বহুকাল আগের কথা। অসংখ্য বানরের আবাসস্থল ছিল এই এলাকা। ছোটো ছোটো খালের ওপারে ঘন বন থেকে খাবার আনতে যেতো তারা। দল বেঁধে ফেরার সময়, দূর থেকে দেখে একটি বাঁধের মতো মনে হতো। মারমা বাসিন্দারা এটি দেখে, এলাকার নাম দিলো ম্যাগসি। স্থানীয় ভাষায় এর নাম হলো বান্দরবন। ক্রমে পরিবর্তন হয়ে বর্তমান নাম হলো বান্দরবান। এই গল্পের মতোই রোমাঞ্চকর আর রহস্যময় জেলা বান্দরবান। তাই সকলেই একবার হলেও যেতে চায় এই জেলায়। তবে তার জন্য প্রয়োজন সঠিক ট্যুর গাইড। তাই, আজকে চলে এসেছি বান্দরবান ট্যুর গাইড (Bandarban tour guide) নিয়ে।

আজকের লেখায় যা থাকছে

বাংলাদেশের দার্জিলিং খ্যাত বান্দরবানের পাগল করা সৌন্দর্যের টানে, পর্যটকরা বারবার ফিরে যায় সেখানে। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব দিকে, ৪৪৭৯ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে অবস্থান এর। চিটাগং হিল ট্র্যাক এর একটি ছোট্ট অংশ এই পাহাড়ি জেলা বান্দরবান। অসংখ্য নদী, পাহাড়, লেকের এই জেলাতেই, বাংলাদেশের হিমালয় খ্যাত “সাকা হাপোহং” এর অবস্থান। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তার দুপাশে সবুজের সমারোহ, স্নিগ্ধ বাতাস, মেঘের লুকোচুরি আর মেঘ ছোঁয়ার অনুভূতি পাওয়ার জন্য হলেও, আপনাকে বান্দরবান আসতেই হবে। তবে তার আগে জেনে নিতে হবে, কিভাবে যাবেন বান্দরবান। থাকবেন কোথায়, খরচ করতে হবে কত টাকা। আর ঘুরবেনই বা কোন কোন জায়গায়। আগে চলুন বান্দরবান যাওয়ার ব্যাবস্থা করা যাক।

প্রিয় পাঠক, এর আগে আমরা লিখেছিলাম মেঘের রাজ্য সাজেক ভ্রমণ নিয়ে। পড়ে দেখুন।

বান্দরবান যাওয়ার শ্রেষ্ঠ সময় (Best time to visit Bandarban)

ট্যুর এর ক্ষেত্রে সবার আগে একটি বিষয় মাথায় আসে সেটা হল যেখানে যাবেন সেখানে যাবার শ্রেষ্ঠ সময় কখন। তাই বান্দরবান যেতে চাইলে বছরের কোন সময়টি বান্দরবান যাওয়ার জন্য শ্রেষ্ঠ সেটা জানা সবচেয়ে জরুরী।

এই প্রশ্নের সঠিক কোনো উত্তর দেয়া আসলে কঠিন। এর উত্তর নির্ভর করে আপনার উপর। বছরের একেক সময় বান্দরবান একেক রূপ ধারণ করে। বর্ষায় সবচেয়ে সবুজ আর স্নিগ্ধ থাকে এই জেলা। ঝর্ণা আর নদী গুলোয় থাকে ভরা যৌবন। শীতে আবার শান্ত হয়ে যায় বান্দরবান। কুয়াশার ফাঁকে ফাঁকে সবুজ পাহাড় তখন অপরূপ দেখায়। রাস্তাঘাট শুকনো থাকায় যাতায়াতে সুবিধা হয়।

যদি আপনার উদ্দেশ্য হয়, পূর্ণ যৌবনা বান্দরবান এর সৌন্দর্য উপভোগ করা, তবে বর্ষাকালে যাওয়াই ভালো। বিশেষ করে আগস্ট থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত সবচেয়ে সবুজ থাকে বান্দরবান। এই সময় খুব একটা ভিড় থাকেনা বলে, সবকিছুতে বড়সড় মূল্যছাড়ও পেয়ে যাবেন আপনি। তাছাড়া, দিনের পরিধিটাও এই সময় বড় হয়। তবে, বৃষ্টি মাথায় নিয়ে, কাদা যুক্ত রাস্তায় ঘুরতে হবে, এই কথাটিও মনে রাখতে হবে।

বছরের সবচেয়ে বেশি পর্যটক বান্দরবানে ঘুরতে যান নভেম্বর থেকে মার্চ, এই সময়ে। বলা হয়, ঠান্ডা আবহাওয়া ঘুরতে যাওয়ার জন্য সবচেয়ে ভালো। এই মাস গুলোতে বৃষ্টি একেবারে হয়না বললেই চলে। তাই রাস্তাঘাট শুকনো থাকে। বিশেষ করে পাহাড়ি রাস্তায় চলতে সুবিধা হয়। তবে এই সময়, রিসোর্ট থেকে শুরু করে গাড়ি ভাড়া, সবকিছুই থাকে আকাশচুম্বী।

এবার আপনিই ঠিক করুন, কোন সময়টি আপনার জন্য ভালো হবে।

বান্দরবান যাওয়ার উপায় (How to go to Bandarban)

এবার আসা যাক, বান্দরবান যাওয়ার উপায় কি কি? ঢাকা থেকে বান্দরবান যাওয়ার উপায় হলো তিনটি। বাস, ট্রেন এবং প্লেন। ঢাকা থেকে বান্দরবান জেলার দূরত্ব ৩৮৭ কিলোমিটার। বাস, কিংবা ট্রেন, অন্তত ৬ থেকে ৭ ঘন্টা সময় আপনার লাগবেই।

ঢাকা থেকে বাসে করে বান্দরবান

ঢাকা থেকে বান্দরবানের উদ্দেশ্য বাস ছাড়ে, সায়েদাবাদ, আরামবাগ, কমলাপুর এবং মতিঝিল থেকে। এর জন্য আপনি এসি এবং নন-এসি, দুই ধরণের বাসই পেয়ে যাবেন।

এসি বাস গুলোর মধ্যে রয়েছে : দেশ ট্রাভেল, শ্যামলী পরিবহন, ঈগল ট্রান্সপোর্ট, সেন্টমার্টিন পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, এস এ আলম পরিবহন, ইউনিক পরিবহন ইত্যাদি।

এর মধ্যে সেন্টমার্টিন পরিবহনে জনপ্রতি ভাড়া ৯৫০ টাকা। দেশ ট্রাভেলে ১৪০০ টাকা, হানিফ ও শ্যামলী পরিবহনে ১৫০০ টাকা করে।

নন-এসি বাস গুলোর মধ্যে আছে : দেশ ট্রাভেল, সেন্টমার্টিন পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ ইত্যাদি। সবগুলো নন-এসি বাসে জনপ্রতি টিকিট ভাড়া ৬২০ টাকা করে। শুধুমাত্র সেন্টমার্টিন পরিবহনে ভাড়া দিতে হইবে ৬৫০ টাকা।

বাস স্টেশন থেকে সকালে এবং রাতে, এই দুই সময়ে বাস ছাড়ে। আপনার সুবিধা মতো যেকোনো সময়ের বাসেই আপনি যাত্রা করতে পারেন। তবে রাতের যাত্রা সবচেয়ে ভালো হয়। এতে করে আপনি পরদিন, পুরো দিন ঘোরার জন্য সময় পাবেন।

ঢাকার আশে পাশের ঘুরতে চান? এই ব্লগ পড়ে দেখুন।

ঢাকা থেকে ট্রেনে করে বান্দরবান

ঢাকা থেকে ট্রেনে করে সরাসরি বান্দরবান যাওয়ার  কোনো সুযোগ নেই। আপনাকে প্রথমে চিটাগং যেতে হবে। ঢাকা থেকে চিটাগাং পৌঁছাতে সময় লাগবে ৬ ঘন্টা। কিছু কিছু ট্রেনে ৭ থেকে ৮ ঘন্টাও লাগতে পারে। এরপর চিটাগং থেকে যেতে হবে বান্দরবান। কম খরচে বান্দরবান ভ্রমণ করতে হলে ট্রেনেই সবচেয়ে সুবিধা পাবেন।

বান্দরবান এর উদ্দেশ্যে, ঢাকার সকল ট্রেন যাত্রা শুরু করে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে। মাঝে উত্তরা এয়ারপোর্ট এ এসে কিছুক্ষন থেমে আবার রওনা করে। যে ট্রেন গুলোতে যাত্রা করে আপনি চট্টগ্রাম পৌঁছাতে পারেন, সেগুলো হলো :

ট্রেনের নাম  শোভন চেয়ার স্নিগ্ধা এসি সাপ্তাহিক বন্ধ যাত্রার সময়
1st ক্লাস 2nd ক্লাস 1st ক্লাস 2nd ক্লাস
মহানগর প্রভাতী ১৫০ টাকা ১২৫ টাকা ৪৫৫ টাকা ৩৪৫ টাকা ৭৫৬ টাকা নেই সকাল ৭.৪৫-দুপুর ১টা ৫০
সুবর্ণ এক্সপ্রেস ৩৫৫ টাকা ৬৭৩ টাকা সোমবার বিকাল ৩টা- রাত ৮টা ১০
সোনার বাংলা ৬০০ টাকা ১০০০ টাকা ১১০০ টাকা বুধবার সকাল ৭ টা- দুপুর ১২ টা
মহানগর এক্সপ্রেস ৩৪৫ টাকা ৬৫৫ টাকা রবিবার রাত ৯ টা-ভোর ৪টা ৩০
তূর্ণা এক্সপ্রেস ৩২০ টাকা ৭৩১ টাকা নেই রাত ১১ টা-সকাল ৬টা ২০

ভাড়া এবং যাত্রার সময়কাল পরিবর্তন হতে পারে।

ঢাকা থেকে প্লেনে করে বান্দরবান

ঢাকা থেকে প্লেনে করেও বান্দরবান যাওয়ার সরাসরি কোনো রাস্তা নেই। প্রথমে আপনাকে চিটাগং এই যেতে হবে। এক্ষেত্রে সময় লাগবে মাত্র ৪৫ মিনিট। প্লেন গুলো সকাল ৮ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত একের পর এক ফ্লাইট চালনা করে। বাংলাদেশে ঢাকা থেকে চিটাগং যাওয়ার জন্য ৪ টি এয়ারলাইন সার্ভিস রয়েছে ।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস,ইউএস বাংলা এয়ারলাইনস, নভোএয়ার, রিজেন্ট এয়ারওয়েজ ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম আকাশপথে আপনাকে নিয়ে যাবে। এতে খরচ পরে পারে সর্বনিম্ন ৩২০০ টাকা থেকে ৮০০০/৯০০০ টাকা পর্যন্ত।

তবে বিমানে যাবার ক্ষেত্রে অবশ্যই মনে রাখবেন আপনাকে কম করে হলেও ৭/৮ দিন আগে টিকেট বুকিং দিয়ে অথবা কেটে রাখতে হবে। যাত্রার আগের দিন কাটলে একই টিকেট আপনাকে ৩২০০ টাকার টিকেট ৭০০০ বা ৮০০০ টাকা দিয়ে কাটতে হতে পারে।

তাছাড়া মনে রাখবেন বৃহস্পতি এবং রোববারের ফ্লাইটের টিকিটের দাম সবসময় বেশি থাকে। তাই এই দুইদিন যাত্রা না করলে আপনার অনেক টাকা সাশ্রয় হবে।

এবার চিটাগং থেকে বান্দরবান যাওয়ার জন্য আপনি জিপ ভাড়া করতে পারেন। অথবা লোকাল বাসে যেতে হলে, বোদ্দারহাট টার্মিনাল থেকে পুর্বানী, পূবালী বা পূরবী বাসে ১০০ থেকে ২০০ টাকা খরচ করতে হবে।

**সময় অনুযায়ী উপরে উল্লিখিত সকল ভাড়ার পরিমাণ কম বা বেশি হতে পারে

বান্দরবানে অবস্থানের জন্য হোটেল ও রিসোর্ট ( Hotels & Resorts in Bandarban to stay)

বান্দরবানের বেশিরভাগ দর্শনীয় স্থান, জেলা সদরের আসে পাশে কিংবা থানচি উপজেলায় অবস্থিত। তাই এখানে শহরের আশেপাশে, কিংবা চিটাগং হাইওয়ে তে ৫০ টিরও অধিক হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে । বান্দরবানের কিছু উল্লেখযোগ্য রিসোর্ট ও হোটেল নিয়েই এখন আলোচনা করব।

হোটেল হিল ভিউ

বান্দরবান শহরের একেবারে বাস স্ট্যান্ড এর কাছেই অবস্থিত এই হোটেল। এখানে কি ধরণের রুম আপনি ভাড়া করছেন তার উপর নির্ভর করে, প্রতি রাতের জন্য গুনতে হবে ১৮০০ থেকে ৭০০০ টাকা পর্যন্ত। চাইনিজ, থাই, বাংলাদেশী সহ স্থানীয় খাবার ব্যাবস্থা রয়েছে এখানে। সাথে রয়েছে, ঘুরে দেখার জন্য ট্রান্সপোর্ট সার্ভিস।

হিল সাইড রিসোর্ট

বান্দরবান শহর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে, মিলনছড়িতে  এর অবস্থান। এটি বাংলাদেশের প্রথম রিসোর্ট হিসেবে পরিচিত। পাহাড়ে ঘেরা এই রিসোর্টে খুব সুন্দর সুন্দর ৫টি কটেজ রয়েছে। যেখান থেকে সাঙ্গু নদী দেখা যায়। এই রিসোর্টে এক রাত থাকার জন্য গুনতে হবে ৩৫০০ থেকে ৪৫০০ টাকা।

হোটেল প্লাজা

এর অবস্থান আর্মি পাড়ার ৭নং ওয়ার্ডে। প্রতি রাতে খরচ হবে ১৫০০ থেকে ৭০০০ টাকা।

ভেনাস রিসোর্ট

অবস্থান : মেঘলা, শহর থেকে ৪ কিমি দূরে, চিটাগং-বান্দরবান হাইওয়ে রোড। খরচ হবে ৪০০০ থেকে ৫০০০ টাকা প্রতি রাত।

নীলাচল নীলাম্বরী রিসোর্ট

অবস্থান হল বান্দরবান শহর থেকে মাত্র ৬ কিমি দূরে অবস্থিত নীলাচল ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্সে। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৬০০ ফিট উপরে থাকায়, এখান থেকে সাঙ্গু নদী দেখা যায়। খরচ হবে ৩০০০ টাকা প্রতি রাত।

নীলগিরী হিল রিসোর্ট

বাংলাদেশ আর্মি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এই রিসোর্ট টি নীলগিরী পাহাড়ের উপর অবস্থিত। এটি এতটাই ব্যস্ত যে, অন্তত এক মাস আগে থেকে বুকিং না দিলে, রুম পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। খরচ হবে ৮০০০ টাকা প্রতি রাত।

সাইরু হিল রিসোর্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর রিসোর্ট গুলোর মধ্যে এটি উল্লেখযোগ্য। অবস্থান : বারো মাইল, চিম্বুক, Y জাংশন, বান্দরবান-থানচি রোড। খরচ হবে ১১০০০ থেকে ২১০০০ টাকা প্রতি রাত।

হোটেল হিলটন

অবস্থান হল বান্দরবান শহরের কাছে। অফিসার্স ক্লাব, ইসলামপুর রোড। খরচ হবে ১০০০ থেকে ৪০০০  টাকা প্রতি রাত।

হোটেল হিল কুইন

অবস্থান হল বান্দরবান সদর। খরচ পরবে ১২০০ থেকে ৭০০০ টাকা প্রতি রাত।

পর্যটন মটেল

অবস্থান হল বান্দরবান সদর থেকে ৪ কিমি দূরে। খরচ পরবে ১৫০০ থেকে ৫৪০০ টাকা প্রতি রাত।

ফরেস্ট হিল রিসোর্ট

অবস্থান হল বান্দরবান সদর থেকে ৩ কিমি দূরে, থানচি রোড। খরচ পরবে ৩০০০ থেকে ১০০০০ টাকা প্রতি রাত।

বান্দরবান হোটেল ভাড়া একসাথে সব ইনফরমেশন

ক্রমিক নং হোটেল অবস্থান প্রতি রাতের ভাড়া
হোটেল হিল ভিউ বান্দরবান শহর ১৮০০ থেকে ৭০০০ টাকা
হিল সাইড রিসোর্ট মিলনছড়ি ৩৫০০ থেকে ৪৫০০ টাকা
হোটেল প্লাজা আর্মি পাড়া ১৫০০ থেকে ৭০০০ টাকা
ভেনাস রিসোর্ট মেঘলা ৪০০০ থেকে ৫০০০ টাকা
নীলাচল নীলাম্বরী রিসোর্ট নীলাচল ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্সে ৩০০০ টাকা
নীলগিরী হিল রিসোর্ট নীলগিরী পাহাড়ে ৮০০০ টাকা
সাইরু হিল রিসোর্ট বারো মাইল ১১০০০ থেকে ২১০০০ টাকা
হোটেল হিলটন বান্দরবান শহরের কাছে ১০০০ থেকে ৪০০০  টাকা
হোটেল হিল কুইন বান্দরবান সদর ১২০০ থেকে ৭০০০ টাকা
১০ পর্যটন মটেল বান্দরবান সদরের কাছে ১৫০০ থেকে ৫৪০০ টাকা
১১ ফরেস্ট হিল রিসোর্ট বান্দরবান সদরের কাছে ৩০০০ থেকে ১০০০০ টাকা

 

বান্দরবানে ঘোরার জায়গা

থাকার ব্যাবস্থা তো হলো। এবার আপনার ট্যুর এর পালা। বাকি ট্যুর গাইড নিয়ে জানতে চাইলে আরো একটু ধৈর্য ধরতে হবে আপনাকে। বান্দরবান ট্যুর এর পুরো সময়টা জুড়ে মূলত তিনটি স্থানে যেতে হবে। বান্দরবান শহরের আশেপাশে, রুমা, এবং থানচি।

বান্দরবান শহর থেকে রুমা যাওয়ার উপায়

বান্দরবান জেলা সদর থেকে অটোতে করে চলে যেতে হবে রুমা বাস স্ট্যান্ড। সেখান থেকে বাসে করে চলে যেতে পারবেন রুমা। জন প্রতি বাস ভাড়া পড়বে ১০০-২০০ টাকা করে। বাস থেকে নেমেই আপনাকে চলে যেতে হবে গাইড অফিসে। সেখান থেকে একটি ফরম কিনে আপনার সকল তথ্য পূরণ করতে হবে। আর এন্ট্রি করতে হবে আর্মি ক্যাম্পে।

বান্দরবান শহর থেকে থানচি যাওয়ার উপায়

জেলা শহর থেকে থানচি যেতে হলে আপনাকে জিপ বা চাঁন্দের গাড়ি ভাড়া করতে হবে। একটি চাঁন্দের গাড়িতে ১২ থেকে ১৪ জন বসতে পারে। শুধু যাওয়ার ভাড়া পরবে ৪০০০ টাকা। সকলে শেয়ার করে এই ভাড়া দিতে পারবেন। থানচি যাওয়ার পথে, রেমাক্রি আর্মি ক্যাম্পে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র দেখিয়ে এন্ট্রি করে নিতে হবে। আর এখান থেকে আপনাকে অবশ্যই একজন ট্যুর গাইড সাথে করে নিয়ে নিতে হবে।

থানচিতেই মূলত সবচেয়ে বেশি দর্শনীয় স্থান রয়েছে। যেগুলো একদিনে ঘুরে দেখা সম্ভব নয়। তাই, অন্তত দুই দিন সময় নিয়ে আসবেন এই উপজেলায়। থাকার জন্য বেছে নিতে পারেন থানচি রোডে অবস্থিত রিসোর্ট বা হোটেল গুলো। তার চেয়ে ভালো হয় বলিপারা বিজিবি ক্যাম্প। থানচি প্রবেশের ঠিক আগেই এর অবস্থান। এখানে আপনি খাবার, মার্কেট, ক্যাম্পিং, নৌকা ভ্রমণ, এবং থাকার জন্য কটেজ ভাড়া করতে পারবেন। অথবা স্থানীয় আদিবাসী দের কারো বাড়িতে থাকার সুযোগ থাকলে, সেখানেও থাকতে পারেন।

মেঘলা বান্দরবান
মেঘলা, বান্দরবান

বান্দরবানের দর্শনীয় স্থানসমূহ (Places to visit in Bandarban)

বান্দরবানে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান বা পর্যটন এলাকা রয়েছে। এর মধ্যে কিছু কিছু স্থান আপনার ঘুরে  দেখতেই হবে।

বান্দরবান শহরের আশেপাশের পর্যটন এলাকা (Tourist spots around Bandarban city)

স্বর্ণমন্দির

বান্দরবান শহরেই এই স্বর্ণমন্দিরের অবস্থান। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মন্দির। স্থানীয় ভাষায় একে বলা হয় কিয়াং। সবুজ পাহাড়ের উপর অবস্থিত এই মন্দিরের আশেপাশে প্রায় সারা বছরই কোনো না কোনো উৎসব লেগে থাকে। শহর থেকে যেকোনো লোকাল ট্রান্সপোর্টে করে চলে আসতে পারেন এখানে। তবে সন্ধ্যা ৭ টার পর এখানে পর্যটকদের অবস্থান নিষিদ্ধ। আর এখানে একটি নিয়ম সবাইকে মেনে চলতে হয়। সেটি হল, কোনো অশালীন বা খাটো পোশাক পড়ে এখানে আসা যাবেনা এবং জুতা খুলে প্রবেশ করতে হবে।

স্বর্ণ মন্দির বান্দরবান

নীলাচল

বান্দরবান শহর থেকে মাত্র ৫ কিমি দূরে, টাইগার পড়ায় অবস্থিত এই নীলাচল। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ২০০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত এই অঞ্চল থেকে পুরো বান্দরবানের সৌন্দর্য আপনি উপভোগ করতে পারবেন। আকাশে মেঘ না থাকলে, দূরের কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ও আপনাকে হাতছানি দেবে। বর্ষা, শরৎ আর হেমন্তে এখানে আসলে আপনি হাত দিয়ে মেঘ ছুঁতে পারবেন। বান্দরবান থেকে একটি জিপ ভাড়া করে সহজেই চলে আসতে পারেন এই স্থানে।

শৈলপ্রপাত

বান্দরবান শহর থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে, থানচি রোডে অবস্থিত, স্বচ্ছ ও অত্যন্ত শীতল পানির ঝর্ণা এই শৈলপ্রপাত। শৈলপ্রপাত ঝর্ণার অপরূপ সৌন্দর্য দেখার জন্য আপনাকে অবশ্যই এখানে আসতে হবে। এর পাশেই লোকাল অনেক মার্কেট রয়েছে। যেখান থেকে আপনি স্থানীয়দের হাতে তৈরি কারুকার্য মন্ডিত জিনিষপত্র কিনতে পারবেন। শহর থেকে কোনও জিপ বা চাঁন্দের গাড়িতে চড়ে চলে আসতে পারেন এখানে।

শৈলপ্রপাত বান্দরবান
শৈলপ্রপাত

রুমার দর্শনীয় স্থান ( Tourist spots in Thanchi)

বগা লেক

বগা লেক হলো বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উচ্চতার সাদু পানির লেক। রহস্যময় এই লেকের পানি, বছরে কয়েকবার নিজের রং পাল্টায়। যদিও আশেপাশে কোনো লেকের সাথে এর কোনো যোগ নেই, তবুও অদ্ভূতভাবে, বগা লেকের পানির রং পরিবর্তনের সাথে সাথে আশেপাশে লেক গুলোর পানির রং ও পরিবর্তিত হয়। এর পিছনে কি রহস্য, তা আজও ভেদ করা সম্ভব হয়নি।

কথিত আছে, অনেক আগে প্রতিদিনই কারো না কারো মুরগি, ছাগল কিংবা প্রিয় গরু চুরি হয়ে যেতো । কে চুরি করছে, জানার জন্য সকলে একদিন ওত পেতে ছিল। দেখা গেলো, বিশাল আকৃতির এক অজগর সাপের কাজ এগুলো। সাপ টিকে মেরে, টুকরো করে বাড়ি বাড়ি পাঠানো হলো খাওয়ার জন্য। এক ব্যক্তি, সাপের মাথাটি ফেলে দেয়ার পর তা থেকে পুরো সাপ আবার জন্ম নিলো। সাপের অভিশাপে ভয়ঙ্কর এক ভূমিকম্পে পুরো গ্রাম তলিয়ে গেলো। সেখান থেকে সৃষ্টি হল বগা লেক।

সবান্দরবান শহর থেকে সরাসরি জিপে করে চলে আসতে পারেন এখানে। শুধুমাত্র যাওয়ার খরচ হবে ৬০০০ টাকা, যা সকলে শেয়ার করে পরিশোধ করতে পারবেন। অথবা, বান্দরবান থেকে রুমা, রুমা থেকে জিপ বা চাঁন্দের গাড়ি করে আসতে হবে এখানে।

বগা লেক দেখতে হলে, সকাল সকাল রওনা করতে হবে। কারণ, বিকাল ৪টার পরে আপনি এখানে আর প্রবেশ করতে পারবেন না। তবে থাকতে চাইলে অসম্ভব সুন্দর কটেজ এখানে পেয়ে যাবেন। মাত্র ২০০ টাকা জনপ্রতি, এক রাত থাকার জন্য।

কেওক্রাডং

বাংলাদেশের ৫ম সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ, কেওক্রাডং পাহাড়ে যেতে চাইলে আপনাকে অন্তত দুইদিন সময় দিতে হবে রুমা উপজেলায়। বগা লেকে এক রাত অবস্থান করে পরদিন সকাল সকাল বেরিয়ে পড়তে হবে আপনার।

চিংড়ি ঝর্ণা

চিংড়ি ঝর্ণা, বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু ঝর্ণা গুলোর একটি। বগা লেক থেকে এক ঘণ্টার পথ পায়ে হেঁটে, কেওক্রাডং যাওয়ার পথে দেখতে পাবেন এই ঝর্ণা। আকাবাকা আর পিচ্ছিল পাথরের রাস্তা পেরিয়ে পৌঁছাতে হবে চিংড়ি ঝর্ণায়

থানচির দর্শনীয় স্থান ( Tourist spots in Thanchi)

তাজিংডং বা বিজয়

তাজিংডং এর অবস্থান রেমাক্রি তে। আকাবাকা, ঘন সবুজ বনে ঘেরা এই পাহাড়ে সারা বছরই চলে মেঘের লুকোচুরি। এই পাহাড়ে আসতে হবে, বগা লেক থেকে ট্র্যাকিং করে । প্রায় ৭ থেকে ৮ ঘন্টা হাঁটার পরেই আপনি তাজিংডং এর চূড়ায় পৌঁছাতে পারবেন।

সাঙ্গু নদী

সাঙ্গু নদীই একমাত্র নদী, যা বাংলাদেশের ভেতরেই উৎপন্ন হয়ে, দেশের ভেতরেই বয়ে চলেছে। প্রায় ২৭০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে, বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিশেছে এই নদী। রুমা থেকে থানচির মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনকারী এই নদী, বর্ষায় সবচেয়ে স্রোতস্বিনী থাকে। এর দুই তীরে রয়েছে পাহাড়, বন, নদী আর ঝর্ণা। বান্দরবান শহর থেকে লোকাল বাসে করেই চলে আসতে পারবেন রেমাক্রি। এখানেই বয়ে চলেছে এই নদী।

সাঙ্গু নদি বান্দরবান

নাফাখুম

বান্দরবান শহর থেকে ৮০ কিমি দূরে, থানচি উপজেলার সাঙ্গু নদীর পাড়ে অবস্থিত এই নাফাখুম ঝর্ণা। রেমাক্রি খালের পানি এখানে এসে হঠাৎ করেই পাক খেয়ে, ২৫ থেকে ৩০ ফুট নীচে নেমে গেছে। তাই একে রেমাক্রি ঝর্ণাও বলা হয়। সূর্যের আলো পরে, সারা বছরই পানিতে রংধনুর খেলা চোখে পড়ে। দুপাশে সবুজ পাহাড়ে ঘেরা এই খুম, আপনার মনে নিঃসন্দেহে অ্যাডভেঞ্চারের অনুভূতি জাগাবে।

ডিম পাহাড়

আলীকদম থেকে থানচি যেতে পথে দেখতে পাবেন ডিম পাহাড়। এই পাহাড়ের চূড়া, দূর থেকে অনেকটা ডিম্বাকৃতি  দেখায় বলে, এর নাম ডিম পাহাড়। বাংলাদেশ আর্মির তত্ত্বাবধানে থাকায়, ডিম পাহাড়ে যাতায়াত ব্যাবস্থা খুবই উন্নত। এই পাহাড় এতই সুন্দর যে, তা ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব। থানচি বাজার থেকে চাঁন্দের গাড়িতে করে চলে আসতে পারেন এই জাদুকরী সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য।

চিম্বুক পাহাড়

চিম্বুক পাহাড়কে, বাংলাদেশের পাহাড়ের রানী বলা হয়। কেউ কেউ আবার মেঘের এই স্বর্গরাজ্যকে, বাংলাদেশের দার্জিলিং বলেও অভিহিত করে থাকেন। বান্দরবান জেলা শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে, ২৫০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত এই পাহাড়। এটি দেশের ৩য় বৃহত্তম পাহাড়। নীলগিরি যাওয়ার পথে, দেখে আসতে পারেন এই পাহাড়ের মন মাতানো সৌন্দর্য। আপনি চাইলে মিলনছড়িতে খাওয়া সেরে আবার যাত্রা শুরু করতে পারেন। চাইলে মিলনছড়ি কটেজে রাত্রিযাপন করাও সম্ভব।

নীলগিরি

জেলা সদর থেকে দক্ষিন পূর্বে ৫০ কিলোমিটার দূরত্বে এর অবস্থান । নীলগিরির সৌন্দর্যের কারণেই  বান্দরবান কে বাংলাদেশের দার্জিলিং বলা হয়। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা ৩৫০০ ফুট। এখানে এলে মনে হবে আপনি কোনো মেঘের রাজ্যে চলে এসেছেন। চারদিকে সবুজে ঘেরা অসম্ভব সুন্দর এই স্থানটি, ঋতু পরিবর্তনের সাথে নিজের রূপ ও বদলে ফেলে। শীতের সময় এখানে ক্যাম্প ফায়ার করার জন্য সবচেয়ে উপযোগী। আর বর্ষায় মেঘ চলে আসে একেবারে হাতের মুঠোয়। সাথে তো সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের অতুলনীয় দৃশ্য রয়েছেই।

নীলগিরি যেতে হলে, প্রথমে আপনার চলে আসতে হবে থানচি। সেখান থেকে আপনি চাঁন্দের গাড়িতে করে সরাসরি চলে যেতে পারেন নীলগিরি।

আমিয়াখুম

বাংলাদেশ – মায়ানমার সীমান্তের পাশে, থানচি উপজেলার দূর্গম নাক্ষিয়ং নামক স্থানে অবস্থিত এই আমিয়াখুম। দুই পাশে সবুজ পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে প্রবল বেগে নেমে আসা এই ঝর্ণা, বর্ষায় থাকে সবচেয়ে প্রাণবন্ত। অনেকে বলে থাকেন, এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে সৌন্দর্যমন্ডিত ঝর্ণা।

আমিয়াখুম ঝর্না
আমিয়াখুম ঝর্না

আমিয়াখুম পৌঁছাতে হলে আপনাকে অনেক লম্বা রাস্তা পারি দিতে হবে। থানচি থেকে রেমাক্রি হয়ে, নাফাখুম পার হয়ে যেতে হবে জিনাপারা। সেখান থেকে থুইসা পাড়া পার হয়ে তবেই আমিয়াখুমের দেখা মিলবে। একদিনে এই পথ পাড়ি দিয়ে আবার ফিরে যাওয়া অসম্ভব। তাই, রেমাক্রি, নাফাখুম বা থুইসা পাড়ায় কোনো স্থানীয়ের বাড়িতে থেকে যেতে পারেন।

সাকা হাপোহং

বর্তমানে দেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হল সাকা হাপোহং। একে বাংলাদেশের হিমালয় বলে অভিহিত করা হয়। থানচি, রুমা এবং রেমাক্রি, তিন পথেই যাওয়া যায় এই পাহাড়ে। তবে রেমাক্রি থেকে পথ কিছুটা কাছে হয়। নাফাখুম, আমিয়াখুম পেরিয়ে, আপনাকে যেতে হবে সাজাই পাড়া। সেখান থেকে যেতে হবে সাকা হাপোহং।

এই ছিল মোটামুটি বান্দরবান ট্যুর গাইড (Bandarban tour guide). চাইলে বান্দরবান প্যাকেজ ট্যুর ও আপনি নিতে পারেন, যেগুলো ৬০০০ টাকা থেকে শুরু হয়। গ্রীষ্মকাল বাদে বছরের যেকোনো সময়ই আপনি যেতে পারেন বান্দরবান। ছুটির দিন এবং শীতের সময়ে ভিড় থাকে অনেক অনেক বেশি। তবে, সবার আগে নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার বিষয়ে খেয়াল রাখবেন। সাথে একজন ট্যুর গাইড, পর্যাপ্ত পানি , জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রী রাখবেন। শীতের সময় অবশ্যই গরম কাপড় সাথে নেবেন। আর জুতা নির্বাচন করবেন খুব সতর্ক ভাবে। হিল বা স্যান্ডেল জাতীয় জুতা ব্যবহার না স্পোর্টস সু বা স্নিকার ব্যবহার করবেন।

বান্দরবান গেলে যেসব খাবার অবশ্যই খাবেন

বান্দরবানের ট্যুর গাইড দিব, আর বান্দরবানের ঐতিহ্যবাহী খাবার নিয়ে কিছু বলবোনা, তা তো হয় না। বান্দরবান জেলার মতই, বান্দরবানের খাবারও বৈচিত্র্যময়। এখানে, থাকার হোটেল গুলোতে বেশির ভাগ সময়েই কোনো রেস্টুরেন্ট থাকেনা। সাধারণ বাঙালি খাবারের জন্য অনেক রেস্তোরাঁ থাকলেও, একেবারে ট্র্যাডিশনাল খাবার গুলো লোকাল হোটেলে পাওয়া যায়। বান্দরবান শহরের উজানিপারা সহ আরো কিছু জায়গায় আপনি লোকাল হোটেল পাবেন। আর, শহর ছেড়ে যতো ভিতরের দিকে যাবেন, ট্র্যাডিশনাল খাবারের হোটেল আরো বেশি পাওয়া যাবে।

বান্দরবানের হোটেল গুলো যেমন বাঁশের তৈরি, এর খাবারেও বাঁশের ব্যবহার ঠিক ততখানিই লক্ষণীয়। বাঁশ কোড়ল এখানকার খুব জনপ্রিয় একটি খাবার। এছাড়া, ব্যাম্বো চিকেন, ব্যাম্বো বিরিয়ানি, ব্যাম্বো চা বান্দরবানের জনপ্রিয় খাবার। কখনো কখনো বাঁশের ভেতর মাছও রান্না করে তারা।

বান্দরবানে বসবাসরত মারমা গোষ্ঠীর একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার হলো মুন্ডি বা মান্দি। বর্তমানে লোকাল হোটেল গুলোতে এই খাবারটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মুন্ডি তৈরিতে প্রথমে, দুই থেকে তিন দিন চাল ভিজিয়ে রাখা হয়। পরে, পানি ঝড়িয়ে শুকানোর পর গুড়ো করা হয়। পরে তা দিয়ে তৈরি করা হয় নুডলস। এই খাবারটি ফিশ কারী, স্যুপ, চিংড়ি এবং সামান্য লেবুর সাথে সার্ভ করা হয়।

আরেকটি ঐতিহ্যবাহী খাবার হলো ন্যাপ্পি। এটি এক ধরণের মাছ পেস্ট। এছাড়া ছুরি শুটকি, শিমুল ফুলের লাক্সো, চিকেন লাক্সো পাওয়া যায় লোকাল হোটেলে। লাক্সো বলতে ঝুড়ি করা খাবার বোঝায়। বান্দরবানের খাবারের একটি বিশেষত্ব হল, এখানে খাবারে খুব কম মসলা ব্যবহার করা হয় । যার কারণে, খাবারের স্বাদ অনেকটাই ভিন্ন ও রিফ্রেশিং হয়। তাই, বান্দরবান জেলায় ভ্রমণ করতে আসলে এই খাবার গুলো অবশ্যই খেয়ে দেখবেন।

শেষ কথা

অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবান এর ট্যুর গাইড (Bandarban tour guide) তো আমি আপনাকে দিয়েই দিলাম। সবগুলো স্থান ঘুরে দেখতে হলে অবশ্যই আপনাকে হাতে যথেষ্ট সময় নিয়ে যেতে হবে। ২ বা ৩ দিন সময় নিয়ে বান্দরবান ঘুরে দেখা সম্ভব, তবে অনেক আকর্ষণীয় স্থানেই আপনি যাওয়ার সময় পাবেন না। সব শেষে খেয়াল রাখবেন, যেখানে সেখানে ময়লা ফেলে স্থান গুলো নোংরা করবেন না।

Previous articleহাত দিয়ে ভি চিহ্ন তৈরি করলে তার অর্থ কি বুঝায়?
Next articleTollashi.net এ প্রশ্ন করে জেনে নিন আপনার প্রশ্নের উত্তর
যে ব্যর্থ সে অজুহাত দেখায়, যে সফল সে গল্প শোনায়। আমি অজুহাত নয় গল্প শোনাতে ভালবাসি। আসুন কিছু গল্প শুনি, নিজের গল্প অন্যকে শুনাই।