বদর যুদ্ধ

বদর যুদ্ধ পৃথিবীর ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, একই সাথে ইসলামের ইতিহাসে ত বটেই। মানব ইতিহাসে যত যুদ্ধ হয়েছে তার মধ্যে বদর যুদ্ধ অন্যতম।  ইসলামের প্রথম যুদ্ধ হওয়াতে মুসলমানদের কাছে এর আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। এ যুদ্ধে মহানবী (সাঃ) সরাসরি অংশগ্রহণ করেছিলেন, সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, এবং যুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করেছিলেন।

আমরা অনেকেই এই যুদ্ধ নিয়ে তেমন কিছুই জানি না, তাই আমি রাসেল খান আপনাদের জ্ঞান তৃষ্ণা কিছুটা নিবারন করার চেষ্টা করব। সাথে থাকুন, পড়তে থাকুন।

বদর যুদ্ধের স্থানঃ বর্তমান অবস্থা
বদর যুদ্ধ এর স্থানে তৈরি মনুমেন্ট

বদর যুদ্ধ এর নামকরণ

বদর একটি জনপদের নাম। যা মদিনা থেকে ৮০ মাইল দূরে অবস্থিত।বদর ইবনে ইয়াখলুদ ইবনে কিনানা অথবা  বদর ইবনে হারিস এই জনপদের প্রতিষ্ঠাতা, তাই তার নামে এলাকার এ নামকরন করা হয়। আবার কেউ কেউ বলেছেন, বদর মূলতঃ একটি  কূপের নাম। পরবর্তীতে কূপের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলেরও নাম হয়ে যায় বদর।

ম্যাপে বদর
বদর যুদ্ধের অবস্থান

হিজরি ২ সালের ১৭ রমজান (ইংরেজি ১৭ মার্চ ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দ) মদিনার মুসলিম ও মক্কার কুরাইশদের মধ্যে বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হয়।

টাকা ছাড়া সদকার সোয়াব হাসিলের শ্রেষ্ঠ পাঁচ উপায়, ভিডিওতে দেখে নিন।

বদর যুদ্ধ এর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কারণ

রমজানের সূচনায় রাসূল (সাঃ) নিশ্চিত ভাবে অবহিত হলেন যে, আবু সুফিয়ান কুরাইশের এক ব্যবসায়ী কাফেলা নিয়ে শাম থেকে মক্কায় ফিরে যাচ্ছে। আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে কুরাইশের কাফেলাটি শামে গিয়েছিলো অস্ত্র ক্রয় করতে। কারণ মদিনায় বইতে থাকা ইসলামের বসন্তের হাওয়া তাদের ভাবিয়ে তুলেছিলো।

বিষয়টি আঁচ করতে পেরেই মুসলমানরা আবু সুফিয়ানের কাফেলা আটকে দিতে চায়৷ আবু সুফিয়ান মুসলিমদের সম্পর্কে তথ্য নিতে নিতে মক্কার পথে চলছিল, সে বিষয়টি বুঝতে পেরে মক্কায় খবর পাঠায় সাহায্যের জন্য৷ তবে খবরটি ছিলো একটি অপপ্রচার যে, মুসলমান বাহিনী তার কাফেলায় আক্রমণ করেছে৷ খবর পেয়ে তৎক্ষনাৎ আবু জাহেলের নেতৃত্বে বিশাল বাহিনী মদিনা আক্রমণে বের হয়৷ কিন্তু মুসলমানদের কোনো প্রস্তুতি ছিলো না। কারণ তারা এসেছিলো শুধু আবু সুফিয়ানকে আটকাতে৷

এই যুদ্ধ সংগঠিত হওয়ার পিছনে আরো কিছু কারণ প্রত্যক্ষ ভাবে কাজ করছিলো৷ যেমনঃ নাখলার খন্ডযুদ্ধ, মদিনার উন্নয়ন, কুরাইশদের অতীতের ক্ষোভ, ইসলামের প্রসার, তাদের ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশংকা ইত্যাদি ইত্যাদি ৷

বদর যুদ্ধ এর প্রস্তুতি

নবি কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন  রাওহে থেকে রওয়ানা হবে সাফরা নামক স্থানে পৌঁছালেন, তখন বাসবাস ও আদী (রাঃ) এসে কুরাইশ  ও কাফেলার রওনার হওয়ার খবর জানালেন।নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুহাজির ও আনসারদের সাথে পরামর্শ  করার জন্য তাদেরকে একএ করলেন। তিনি কুরাইশ বাহিনী সম্পর্কে সাহাবায়ে কেরামকে বিস্তারিতভাবে জানালেন।

হজরত  আবু বকর (রাঃ) এ সংবাদ শোনামাএ দাঁড়িয়ে গেলেন এবং খুবই  আবেগঘন ভাষা ও ভংগীতে নিজেকে সমর্পন করে দিলেন। যে কনো আদেশ  নিতে সদা প্রস্তুতির কথা জানিয়ে দিলেন, আন্তরিকভাবেই আনুগত্য প্রকাশের স্বীকৃতি ব্যক্ত করলেন। এরপর হযরত উমর (রা:) দাঁড়ালেন এবং অত্যন্ত উচ্ছাসপূর্ণ ভাষায় আনুগত্যের পূর্ণ  স্বীকৃতি প্রদান করলেন।

বনি ইসরাইল

বনি ইসরাইল আল্লাহর অসীম রহমত প্রাপ্ত এক অকৃতজ্ঞ  জাতি

বনি ইসরাল ও হজরত মুসা আ. এর কাহিনি আমাদের সবারই কম বেশি জানা। মিশরে ফেরাউনের নেতৃত্বে যখন বছরের পর বছর তাদের উপর চলছিলো অত্যাচার ঠিক তখন আল্লাহ পাঠিয়েছিলেন হজরত মুসা (আঃ) কে তাদের পথ দেখানর জন্য । আমরা জানি আল্লাহ কীভাবে ফেরাউনের ঘরে রেখেই মুসা (আঃ) কে লালন পালন করেছিলেন। এবং কীভাবে মুসা (আঃ) এর মাধ্যমেই ফেরাউনের কাছ […]

3 comments

পরদিন সকালে মুহাম্মদ (সাঃ) এর জন্য একটি ছাউনি নির্মাণের প্রস্তাব করা হলে তিনি তাতে সম্মতি প্রদান করেন। সেখানে তিনি হযরত আবু বকর (রাঃ) সহ অবস্থান করেন এবং বাহিরে হযরত সা’দ ইবনে মুআজ রা. ছাউনির দরোজায় তরবারি নিয়ে দাড়িয়ে থাকেন৷ যুদ্ধের দিন সকালে তিনি সবাইকে নিয়ে ময়দানে গিয়ে রণকৌশল বর্ণনা করেন।

অপরদিকে নিজেদের অবস্থা ও অবস্থানে আত্মবিশ্বাসী কুরাইশ দল উমাইর ইবনে ওয়াহাব জুমাহী নামক এক ব্যক্তিকে মুসলমানদের সৈন্য সংখ্যা অনুমান করার জন্য পাঠাল। তিনি দুইবার ঘুরে এসে সৈন্য সংখ্যা ৩০০ এর অধিক নয় বলে নিশ্চিত করলেন।

তারপর উমাইর যুদ্ধ না করে মক্কায় ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলো, এই কারণে যে তিনি রাসূল (সাঃ) এর পক্ষের সেনাবাহিনীতে মৃত্যুকে তুচ্ছ ভাবতে দেখেছেন এবং তাদের নিজ লোকদেরই মৃত্যু দেখতে চাইছেন না। তার এই বক্তব্য অনেক নেতা মেনে নিলেও আবু জাহল তা মেনে নেয়নি। বরং সবাইকে নানান বিষয়ে রাগিয়ে যুদ্ধের ময়দানে নিয়ে আসেন।

বদর যুদ্ধ – নেতৃত্ব ও সরঞ্জাম

মুসলিম বাহিনী

বদর যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীতে ছিলো মাত্র ৩১৩ জন পদাতিক সৈন্য, দুটো ঘোড়া, ৭০ টি উট৷ নেতৃত্বে ছিলেন মুহাম্মদ (সাঃ), আবু বকর (রা:) উমর ইবনুল খাত্তাব (রা:), হামযা ইবনে আব্দুল মুত্তালিব, আলি ইবনে আবি তালিব।

এই বাহিনীতে ৮০ জন মতান্তরে ৮৭ ছিলো মুহাজির অর্থাৎ মক্কার অধিবাসী যারা মদিনায় হিজরত করেছেন। আর বাকিরা ছিলেন আনসার অর্থাৎ মদিনার বাসিন্দারা যারা মুহাম্মদ (সাঃ) এর আগমনে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।


কুরাইশ বাহিনী

মক্কার কুরাইশদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আবু জাহল, উতবা ইবনে রাবিয়া, উমাইয়া ইবনে খালাফ। তাদের বাহিনী শুরুতে ১৩০০ পদাতিক সৈন্য থাকলেও পরবর্তীতে ৩০০ জনের একটি দল মক্কায় ফিরে যায়। যুদ্ধের দিন তাদের সংখ্যা ছিলো প্রায় ১০০০, ১০০ টি ঘোড়া, ১৭০ টির মত উট। তাছাড়া মুসলিম বাহিনীতে তেমন অস্ত্র সস্ত্র না থাকলেও কুরাইশদের কাছে তৎকালীন আধুনিক অস্ত্র ছিলো।

বদরের যুদ্ধ শুরু

যুদ্ধ শুরুর প্রথম দিকে কুরাইশরা মুসলিমদের পানির জলাধার দখল করে নেয়ার ঘোষণা দেয়। পানির এই কূপটি মুসলিমরা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর নেতৃত্বে আগেই নিয়ন্ত্রেণে নিয়েছিলো। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সবাইকে কাতারবন্দি করেন। সেনাবিন্যাসের পর সবাইকে তাঁর হুকুমের আগে যুদ্ধ শুরু করতে না করেন।

বনি ইসরাইল

বনি ইসরাইল আল্লাহর অসীম রহমত প্রাপ্ত এক অকৃতজ্ঞ  জাতি

বনি ইসরাল ও হজরত মুসা আ. এর কাহিনি আমাদের সবারই কম বেশি জানা। মিশরে ফেরাউনের নেতৃত্বে যখন বছরের পর বছর তাদের উপর চলছিলো অত্যাচার ঠিক তখন আল্লাহ পাঠিয়েছিলেন হজরত মুসা (আঃ) কে তাদের পথ দেখানর জন্য । আমরা জানি আল্লাহ কীভাবে ফেরাউনের ঘরে রেখেই মুসা (আঃ) কে লালন পালন করেছিলেন। এবং কীভাবে মুসা (আঃ) এর মাধ্যমেই ফেরাউনের কাছ […]

3 comments

কুরাইশদের আসওয়াদ ইবনে আবদুল পানির কূপটি দখল করতে আসলে হামজা ইবনে আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) তাঁর সাথে লড়াই করেন। লড়াইয়ে আসওয়াদ নিহত হন। এটিই ছিলো বদরের প্রথম মৃত্যু

তারপর সেই সময়কার নিয়ম অনুসারে দ্বন্দ যুদ্ধের মাধ্যমে লড়াই শুরু হয়। মুসলমানদের সেনা দল থেকে হারেছ এর দুই পুত্র আউফ ও মুআওয়ায এবং আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রাঃ) ময়দানে এলে উতবা তাদের সাথে যুদ্ধ করতে অস্বীকৃত জানায়।

কারণ হিসেবে তিনি বলে, “তোমরা তো আনসার। তোমাদের সাথে আমাদের কথা নেই। আমরা এসেছি আমাদের সম্প্রদায়ের লোকদের সাথে লড়াই করতে।“ এই বলে তিনি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে কুরাইশ সম্প্রদায়ের লোকদের ময়দানে পাঠানে আহ্বান করেন।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আনসারদের ফিরে আসার নির্দেশ দেন। তারপর আলী (রাঃ), হামযাহ (রাঃ) ও উবাইদা উবনুল হারেছ (রাঃ) কে নাম ডেকে মোকাবেলা করতে বের হতে বললেন। তারা কাতার থেকে বের হয়ে এলেন। যেহেতু মুখ ঢাকা ছিলো তাই কুরাইশরা তাদের পরিচয় জিজ্ঞেস করলো। পরিচয় পাওয়ার পর তারা লড়াইয়ে সম্মত হলো।

তাদের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হলে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই হযরত আলী (রাঃ) ও হযরত হামযা (রাঃ) তাদের মোকাবেলাকারীদের হত্যা করে ফেলেন। অপরদিকে উবাইদা (রাঃ) তাঁর মোকাবেলা কারীকে আহত করে নিজেও আহত হন। আলী (রাঃ) ও হামযা (রাঃ) নিজ নিজ মোকাবেলাকারীকে হত্যা করে উবাইদা (রাঃ) এর সাহায্যে এগিয়ে আসেন।

তারা উতবা কে হত্যা করে উবাইদা (রাঃ) কে নবীজী (সাঃ) এর কাছে নিয়ে যান। তখন উবাইদা (রাঃ) এর পায়ের নলার হাড় থেকে রক্ত পড়ছিলো। সে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন সে শহীদ কি না। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) হ্যাঁ সূচক উত্তর দিয়েছিলেন।

উতবা, শাইবা ও ওয়ালীদ মুসলমানদের হাতে নিহত হওয়ার পর আবু জাহেল কাফের সৈন্যদলকে নতুন করে উৎসাহ উদ্দীপনা দিতে থাকে। সে বলতে থাকে, হে লোকেরা! উতবা, শাইবা, ওয়ালীদ মারা যাওয়াতে তোমরা ঘাবড়ে যেও না। তারা ভুল করে ফেলেছিলো। যাই হোক, লাত ও উযযার কসম, আমরা সে পর্যন্ত যুদ্ধের ময়দান ছাড়বো না, যে পর্যন্ত না আমরা তাদেরকে রশিদিয়ে বেঁধে ফেলতে পারবো। এখানে তিনি মুসলমানদেরকে বুঝিয়েছেন।

আদ জাতি

হযরত হুদ (আঃ), দুর্ধর্ষ আদ জাতি এবং আল্লাহর আযাব।

আল্লাহ যতগুলো জাতিকে গজব দিয়ে ধ্বংস করেছেন তার মধ্যে আদ জাতি অন্যতম।আদ জাতি ছিল দুর্ধর্ষ, শক্তিশালী এবং একই সাথে সম্পদশালী। তারা লম্বায় ছিল যে কারও চেয়ে বেশি, তাদের ছিল পেশীবহুল শরীর, তাদের হাড়ের গড়ন ছিল যে কারও চেয়ে শক্ত, এককথায় তারা ছিল অনন্য-তাদের সময়ে তাদের সাথে তুলনা করার মত আর কেও ছিলনা। কোরআনে তাদের স্বাতস্ত্র্য […]

12 comments

তার এই বক্তব্যের পর তিনি মুসলমানদের বিরুদ্ধে দোয়া করলেন। তাঁর ভাষণ ও দোয়া শুনে কুরাইশরা আগ্রহ ফিরে পায়। তাঁর দলবেধে সবাই আক্রমণে নেমে যায়। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নির্দেশ দেন যে শত্রুরা বেশি সংখ্যায় কাছে এলেই যেন তীর চালানো হয়। তাঁর আগে নয়। প্রাণপন এই লড়াইয়ে কুরাইশরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পিছু হটতে বাধ্য হয়। যারা অনিচ্ছাকৃত ভাবে কুরাইশদের পক্ষে যুদ্ধ করতে এসেছিলো তাদেরকে হত্যা না করার নির্দেশ দিয়েছিলেন রাসুলুল্লাহ (সাঃ)

মুয়ায ও মু আওয়াজ নামের দুই যুবক যুদ্ধের আগেই সংকল্প করে এসেছিলো যে তারা যেখানেই আবু জাহেলকে দেখবে সেখানেই তাঁকে হত্যা করবে। পরবর্তীতে তাদের ইচ্ছা পূরণ হয়েছিলো। হযরত বেলাল (রাঃ) তাঁর সাবেক মুনিব উমাইয়া ইবনে খালাফকে হত্যা করে, উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তাঁর মামাকে হত্যা করে।

বদর যুদ্ধের ফলাফল

বিকেলের মধ্যে যুদ্ধ সমাপ্ত হয়ে যায়। যুদ্ধে মুসলিম বাহিনী জয় লাভ করে।  যুদ্ধের শেষে মুসলিম শহীদদের যুদ্ধের ময়দানে দাফন করা হয়। নিহত কুরাইশদের লাশ ফেলে দেয়া হয় একটি কূপে। প্রায় ২৪ জন কুরাইশ নেতাকে সেদিন হত্যা করা হয়। আরবদের নিয়ম অনুযায়ী তিনদিন পর যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে মদিনাতে ফিরে আসে মুসলিম বাহিনী।

বদর যুদ্ধে যুদ্ধবন্দী

যুদ্ধের পর মুসলিম বাহিনী ৭০ জন যুদ্ধবন্দি সহ মদিনায় ফিরে। পরবর্তী সবসময়ে যুদ্ধবন্দীদের সাথে মুসলিম বাহিনী যে সদ্ব্যবহার করেছিলো তার শিক্ষা পেয়েছিলো এই বদর যুদ্ধ থেকেই৷ যুদ্ধবন্দিদের সাথে খুবই ভালো ব্যবহার করা হয়৷ নিজেরা খেজুর খেয়ে তাদেরকে রুটি খেতে দেয়৷

যুদ্ধবন্দিদের সাথে কি করা হবে তা নিয়ে মতামত নেয়া হয় সাহাবীদের থেকে৷ হযরত আবু বকর (রাঃ) মুক্তিপণের মাধ্যমে তাদেরকে ছেড়ে দেয়ার পরামর্শ দিলেও হযরত উমর (রাঃ) নিজ নিজ আত্মীয়কে হত্যার পরামর্শ দেন। যাতে মুশরিকরা বুঝতে পারে মুসলিমরা এই ব্যাপারে কতটা কঠোর৷ কিন্তু মুহাম্মদ (সাঃ) আবু বকর (রাঃ) এর পরামর্শ গ্রহণ করলেন।

এক থেকে চার হাজার দিনার পর্যন্ত মুক্তিপণ নির্ধারণ করা হলো৷ তাছাড়া যারা শিক্ষিত ছিলো তাদেরকে মুক্তিপণ হিসেবে ১০ জন অশিক্ষিত মুসলিমকে শিক্ষিত করা দায়িত্ব দেয়া হয়৷ পাশাপাশি মুত্তালিব ইবনে হানতাব, সাইফি ইবনে আবি রিফায়া ও আবু ইজজা জুমাহিসহ কয়েকজন বন্দীকে মুক্তিপণ ছাড়াই ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। শেষোক্ত দুইজন পরবর্তী উহুদের যুদ্ধে মারা যায়।

বদর যুদ্ধে দুই জন যুদ্ধবন্দিকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছিল। এরা হলেন নাদার ইবনে হারিস ও উকবা ইবনে আবু মুয়াইত। বদর থেকে ফেরার সময় সাফরা উপত্যকায় নাদার ইবনুল হারিস এবং ইরকুজ জুবয়া নামক স্থানে উকবা ইবনে আবু মুয়াইতকে হত্যা করা হয়।

বদর যুদ্ধের ফলাফল

কুরাইশদের পরাজয়ের খবর  মক্কায় পৌছালে নিহতদের শোকে মক্কায় মাতম শুরু হয়। কিন্তু এরপর তারা সংযত হয়ে প্রতিশোধের চিন্তা করতে থাকে৷ মুক্তিপণ নিয়ে ভাবতে নিষেধ করে৷ এর প্রতিক্রিয়াতে পরের বছরেই তারা উহুদের যুদ্ধে মুখোমুখি হয়।

তাছাড়া এই যুদ্ধের পর কুরাইশরা মুসলিমদের আগের মত দুর্বল ভেবে তিরস্কার করার সাহস পেতো না।বদর যুদ্ধের বিজয় ছিল মুসলিম উম্মাহর জন্য প্রথম রাজনৈতিক স্বীকৃতি। মুহাম্মদ (সাঃ) এর কর্তৃত্ব আগের চেয়ে বৃদ্ধি পায়। ইসলাম গ্রহণের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়৷ বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা সাহাবীদের সবাই সম্মানের চোখে দেখতো। তাছাড়া কুরআনেও তাদেরকে অনেক মর্যাদা প্রদান করা হয়।

আবু জাহল সহ অনেক কুরাইশ নের্তৃত্ব বদরের প্রান্তেরে নিহত হওয়াতে অনেকটা নের্তৃত্ব শূন্য হয়ে পড়ে। তাদের এই বিশৃঙ্খল অবস্থায় আবু সুফিয়ান নের্তৃত্বের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। যদিও মক্কা বিজয়ের সময় আবু সুফিয়ান ইসলাম গ্রহণ করেন। পরবর্তী তার ও তার পরিবার দ্বারা ইসলামের অনেক খেদমত হয়।

ইসলামের বদর যুদ্ধের গুরুত্ব

  • বদর যুদ্ধ ছিল মুসলমানদের সাথে মুশরিকদের মুখোমুখি প্রথম সশস্ত্র সংঘর্ষ।
  • টিকে থাকা এবং না থাকার ফয়ছালাকারী যুদ্ধ ছিল বদর যুদ্ধ।
  • হক ও বাতিলের মধ্যে এক অসম যুদ্ধের নাম বদর যুদ্ধ।
  • নেতা হিসেবে নবী (সাঃ) এর উত্থানে বদরের গুরুত্ব অপরিসীম।
  • বদর ছিল ইসলামি মুজাহিরদের জন্য এক অগ্নিপরীক্ষা।
  • বদরের যুদ্ধ ছিল কাফিরদের মূল উৎপাটনকারী এবং সত্যকে প্রতিষ্ঠাদানকারী এক যুদ্ধ।
  • বদরের যুদ্ধে মুসলিমদের জয়ের কারণে কাফিরেরা ভীত হয় এবং অনেকে ইসলামের ছায়আঃতলে আসে।
  • বদরের যুদ্ধ ছিল মক্কা বিজয়ের প্রথম ধাপ। এই সময়েই কেবলা মক্কার দিকে ঘুরানো হয়।

পবিত্র কুরআনে বদর যুদ্ধ

শুধু ইসলাম নয় সমগ্র মানব জাতির জন্যই বদর যুদ্ধ ছিলো গুরুত্বপূর্ণ৷ পবিত্র কুরআনের অনেক জায়গাতে এই যুদ্ধ সম্পর্কে বলা হয়েছে। যুদ্ধ শুরু থেকে যুদ্ধবন্দিদের সাথে কেমন ব্যবহার করা হবে তার প্রায় সব নির্দেশনা ছিলো কুরআনে। সুরা আলে ইমরান ও সুরা আনফালে বিস্তারিত বর্ণনা ছাড়াও অনেক সুরাতে স্থান করে নিয়েছে বদর যুদ্ধ।

বদর যুদ্ধের সাহায্য সম্পর্কে তুলে ধরে মহান আল্লাহ বলেছেন,

وَلَقَدْ نَصَرَكُمُ اللَّهُ بِبَدْرٍ وَأَنتُمْ أَذِلَّةٌ ۖ فَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ

“বস্তুতঃ আল্লাহ বদরের যুদ্ধে তোমাদের সাহায্য করেছেন, অথচ তোমরা ছিলে দুর্বল। কাজেই আল্লাহকে ভয় করতে থাক, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ হতে পারো।”

সুরা : আল ইমরান, আয়াত : ১২৩

আল্লাহ তাআলা এ যুদ্ধ সম্পর্কে কুরআনে বলেন-

قَدْ كَانَ لَكُمْ آيَةٌ فِي فِئَتَيْنِ الْتَقَتَا ۖ فِئَةٌ تُقَاتِلُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَأُخْرَىٰ كَافِرَةٌ يَرَوْنَهُم مِّثْلَيْهِمْ رَأْيَ الْعَيْنِ ۚ وَاللَّهُ يُؤَيِّدُ بِنَصْرِهِ مَن يَشَاءُ ۗ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَعِبْرَةً لِّأُولِي الْأَبْصَارِ

 

“নিশ্চয়ই দুটো দলের মোকাবিলার মধ্যে তোমাদের জন্য নিদর্শন ছিল। একটি দল আল্লাহর রাহে যুদ্ধ করে। আর অপর দল ছিল কাফেরদের এরা স্বচক্ষে তাদেরকে দ্বিগুন দেখছিল। আর আল্লাহ যাকে নিজের সাহায্যের মাধ্যমে শক্তি দান করেন। এরই মধ্যে শিক্ষনীয় রয়েছে দৃষ্টি সম্পন্নদের জন্য।”

সুরা আল ইমরান, আয়াত-১৩

বদর যুদ্ধ এর শিক্ষা

আল্লাহর পথে থাকলে, হকের পথে থাকলে আল্লাহর সাহায্য সাথে থাকলে মুসলমানদের জয় কেও ঠেকাতে পারবেনা। মাত্র ৩১৩ জন সৈন্যবাহিনী নিয়ে হাজার সৈন্যের বিরুদ্ধে মুসলমান বাহিনী জয় লাভ করে। এই ঐতিহাসিক জয় থেকে শিক্ষনীয় অনেক কিছুই আছে। এর মধ্যে অন্যতম হল-

  • ইসলামের ইতিহাসে প্রথম যুদ্ধ হওয়ায় যুদ্ধের কৌশলগত বিষয়াদি শিক্ষনীয়।
  • কম শক্তি নিয়ে বিজয় অর্জন করায় আল্লাহর প্রতি মুসলিমদের আস্থা ও বিশ্বাস আরও বেড়ে যায়।
  • মহানবী (সাঃ) নিজে যুদ্ধে অংশগ্রহন করায় নেতা হিসেবে তাঁর গ্রহনযোগ্যতা আরও বেড়ে যায়।
  • আত্মরক্ষা ও ইসলামের স্বার্থ ব্যতীত ইসলামে যুদ্ধ করা থেকে বিরত থাকাই নিয়ম।
  • বাতিলের বিরুদ্ধে মুসলিম আল্লাহর উপর তাওয়াককুল করে ঝাপিয়ে পড়বে।
  • জান্নাত লাভ করাই একজন মুসলিমের উদ্দেশ্য, দুনিয়াবি কোন কিছুই তার উদ্দেশ্য হতে পারেনা।
  • যুদ্ধ বন্দিদের সাথে কেমন ব্যবহার করতে হবে তা এই যুদ্ধ থেকেই শিক্ষা পাওয়া যায়।

আধুনিক যুদ্ধে বদরের প্রভাব।

  • ১৯৭৩ সালের যুদ্ধঃ ইসরাইলের সাথে মিশরের যুদ্ধের নাম ছিল “অপারেশন বদর”।
  • আশির দশকে ইরাকের বিরুদ্ধে ইরানের যুদ্ধের নামও ছিল “অপারেশন বদর”।

পরিশেষে

মানব ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেয়া বদর যুদ্ধের প্রভাব ছিলো সুদূরপ্রসারী। যুদ্ধ থেকে শিক্ষনীয় বিষয় ছিলো অনেক। অল্প সংখ্যক সৈন্য নিয়ে বিপুল সৈন্যের বিরুদ্ধে করা যুদ্ধ জয়লাভ করা যেমন ছিলো বিস্ময়কর তেমন ছিলো শিক্ষনীয় এই যে মনোবল শক্ত থাকলে যে কোনো কিছুই সম্ভব। অল্পপরিসরে বদর যুদ্ধ সম্পর্কে আপনাদের জানাতে পেরে কৃতজ্ঞ৷ আশা করি পড়ার পর ভালো লাগবে।

ধন্যবাদ সবাইকে।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করেও আমাদের উৎসাহিত করতে পারেন। ইউটিউব চ্যানেল লিংক এখানে। আশা করি অবশ্যই ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে আমাদের সহযোগীতা করবেন। তাহলে আমরা উৎসাহিত হয়ে আরও লেখা পাবলিশ করব।

Previous articleডার্ক ওয়েব কি?
Next articleAK 47 Gun আবিস্কারের ইতিহাস এবং অন্যান্য
আমি মোঃ হাবিবুর রহমান রাসেল৷ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ অধ্যয়নরত। বই পড়তে ভালোবাসি। বইয়ের গ্রুপ গুলোতে মাঝে মাঝে রিভিউ লিখি৷ যা পড়ি, তা সবাইকে জানাতে ইচ্ছে করে। সেই আগ্রহ থেকেই টুকটাক লেখার চেষ্টা করি।