ব্লগ ও ইউটিউব

২০২০ সালের শুরু থেকেই করোনা ভাইরাসের আক্রমনে সারা বিশ্বের সাথে সাথে আমাদের বাংলাদেশও আক্রান্ত হয়েছে। তো প্রথম বছর লকডাউনের সময় খুব ভয়ে ভয়ে বাসায় এক কথায় গৃহবন্দী অবস্থায় জীবন কাটিয়েছি। আমার আজকের লেখায় সেই গৃহবন্দী অবস্থার শুরু থেকে আজ পর্যন্ত যখন আমি ভ্যাকসিন নিয়ে নিয়েছি এই মধ্যবর্তী সময়ের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে চাচ্ছি। যদি কেও এই লেখা পড়ে থাকেন তার নিজের অবস্থার সাথে মিলিয়ে নিতে পারবেন আশা করি। এইসময়ের মাঝেই আমার ব্লগ ও ইউটিউব চ্যানেলের যাত্রার শুরু।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মাঝ সময়ের দিকে প্রথম করোনা ভাইরাস বা কোভিড -১৯ এর কথা জানতে পারি, ঐ সময় শুধুমাত্র চায়নার এক শহরেই এটি সীমাবদ্ধ বলে জানতাম। ইন্টারনেট আর টিভিতে প্রতিদিন খবর নিতাম চায়নার ঐ শহরের।

আস্তে আস্তে অন্যান্য দেশেও অল্প অল্প করে ছড়িয়ে যেতে লাগল করোনার মরন ছোবল। সম্ভবত ইউরোপের দিকেই ইটালি এবং ফ্রান্সে এর ভয়াবহতা দেখা গেল। প্রতিদিন এসব দেশে ৭০০-৮০০ করে মানুষ মারা যেতে শুরু করল। এরপর আমেরিকাতে কিছু মানুষ আক্রান্ত হল। এপিডেমিক থেকে করোনা ভাইরাস হয়ে গেল প্যান্ডেমিক।

মার্চের দিকে বাংলাদেশেও করোনা হানা দিল। এর মাঝে ইটালি থেকে কিছু বাংলাদেশি প্রবাসী দেশে ফিরল। সব মিলিয়ে বাংলাদেশেও এর প্রকোপ দেখা দিল। বাংলাদেশ সরকার ২৪ কিংবা ২৫ মার্চ থেকে লকডাউন ঘোষনা দিয়ে দিল।

সেই থেকেই বন্দিজীবন শুরু হয়ে গেল আমাদের।

প্রথম লকডাউনঃ আমার প্রিপারেশন

লকডাউন শুরু হবার কিছুদিন আগে থেকেই আমি শুনছিলাম বাংলাদেশে লকডাউন দিবে, মনে মনে আমিও প্রিপারেশন নিচ্ছিলাম। প্রতিদিন অফিস থেকে আসার পথে কিছু কিছু করে শুকনো জিনিষ কিনে আনছিলাম। যেমন- তেল, নুডুলস, ডাল, চাল ইত্যাদি। অনলাইন থেকেও বেশ কিছু জিনিষ ওয়ার্ডার দিয়ে দিয়েছিলাম। এছাড়া মাছ, মুরগী এসবও কিছু কিছু করে কিনে রেখেছিলাম।

২৫ মার্চ, আমার অফিসও সিদ্ধান্ত নিল সবাই ছুটিতে চলে যাবে। সবাইকে বেতন দিয়ে ছুটি দিয়ে দেয়া হল। আমি সন্ধার পর আরও কিছু জিনিষ কিনে বাসায় ফিরলাম।

আমার কলিগদের অনেকেই অনির্দিষ্টকালের জন্য ঢাকা ছেড়ে চলে গেল। সে এক অন্যরকম অনুভুতি সবার মাঝে।

করোনা নিয়ে প্রথম দিকের ভাবনা

করোনা নিয়ে প্রথম দিকে অনেক ধরনের নিউজ আসতে শুরু করল। কেও বলে মাস্ক পড়তে কেও বলে মাস্ক করোনা থেকে রক্ষা করতে পারেনা। কেও বলে ঘরে থাকুন। ১৪ দিন ঘরে থাকলে এর সংক্রামণ কমে যাবে। কেও বলে করোনা বাতাসে ছড়ায়, কেও বলে নিউজপেপারে ছড়ায়, নানা ধরনের কথা চলতে থাকল।

আমি ব্যক্তিগতভাবে বাসার বাইরে যাওয়া একদমই বন্ধ করে দিলাম, শুধু আমি যে গেলামনা তাই না, আমার বাসায় বৃদ্ধ বাবা-মা থাকেন তাদেরও বাইরে যাওয়া বন্ধ। ৪/৫ দিন পরে যখন বাইরে গেলাম শরীর কেমন শির শির করছিল। গা ছমছম করতে লাগল।

২৫-৩০ মিনিট বাইরে থেকে বাসার কাঁচা বাজার করে নিয়ে আসলাম, যেন আর ৭ দিন বাইরে যেতে না হয়। প্রতিদিনের এক আজব রুটিন হয়ে গেল খাও দাও টিভিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুলেটিন শুন আর ভিডিও কলে বন্ধু-বান্ধবের সাথে আড্ডা দাও।

এর মাঝেই শুরু হয়ে গেল রোজা। রাত জেগে সেহেরি খেয়ে একবারে ফজরের নামাজ পড়ে দিতাম ঘুম। এভাবেই জীবন চলতে লাগল।

অনলাইনে ইনকামের ভাবনা শুরু

এরই মাঝে একদিন আমার হঠাৎ মনে হল কেন আমি অনলাইনে কিছু করার চেষ্টা করছিনা। বলে রাখি আমার কম্পিউটারের বেসিক জ্ঞান মোটামুটি ভাল। অনেককিছু ভালই বুঝি। আর ওয়েবসাইট নিয়ে আমার একটু ইন্টারেস্ট আগে থেকেই ছিল। সবসময়ই ভাবতাম আমার যদি একটা ওয়েবসাইট থাকত! খুবই ভাল হত।

১৭ এপ্রিল রাত বারটার পর, শুয়ে শুয়ে এসবই ভাবছিলাম। এমন সময় আমার মনে হলে একটা ডোমেইন কিনি। যেই ভাবা সেই কাজ। ঐ সময়ই সাথে সাথে একটি ডোমেইন কিনে ফেলি রেডিটুরিডিং.কম। কি করব জানিনা কিন্তু কিনে ফেললাম। অতকিছু না ভেবেই। ডোমেইন কিনলাম হোস্টিং বাংলাদেশ থেকে।

আমি আসলে ডোমেইন আর হোস্টিং কি জিনিষ সেটাই ভালমত বুঝতাম না। কিন্তু কিনে ফেললাম। দেখি কি করা যায় এই ভেবে। সেই থেকে শুরু।

ডোমেইন দিয়ে আমি এখন কি করব?

ডোমেইন তো কেনা হল। কিছু নাবুঝেই ওয়ার্ডপ্রেস ইন্সটল করে ফেললাম। ওয়ার্ডপ্রেস নিয়ে গুতাগুতি চলতেই লাগল। এর মাঝে আমার এক ছোটভাই অন্য এক কারণে ফোন দিয়ে বসল। ওর নাম রোহান।

আমি কিভাবে ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে আমার প্রথম ওয়েবসাইট তৈরি করে ফেললাম জানুন এই ব্লগে

কথায় কথায় বলে ফেললাম, রোহান আমি তো একটা ডোমেইন কিনে ফেলেছি। রোহান শুনে খুব খুশি হল। ওর কাছ থেকে আবার ওয়ার্ডপ্রেস ইন্সটল করে নিলাম। টানা চার ঘন্টা ফোনে কথা বললাম। সাথে টিমভিউয়ার দিয়ে রোহান আমার পিসিতে কিছুকাজ করে দিল।

ইয়োস্ট ইন্সটল করে দিন, সাইট ম্যাপ তৈরি করে দিল। গুগল সার্চ কন্সোলে আমার সাইট এড করে দিল। আসলে রোহান আমার চোখ খুলে দিল। শুরু করলাম পড়াশোনা।

কি পড়লাম, কি শিখলাম

পড়াশোনা করতে লাগলাম, ব্যাকলিংক, কিওয়ার্ড, ডু-ফলো-নোফলো লিংক, সার্চ ইঞ্জিন, এসইও ইত্যাদি নিয়ে প্রতিদিন ঘাটতে লাগলাম। সাথে নিজের পেইজে এপ্লাই করতে থাকলাম। বেশ মজাই পাচ্ছিলাম।

একে তো অফিস নাই, কাজ কামও তেমন কিছু নাই। তাই ভালই আগাচ্ছিল। সাথে টুকটাক লেখালেখি তো আছেই। এদিকে এডসেন্স নিয়ে চিন্তা করতে থাকলাম। এডসেন্স এর মাধ্যমে ব্লগ থেকে কিভাবে ইনকাম করা যায় জেনে নিন

সাইটের বয়স তিনমাস হতেই অন্যান্য সব ক্রাইটেরিয়া ফুলফিল হতেই গুগল এডসেন্সের জন্য এপ্লাই করে দিলাম। তিন দিনের মাঝেই এপ্রোভাল পেয়ে গেলাম। বেশ খুশিখুশি ভাব চলে এল। আমার নিজের সাইট আছে সাথে আবার এডসেন্স। ব্যাপারই আলাদা।

অফিস আবার খুলে গেল

৭ জুন ২০২১, অফিস আবার খুলে গেল। লকডাউন তখনও ছিল কিনা মনে নেই। বেতন ততদিনে ৮০% করে দিয়েছে অফিস। আমরা তাতেও খুশি। বেতন তো পাচ্ছি। অনেকের তো চাকরিই নাই।

অল্প অল্প করে কাজ কর্ম আবার শুরু হতে লাগল। আমিও আবার ভুলে যেতে থাকলাম নিজের ওয়েব সাইটকে। তবে এর মাঝে একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলে নিয়েছি। ৩/৪ টা ভিডিও আপলোড করে দিয়েছি।

তেমন করে আর মনে থাকলনা, আমার সাইট, ইউটিউব চ্যানেল ইত্যাদি। কাজের চাপে ভুলেই গিয়েছিলাম। মাঝে মাঝে কিছু লেখা দিলেও ইউটিউব চ্যানেলে আর ভিডিও দেয়া হয়নি।

এপ্রিল ২০২১৪ আবার নতুন লকডাউন

প্রতিদিন আবার মৃত্যুর হার বাড়তে লাগল, ৭ এপ্রিল থেকে সম্ভবত আবার লকডাউন ঘোষনা দিল বাংলাদেশ সরকার। অফিস আবার বন্ধ ঘোষনা দিল। এইবার লকডাউনে মুভমেন্ট পাস নেবার ব্যবস্থা থাকল।

আমরা কয়েকজন মুভমেন্ট পাস নিয়ে বেশ ভালভাবেই অফিস করতে থাকলাম। কাজের তেমন প্রেসার না থাকায় আবার ব্লগ নিয়ে লেগে গেলাম। কিছুটা লেখালেখি আবার শুরু করলাম। এর মাঝে কন্টেন্ট কিভাবে লিখতে হয় বেশ ভালই শিখে গেছি

এবারের লকডাউন আগের বছরের চেয়েও কড়াকড়ি থাকলেও আমার সাইটের কাজ চলছিল। তারপরেও সেটা বেশ ঢিমেতালে।

জুনের দিকে আবার ইউটিউব চ্যানেল নিয়ে ভাবতে শুরু করলাম। আমার বাল্যবন্ধু আলম এ ব্যাপারে বেশ কিছু পরামর্শ দিল। আমার ভিডিও তৈরি করার তেমন আগ্রহ না থাকলেও আলমের উৎসাহেই প্রথম ভিডিও তৈরি করলাম।

এখন ব্লগ ও ইউটিউব চ্যানেল নিয়ে বেশ ভাবতে শুরু করেছি।

এর মাঝে ভ্যাকসিন নিলাম

এর মাঝেই ২৬ জুলাই ২০২১ ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়ে নিয়েছি। ২৪ আগষ্ট ২০২১ দ্বিতীয় ডোজ সম্পন্ন করে ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট নিয়ে নিয়েছি। কপালটা ভালই বলতে হবে, মডারনা টিকা পেয়েছি যে টিকার গ্রহন যোগ্যতা সারা বিশ্বে।

অনেক দেশই সিনোফারমের টিকা এক্সেপ্ট করছেনা। মানে ঐসব দেশে সিনোফারমের টিকা গ্রহণকারীরা ভিসা পাবেননা। আল্লাহর অশেষ রহমতে কোন দেশের ভিসা পেতে সমস্যা হবেনা। যদিও কোথাও যাওয়া হবে কীনা আল্লাহই ভাল বলতে পারেন।

সুরক্ষা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করেছি, মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে টিকার দিন জানতে পেরেছি। খুব ভাল ভাবেই টিকা দেয়া সম্পন্ন করেছি।

ব্লগ ও ইউটিউব চ্যানেল এসবের ভবিষ্যৎ কি

খুব কাছের ভবিষ্যত আমি দেখতে পাচ্ছিনা এই দুইটিকে নিয়ে। কিন্তু আমি বেশ লম্বা সময় টার্গেট করেছি এগুলো নিয়ে। এসব থেকে আমার আজকে আয় নেই মোটেই। কিন্তু খরচ করেছি বেশ। কিন্তু এর ভবিষ্যৎ কি? আদৌ কোন ভবিষ্যৎ আছে কি?

অবশ্যই আছে ভবিষ্যৎ। আমার টার্গেট ২০২৫ সাল নাগাত এসব থেকে ভাল ইনকাম করা, চাকরি ছেড়ে দিয়ে এসব নিয়েই জীবন অতিবাহিত করা। তাই আগামী তিন বছর এগুলোর পেছনে লেগে থাকতে হবে। বিনা পারিশ্রমিকে এতদিন এর পেছনে লেগে থাকা কি সম্ভব? কেন অসম্ভব?

যেদিন ব্লগ লেখি অথবা ভিডিও বানাই আমি অফিস থেকে এসে রাত ৮টা-৯টার দিকে লিখতে বসি অথবা ভিডিও করতে লেগে যাই। একটা ব্লগ লিখে তা এসইও করে পাব্লিস করতে চার ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যায়। আবার ১৫ মিনিটের একটা ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করে তা এডিট করে পাব্লিস করতেও ৫/৬ ঘন্টার মত সময় লেগে যায়।

পরিশ্রম কিন্তু কম না। হয়ত বছর খানেক বা দেড় বছর পর কিছুটা টাকার মুখ দেখব। কিন্তু তিন বছর পর মানে ২০২৫ সাল নাগাত এখানকার ইনকাম থেকে আমি আমার জীবন-ধারনের সব টাকা অর্জন করতে চাই।

এই স্বপ্ন নিয়ে আজও কাজ করে যাচ্ছি, ব্লগ ও ইউটিউব চ্যানেল নিয়ে। দোয়া রাখবেন সবাই।

Previous articleদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ – কারণ, প্রভাব ও ফলাফল নিয়ে বিস্তারিত
Next articleহযরত আদম আঃ পৃথিবীর প্রথম মানব ও নবীর জীবন কাহিনী ও আমাদের শিক্ষা
যে ব্যর্থ সে অজুহাত দেখায়, যে সফল সে গল্প শোনায়। আমি অজুহাত নয় গল্প শোনাতে ভালবাসি। আসুন কিছু গল্প শুনি, নিজের গল্প অন্যকে শুনাই।