বেড়ানোর জায়গা

 

গত পর্বে আমরা ঢাকার কিছু বিশেষ স্থানের কথা উল্লেখ করেছিলাম, যেখানে আপনারা খুব সহজেই এবং কম খরচের মধ্যে ঘুরে আসতে পারেন। যেসব বেড়ানোর জায়গা গেলে মনে প্রশান্তি পেতে পারেন, উৎফুল্ল বোধ করতে পারেন। আজকে সে বিষয়ের ধারাবাহিতায় আরো কিছু এমন ঘুরে বেড়ানোর স্থানের নাম নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি। আশা করি আজকের এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে আপনারা উপকৃত হতে পারবেন।

আজকে আমরা যেসব বেড়ানোর স্থানের ব্যাপারে কথা বলব, তার বেশিরভাগই ঢাকার অদূরে অবস্থিত। আর কোন ভূমিকা ছাড়াই আমি আপনাদের এসব জায়গার সাথে এখন পরিচয় করাবো।

পড়ে আসুনঃ যারা পর্ব-০১ পড়েননি।

বেড়ানোর জায়গা: তামান্না পার্ক

তামান্না পার্কের পুরো নাম হচ্ছে তামান্না ওয়ার্ল্ড ফ্যামিলি পার্ক। এই পার্কটি মিরপুর -আশুলিয়া বেড়িবাঁধ সড়কের গড়ান চটবাড়ী নামক এলাকায় একদম তুরাগ নদীর কোল ঘেঁসে গড়ে উঠেছে।

এই পার্কের সবুজ মনোরম পরিবেশ এবং থিম আপনাদের খুব সহজেই মুগ্ধ করবে। তাছাড়া পার্কের পেছনের দিকে বসে তুরাগ নদীর সৌন্দর্যও খুব অনায়াসে উপভোগ করতে পারবেন। মাত্র এক একর জমিতে এই পার্কটি গড়ে তোলা হয়েছে বটে, তবে এতে রয়েছে কিছু অাকর্ষনীয় রাইড যা এই মিনি পার্কটিকেও ভ্রমনের প্রাণকেন্দ্রে পরিনিত করে তুলেছে।

এইসব রাইডগুলোর মধ্যে আছে রোলার কোষ্টার, ওয়ান্ডার হুইল, মনোরেল, হানিসুইং, স্পেস শাটল, সোয়ান অ্যাডভেঞ্চার, মিনি ট্রেন, নাগর দোলা, মেরি গো রাউন্ড, কিডস রাইডসহ আরো কিছু মজার রাইড। এইসব রাইডে চড়ে বাচ্চা বড় সবাই খুবই আনন্দ পেয়ে থাকে। তাছাড়াও এখানে আছে সুইমিংপুল যেখানে আপনারা টাকার বিনিময়ে সাতার কাটতে পারবেন।

এই পার্কে কিছু রেস্তোরাও আছে যেখানে আপনারা বিভিন্ন রকমের খাবার খাওয়ার সুবিধা পাবেন। এ পার্কের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর টিকিটমূল্য, বিভিন্ন রাইডে চড়ার খরচ আনুপাতিক হারে অনেক কম। যার ফলে খুব কম খরচেই, আপনারা, পরিবার, বন্ধুবান্ধব নিয়ে এইখানে ঘুরতে আসতে পারেন। তাছাড়া, যেকোনো অনুষ্ঠান যেমন পিকনিক, জন্মদিন, শিক্ষাসফর ইত্যাদির উপলক্ষে এই পার্ক ভাড়া নেওয়া যায়। এসব ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্যাকেজ এবং ছাড়ে পার্ক বুকিং করার সুযোগ থাকে।

তামান্না পার্কে যাওয়ার জন্য প্রথমে মিরপুর ১ নম্বর বাসস্ট্যান্ড কিংবা মাজার রোডে আসতে হবে। এরপর সেখান থেকে রিকশা নিয়ে খুব সহজেই পৌছে যেতে পারবেন তামান্না পার্কে।

বেড়ানোর জায়গা: বেস ক্যাম্প

আপনি যদি অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষ হয়ে থাকেন, তবে গাজীপুরে অবস্থিত বেস ক্যাম্প, হতে পারে আপনার জন্য একটি কাঙ্খিত ভ্রমনের স্থান। ঢাকা থেকে মাত্র ৩৭ কিলোমিটার দূরে, গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুরে ২০১৩ সালে এই  দ্যা বেস ক্যাম্প বাংলাদেশ নামে এই আউট ডোর অ্যাকটিভিটির জন্য সুপরিচিত   ক্যাম্পটি গড়ে তুলা হয়েছিল । সুবিশাল এবং গতানুগতিক ধারা থেকে অন্যরকম এই ক্যাম্পে আপনি মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশের সৌন্দর্য তো উপভোগ করতে পারবেনই, তার পাশাপাশি সুযোগ পাবেন বিভিন্ন প্রকারের অ্যাডভেঞ্চারমূলক কর্মকাণ্ডে অংশ গ্রহনের মাধ্যমে নিজের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা সৃষ্টি করার।

আপনি যখন প্রথম বেস ক্যাম্পে প্রবেশ করবেন শুরুতেই তখন চোখে পড়বে সবুজ ঘাসে ঘেরা বিস্তৃত মাঠ। এই ক্যাম্পের অন্যতম আকর্ষণ “অন গাউন্ড” এবং “অন ট্রি” একক্টিভিটিস। অন গ্রাউন্ড এক্টিভিটিসির মধ্যে রয়েছে সাইক্লিং, টায়ার পাস, টায়ার স্যান্ডউইচ, মাংকি পাসিং, রোপ ওয়াক, রোপ ট্রেঞ্চ, জিপ লাইন, বোটিং, ফুটবল, ক্রিকেট, আর্চারি এবং ব্যাডমিন্টনসহ আরো বিভিন্ন প্রকারের খেলা। অন ট্রি এক্টিভিটিস গুলোও অনেক বেশি অ্যাডভেঞ্চারের অনুভুতি দেয়। অভিজ্ঞ ইন্সট্রাক্টরের নির্দেশনায় এবং উপস্থিতিতে এসব চ্যালেঞ্জিং এবং  এডভেঞ্চারমূলক কর্মকাণ্ডের ব্যবস্থা করা হয়।

এছাড়াও দ্যা বেস ক্যাম্পে রয়েছে সুইমিংপুল, চিল্ড্রেন জোন, ট্রি হাউস, ট্র্যাকিং এবং ফিশিংয়ের ব্যবস্থাসহ আরো অনেক কিছু। এছাড়াও রয়েছে রাতের বেলা তাবুতে থাকার ব্যবস্থা, ক্যাম্প ফায়ার এবং বার বি কিউ পার্টির করার সুযোগ। এককথায় প্রকৃতি এবং অ্যাডভেঞ্চারের স্বাদ পাওয়ার এক অনন্য স্থান হচ্ছে দ্যা বেস ক্যাম্প, বাংলাদেশ। তাই এমনটা বললে ভুল হবে না যে, এখানে কাটানো মুহূর্তগুলো আপনার জীবনের বিশেষ কিছু মুহূর্ত উঠতে পারে, নিশ্চিতভাবে।

বেস ক্যাম্পে যাওয়ার জন্য ঢাকা থেকে নিজস্ব পরিবহন ব্যবহার করা যেতে পারে কিংবা ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে চলাচলকারী বাস দিয়ে যাওয়া যেতে পারে।

বেড়ানোর জায়গা: নন্দন পার্ক

নন্দন পার্ক ঢাকার খুব কাছেই সাভারের নবীনগর-চন্দ্রা হাইওয়ের কাছে বাড়ইপাড়া নামক জায়গায় অবস্থিত। নন্দন থিম পার্কের যাত্রা শুরু হয় ২০০৩ সালের অক্টোবর মাসে। নন্দন পার্কের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আপনারা এখানে সবুজ প্রকৃতির ছোঁয়ার মাঝেই পাবেন বিভিন্ন মজার এবং আনন্দদায়ক রাইডে চড়ার সুবিধা যা একে অন্যান্য থিম পার্ক থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করে তোলে।

নন্দন পার্কের আকর্ষনীয় রাইডগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ক্যাবল কার, রক ক্লাইমরিং, ওয়েব পুল, রিপলিং, জিপ স্লাইড, কাটার পিলার, ওয়াটার কোস্টার,  মুন রেকার, আইসল্যান্ড, প্যাডেল বোট ইত্যাদি। এছাড়াও রয়েছে ওয়াটার ওয়ার্ল্ড এবং এর মধ্য মজার মজার স্লিপার রাইডিং এর সুবিধা। সব কিছু মিলিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে আনন্দে সময় কাটানোর জন্য একটি বিশেষ স্থান হচ্ছে এই নন্দন থিম পার্ক।

নন্দন পার্ক প্রতিদিন সকাল ১১ টায় খোলা হয় এবং রাত ৮ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। তবে প্রতি শুক্রবার সকাল ১০ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। ছুটির দিনগুলোতে এই পার্কে অনেক ভীড় হয়। মতিঝিল বা গুলিস্তান থেকে নবীনগর বা আশুলিয়াগামী যেকোনো বাসে নন্দন পার্কে যাওয়া যায়। তাছাড়া নিজস্ব পরিবহন থাকলে বা গাড়ি ভাড়া করার মাধ্যমেও খুব সহজেই এই পার্কে যেতে পারবেন।

বেড়ানোর জায়গা: ফ্যান্টাসি কিংডম পার্ক

ফ্যান্টাসি কিংডম পার্কটিও নন্দন পার্কের মতই একটি থিম পার্ক। এই পার্কটি সাভারের আশুলিয়ার, জামগড়া নামক স্থানে অবস্থিত। প্রায় ২০ একর জায়গা জুড়ে গড়ে উঠা এই ফ্যান্টাসী কিংডম পার্কটিতে রয়েছে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জিং একাধিক রাইড, যেসব আপনাদের দিবে আনন্দদায়ক এবং উত্তেজনাকর অনুভূতি।

এসব রাইডের মধ্যে রয়েছে রোলার কোস্টার, ম্যাজিক কার্পেট, শান্তা মারিয়া সহ আরো অনেক মজার মজার রাইড। এছাড়াও রয়েছে সুবিশাল ওয়াটার কিংডম, যা এখানকার অন্যতম আকর্ষণ। এই ওয়াটার কিংডমে রয়েছে আনন্দময় কৃত্রিম সমুদ্র সৈকত ওয়েবপুল, টিউব স্লাইড, স্লাইড ওয়ার্ল্ড, বিশাল সুইমিং পুলসহ আরো বিভিন্ন রাইড। এছাড়াও এখানে আছে লেজি রিভার, ডুম স্লাইড, ওয়াটার ফল, লস্ট কিংডম, ড্যান্সিং জোন ইত্যাদির মত আরো চ্যালেঞ্জিং এবং মজার রাইডস।

ফ্যান্টাসী কিংডম থিম পার্কটি  সপ্তাহের ৭ দিনই খোলা রাখা হয়। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এ পার্কটি খোলা থাকে। তবে সরকারী ছুটির দিনগুলোতে এ সময়টা কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সবার উন্মুক্ত রাখা হয়ে থাকে। ফ্যান্টাসি কিংডমেও নন্দন পার্কের মত গাড়ি ভাড়া করে অথবা আশুলিয়গামী বাসে চড়ে যাওয়া যায়।

বেড়ানোর জায়গা: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

আমার আগের লেখনীতে আমি উল্লেখ করেছিলাম যে, বাংলাদেশের কয়েকটি আকর্ষণীয় ভ্রমনযোগ্য বিদ্যাপীঠের মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক উদহারন হচ্ছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। লাল ইটের দেয়ালে ঘেরা এই ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য আপনাকে নতুনভাবে আকৃষ্ট করবে বারবার, হাজারবার।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার ভান্ডার। প্রায় ৭০০ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালটি বাংলাদেশের একমাত্র পূর্নাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। নয়নাভিরাম সবুজের সমারোহ এ ক্যাম্পাসের প্রধান সৌন্দর্যের উৎস। তাছাড়াও এ বিশ্বববিদ্যালয়ে রয়েছে প্রজাপতি গার্ডেন নামক ৩০০ একরের এক সুবিশাল বাগান, যা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্যের মাত্রাকে আরো বেশি ত্বরানিত করে।

এই প্রজাপতি বাগানে প্রায় ১১০ প্রজাতির প্রজাপতি আছে। প্রতিবছর এ বাগানে প্রজাপতি মেলা অনুষ্ঠিত হয়, যা দর্শনার্থীদের জন্য এক অপরূপ নয়নাভিরাম দৃশ্য। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ১৭ টি লেকসহ কিছু পুকুর। এসব লেক এবং পুকুর শীতকালে অতিথি পাখির অভয়ারণ্য হয়ে উঠে। বিভিন্ন প্রজাতির হাজার হাজার পাখি তখন এইখানে অবস্থান করে। এসব লেকে নৌকা ভ্রমনেরও সুযোগ রয়েছে।

তাছাড়াও এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে পদ্ম আর শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ। গোলাপী আর সাদা রঙের পদ্মের সাথে সারি সারি লাল শাপলা ফুল আপনার মনকে প্রস্ফুটিত করবে, চোখকে শান্তি আর স্নিগ্ধকর অনুভূতি দিবে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ফুল, ফল এবং ঔষধি উদ্ভিদের সমারোহ। সবকিছু মিলিয়ে এসব অপার সৌন্দর্য আপনাদের স্বর্গীয় অনুভূতি দিবে।

শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য না, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপর্ত্যকর্মের সৌন্দর্যও আপনাকে অনায়াসে মুগ্ধ করবে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কিছু স্থাপনা হচ্ছে সেলিম আল দীন মুক্ত মঞ্চ, ছায়া মঞ্চ, ক্যাফেটারিয়া,  সুইমিংপুল, পিঠা চত্বর, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, ছবি চত্বর এবং মীর মশাররফ হোসেন হলসহ অন্যান্য কিছু আবাসিক হল।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে ঢাকার গুলিস্তান, ফার্মগেইট, কল্যাণপুর কিংবা গাবতলী থেকে নবীনগর কিংবা মানিকগঞ্জগামী যে কোনো বাসে যাওয়া। বাস কন্ডাক্টরকে বললে তারাই আপনাকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের গেটে নামিয়ে দিবে। এরপর রিক্সা বা ভ্যানে করে খুব সহজেই  ক্যাম্পাস ঘুরে দেখতে পারবেন।

 

Previous articleব্লগ থেকে আয় কতটুকু কঠিন এবং আয়ের রাস্তাসমূহ (পর্ব ০১)
Next articleহযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর চোখে দুনিয়া পর্ব-০১
amina khatun
আমি আমিনা খাতুন তিশা। আমি লিখালিখিতে অসামান্য কেউ না, তবে লিখতে ভালই লাগে। গদবাধা লেখালেখির চেয়ে আমি নিজের জীবনের কাহিনি বা গল্প লিখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। জীবনে কিছু ভালো করার ইচ্ছা আছে। জানি না কতটুকু সফল হব, তবে আশাহত হতে চাই না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here