ফুটন্ত পানিতে ব্যাঙ
ফুটন্ত পানিতে ব্যাঙ

 

ব্যাঙ আর ফুটন্ত গরম পানি নিয়ে বেশ চমৎকার একটা গল্প ইন্টারনেট ঘাটলেই আপনি পেয়ে যাবেন, হয়ত অলরেডি গল্পটি আপনার নজরে চলে এসেছে। প্রায় ৫/৬ বছর আগে ইউটিউবের ভিডিও দেখতে দেখতে আমার সামনে চলে এসছিল। আজ হঠাত বাংলাদেশের করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি এর সাথে এর একটা মিল চোখে পড়ল। গল্পটা যারা জানেন তারা ত জানেনই আর যারা জানেন না তাদের জন্যই আমার আজকের এই ব্লগ। চলুন প্রথমে গল্পটা পড়ে নেয়া যাক।

আমরা জানি ব্যাঙ শীতল রক্তের প্রানি। সে নিজের শরীরের তাপমাত্রাকে সহজেই পরিবেশের তাপমাত্রার সাথে মানিয়ে নিতে পারে এবং সেজন্যই পরিবেশের তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে এর শারিরিক তেমন কোন হের ফের হয় না। ব্যাঙের এই শারীরিক বৈশিষ্টকে কাজে লাগিয়ে একটা পরিক্ষা করা হয়। প্রথমে চুলার উপর একটি পাত্র বসানো হয় এতে নরমাল পানি দেয়া হয়। এরপর একটি ব্যাঙকে এর মাঝে একটি প্লাটফর্ম করে পানিতে বসিয়ে দেওয়া হয়। ব্যাঙটি পানিতে বেশ আরামদায়ক পরিবেশ পেয়ে বসে থাকে।

এরপর চুলার আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে ধীরে ধীরে খুব সামান্য মাত্রায় তাপ বাড়ানো হয়। ব্যাঙটি যখন বুঝতে পারে তার চারপাশের তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে তখন সে তার শরীরকে ঐ তাপমাত্রার সাথে মানিয়ে নেয়। হয়ত, অলসতার কারণে সে পাত্র থেকে বের হয় না, যদিও সে চাইলেই এক লাফে ওখান থেকে বের হয়ে যেতে পারে। কিংবা হয়ত ভাবে, দেখি না কি হয়?

এরপর তাপমাত্রা আরও বাড়ানো হয় ব্যাঙও তার সাথে সাথে নিজের শরীরের তাপমাত্রাকে মানিয়ে নিতে থাকে। এরপর তাপমাত্রা যখন অসহনীয় পর্যায়ে চলে যায় ব্যাঙের আর লাফ দিয়ে পাত্রের বাইরে যাবার মত শারীরিক শক্তি থাকেনা। ফলাফল হিসেবে তাকে ঐ পাত্রেই মৃত্যুবরণ করে নিতে হয়। মৃত্যুবরণ করতে বাধ্য হয়।

এবার আসুন বাংলাদেশের করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি একটু দেখি। আজকে ১২ই মে ২০২০। গত ২৪ ঘন্টায় নতুন আক্রান্ত ৯৬৯ জন, মোট আক্রান্ত ১৬৬৬০ জন, নতুন মৃত্যু ১১ জন- মোট মৃত্যু ২৫০ জন, সুস্থ্য ২৪৫ জন-মোট সুস্থ্য ৩১৪৭ জন, নতুন টেস্ট ৬৭৭৩ জন- মোট টেস্ট ১৩৬৬৩৮ জন। সকল তথ্য বাংলাদেশ সরকারের সরকারি ওয়েব সাইট থেকে নেয়া। পরিস্থিতি প্রথম দিকে মোটেই এতটা জটিল ছিলনা। সরকারি হিসেবে প্রথম মৃত্যু ছিল ৮ই মার্চ ২০২০, সেখান থেকে আমরা আজ দুই মাসেরও বেশি সময় পার করেছি, লকডাউনের আজ ৪৭তম দিন পার হয়ে গেছে।

বাংলাদেশের করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি সেই গরম পানির পাত্রের ঐ ব্যাঙের মতই নয় কি? আমরাও কি এখনও ভাবছি, দেখিনা কি হয়? দেখতে দেখতে আমারাও কি গরম পানির পাত্রে মৃত্যুবরণ করে নিতে বাধ্য হব? বিপদ থেকে বের হবার সময়টা কি আমরাও হেলায় হারিয়ে ফেলছি না?

খুব বেশিদিন আগের কথা না, আপনি চাইলেই মনে করতে পারবেন। দুই মাস আগেও আমাদের দেশের নেতা-নেত্রিরা করোনা ভাইরাসকে খুব সামান্য সর্দিকাশির সাথে তুলনা করে গুজব ছড়াতে নিষেধ করেছে। কেও কেও নিজেরদেরকে করোনা ভাইরাস এর চাইতেও শক্তিশালী বলে প্রচার করেছে। সাধারণ মানুষের কথা বাদই দিলাম, সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের এধরনের বক্তব্য দেশের মানুষকে আরও অসচেতন হতে বাধ্য করেছে বলেই আমার বিশ্বাস।

এরপর কয়েকদফা নাটক করেছে প্রবাসই ফেরত বিমান, লকডাউন, সাধারণ ছুটি, গনপরিবহন, গারমেন্টস শিল্প, টেস্ট  কিট, অপর্যাপ্ত করোনা ভাইরাস টেস্ট সহ অন্যান্য বিষয়ের মত স্পর্শকাতর ব্যাপার নিয়ে। সরকার চাইলেই প্রতিটি ব্যাপারকে সুষ্ঠভাবে মোকাবেলা করতে পারত। সেটুকু সক্ষমতা আমাদের ছিল। হয়ত সরকারেও ইচ্ছা ছিল কিন্তু ছিলনা শুধু প্রপার ম্যানেজমেন্ট। আমি হতাস আমরা স্বাধীনতার এত বছর পরেও এতটুকু দেশে সুষ্ঠ ম্যানেজমেন্ট তৈরি করতে পারিনাই। যেটা পেরেছি দেখিনা কি হয় টাইপের ম্যানেজমেন্ট। যার ফলাফল আজকের এই পরিস্থিতি।

ফুটন্ত পানি ও ব্যাঙের গল্প
আমি বাংলাদেশের মানুষের মত অত বোকা না, সময় থাকতেই পালাই।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ ব্যাঙের গল্পটা হয়ত মিথ্যা, কিন্তু আপনি ইউটিউবে Frog in Boiling Water দিয়ে সার্চ দিলেই অনেক ভিডিও দেখতে পাবেন। গল্পটা মিথ্যা হলেও এই গল্পের সাথে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশের করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি এর হুবুহু মিল রয়েছে।

আমি কোন ভাইরোলজিষ্ট নই, তাই এই অবস্থা থেকে উত্তরণের কোন উপায় হয়ত বাতলে দিতে পারছিনা কিন্তু এটুকু ঠিক বলতে পারি আগামী ২/৩ বছর আমাদেরকে হয়ত এই ভাইরাস নিয়েই থাকতে হতে পারে যেমনটা আছি ডেঙ্গু নিয়ে। বলতে পারি আমাদের জীবনে ডেঙ্গুর সাথে করোনা নামের আরেক ভয়ঙ্কর রোগ যুক্ত হল। করোনা ভাইরাসকে নিয়েই আমরা কিভাবে আমাদের জীবন-যাপন করব সেব্যাপারে আরেকটি ব্লগ লিখেছি, চাইলে পড়ে দেখতে পারেন।

লকডাউন, আমাদের ভবিষ্যত জীবন-জীবিকা, আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট এবং করোনাকে নিয়ে আমাদের বেঁচে থাকা।

আমার ব্লগটি পড়ে যদি আপনার সামান্য ভাল লাগে, নিচের ফেসবুক শেয়ার বাটনে ক্লিক করে শেয়ার করে দিতে পারেন। ৫ তারা রেটিং দিয়ে আপনার ভাললাগা আমাকে জানিয়ে যেতে পারেন। আর নিচে কমেন্ট অপশন ত থাকছেই আপনার মূল্যবান মতামত আমাকে সহ সবাইকে জানানোর।

সবাইকে ধন্যবাদ।

Previous articleআর্কিমিডিস এর স্ক্রু পাম্পঃ ২২০০ বছরের পুরানো টেকনোলজির আধুনিক ব্যবহার।
Next articleব্লগ লিখে আয় করুন- শুধু মাত্র আমাদের রেডিটুরিডিং ব্লগে।
Mamun
যে ব্যর্থ সে অজুহাত দেখায়, যে সফল সে গল্প শোনায়। আমি অজুহাত নয় গল্প শোনাতে ভালবাসি। আসুন কিছু গল্প শুনি, নিজের গল্প অন্যকে শুনাই।