমা উদ্যান এক নির্মল প্রশান্তির নাম।  প্রায় ৭৪ একর জায়গার উপর এই চন্দ্রিমা উদ্যান অবস্থিত। এই উদ্যানের দর্শনীয় জায়গা হচ্ছে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিসৌধ, ক্রিসেন্ট লেক, মসজিদ, ঝুলন্ত সেতু, মেমোরিয়াল হল ইত্যাদি। তবে এই উদ্যানের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর ঝুলন্ত সেতু এবং এর দৃষ্টিনন্দন ফোয়ারা। সন্ধ্যার পর এই ফোয়ারাগুলো চালু করা হয়।সন্ধ্যার পর সোডিয়াম লাইটের আলোতে এই উদ্যান এক অন্যরকম রূপ ধারন করে।

চন্দ্রিমা উদ্যান সবসময়ই মানুষের পদচারনায় মুখরিত থাকে। তবে ছুটির দিনগুলোতে এ উদ্যানে দর্শনার্থীদের অনেক ভীড় দেখা দেয়। ঢাকার যেকোনো প্রান্ত থেকে যেকোনো সময়ে খুব সহজেই এই উদ্যানে বাসে বা নিজস্ব গাড়িতে করে আসা যায়।

আশেপাশে বেড়ানোর জায়গাঃ মাওয়া ঘাট

মাওয়া ঘাটের নাম আমাদের সবার কাছেই অত্যন্ত সুপরিচিত। পদ্মা নদী ভ্রমন এবং ইলিশ মাছের স্বাদ নিতে চাইলে মাওয়া ঘাট হতে পারে আপনার জন্য একটি আদর্শ ভ্রমনের স্থান। বিশাল পদ্মা নদীর অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে আপনি সানন্দে চলে আসতে পারেন মাওয়া ঘাটে। নৌকা বা ট্রলার ভাড়া করে উন্মুক্ত পদ্মার বুকে কাটিয়ে দিতে পারেন আপনার অনেকটা সময়। আর যদি হাতে সময় থাকে তবে নদীর বুকে সূর্যাস্ত উপভোগ করতে পারেন, যা কিনা আপনার স্মৃতির পাতায় অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করার সাথে সাথে, পদ্মার ইলিশের জন্যও মাওয়া ঘাট বিখ্যাত। তাজা ইলিশ মাছ ভাজা খাওয়ার স্বাদ কতটা মজার তা এই জায়গায় না আসলে বুঝতে পারবেন না। এছাড়া, বিভিন্ন ধরনের মাছ, ডাল, ভর্তা ও অন্যান্য নানা পদের খাবার আপনার মনের সাথে সাথে পেটের শান্তিও নিশ্চিত করবে।

মাওয়া ঘাট যাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে প্রথমে ঢাকার গুলিস্থানে বা সায়েদাবাদ আসা এবং এরপর বাসে করে মাওয়া যাওয়া। গুলিস্থানে এবং সায়েদাবাদে মাওয়াগামী অনেক বাস আছে। তাছাড়া গাড়ি ভাড়া করেও আপনারা সেখানে যেতে পারেন।

আশেপাশে বেড়ানোর জায়গাঃ আহসান মঞ্জিল

পুরান ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর পাড় ঘেঁষে গড়ে উঠা আহসান মঞ্জিলের অবস্থান কুমারটুলিতে। এই আহসান মঞ্জিল বাংলাদেশের একটি অন্যতম ঐতিহাসিক স্থাপনা। শেখ ইনায়েত উল্লাহ অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে এই ভবনটি তৈরি করেন। তখন এই ভবনটি একটি প্রমোদ ভবন হিসেবে ব্যবহৃত হত। কালের বিবর্তনে নবাব আব্দুল গনির হাতে এই ভবনের মালিকানা আসে। এরপরে নবাব আব্দুল গনি এই ভবনটিকে পুনরায় নির্মাণ করেন এবং ভবনটির নাম নিজের ছেলে খাজা আহসান উল্লাহর নামে  ‘আহসান মঞ্জিল’ রাখেন। পরে এই আহসান মঞ্জিলে নবাবের বংশধরেরা তাদের পরিবার নিয়ে বাস করতেন।বর্তমানে আহসান মঞ্জিল সরকারের মালিকানায় একটি জাদুঘর হিসেবে সংরক্ষিত আছে। প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থী এই জাদুঘর দেখতে আসে। শুধুমাত্র বৃহস্পতিবার এবং সরকারি ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিনই এই জাদুঘরটি খোলা থাকে। আহসান মঞ্জিল শনিবার থেকে বুধবার, সকাল ১০.৩০ থেকে বিকেল ৪.০০ পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকে এবং শুক্রবারে, বিকেল ৩.৩০ থেকে সন্ধ্যা ৬.০০ পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকে।

আশেপাশে বেড়ানোর জায়গাঃ সারি ঘাট, কেরানিগঞ্জ

আপনারা কি কায়াকিং করতে ভালোবাসেন বা করার তীব্র ইচ্ছা পোষন করেন? কিন্তু কায়াকিং করতে তো আপনাকে যেতে হবে সূদূর চট্টগ্রামে। কিন্তু আপনারা কি জানেন ঢাকার মধ্যেই আপনি চাইলে এখন কায়াকিং এর মজা নিতে পারেন। এজন্য আপনাদের আসতে হবে সারিঘাট, আইন্তা, যেটা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে অবস্থিত।

যান্ত্রিকতার শহর ঢাকার অদূরেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর সারিঘাট এখন দর্শনার্থীদের জন্য একটি বিশেষ জায়গা হয়ে দাড়িয়েছে। প্রকৃতির সান্নিধ্যে কিছুটা সময় কাটাতে এবং নির্মল সৌন্দর্য উপভোগ করতে সারিঘাটে এসে আপনি পেতে পারেন শান্তি, আর স্নিগ্ধতার আভাস। সবুজে ঘেরা পরিবেশের সাথে গ্রামীন চিরচেনা রূপ আপনার মনকে উত্তেজিত করবে, আনন্দিত করবে। তার সাথে আরো পাবেন নৌকা ভ্রমণ বা কায়াকিং করার সুযোগ। এই সবুজ আর স্নিগ্ধ পরিবেশে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে এবং কায়াকিং এর অভিজ্ঞতা নিতে নিতে আপনার সময় কিভাবে কাটবে তার টেরও পাবেন না।

সারিঘাট আসার জন্য প্রথমে ঢাকার যেকোনো জায়গা থেকে যাত্রাবাড়ী আসতে হবে। এরপর সেখান থেকে জুরাইন রেল গেইট আসতে হবে। বাস বা লেগুনাতে করে জুরাইন রেলগেট আসা যায়। তারপর জুরাইন রেল গেইট থেকে পোস্তগলা ব্রিজ পার হয়ে যেতে হবে। তারপর পোস্তাগলা ব্রিজের অপর প্রান্তের গোড়া থেকে রিকশা বা অটো রিকশা অথবা সিএনজি করে সরাসরি সারিঘাট যেতে পারবেন খুব সহজেই।

আশেপাশে বেড়ানোর জায়গাঃ বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক

বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম একটি পার্ক হচ্ছে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক। এই পার্কটি গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নে অবস্থিত। প্রায় ৩,৬৯০ একর জায়গা জুড়ে এই সুবিশাল পার্কটি গড়ে তোলা হয়েছে। এই পার্কের সবচেয়ে বিশেষ আকর্ষণ হচ্ছে, এখানে প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে বন্য প্রাণীদের অবাধ বিচরণ দেখতে সুযোগ পাওয়া যায়। তাই সারা বছরই বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা যায়।

এই পার্কে রয়েছে প্রজাপতি সাফারি, জিরাফ ফিডিং স্পট,পাখিশালা, অর্কিড হাউজ, শকুন ও পেঁচা কর্নার, আইল্যান্ড, বোটিং, লেইক জোন, ফ্যান্সি কার্প গার্ডেন, প্রকৃতিবীক্ষণ কেন্দ্র ইত্যাদিসহ আরো অনেক বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর আবাসনএছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ, লেক, শালবন, পুকুরসহআরো অনেক কিছু।

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে যেতে হলে প্রথমেই যেতে হবে গাজীপুরের বাঘের বাজার। এই জায়গাটি ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশেই অবস্থিত।  সেখান থেকে রিকশা বা অটোরিকশা ভাড়া করে খুব সহজেই আপনি পৌঁছে যেতে পারবেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে।

আবার কথা হবে অন্য কোন ব্লগে, সে পর্যন্ত ভাল থাকুন সবাই।

Previous articleআর্টিকেল লেখার নিয়ম- ব্লগ লেখার কলাকৌশল পর্ব-০২
Next articleHow to convert word to pdf file without online website help
আমি আমিনা খাতুন তিশা। আমি লিখালিখিতে অসামান্য কেউ না, তবে লিখতে ভালই লাগে। গদবাধা লেখালেখির চেয়ে আমি নিজের জীবনের কাহিনি বা গল্প লিখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। জীবনে কিছু ভালো করার ইচ্ছা আছে। জানি না কতটুকু সফল হব, তবে আশাহত হতে চাই না।