নোভেল করোনা ভাইরাস (Novel Coronavirus) এর সংক্রমণের কারণে সারা বিশ্ব এখন এক প্যান্ডেমিক বা অতিমারী পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। নোভেল করোনা ভাইরাসের ভয়াল থাবা সারা বিশ্বে এমনভাবে গ্রাস করেছে যে করোনা ভাইরাস প্রথমে এপিডেমিক বা মহামারি পর্যায়ে থাকলেও এখন তা আর এপিডেমিক পর্যায়ে নেই, চলে গেছে প্যান্ডেমিক বা অতিমারী পর্যায়ে। আর তাই ভ্যাকসিন শব্দটির সাথে আমরা এখন সবাই কমবেশি পরিচিত কিন্তু ভ্যাকসিন কিভাবে কাজ করে তা কি আমরা সবাই জানি?

আজকের ব্লগে আমি আলোচনা করব ভ্যাকসিন কাকে বলে, ভ্যাকসিন আবিস্কারের ইতিহাস ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে। আশা করি আপনার ভাল লাগবে এবং একই সাথে কাজে লাগবে।

ভ্যাকসিন নিয়ে আমাদের চ্যানেলের ভিডিও দেখে জেনে নিন যত অজানা তথ্য

ভ্যাকসিন কাকে বলে

ভ্যাকসিন হল এক প্রকার জৈব রাসায়নিক যৌগ যা আমাদের শরীরে এন্টিবডি তৈরির প্রক্রিয়াকে উত্তেজিত করে দেহে কোন নির্দিষ্ট রোগের বিরুদ্ধে এন্টিবডি বা প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরিতে সহয়ায়তা করে। ভ্যাকসিন শব্দের বাংলা অর্থ টিকা বা প্রতিষেধক।

উপরের সংজ্ঞা যদি আপনার জন্য কঠিন বলে মনে হয় তাহলে সহজভাবে বললে বলতে হয়- টিকা বা ভ্যাকসিন হল এমন এক প্রকার ঔষধ যা আপনি আগে থেকে খেয়ে নিলে তা আপনাকে কোন নির্দিষ্ট রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা দিবে।

ছোটবেলায় আমরা অনেকেই বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক নিয়েছি। যক্ষা, পোলিও, হাম, কলেরা, ডিপথেরিয়া, হুপিংকাশি ইত্যাদি টিকা আমরা খুব ছোট বেলাতেই নিয়ে নিয়েছি।

ভ্যাকসিন বা টিকা সাধারনত মানব দেহে ত্বকে সূচ ফুটিয়ে কিংবা মুখে খাবার মাধ্যমে প্রবেশ করান হয়ে থাকে। অনেক সময় নাকে স্প্রে করার মাধ্যমেও ভ্যাকসিন দেয়া হয়। শুধু মানুষই না, হাঁস-মুরগী, গরু-ছাগল সহ অন্যান্য পোষা প্রাণীদেরও আমরা টিকা দিয়ে থাকি।

ভ্যাকসিন আবিস্কারের ইতিহাস

টিকা বা ভ্যাকসিন আবিস্কারের আগে পৃথিবীর অবস্থা ছিল এককথায় ভয়াবহ। পৃথিবীর ইতিহাস যদি আমরা খেয়াল করে দেখি তাহলে দেখব প্রায়ই মহামারিতে কোটি কোটি মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। এখনকার সময়ে যেসব রোগ খুব সহজেই আরোগ্য করা যায় সেসব রোগেও অতীতে অনেক মানুষ মরেছে।

ইতিহাস ঘাটলে চীনেই প্রথম টিকার ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায়। দশম শতাব্দিতে এক চিকিৎসা পদ্ধতির খোঁজ পাওয়া যায় যেখানে অসুস্থ রুগীর শরীর থেকে টিস্যু নিয়ে সুস্থ মানুষের শরীরে বসিয়ে দেয়া হত। একে বলা হত “ভ্যারিওলেশন” ।

এর আট শতাব্দি পর ব্রিটিশ ডাক্তার এডওয়ার্ড জেনার খেয়াল করে দেখেন দুধ দোয়ায় এমন সব গোয়ালারা গরুর বসন্ততে আক্রান্ত হলেও মরনঘাতী  গুটি বসন্তে তারা আক্রান্ত হচ্ছেনা, হলেও তা খুবই বিরিল ঘটনা। তিনি খুব অবাক হলেন এবং একই সাথে পৃথিবীর ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা ঘটে গেল। ব্যাপারটি অবাক করার মত তাইনা?

আপনার জানার জন্য বলে রাখি, সেই সময়কালে গুটি বসন্ত ছিল খুবই ভয়ানক রোগ। প্রতি ১০০ জন গুটি বসন্তে রুগীর মধ্যে ৩০ জন মারা যেত। আর যারা মারা যেতনা তাদেরও অবস্থা খুবই ভয়ানক- হয় তারা অন্ধ হয়ে যেত নইলে তাদের মুখে মারত্মক ক্ষত চিহ্ন হয়ে যেত। যা তাকে সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হত।

ডাক্তার এডওয়ার্ড জেনার এরপর মানব দেহে এর ট্রায়াল চালান। গরুর বসন্ত যেটি কিনা মানুষের জন্য তেমন কোন ক্ষতিকর কিছু না তার থেকে পুঁজ সংগ্রহ করে, ১৭৯৬ সালে জেমস ফিপ্স নামের আট বছরের এক ছেলের গায়ে ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রবেশ করান।

এরপর ছেলেটি স্বাভাবিক ভাবেই গরুর বসন্ত রোগে আক্রান্ত হয়। যেহেতু রোগটি তেমন ভয়ানক নয় তাই দ্রুতই সে সুস্থ্য হয়ে ওঠে। এবার তার শরীরে গুটি বসন্তের জীবানু ইঞ্জেক্ট করা হয়।

ফলাফল দেখে ডাক্তার এডওয়ার্ড জেনার চমকে উঠলেন। ছেলেটার আর গুটি বসন্ত হলনা। গরুর বসন্তের জীবানু ছেলেটিকে ভয়ংকর গুটি বসন্ত থেকে রক্ষা করেছে।

১৭৯৮ সালে ডাক্তার এডওয়ার্ড জেনারের এই পরিক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। বিশ্ব উপহার পেল নতুন এক শব্দ ভ্যাকসিন। ভ্যাকসিন শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ ভ্যাক্সা থেকে। ভ্যাক্সা শব্দের অর্থ গরু।

ভ্যাকসিন কিভাবে কাজ করে

মানব দেহে ভ্যাকসিন কিভাবে কাজ করে বুঝতে হলে আপনাকে অতি বিজ্ঞ হবার প্রয়োজন নেই। খুব সহজ ভাষায় আমি আপনাকে বুঝিয়ে দিচ্ছি।

প্রথমে আপনাকে বুঝতে হবে কোন জীবানু দ্বারা আমাদের দেহ আক্রান্ত হলে তার আচরন কেমন হয়। ধরুন কোন জীবানু (ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া) মানব দেহে আক্রমণ করেছে। আক্রমণ করা মানেই হচ্ছে জীবানুটি মানব দেহে প্রবেশ করে দেহের কোন অঙ্গকে আক্রান্ত করে নিজের বংশ বিস্তার শুরু করে দেয়।

যার কারণে আমাদের শরীরে সংক্রমণ বা ইনফেকশন তৈরি হয় এবং আমরা অসুস্থ হয়ে যাই। আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেম আক্রমণকারী জীবানুকে শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে এবং এর বিরুদ্ধে এন্টিবডি তৈরি করে। এন্টিবডি আসলে এক ধরনের বিশেষায়িত প্রতিরোধী প্রোটিন।

তো এই এন্টিবডিগুলো তৈরি হবার সাথে সাথেই তাদের প্রথম কাজ হল জীবানুগুলোর সাথে যুদ্ধ করা এবং যুদ্ধ করে জীবানুগুলোকে ধ্বংস করে ফেলা।

হয়ত প্রথমবার সে সব জীবানুকে ধ্বংস করে ফেলতে নাও পারে, তাই আমরা অসুস্থ হই। এবং যতদিন যুদ্ধ চলতে থাকে আমরা অসুস্থ থাকি। যখন সে যুদ্ধে জয়ী হয় আমাদের শরীর তখন সুস্থ হয়।

এন্টিবডির দ্বিতীয় কাজ হল, একই জীবাণুর হাত থেকে আমাদের শরীরকে ভবিষ্যতে রক্ষা করা। এন্টিবডি এই জীবানুকে চিনে রাখে এবং আমাদের রক্ত প্রবাহের সাথে রয়ে যায়।

ফলে এই জীবাণু যদি বহু বছর পরেও আবার আক্রমণ করে আমাদের রক্তে থাকা এন্টিবডি জীবানুকে চিনে ফেলে এবং যুদ্ধে খুব সহজেই জয়ী হয়। আমরা আর আক্রান্ত হইনা।

যেকারনে দেখবেন হাম, চিকেন পক্সের মত জীবানুর সংক্রমণ জনীত রোগ আমাদেরকে কখনই দ্বিতীয়বার আক্রান্ত করতে পারেনা। এটিই আমাদের দেহের ইমিউনিটি সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা।

তবে, আপনার মনে প্রশ্ন আসতেই পারে ভাইরাস জ্বর কিংবা সর্দি কাশি কেন আমাদের বারবার আক্রমণ করে এবং আমরা আক্রান্ত হই? এটাও তো জীবাণু ঘটিত, তাই না?

এক্ষেত্রে উওর খুবই সহজ- সর্দি জ্বরের ভাইরাস বার বার তার চরিত্র পরিবর্তন করতে পারে। তাই প্রতিবার নতুন নতুন পরিচয়ে সে আমাদের শরীরে আক্রমণ চালায়। আমাদের শরীর তাকে চিনতে পারে না। একই ভাইরাস হলে শরীর তাকে আইডেন্টিফাই করে এবং প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে। একারনেই আমরা বারবার সর্দি জ্বরে আক্রান্ত হই।

এবার আসুন ভ্যাকসিন কিভাবে কাজ করে তার ব্যাপারে বলি।

ভ্যাকসিন আসলে আমাদের শরীরকে কোন নির্দিষ্ট রোগ-জীবানু শনাক্ত করতে এবং তাদের সাথে লড়াই করতে প্রশিক্ষন দেয়। কি? শুনতে অবাক লাগছে? আসুন আরও বিস্তারিত এবং সহজ ভাষায় বলি।

কোন নির্দিষ্ট রোগের ভ্যাকসিন মানে হল সেই রোগের দুর্বল বা মৃত ব্যাকটেরিয়া রোগির দেহে ঢুকিয়ে দেয়া, একে বলা হয় এন্টিজেন। ভয় পাবেন না প্লিজ। এতে মোটেই ভয়ের কিছু নেই। জীবাণু দুর্বল হবার কারণে আমাদের অসুস্থ্য হবার কোন কারণ নেই, আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেম খুব সহজেই তাকে কাবু করে ফেলে যুদ্ধে জয়ী হয়।

কিন্তু লাভের মধ্যে যা হয়- আমাদের শরীর এই জীবাণু সম্পর্কে অবগত হয় বা চিনে রাখে এবং এন্টিবডি তৈরি করে রক্তে প্রবাহিত করে দেয়। পরবর্তীতে একই জীবাণু আক্রমণ করলে সহজেই তাকে চিনে ফেলে এবং আগের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে যুদ্ধ করে কাবু করে ফেলে।

অনেক সময় ভ্যাকসিন একাধিক ডোজের হতে পারে। যেমন করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন দুই ডোজে সম্পন্ন হয়।

আশা করি ভ্যাকসিন আমাদের শরীরে কিভাবে কাজ করে তা পরিস্কার বুঝতে পেরেছেন।

ভাইরাসের গঠন
একটি সাধারণ ভাইরাসের গঠন

ভ্যাকসিন কিভাবে তৈরি করা হয়

ভ্যাকসিন তৈরি করার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া জানতে হলে অনেক কিছুই বলতে হয়, হয়ত অন্য আরেক ব্লগে আপনাদের জানাব। তবু আজ যেহেতু ভ্যাকসিন নিয়ে লিখছি তাই কিছুটা ধারনা দিয়ে রাখি।

ভ্যাকসিন তৈরি করার কয়েকটি প্রক্রিয়া আছে, যার মধ্যে কয়েকটি হল-

ভাইরাস দুর্বল করার মাধ্যমে

এই প্রক্রিয়ায় ভাইরাসগুলোর জিনগুলোকে ল্যাবরেটরিতে পরিবর্তিত করা হয় যাতে তারা খুবই দুর্বল হয়ে যায়। ফলে তাদের যখন ভ্যাকসিন আকারে মানব দেহে প্রবেশ করা হয় তারা খুব দুর্বলভাবে বংশ বিস্তার করতে পারে। এবং আমাদের ইমিউন সিস্তেম তাদের সাথে যুদ্ধে জয়ী হয়। রুবেলা, হাম কিংবা মাম্পসের ভ্যাকসিন এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি করা হয়।

ভাইরাসকে ইনএক্টিভ করার মাধ্যমে

এই সিস্টেমে ভাইরাসকে এক প্রকার রাসায়নিক দিয়ে সম্পূর্ণরুপে মেরে ফেলা হয়, যাতে আর সে কোন রকম বংশ বিস্তার করতে না পারে। এই ভ্যাকসিন যখন মানব শরীরে প্রবেশ করানো হয় সে আর বংশবিস্তার কিংবা রোগ তৈরি করতে সক্ষম হয়না। কিন্তু মানব দেহ ঠিকই এন্টিবডি তৈরি করে নেয়। পোলিও, জলাতংক, হেপাটাইটিস এ, ইনফ্লুয়েঞ্জার ভ্যাকসিন এভাবেই তৈরি করা হয়।

জীবাণুর একটি অংশ ব্যবহারের মাধ্যমে

জেনে রাখুন, জীবাণুর শরীর গঠিত হয় দুইটি অংশ দিয়ে। একটি তার বাইরের অংশ যেটা প্রোটিন, আর ভেতরের অংশ আরএনএ। এ প্রক্রিয়ায় জীবাণুর ভেতরের অংশ আলাদা করে শুধু প্রোটিন অংশকে মানব দেহে প্রবেশ করানো হয়, ফলে জীবাণু বংশ বিস্তার করতে পারেনা।

আমাদের শরীর এই প্রোটিনের আবরন দেখে তার সাথে যুদ্ধ করে সহজেই জয়ী হয়। যেহেতু জীবাণু বংশ বিস্তার করতে পারে না তাই খুব সহজেই যুদ্ধে জয়ী হয়ে এন্টিবডি তৈরি করতে পারে। হেপাটাইটিস বি এর ভ্যাকসিন এভাবেই তৈরি করা হয়েছে।

জীবাণু থেকে নিঃসৃত টক্সিন শোধন করার মাধ্যমে

টক্সিন এক প্রকার রাসায়নিক পদার্থ যা আমাদের দেহের জন্য ক্ষতিকর। জীবাণু থেকে এই টক্সিন আলাদা করে ফেলা হয়। কিছু জীবাণু আছে যা বংশ বিস্তার না করে শুধুমাত্র এই ক্ষতিকারক টক্সিন উৎপাদন করেই আমাদের দেহে রোগ সৃষ্টি করে।

এধরনের জীবাণুর ভ্যাকসিন তৈরির সময় টক্সিনগুলো মেরে ফেলা হয়। টিটেনাস, ডিপথেরিয়া, হুপিংকাশির মত রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর ভ্যাকসিন এভাবেই তৈরি করা হয়।

ভ্যাকসিনের সাফল্য

পৃথিবীর মহামারীর ইতিহাস যদি আমরা দেখি, তাহলে খেয়াল করব কোটি কোটি মানুষ বিভিন্ন সময়ে মহামারিতে মারা গেছে। কিন্তু গত এক শতাব্দিতে  এই সংখ্যা অনেক কমে গেছে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়

ষাটের দশক থেকে হামের টিকা দেয়া শুরু হয়। এর আগে প্রতি বছর প্রায় ২৬ লাখ লোক হাম রোগের কারণে প্রান হারাতো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী ২০০০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত হামের টিকার ব্যবহারের কারণে হাম রুগীর মৃত্যুর হার শতকরা ৮০% কমে এসেছে।

এইত খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, কয়েক দশক আগেও আমাদের এই সুন্দর পৃথিবীতে পোলিওতে আক্রান্ত হয়ে লাখ লাখ লোক পঙ্গুত্ব অথবা মৃত্যুবরন করত। এখনকার পৃথিবীতে পোলিও রোগ একেবারে নেই বললেই চলে।

গুটি বসন্তের কথা তো কিছুক্ষন আগেই বললাম, একসময় গুটি বসন্ত রোগে গ্রামের পর গ্রাম উজাড় হয়ে যেত। অথচ ভ্যাকসিন ব্যবহারের কারণে আজ পৃথিবীকে গুটি বসন্ত মুক্তই বলা যায়।

কলেরাও এমন এক রোগ। একসময় কোন গ্রামে কলেরা হয়েছে শুনলে গ্রামবাসী ভয়ে সেই গ্রাম ছেড়ে পালাত। অথচ আজ ভ্যাকসিন আবিস্কারের এবং তার ব্যবহারে পৃথিবী আজ প্রায় কলেরা মুক্ত।

এরকম আরও অনেক উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। কিন্তু আমার আজকের ব্লগের বিষয় বস্তু মহামারি নয় বলে আর আগাচ্ছি না। মহামারী বনাম আমাদের সুন্দর পৃথিবী নামে আমার আরেকটি ব্লগ আছে সেখানে বিস্তারিত জানতে পারেন যারা আগ্রহী পাঠক।

ভ্যাকসিন ব্যবহারে কেন এত অনীহা

মানুষ কখনই নতুনকে বরন করে নিতে পারেনি। এটা মানুষের একটি স্বভাবজাত বৈশিষ্ঠ্য। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এমনটি হয়ে এসেছে প্রথম ভ্যাকসিন আবিস্কারের সময় থেকেই।

কখনও ধর্মীয় কারণে, কেও কেও মনে করতেন টিকার মাধ্যমে মানব দেহে অপবিত্র কিছু মানুষের শরীরে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। এতে তার শরীর অপবিত্র হয়ে যাবে।

কখনও কোন মানবতাবাদী দল, তারা মনে করতেন টিকা বা ভ্যাকসিন ব্যবহার করা মানে মানুষের অধিকার খর্ব করা। এটা মানবাধিকার লংঘন।

কেও কেও মনে করেন ভ্যাকসিনের মাধ্যমে শত্রু পক্ষের কোন দেশ তাদের শরীরে কোন জীবাণু প্রবেশ করিয়ে দিতে পারে, যাতে তারা বন্ধাত্বের শিকার হতে পারে।

কেও কেও মনে করেন টিকা বা ভ্যাকসিন শিশুদের দেয়ার কারণে তারা অটিজম এবং পেটের অসুখে পরতে পারে।

তবে এটা ভাবা অমূলক যে শুধু মাত্র তৃতীয় বিশ্বেই এই সমস্যা রয়েছে। খোদ ব্রিটেনের মত অগ্রসর জাতিও এই কুসংস্কারে জর্জরিত। ২০০৪ সালে ব্রিটেনে এক লক্ষ শিশু টিকার হাত থেকে বঞ্চিত হয়। এর ফলে সে দেশে হামের প্রকোপ বেড়ে যায়।

ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন তিনি টিকা বিরোধী দলের অন্তরভুক্ত। আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও বলেছিলেন টিকার সাথে সম্পর্ক আছে অটিজমের। যদিও পরে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।

তবে বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থা বলেছে টিকার কারণে এই মুহূর্তে প্রতি বছর ২০-৩০ লক্ষ শিশুর জীবন বাচানো সম্ভব হচ্ছে।

করোনার ভ্যাকসিন

সারা বিশ্বে এখন করোনার ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে। আমাদের দেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশ সরকার ২৫ বছরের উপরে যাদের বয়স তাদের ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। সুরক্ষা ওয়েবসাইটে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে আজই আপনার ভ্যাকসিন নিশ্চিত করুন।

উল্লেখ থাকে যে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে চীনের হুবেই প্রভিন্সের উহান শহরে প্রথম করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা যায়। এরপর তা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পরে।

বিশ্বের নামকরা কিছু প্রতিষ্ঠান করোনার ভ্যাকসিন আবিস্কার করেছে। এর মধ্য অন্যতম হলঃ

ক্রমিক নং টিকার নাম  উৎপাদনকারী দেশ  কার্যকারিতার হার 
মর্ডানা আমেরিকা ৯০%-৯৪%
ফাইজার জার্মানি ৭০%-৯২%
সিনোফার্ম চীন ৭৮.১%-৯০%
কোভিশিল্ড ইংল্যান্ড ৬০%-৮৬%

আমাদের সবার উচিত সকল কুসংস্কার ভুলে দ্রুত ভ্যাকসিন নিয়ে নেয়া। আশা করা যায় খুব দ্রুতই আমরা করোনা ভাইরাসের এই ভয়াল থাবা থেকে রেহাই পাব। লকডাউন কিংবা কোয়ারেন্টাইনের মত শব্দগুলো আবার ডিকশনারীতে বন্দি হবে।

আমার এই ব্লগটি যদি আপনার কাজে লেগে থাকে কিংবা আপনার ভাল লেগে থাকে নিচের কমেন্টে আপনার ভাল লাগার অনুভূতি জানিয়ে যাবেন। এতে আমি উতসাহিত হব। পরবর্তীতে আবার হাজির হব অন্য আরেকটি লেখা নিয়ে।

ভাল থাকবেন সবাই।

তথ্যসূত্রঃ বিবিসি, নানা পত্রিকা এবং গুগল সার্চ থেকে সংগৃহীত। কোন তথ্য ভুল পেলে আমাকে উপযুক্ত প্রমান সহ জানালে উপকৃত হব এবং আমি লেখা এডিট করে দিব।

Previous articleকৃমির ঔষধ খাবার নিয়ম এবং কৃমি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় কি
Next articleজলাতংক রোগের চিকিৎসা, জলাতংক রুগী পানি দেখে ভয় পায় কেন?
Mamun
যে ব্যর্থ সে অজুহাত দেখায়, যে সফল সে গল্প শোনায়। আমি অজুহাত নয় গল্প শোনাতে ভালবাসি। আসুন কিছু গল্প শুনি, নিজের গল্প অন্যকে শুনাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here