কিম জং-উন

 

আগের পর্বে আমরা কিম জং-উন এর পারিবারিক ইতিহাস জেনেছি, সেখানেই আমি কথা দিয়েছিলাম পরের পর্ব লেখার, যেখানে আমি তার বিলাসবহুল জীবন নিয়ে আলোকপাত করব। এই ব্লগটি আরও পরে লেখার ইচ্ছা থাকলেও পাঠকদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে লিখতে বসেছি।

যারা আগের পর্ব পড়েননি তারা এই লিংকে গিয়ে কিম জং-উন এর পারিবারিক ইতিহাস পড়ে আসতে পারেন। রমজান মাস হওয়ায় আমি আজকের ব্লগটি সংক্ষিপ্ত করার চেষ্টা করব।

কিম জং-উন এর যোগ্যতার

কিম জং-উন ২০১১ সালে তার পিতার মৃত্যুর পর উত্তর কোরিয়ার সুপ্রিম পাওয়ার বনে যান। এই সময় পর্যন্ত তার বয়স ৩৭ বছর, এরই মাঝে সে কয়েকটি টাইটেল অর্জন করে ফেলেন। যেমন উত্তর কোরিয়ার ওয়ার্কার্স পার্টির সম্পাদক, সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের চেয়ারম্যান। এছাড়া তার দুটি প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রিও রয়েছে- একটি কিম ইল সাং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানের উপর আরেকটি কিম ইলসাং সামরিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সেনা কর্মকর্তা হিসেবে। এথেকে আমরা বলতে পারি তিনি নিজেকে যথেষ্ট ভালভাবেই নিজেকে তৈরি করেছেন একজন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে।

কিম জং-উন এর সম্পদের পরিমান

কিম জং-উনের ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণ অজানা হলেও ধারণা করা হয় তার সম্পত্তির পরিমাণ ৫ বিলিয়ন ডলারের কম নয়। এ সম্পদের বেশিরভাগই অবৈধ পথে এসেছে বলে ধারণা করা হয়, যেমন- ব্যাংক লুট, জাল টাকা, মাদক এবং অস্র ব্যবসা ইত্যাদি তার এই আয়ের প্রধান উৎস। কিম জং উন রাষ্ট্রনায়ক হবার আগে উত্তর কোরিয়ার রাস্ট্রনায়কদের বিলাসিতায় বাৎসরিক খরচ ছিল ৩০০ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু কিম ক্ষমতায় আসার পর এই খরচ গিয়া দাঁড়ায় বছরে ৬০০ মিলিয়ন ডলার। এখান থেকে আমরা তার বিলাসি জীবনের একটা ধারণা পেতে পারি। উল্লেখ্য, উত্তর কোরিয়ার বেশিরভাগ নাগরিক যেখানে তাদের মৌলিক চাহিদা নিবারণ করতে পারেনা সেখানে কিমের এই বিলাসি জীবন তাকে বরং বিতর্কিত নেতা হিসেবেই পরিচয় করিয়ে দেয় গোটা বিশ্বের দরবারে। যাই হোক, এত টাকা কিম কোথায় খরচ করেন? আসুন তার কিছুটা জানার চেষ্টা করি।

কিম জং-উন এর বাসস্থান

যতটুকু জানা যায় কিমের কম করে হলেও ১৭ টা প্রাসাদ রয়েছে- মজার ব্যাপার হল বেশিরভাগ সময় কিম থাকেন পিয়ং ইয়ং এ রায়ংসং এর বাসভবনে। এটা উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্সিয়াল বিলাসবহুল প্রাসাদ। এটাকে রেসিডেন্স নং ৫৫ ও বলা হয়। এখানে যা যা আছে তার মধ্যে অন্যতম হল বিশাল সুইমিং পুল ওয়াটার স্লাইড সহ, ঘোড়াশাল এবং ঘোড়া চালানোর ট্রাক, সুটিং রেঞ্জ ইত্যাদি ইত্যাদি। এছাড়াও তার নিজস্ব দ্বীপ রয়েছে । যেখানে শুধু তিনি নিজেই বেড়াতে যান অন্য কারও যাবার অনুমতি নেই। কিংবা যখন তার কোথাও যেতে ইচ্ছা হয় এরকম অনেক জায়গা প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

কিম জং-উন এর শখ

উত্তর কোরিয়ার শিশুদের শেখান হয় কিম জং উন মাত্র তিন বছর বয়সে গাড়ি চালানো শিখেছেন এবং খুব ছোট বয়স থেকেই বিলাসবহুল গাড়ির প্রতি তার দুর্বলতা রয়েছে। তার সংগ্রহে ১০০ এর বেশি বিলসবহুল গাড়ি আছে। কিমের প্রিয় ব্রান্ড মার্সিডিজ বেনয। সম্ভবত তার সবচেয়ে দামি গাড়িটি একটি কাস্টমাইজড মার্সিডিজ বেনয যার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা একটা দুর্গের মতই। এটার মূল্য কম করে হলেও ১.৭ মিলিয়ন ডলার। নদি কিংবা সুমদ্র পথে চলাচলের জন্য তার আছে ২০০ ফিট লম্বা বিলাসবহুল ইয়ট যার অনুমানিক মূল্য ৮ মিলিয়ন ডলার। তার ৯৫ ফিট লম্বা আরেকটি ইয়টও রয়েছে। বলা বাহুল্য তার সকল যানবাহনই কাস্টমাইজড করা। ইন্টেরিয়র থেকে শুরু করে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সবই করা হয়েছে অত্যাধুনিক সাজে। আকাশপথে চলার জন্য রয়েছে নিজস্ব জেট বিমান যার নাম এয়ার ফরস উন। এই বিমানের স্পেসিফিকেশন অজানা কিন্তু এটাও যে অত্যাধুনিক সমর সাজে সজ্জিত তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। এটা ছাড়াও তার আরও অনেকগুলো নিজস্ব জেট বিমান রয়েছে এবং কম পক্ষে ৫টি রানওয়ে বিমান চলাচলের জন্য তার বিভিন্ন প্রাসাদের আসে পাশে সদা প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া কথিত আছে সে বিমান ভ্রমনকে মোটেই নিরাপদ মনে করে না তাই তার রয়েছে এক বিলাসবহুল ট্রেন।  তাকে কখনই এইসব বিলাসিতার খরচের ব্যাপারে চিন্তা করতে হয় না।

কিম জং-উন এর খাবার

উত্তর কোরিয়াতে প্রচুর স্থানীয় মদের প্রচলন থাকলেও কিমের পছন্দ আমদানি করা দামি মদ-হুইস্কি। তার পছন্দের মদের ব্রান্ড Hennessy যার বর্তমান বাজার মূল্য ২০০০ ডলার প্রতি বোতল। সে শুধু মদের পেছনেই খরচ করে বছরে ৮ মিলিয়ন ডলার। সবটাই আমদানি করার জন্য খরচ করা হয়।

অন্যান্য খাবারে ক্ষেত্রেও কিম জং-উন মদের মতই বিলাসি। তার সব খাবারই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আমদানি করা। ইরানি কেভিয়ার, জাপানি বিফ, চাইনিজ তরমুজ এসবই শুধু মাত্র তার জন্যই আমদানি করার হয়। দাম কোন বিষয়ই নয়, তার ইচ্ছাটাই আসল। সে চাইলে যা দরকার তা যেখানেই থাকুক না কেন তার সামনে হাজির করা হয়। কয়েকটি উদাহরণ নিচে দেয়া হলঃ

কিম জং-উন এর শখ এক্সট্রা

উত্তর কোরিয়াতে ডিভিডি আমদানি নিষিদ্ধ, তার সংগ্রহে ২০০০ ডিভিডি মুভি আছে আমদানি করা। তার প্রিয় মুভি গডজিলা আর এইসব মুভি সে ১০০০ সিটের মুভি থিয়েটারে বসে উপভোগ করে থাকেন। হাজার হাজার ডলার খরচ করে তার প্রাসাদে এই থিয়েটার বানানো হয়েছে।

তাকে আপনি কখনই হাতঘড়ি ছাড়া দেখবেন না। তার প্রতিটি ঘড়িই অনেক দামি এবং মনে করা হয় তার সংগ্রহে কম করে হলেও ৮ মিলিয়ন ডলারের ঘড়ি রয়েছে। যেখানে একজন উত্তর কোরিয়ানের মাসিক গড় আয় ১৫০ ডলার সেখানে কিমের এক প্যাকেট সিগারেটের দাম ৫৫ ডলার।

কিমের শখের পেছনেও সে অনেক রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয় করেছে। এর মাঝে অন্যতম হল ৭০ মাইল লম্বা স্লোপের স্কি রিসোর্ট। এতে খরচ হয়েছে ৩৫ মিলিয়ন ডলার। তার আরেকটি শখ হল গলফ খেলা। তার অনেক গুলো গলফ রিসোর্ট রয়েছে যেগুলোর বাৎসরিক মেইন্টেন্সের খরচ প্রায় ৫ লাখ ডলার। এছাড়াও ঘোড়া সংগ্রহ তার পছন্দের একটি শখ। প্রচলিত আছে উত্তর কোরিয়ার বাৎসরিক বাজেটের ২০% খরচ তার ঘোড়া দেখাশোনা এবং মেইন্টেন্সের পেছনে যায়। এমিউজমেন্ট পার্ক তৈরির পেছনেও সে শত শত ডলার খরচ করেছে। আর এই সব খরচই সে করেছে রাষ্ট্রীয় অর্থে।

দানশীল কিম জং-উন

এটা বললে ভুল হবে সে সব খরচ শুধু নিজের জন্যই করে, সে তার কাছের অফিসিয়ালদের জন্য বড় অংকের গিফট করে থাকে। একবার সে তার টপ ১৬০ জন আফিসারদের জন্য হাই এন্ড মার্সিডিজ গাড়ি উপহার দিয়েছে যার আনুমানিক মূল্য ১২ মিলিয়ন ডলার।

এই সব খরচ যার ফিরিস্তি আমি দিলাম, যেগুলো শুধু বাইরের মানুষ জানে। এর বাইরেও তার হাজারও খরচের তালিকা আছে যা আমরা কেও জানিনা। আর মাত্রারিক্ত সম্পদ এবং বিলাসি জীবন কখনই ভাল না, আমি সিউর এই বিলাসি জীবন তাকে তার দায়িত্ব থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। সে যেটুকু শ্রম তার বিলাসি জীবনের পেছনে দিয়েছে তা দিয়ে সে অবশ্যই তার দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটাতে পারত।

বিঃ দ্রঃ কিম জং-উন

আমার এই ব্লগে তার পারিবারিক এবং প্রাত্যাহ্যিক জীবন এভয়েড করে গেছি ইচ্ছাকৃত ভাবেই। সেগুলো আর নাইবা বললাম। সংক্ষেপে যা বলেছি তা হজম করাই আমাদের জন্য দুঃসাধ্য ব্যাপার। পোষ্টে ইচ্ছাকরেই ছবি এভয়েড করা হয়েছে, আপনি চাইলে গুগল করে দেখে নিতে পারেন।

ধন্যবাদ।

পোষ্টটি ভাল লাগলে আপনার ফেসবুকে শেয়ার করতে ভুলবেন না। নিচের ফেসবুক শেয়ার বাটনে ক্লিক করে সহজেই শেয়ার করুন।

Previous articleইমিউনিটি সিস্টেম শক্তিশালী করবেন কিভাবে? ভিটামিন সি কি শুধুই কমলায়?
Next articleহযরত হুদ (আঃ), দুর্ধর্ষ আদ জাতি এবং আল্লাহর আযাব।
Mamun
যে ব্যর্থ সে অজুহাত দেখায়, যে সফল সে গল্প শোনায়। আমি অজুহাত নয় গল্প শোনাতে ভালবাসি। আসুন কিছু গল্প শুনি, নিজের গল্প অন্যকে শুনাই।

2 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here