কিম জং-উন এর পারিবারিক ইতিহাস জানতে হলে আমাদেরকে ফিরে যেতে হবে ১৯১০ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত। ওই সময়কালে কোরিয়া জাপানি শাসনের অধীনে ছিল। সেসময় বেশির ভাগ কোরিয়ান কৃষিকাজের সাথে জড়িত ছিল। ত্রিশের দশকে জাপান কোরিয়ার উত্তর অংশ এবং প্রতিবেশি মাঞ্চুরিয়াতে খনি, জলবিদ্যুৎ বাধ, মিল-কারখানা ইত্যাদি বিকশিত করে। কোরিয়ায় শিল্প শ্রমিকশ্রেনি দ্রুত বাড়তে থাকে এবং অনেক কোরিয়ান মাঞ্চুরিয়াতে চলে যায়। ফলাফল হিসেবে কোরিয়ার ভারি শিল্পের বিকাশ ঘটলেও কৃষিকাজের ব্যঘাত ঘটে। এজন্য কোরিয়ার রুক্ষ মাটিও অন্যতম কারণ।
কোরিয়ার অভ্যন্তরীন পাহাড়ি অঞ্চল এবং মাঞ্চুরিয়াতে একটি গেরিলা আন্দোলন গড়ে ওঠে যারা কিনা জাপানি সাম্রাজ্যবাদকে হয়রানি করতে থাকে। এই গেরিলা বাহিনীর অন্যতম ছিল কিম ইল-সাং। এই কিম ইল-সাং কে মনে রাখুন কারন ইনি হলেন আমাদের বর্তমান কিম জং উন এর পিতামহ।
উত্তর কোরিয়ার ইতিহাস শুরু হয় ১৯৪৫ সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে। যুদ্ধে জাপানের আত্মসমর্পণের ফলে ৩৮ ডিগ্রি উত্তর অক্ষরেখা বরাবর কোরিয়া বিভাজন হয়। সোভিয়েত ইউনিউন উত্তর অংশের এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিন অংশের দখল নেয়। সোভিয়েত ইউনিউন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দেশ দুটিকে একত্র করার ব্যপারে সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হলে ১৯৪৮ সালে দুটি পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। সোভিয়েত সমর্থিত উত্তর কোরিয়া এবং পশ্চিমা সমর্থিত দক্ষিন কোরিয়া। যদিও দুটি সরকারই নিজেদেরকে সমগ্র কোরিয়ার বৈধ সরকার হিসেবে নিজেদের দাবি করে।
কিম ইল-সাং ১৯৪৮ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত (১৯৯৪ সাল) উত্তর কোরিয়ার নেতৃত্ব দেন। তিনি উত্তর কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত এবং ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত উত্তর কোরিয়ার প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন।
কিম ইল-সাং ১৯৫০ সালে সমগ্র উপদ্বীপ অধিকারে আনার উদ্দেশ্যে দক্ষিন কোরিয়ায় হস্তক্ষেপ করেন কিন্তু জাতিসংঘের হস্তক্ষেপের কারনে ব্যর্থ হন। তিন বছর ব্যাপি এই যুদ্ধ চলে ১৯৫০ সালের ২৭ জুলাই, ২৫ লাখ বেসামরিক মানুষের ক্ষয়-ক্ষতির পরে সমাপ্তি হয়। ৩৮ ডিগ্রি উত্তর অক্ষরেখার পরিবর্তে কোরীয় অসামরিকীকৃত অঞ্চল দূর কোরিয়ার বিভক্তিকারি সীমানারুপে গৃহীত হয়। দুই পক্ষের মাঝে উত্তেজনা অব্যাহত থেকেই যায়। এই অবস্থার মাঝেই উত্তর কোরিয়া একটি শিল্প নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতি গড়ে তুলতে সমর্থ হয়।
কিম ইল-সাং এককথায় একজন স্বৈরাচার ছিলেন, তিনি নিজেকে একজন পরম পূজনীয় ব্যক্তি হিসাবে প্রতিষ্ঠা করেন। তার মৃত্যুর পর ১৯৯৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে তার জৈষ্ঠ পুত্র দায়িত্ব গ্রহন করেন। ইনি হলেন কিম জং-ইল, আমাদের কিম জং উন এর পিতা।
কিম জং-ইল ক্ষমতায় আসার পর তার পিতাকে মহান নেতা হিসেবে ঘোষনা করে এবং ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯৮ তাকে উত্তর কোরিয়ার সংবিধানে প্রজাতন্ত্রের শাশ্বত রাষ্ট্রপতি হিসাবে ঘোষনা করে। তার জন্মদিন অর্থাৎ ১৫ই এপ্রিল সাধারণ ছুটি এবং এই দিনটিকে সূর্যের দিন নামকরন করা হয়। তখন থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। এটাই কিম জং-উন এর পারিবারিক ইতিহাস।
২০১১ সালে কিম জং-ইল এর মৃত্যুর পর কিম জং উন নিজেকে উত্তর কোরিয়ার সরবোচ্চ নেতা হিসাবে ঘোষনা করেন যদিও তিনি তার পিতা-মাতার তৃতীয় ও সর্ব কনিষ্ঠ পুত্র। এর পূর্বাভাস ২০১০ সাল থেকেই পরিলক্ষিত হয়। তিনি আগে থেকেই নিজেকে রাজনৈতিকভাবে প্রস্তুত করতে থাকেন। ফলশ্রুতিতে তিনি বর্তমানে পৃথিবীর সর্বকনিষ্ঠ রাষ্ট্রপ্রধান।
২০১২ সালে ২৫শে জুলাই উত্তর কোরীয় রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম কিম জং উন এর বৈবাহিক সম্পর্ক প্রকাশ করে। যদিও কিছু সুত্র বলে ২০০৯ সালে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং ২০১০ সালে তিনি কন্যা সন্তান জন্ম দেন। তার স্ত্রীর নাম কিম রি সোল জু।
আমাদের আজকের ব্লগের নায়ক কিম জং উন এর জীবন-যাত্রা, তাকে নিয়ে প্রচলিত নানা কাহিনী এবং বর্তমান উত্তর কোরিয়ার অবস্থা জানার আগে কিম জং-উন এর পারিবারিক ইতিহাস জানা জরুরী ছিল। অপেক্ষায় থাকুন পরের পার্টের জন্য। ধন্যবাদ।
পরের পারটঃ
কিম জং-উন উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট এর বিলাসি জীবন-যাপন।
রাজতন্ত্রের দেশ……
বর্তমান বাংলাদেশ কি সেদিকেই যাচ্ছে?
Kharap dekhi na….
ধন্যবাদ কমেন্ট করার জন্য। সাথে থাকুন।
Nice to read it.. Expecting more historical topics..
ধন্যবাদ ফাহাদ, আপনার কমেন্ট আমাকে উৎসাহ জোগাবে আরও ইতিহাস বিষয়ক লেখার জন্য।