মার্গারিটা মামুন, এই মুহূর্তে নামটি অপরিচিত মনে হলেও ২০১৬ সালে নামটি বেশ হইচই ফেলে দেয় বাংলাদেশের পত্রপত্রিকায় আর সোশাল মিডিয়াতে। এখন নিশ্চই মনে করতে পারছেন, না পারলে আসুন জেনে নেই কে এই মার্গারিটা মামুন? কি তার পরিচয়? কেনই বা তাকে নিয়ে বাংলাদেশে পত্রপত্রিকায় এত হইচই হয়েছিল।
প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার কাশীপুর গ্রামের ছেলে। ১৯৮৩ সালে শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে তিনি রাশিয়ায় যান। পরে সেখানেই স্থায়ী হন। বিয়ে করেন রাশিয়ান নারি আন্না কে। সন্তান মার্গারিটা মামুন, জন্ম ১৯৯৫ সালের ১ নভেম্বর রাশিয়ার মস্কোতে। প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল এবং আন্না দম্পতির পুত্র সন্তানের নাম ফিলিপ্স আল মামুন।
মা আন্না একজন পেশাদার রিদমিক জিমন্যাস্ট ছিলেন।মেয়েও সাত বছর বয়স থেকেই রিদমিক জিমন্যাস্টিকস চর্চা শুরু করেন। ২০০৫ সাল থেকেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিচরণ তার। লিটা জুনিয়র (১২ বছর বয়স পর্যন্ত) হিসেবে অনেকগুলো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশের হয়ে।
২০১৬ সালের ব্রাজিল অলিম্পিকে মার্গারিটা মামুন রাশিয়ার হয়ে অংশ গ্রহন করেন- এর আগে থেকেই তিনি আলোচনায় চলে আসেন। ২০১৬ অলিম্পিকে মার্গারিটা মামুন স্বদেশি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইয়ানা কুদ্রিয়াভসেভাকে পেছনে ফেলে স্বর্ণ জয় করেন।রাশিয়া কাঁপানো এই জিমন্যাস্টিক কন্যার খেতাব দেওয়া হয়েছিল ‘দ্য বেঙ্গল টাইগার’।
বাবা প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, জুনিয়র পর্যায়ে মার্গারিটা কিছুদিন বাংলাদেশের পতাকা তুলে প্রতিযোগিতা করেছেন। সেটি অল্প সময়ের জন্য। মস্কোর মেয়ে শেষ পর্যন্ত সিনিয়র পর্যায়ে মায়ের দেশ রাশিয়াকেই বেছে নিয়েছেন।
স্বর্ণ জয়ের পর ইন্টারভিউয়ে বলেছে, দুই দেশের জন্য তিনি স্বর্ণ জয় করেছেন। মার্গারিটা মামুনের দ্বৈত নাগরিকত্ব (এখন শুধু রাশিয়ার নাগরিক) থাকায়, বাংলাদেশের অনেকেই তাই মনে করছেন, মার্গারিটার এই সাফল্য কিছুটা হলেও বাংলাদেশেরও সাফল্য। কিন্তু আসলেই কি তাই? না, তা কখনই নয়। কিন্তু এই সাফল্যের অংশীদার বাংলাদেশও হতে পারত। কীভাবে?
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং বিভিন্ন প্ত্রপত্রিকাতেও লেখা হয়েছে যে মার্গারিটা মামুনের যখন বয়স অল্প ছিল তখন তাঁর বাবা চেয়েছিলেন সে যেন বাংলাদেশের হয়ে খেলতে পারে।
এই কথা কতটা সত্য? বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিক ফেডারেশন কি বলে এ ব্যাপারে?
মি: রহমান জানালেন তাঁরা এ বিষয়ে জানতেন এবং মি: মামুনও দেশের হয়ে মেয়েকে খেলাতে চেয়েছিলেন এটাও সত্য বলে স্বীকার করলেন বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিক্স ফেডারেশনের মহাসচিব।
“জিমন্যাস্টিকে পরিবেশ লাগে,পুরোপুরি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত জিমন্যাশিয়াম দরকার। রিদমিক জিমন্যাস্টিকে তেমন কোচ নেই। তাছাড়া আমাদেরটা অলিম্পিক স্ট্যান্ডার্ডেও নয়। তাছাড়া আর্থিক বিষয়ও জড়িত থাকে। এগুলো বুঝতে পেরে তিনি হয়তো চলে গেছেন”-বলছিলেন আহমেদুর রহমান। মার্গারিটাকে বাংলাদেশের জিমন্যাস্টিক্স ফেডারেশনে রাখতে না পারাকে বড় ব্যর্থতা বলেই মনে করেন মি: রহমান।
বাবা প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন ২৬ আগস্ট, ২০১৬ মার্গারিটার স্বর্ণ জয়ের ঠিক ৬ দিন পর মারা যান। তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন।
২০০৮ এর অলিম্পিকে সিলভার জয়ি রাশিয়ান সাতারু আলেকজান্ডার সুকোরুকোভকে বিয়ে করেন আমাদের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্গারিটা মামুন।
ধন্যবাদ সবাইকে।