বেড়ানোর জায়গা

 

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। যান্ত্রিকতা এবং ব্যস্ততার এমন এক শহর যার মধ্যে দম ফেলা যেন দায়। করোনাকালীন পরিস্থিতিতেও এর ব্যস্ততা দেখলে সত্যি অবাক হতে হয়। মানুষের জীবন যে কতটা বৈচিত্র্যপূর্ণ এবং ব্যস্ত হয় তা ঢাকা শহরে আসলেই বুঝতে পারা যায়।এই ব্যস্ততা আর যান্ত্রিকতার ভীড়ে অনেক সময় আমরা হাপিয়ে উঠি। তখন আমাদের মন চায় এসব যান্ত্রিক জীবন থেকে দূরে, কোনো স্নিগ্ধ এবং সতেজ জায়গায় যেতে, প্রানভরে শ্বাস নিতে, প্রকৃতির সান্নিধ্যে কিছুটা সময় ব্যয় করতে। কিন্তু হয়ত আমাদের সময়ের অভাবে না, পরিচিতির অভাবে আমরা এমন স্থানের সন্ধান পাই না এবং যেতেও পারি না। আর ঢাকার আশেপাশে বেড়ানোর জায়গা কোথায়?

আজকে আমি আমিনা খাতুন তিশা আপনাদের সামনে এমন কয়েকটা বিশেষ বেড়ানোর স্থানের কথা বলব, যেগুলো ঢাকার মধ্যে বা অদূরে অবস্থিত এবং যেকেউ চাইলে খুব সহজেই এবং কম সময়ে এই স্থানগুলোতে ঘুরে আসতে পারেন।

বোটানিক্যাল গার্ডেন

আপনি যদি সত্যিকার অর্থে প্রকৃতিপ্রমী হয়ে থাকেন, তবে ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান যা কিনা বোটানিক্যাল গার্ডেন হিসেবেই অধিক পরিচিত, হতে পারে আপনার জন্য একটি কাঙ্খিত স্থান। বোটানিক্যাল গার্ডেনে মিরপুর-১ এ চিড়িয়াখানার পাশেই অবস্থিত।

২০৮ একর এই ভূমির উপর রয়েছে প্রায় ৮০০ প্রকারের ফুল, ফল, ঔষধি এবং বনজ উদ্ভিদের সমারোহ। তাছাড়াও রয়েছে ফুলের বাগান, সবুজ মাঠ, টলটলে পানির দিঘী। যে কেউ এইখানে কিছুটা সময় প্রশান্তচিত্তে কাটিয়ে দিতে পারবে। ঢাকার মধ্যে বোটানিক্যাল গার্ডেন হতে পারে আপনাদের জন্য আদর্শ ভ্রমনের স্থান।

এখন প্রশ্ন হতে পারে কিভাবে এখানে আসবেন? ঢাকার যেকোনো প্রান্ত থেকে মিরপুর চিড়িয়াখানার বাস পাওয়া যায়। সেই বাসে চড়ে খুব সহজেই আপনারা চলে আসতে পারবেন বোটানিক্যাল গার্ডেন এ।

গোলাপগ্রাম

বিগত কয়েক বছরে গোলাপগ্রামের নাম এবং সৌন্দর্য সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে আমরা প্রায় সবাই অবগত। ঢাকার অদূরেই সউদুল্লাহপুরে গোলাপগ্রাম অবস্থিত। এই পুরো গ্রামে শুধু গোলাপ এবং অন্যান্য ফুলের চাষ করেন কৃষকেরা। এই ফুলগুলোই পরে ঢাকার বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয়।

গোলাপগ্রামে যাওয়ার পথে আপনি নৌকাভ্রমনের সুখ ও নিতে পারেন। নৌকা থেকে নেমে যখন গ্রামের পথে হাটা শুরু করবেন, তখন চারপাশে শুধু ফুলের সমারোহ দেখতে পারবেন। মনে হবে যেন অনিন্দ্য সৌন্দর্যে ভরপুর কোনো রাজ্যে বিচরণ করছেন। এত এত ফুলের গন্ধে আর সৌন্দর্যে আপনারা  মুগ্ধ হতে বাধ্য হবেন।

গোলাপগ্রাম যাওয়ার জন্য মিরপুর দিয়াবাড়ি বটতলা ঘাট থেকে সউদুল্লাহপুর ঘাটের জন্য যাওয়া নৌকায় উঠতে হবে। প্রায় ৩০ মিনিট পরপর ইঞ্জিনচালিত নৌকা দিয়াবাড়ি থেকে গোলাপগ্রামের উদ্দেশ্য ছাড়ে। নৌকায় সউদুল্লাহপুর যেতে প্রায় ৪৫ মিনিটের মত লাগতে পারে।

জিন্দা পার্ক

ঢাকা থেকে কিছু দূর, প্রাচ্যের ডান্ডি নামে খ্যাত নারায়ণগঞ্জে জিন্দা পার্কের অবস্থান। ব্যস্ত জীবনের ক্লান্তি, ফ্যাসাদ ইত্যাদি থেকে মুক্তি পেতে খুব সহজেই এখানে যেতে পারবেন আপনারা।

নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জে ১০০ একর জমির উপর এই পার্কটি অবস্থিত। প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ, পাঁচটি জলাধার, লাইব্রেরী, ট্রি হাউজ, টিলা, ফুলের বাগান, মসজিদ, কটেজ, লেকের উপর কাঠ ও বাঁশের তৈরি ব্রিজ ইত্যাদি দিয়ে এই পার্কটিকে অত্যন্ত মনোরম ভাবে সাজিয়েছে অগ্রপথিক পল্লী সমিতির প্রায় ৫০০০ সদস্য। এই পার্কের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং কৃত্রিম স্থাপনাগুলোর সৌন্দর্য খুব সহজেই শরীর এবং মনের ক্লান্তি নিমিষেই দূর করে দিতে পারবে।

জিন্দা পার্ক দুইভাবে যাওয়া যায়। ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে জিন্দা পার্কে যেতে বাস যোগে কাঁচপুর, ভূলতা, গাউছিয়া বাইপাস, পার হয়ে কাঞ্চন ব্রিজ দিয়ে জিন্দা পার্কে যাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে সায়দাবাদ থেকে ভূলতা গামী বাসে উঠতে হবে। তাছাড়া, ঢাকার কুড়িল বিশ্বরোড থেকেও জিন্দাপার্কে যাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে প্রথমে বিআরটিসি বাসে করে  কাঞ্চন ব্রিজ যেতে হবে। এরপর ব্রিজ থেকে সিএনজি বা অটোতে করে জিন্দা পার্কে যাওয়া যায়।

বেলাই বিল

বেলাই বিল, ঢাকার অদূরে, গাজীপুরে অবস্থিত। গাজীপুরের চেলাই নদীর সাথে সংযুক্ত এই টইটুম্বুর বিলের মধ্যে ইঞ্জিনচালিত এবং ডিঙি নৌকা দিয়ে ঘুরে বেড়ানো যায়। বিল ভর্তি শাপলা ফুলের রাজ্য আর মাঝেমধ্যে বাতাসের দমকা ঝাপটা আপনার মন প্রান নিমিষেই শীতল করে দিবে। নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নৌকা ভাড়া করে খুব আয়েশেই অনেকটা সময় চাইলেই কাটিয়ে দেয়া যাবে এই মনোমুগ্ধকর বিলের মাঝে।

বেলাইবিল যেতে প্রথমে গাজীপুর বাসস্ট্যান্ড যেতে হবে। এরপর, সেখান থেকে সিএনজি বা রিকশা ভাড়া করে কানাইয়া বাজারে যেতে হবে। কানাইয়া বাজার ঘাট থেকেই বেলাই বিল ঘুরার জন্য নৌকা ভাড়া করতে পারবেন। নৌকা ভাড়া করতে দরদাম করে নিবেন। এরপর নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়াতে পারবেন অনিন্দ্য সুন্দর এই বিলে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

আপনাদের মনে এখন এমন মনে হতে পারে যে, কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিভাবে বেড়ানোর স্থান হতে পারে? কিন্তু অবাক হলেও সত্যি যে বাংলাদেশের এমন অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে যেগুলো কোনো অংশেই বেড়ানোর স্থান থেকে কম নয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি এক্ষেত্রে বাস্তবিক উদহারন।

ব্রক্ষপুত্র নদের তীরে, ময়মনসিংহ শহর থেকে চার কি.মি. দূরে প্রায় ১২০০ একর জায়গার উপর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং বিভিন্ন কৃত্রিম স্থাপনার সৌন্দর্য দুইটাই আপনার চক্ষু শীতল করবে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে  ফুলের বাগান, আম লিচুর বাগান, সবুজ ঘাসের মাঠ, লেক, লেকের উপর দৃষ্টিনন্দন ব্রিজ, কৃষি এবং মৎস জাদুঘর, কেন্দ্রীয় মসজিদ, পুকুর, গবাদী পশুর খামার, দৃষ্টিনন্দন সড়ক এবং দর্শনীয় স্থাপনা ইত্যাদি দেখতে দেখতে দিন যে কিভাবে কেটে যায় তার টের ও পাওয়া যাবে না।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে চাইলে প্রথমে ময়মনসিংহ জেলা শহরে আসতে হবে। বাসে বা ট্রেনে যেকোনো উপায়ে এখানে আসা যাবে। এরপর রিকশা বা অটোরিকশা করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যেতে পারবেন এবং তা ঘুরে দেখতে পারবেন।

আজকে এ পর্যন্তই। আগামী পর্বে আরো কিছু ঢাকার আশেপাশে বেড়ানোর জায়গা এর বর্ণনা নিয়ে আসব আপনাদের জন্য।

Previous articleবাংলা বই-যে বই তিনটি আমাকে জীবন নিয়ে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে
Next articleঔষধ খাওয়ার নিয়ম- যা মেনে না চললেই নয়
আমি আমিনা খাতুন তিশা। আমি লিখালিখিতে অসামান্য কেউ না, তবে লিখতে ভালই লাগে। গদবাধা লেখালেখির চেয়ে আমি নিজের জীবনের কাহিনি বা গল্প লিখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। জীবনে কিছু ভালো করার ইচ্ছা আছে। জানি না কতটুকু সফল হব, তবে আশাহত হতে চাই না।