প্রতিদিন ১০০০ টাকা ইনকাম

প্রতিদিন ১০০০ টাকা ইনকাম – এই কি ওয়ার্ড দিয়ে গুগলে সার্চ দিলাম খুব আগ্রহ সহকারে। গুগল তার সার্চ রেজাল্টে সর্বমোট ৯০ টি রেজাল্ট দেখাল, যার প্রায় প্রতিটি পেইজেই গ্যারান্টি সহকারে উপায় বাতলে দিচ্ছে কিভাবে প্রতিদিন ১০০০ টাকা ইনকাম করা যায়। ব্যাপারটি কি আসলে এতই সহজ? তাই যদি হত তাহলে শুধু বাংলাদেশ কেন সারা পৃথিবীতে আর কেও না খেয়ে থাকত না। আবার ভাবছিলাম, প্রতিদিন ১০০০ টাকা ইনকাম করা না গেলে এরা সবাই এত কিছু কেন লিখছে, আসলেই যদি প্রতিদিন ১০০০ টাকা ইনকাম করা না যায়। নিজের আগ্রহ থেকেই চিন্তা করলাম নব্বইটা পেইজই তো- সবগুলোতে একটু ঢু মেরে আসি। যদি অথেনটিক কোন সোর্স পেয়ে যাই। আমিও প্রতিদিন ১০০০ টাকা ইনকাম করতে শুরু করলে খারাপ কি? মাসে ৩০,০০০ টাকা নেহায়েত কমনা। কী বলেন আপনারা?

প্রথমেই আমি বলে রাখি আমার মোটেই বিশ্বাস হচ্ছেনা এটি সম্ভব। আমি চাচ্ছি সবগুলো পেইজের মধ্যে প্রথম দশটি পেইজ এখানে একসাথে করব। দেখতে চাই তারা কে কী বলতে চায়। তারপর আমার নিজস্ব মতামত আপনাদের সামনে তুলে ধরব।

আমার এই ব্লগের কোন পাঠক যদি আমার ব্লগের কোন ইনফরমেশন দ্বারা প্রতারিত হন তার দায় দায়িত্বও আমি নিতে রাজি না। এবার আপনি ভেবে দেখুন তো সামনে আগাবেন কী না? তাহলে আসুন শুরু করা যাক।

www.ordinaryit.com

গুগল সার্চের প্রথমেই পেলাম www.ordinaryit.com এই ওয়েব সাইটি। এই সাইটের DA মানে হল ডোমেইন অথোরিটি ৪১, বেশ ভাল বলতে হবে। আজ দুই বছর পরে আমার ব্লগের DA যেখানে মাত্র ১৩। তো আসুন দেখা যাক তারা কি বলে।

আমি যা বুঝলাম তা হল, প্রথমে আপনাকে একটি প্রশ্ন দেয়া হবে, তারপরে একটি ভিডিও দেখতে বলা হবে যার মধ্যে ঐ প্রশ্নের উত্তর লুকায়িত থাকবে। উত্তর পেয়ে গেলে আরেকটি লিংকে গিয়ে ফর্ম ফিলাপ করে ঐ প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে এবং সবশেষে এই পেইজের লিংক (যা বক্সে দেয়া থাকে) কপি করে  হোয়াটস্যাপ বা ফেসবুকের দশজন বন্ধুকে শেয়ার করে দিতে হবে।

এরা সাধারণত মোবাইল রিচার্জ, বিকাশ বা নগদ ব্যালেন্সে মাধ্যমে পেমেন্ট করে থাকে। বিশ্বস্ততা প্রমানের জন্য এরা এদের ট্রেড লাইসেন্সের কপি সংযুক্ত করেছে যা দিয়ে আসলে কোন কিছুই প্রমান করেনা শুধুমাত্র তাদের ফিজিক্যাল এক্সিস্টেন্স ছাড়া। পোষ্ট কবে দিয়েছে তার কোন তারিখ নেই। তেমন কোন কমেন্টও নেই সেখানে। তারপরেও তারা গুগল সার্চে নাম্বার ১ র‍্যাংক করেছে। আপনি চাইলে এবার নিজে দেখে আসতে পারেন।

www.sofolfreelancer.net

গুগল সার্চে দুই নম্বরে যাকে পেলাম সে হল www.sofolfreelancer.net। এই সাইটের DA মানে হল ডোমেইন অথোরিটি ২০, মোটামুটি বলতে হবে। এরা আসলে সরাসরি কোন উপায় বাতলে দেয়নি, তবে এরা যার উপর জোড় দিয়েছে তা হল ফ্রিল্যান্সিং। এরা ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে যে প্রতিদিন ১০০০ টাকা ইনকাম করা যায় তাই বুঝাতে চেয়েছে।

তবে এরা ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে খুব ক্ষুদ্র পরিসরে আলোচনা করেছে। শুধুমাত্র ব্লগিং, কন্টেন্ট লেখা, গুগল এডসেন্স নিয়েই এরা সীমাবদ্ধ থেকেছে। যদিও ফ্রিল্যান্সিং এর আরও অনেক শাখা রয়েছে। এই পেইজ থেকে আপনি তেমন কিছু শিখতে পারবেন বলে মনে হল না। তবুও তারা গুগল সার্চে নাম্বার ২ র‍্যাংক করেছে।

www.trickbangla24.com

গুগল সার্চে দুই নম্বরে যাকে পেলাম সে হল www.trickbangla24.com। এই সাইটের DA মানে হল ডোমেইন অথোরিটি ১৩, খারাপই বলা যায়। এরা খুব সহজ একটা উপায় বেছে নিয়েছে, তা হল ভিডিও দেখে প্রতিদিন ৫০০-১০০০ টাকা ইনকাম করার পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে আসলে বেশির ভাগ মানুষই প্রতারিত হয়। অথেনটিক সাইট পাওয়াই মুশকিল।

এই পেইজে ১০টি সাইটের নাম উল্লেখ করেছে যেখান থেকে আপনি চাইলে প্রতিদিন ৫০০-১০০০ টাকা ইনকাম করে নেয়া যায়। সাইটগুলো সারা বিশ্ব থেকে বাছাই করা। তবে, মনে রাখবেন এক্ষেত্রে যা হয় তা হল-বেশির ভাগ সাইটই আসলে স্ক্যাম। গুগল করে এই দশটি সাইট দেখুন, এর রিভিউ পড়ুন, স্ক্যাম কিনা তা যাচাই বাছাই করে দেখুন। তারপর শুরু করুন।

একটা জিনিষ আমি আপনাকে বলে রাখি, এই ধরনের কাজ করতে হলে আপনার ইন্টারনেট কানেকশন অবশ্যই রিয়েল আইপি হতে হয়। আপনি কি জানেন, আপনার ইন্টারনেট কানেকশন রিয়েল আই পি কিনা? কিভাবে যাচাই করে দেখবেন? রিয়েল আইপি কিনা যাচাই করতে এই ব্লগ পড়ে দেখতে পারেন

www.infovandar.com

গুগল সার্চে চার নম্বরে যাকে পেলাম সে হল www.infovandar.com। এই সাইটের DA মানে হল ডোমেইন অথোরিটি ৩৫, বেশ ভাল বলা যায়। এরা মূলত হাইলাইট করেছে বাংলাদেশি সাইটগুলোকে যেখান থেকে আপনি প্রতিদিন ১০০০ টাকা ইনকাম করতে পারবেন। আপনি বিকাশ, ব্যাংক একাউন্ট এবং পেপাল ব্যবহার করে পেমেন্ট গ্রহন করতে পারবেন বলে বলা হয়েছে।

এরা স্মল ওয়ার্কার নামে একটি এপ ডাউনলোড করতে বলেছে যেটাকে একটি মার্কেট প্লেস বলে দাবি করা হয়েছে। এখানে কাজ করে আপনি প্রতিদিন ১০০০ টাকা ইনকাম করতে পারবেন।

আমার মনে হয়েছে তাদের আরেকটু বিশদভাবে বর্ণনা করা উচিত ছিল। যদি তারা আসলেই এই মোবাইল এপ্সটির ভাল মার্কেটিং করতে চাইতেন। কেমন যেন দায় সারা গোছের রিভিউ মনে হয়েছে। যে ধাচের লেখা তা দেখে আসলে কেও এই এপ ডাউনলোড করতে উৎসাহিত হবে বলে মনে হয় না।

www.banglatech.info

গুগল সার্চে পাঁচ নম্বরে যাকে পেলাম সে হল www.banglatech.info। এই সাইটের DA মানে হল ডোমেইন অথোরিটি ৩৩, বেশ ভাল বলা যায়। এখানে আসলে অনলাইনে ইনকাম নিয়ে আলাপ করা হয়েছে। অনলাইনে আয় করার ১৪টি উপায় নিয়ে এরা একটু বিশদভাবে আলাপ করেছে। কিন্তু এরা এদের হেডলাইন করেছে প্রতিদিন ১০০০ টাকা ইনকাম, এটা আসলে ঠিক হয় নি।

মানে, ব্লগিং, ফ্রিল্যান্সিং, ইউটিউবিং, কন্টেন্ট রাইটিং, ডিজিটাল মার্কেটিং ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলাপ করেছে। যারা অনলাইনে আয় করতে চান তারা হয়তখান থেকে কাজগুলো নিয়ে কিছুটা ধারনা পেতে পারেন, আর কিছুই না। উপরের লিংকগুলো থেকে আপনিও চাইলে শিখে নিতে পারেন। আমাদের এই ব্লগেও এসব নিয়ে বিস্তারিত কনটেন্ট লেখা আছে।

www.earningpoint.club

গুগল সার্চে ছয় নম্বরে যাকে পেলাম সে হল www.earningpoint.club। এই সাইটের DA মানে হল ডোমেইন অথোরিটি ৩৩, বেশ ভাল। চালু সাইট বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু এদের লেখার ধরনই আমার পছন্দ হচ্ছে না।

ক্লিকে ক্লিকে হাজার হাজার টাকা আয়ের সুবাতাস দিচ্ছে তারা কিন্তু এদের লেখায় কোন আন্তরিকতা নেই কোন লিংক নেই, নিচে একটা ভিডিও এর লিংক দিয়ে দায়সারা গোছের একটা কনটেন্ট। আমি নিজে ভিডিও তে ক্লিক করে দেখি নাই। আপনারা চাইলে দেখে আসতে পারেন। আমার অত শখ নাই ভাই।

www.mdmotalab.com

গুগল সার্চে সাত নম্বরে যাকে পেলাম সে হল www.mdmotalab.com। এই সাইটের DA মানে হল ডোমেইন অথোরিটি ৫, নতুন সাইট মনে হয়। এরা একটি এপের মার্কেটিং করেছে বলে মনে হল। এপের নাম মি। ক্লিক এপ। এরা হাই লাইট করেছে কিভাবে মোবাইল দিয়ে প্রতিদিন ১০০০ টাকা ইনকাম করতে পারবেন।

এটাও ভিডিও দেখার একটি এপ। প্রতিটি ভিডিও দেখলে আপনি পাবেন ২০ পয়সা করে। এভাবে করে আপনি টাকা ইনকাম করতেই থাকবেন।

আমার জানামতে, এসব এপ্সে প্রতিদিন আপনি ভিডিও পাবেন না দেখার জন্য হয়ত ৫-১০ টা পাবেন, তারমানে আপনি দিনে পাবেন ১-২ টাকা। এভাবে আপনার ১০০০ টাকা বানাতে সময় লাগবে দের থেকে দুই বছর। এতদিন মোটেই আপনার ধৈর্য থাকবেনা। আপনি হয়ত খুব বেশি ধৈর্যশীল হলে ১০০-২০০ টাকা পর্যন্ত করে হাল ছেড়ে দিবেন। এমন শর্ত থাকে ৫০০/১০০০ না হলে টাকা তোলা যায় না। আবার অনেক সময় কেও কেও পেমেন্টও করে না। তাই সাবধান থাকবেন।

এই সাইট এমন হবে, তা বলছিনা। তবে আপনাদের সতর্ক করে দেবার জন্য আমি বলে রাখছি।

www.mystorybd.com

গুগল সার্চে আট নম্বরে যাকে পেলাম সে হল www.mystorybd.com। এই সাইটের DA মানে হল ডোমেইন অথোরিটি ৭, ভাল না। চালু সাইট বলে মনে হচ্ছেনা।

তেমন কোন ইনফরমেশন নেই বললেই চলে এই পেইজে। কনটেন্ট রাইটিং আর ভিডিও এডিটিং করে আপনি যে হাজার হাজার টাকা আয় করতে পারেন তাই এখানে বলা হয়েছে। আর কিছুই না।

তেমন কোন ভাল গাইড লাইন দেয়া নাই। দায় সারা ভাবে দুইটি উপায় বলে লেখা শেষ করা হয়েছে। আমি বলি কি আপনি যদি আসলেই কিছু শিখাতে চান আরেকটু এনালাইসিস করে লেখুন না ভাই। এইটুকু লিখে আপনি র‍্যাংকিং এর ৮ এ আসছেন কারণ বাংলা ভাষায় আর কিছু নাই বলে। ইংলিশ কন্টেন্ট হলে এই পেইজ প্রথম এক হাজারের মধ্যে থাকত কিনা আমার সন্দেহ আছে।

৯ নম্বরের কনটেন্টটি আসলে একটা ইউটিউব ভিডিও লিংক, তাই এটা নিয়ে আর বেশি আগালাম না। ১০ নম্বরে কি আছে সেটাই দেখা যাক।

www.techoffernews.com

গুগল সার্চে দশ নম্বরে যাকে পেলাম সে হল www.techoffernews.com। এই সাইটের DA মানে হল ডোমেইন অথোরিটি ১ এর নিচে, ভাল না মোটেই। চালু সাইট বলে মনে হচ্ছেনা। পড়ে দেখা যাক কি আছে এতে।

আসলে আমার একটু মেজাজ খারপই হচ্ছে বলা যায়। কনটেন্ট রাইটিং, এড দেখে টাকা ইনকাম এবং তার পরে কিছু বাংলা ব্লগের নাম উল্লেখ করেই এরা প্রতিদিন ১০০০ টাকা ইনকাম করার রাস্তা বতলে দিয়েছে। এর কোন মানেই হয়না।

গুগল তার সার্চ র‍্যাংকিং এ যে ব্যাপারটির উপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় তা হল একজন পাঠকের ইন্টেন্ট কি থাকে সার্চ করার ক্ষেত্রে। সেই বিচারে এই কনটেন্ট পুরাই ফেল। তার পরেও এরা র‍্যাংকের দশে অবস্থান করছে।

প্রতিদিন ১০০০ টাকা ইনকাম সার্চ করে আসলে কি পেলাম

আসলে কি পেলাম? আমার কাছে মনে হয়েছে অশ্ব ডিম্ব ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রতিদিন ১০০০ টাকা ইনকাম কি ওয়ার্ডে সার্চ করে আসলে তেমন কোন কিছু যেহেতু পাওয়া যাচ্ছে না, আমি আসলে খুব হতাস হয়েছি। আমার মনে হয় বেশির ভাগ ইউজারই আসলে তাই হয়েছেন।

তারপরেও আমরা সার্চ করি। গুগল থেকে জানতে পারলাম প্রতি মাসে এই কি ওয়ার্ডে ১০০-১০০০ সার্চ হয়। আমরা অনলাইনে ইনকামের পথ খুঁজি। খুঁজতে খুঁজতে অনেকেই পথ পেয়ে যাই, আবার অনেকেই পথ হারিয়ে ফেলি। এভাবেই নতুনেরা রাস্তা পেয়ে যায়।

যারা প্রতিদিন ১০০০ টাকা ইনকাম কি ওয়ার্ডে লিখছেন তারা আসলে কি চান? আমার মনে হয়েছে তারা আসলে ট্রাফিক চান। ঠিক আমার মতই।

সাবধান হোন, আগে জানুন বিষয়টা কি?

যারা প্রতিদিন ১০০০ টাকা ইনকাম করার সহজ রাস্তা খুঁজে বেড়াচ্ছেন, তাদের আসলে কিছু বিষয় ক্লিয়ার হওয়া দরকার। সেটা নিয়ে একটু লেখে ফেলি, এক নিশ্বাসে পড়ে ফেলুন। এটাই সবচেয়ে গুত্বপূর্ন অংশ আজকের ব্লগের।

এসব ওয়েব সাইট যেসব বিষয়ের প্রতি আলোকপাত করেছেন সেগুলো আসলে কি? আসুন একে একে দেখা যাক। কি কি ভাবে আপনি প্রতিদিন ১০০০ টাকা ইনকাম করতে পারবেনঃ

  • দক্ষতা ভিত্তিক টাকা ইনকাম
  • দক্ষতা ছাড়া টাকা ইনকাম

দক্ষতা ভিত্তিক টাকা ইনকাম

আসলে টাকা ইনকাম ব্যাপারটি এত সহজ ব্যাপার নয়। টাকা ইনকাম করতে হলে আপনাকে আসলে কোন কোন বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতেই হবে। এটাই টাকা ইনকামের আসল রাস্তা। চারদিকে ঘুরে ফিরে যা দেখলাম দক্ষতা বলতে আসলে কম্পিউটার বিষয়ক দক্ষতাই আসল। এই দক্ষতাই আপনাকে প্রতিদিন ১০০০ টাকা ইনকাম করতে সহায়তা করতে পারবে।

কি কি দক্ষতা আপনাকে প্রতিদিন ১০০০ টাকা ইনকাম করতে সহায়তা করবে? এটা ত আর এলাম, দেখলাম আর জয় করলাম তা নয়। আপনাকে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। আসুন দেখা যাক কি কি বিষয়ের উপর দক্ষতা থাকলে আপনি টাকা ইনকাম করতে পারবেন।

বেশির ভাগ সাইটেই যে ব্যাপারটির ব্যাপারে জোর দিয়েছে তা হল ব্লগিং এবং ফ্রিল্যান্সিং এর বিষয়ে। আসুন দুইটা নিয়ে সামান্য কিছু আলোকপাত করে দেখি।

  • ব্লগিং থেকে টাকা ইনকাম
  • ইউটিউব থেকে টাকা ইনকাম
  • ফ্রিল্যান্সিং থেকে টাকা ইনকাম

ব্লগিং কি? ব্লগ থেকে ইনকাম করবেন কিভাবে?

ব্লগিং আসলে লেখালেখি করা, লেখালেখির মাধ্যমে টাকা ইনকাম করা। ভাল কনটেন্ট রাইটার হলে একেকটি ব্লগ থেকে আপনি ৫ ডলার থেকে শুরু করে ২০ ডলার বা আরও বেশি ইনকাম করতে পারেন।

নিজের ব্লগে লিখলে এবং সেই ব্লগের মাধ্যমে এফিলিয়েশন করে আরও বেশি ইনকাম করা সম্ভব। এফিলিয়েশন আসলে বিভিন্ন প্রোডাক্টের মার্কেটিং করা ছাড়া আর কিছুই নয়। আমাজন কিংবা আলিবাবা বিভিন্ন ওয়েব সাইটের প্রোডাক্ট আপনার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিক্রি করলে আপনি কমিশন পাবেন, মাসে কয়েক হাজার ডলার ইনকাম করা অসম্ভব কিছুই নয়।

আবার, আপনার ওয়েবসাইটে যদি পাঠক পড়তে আসে যেমনটি আপনি এসেছেন আমার সাইটে তাহলে এখান থেকেও টাকা ইনকাম করতে পারবেন। এরকম সাইট যদি আপনার থাকে তাহলে গুগল এডসেন্স থেকে আপনি ইনকাম করতে পারবেন। আপনার সাইটে গুগল এড দিবে সেখান থেকে আয় আসবে।

এক্ষেত্রে আপনার কিছু দক্ষতা থাকতে হবে। যেমন- ওয়েবসাইট কিভাবে তৈরি করবেন, ডোমেইন কিভাবে কিনবেন ইত্যাদি। ওয়ার্ডপ্রেস জানলে আপনি নিজেই তৈরি করে নিতে পারবেন আপনার ওয়েবসাইট।

আপনারা যারা আমার মত লিখতে ভাল বাসেন তাদের জন্যই ব্লগিং। ব্লগিং কি এটা আরও বিস্তারিত জানতে আমার এই ব্লগটি ভাল ভাবে পড়ে দেখুন।

ইউটিউব থেকে টাকা ইনকাম

ইউটিউবে চ্যানেল খুলে বা ফেসবুকে পেজ খুলেও আপনি ভিডিও আপ্লোডের মাধ্যমে টাকা ইনকামের ব্যবস্থা করতে পারবেন। কিভাবে? আপনার ভিডিও যদি কেও দেখে তাহলে ইউটিউব সেখান থেকে যা আয় করবে তার একটি অংশ আপনাকে দিবে।

তবে, মনে রাখবেন, আপনার ইউটিউব চ্যানেলটিকে মনিটাইজড হতে হবে। এজন্য আপনাকে কিছু শর্ত ফিলাপ করতে হবে। তবেই আপনি বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের জন্য টাকা পাবেন।

এক্ষেত্রে আপনার কিছু দক্ষতা থাকতে হবে। যেমন- ভিডিও করা, ভিডিও এডিট করা ইত্যাদি। একটু ক্রিয়েটিভ জ্ঞান লাগবে।

ফ্রিল্যান্সিং থেকে টাকা ইনকাম

ফ্রিল্যান্সিং করে টাকা আয় করতে চাইলে আপনিও পারেন। এটাও দক্ষতা ভিত্তিক টাকা ইনকামের একটি ব্যবস্থা, তবে এর পরিধি অনেক বিশাল। ডাটা এন্ট্রির মত সহজ কাজ থেকে শুরু করে হাই লেভেল প্রোগ্রামিং এর কাজ করে হাজার হাজার ডলার প্রতি মাসে আয় করতে পারবেন।

ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ করতে চাইলে আপনাকে প্রথম বুঝতে হবে আপনি কোন বিষয়ে দক্ষ। কারণ এই সেক্টরে এখন কোটি কোটি মানুষ কাজ করছে। দক্ষতা ছাড়া অদক্ষ লোকের কোন ভাত এখানে নাই। একারনেই আগে আপনি কোন কাজে দক্ষ সেটা বের করুন।

তারপর আপনার দক্ষতার বিচারে মার্কেটপ্লেস খুঁজে বের করুন। সেখানে একাউন্ট খুলুন। প্রোফাইল তৈরি করে রাখুন। প্রয়োজনে লোকাল পরিচিত কারও কাজ ফ্রি তে করে দিয়ে সেই কাজেই লিষ্ট আপনার প্রোফাইলে সংযুক্ত করে দিন।

সাধারণত যে কাজগুলো করা হয়- ট্রান্সলেশন, এসইও, ডাটা এন্ট্রি, ডিজিটাল মার্কেটিং, ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইন, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ভিডিও এডিটিং, প্রোগ্রামিং, কনটেন্ট রাইটিং, ফরেক্স ইত্যাদি অনেক কাজ। এর লিষ্ট আসলে বলে শেষ করা যাবেনা, তাই লিস্ট আর লম্বা করলাম না।

খুঁজে দেখুন আপনি কোন কাজটিতে দক্ষ সেটাতেই ঝুকে পড়ুন। ধৈর্য ধরে ৬ মাস চেষ্টা করে যান আপনার সফলতা নিশ্চিত।

দক্ষতা ছাড়া টাকা ইনকাম

এবারে আসুন দক্ষতা ছাড়া টাকা ইনকামের ব্যাপারে। দক্ষতা নিয়েই মানুষের টাকা ইনকাম করতে হিমসিম খেয়ে যাচ্ছে যেখানে দক্ষতা ছাড়া টাকা ইনকামের কথা কি ভাবা যায়? তাও আবার প্রতিদিন ১০০০ টাকা ইনকাম করা, যেন তেন ব্যাপার নয়। তাহলে যারা বলছে তারা কি ভুল বলছে?

কিভাবে বলি ভুল বলছে, কেও ত বলে দেয়নি দক্ষতা ছাড়াই প্রতিদিন ১০০০ টাকা ইনকাম করা যাবে। তবে যারা বলছে শুধু ভিডিও দেখে টাকা ইনকাম করা যায় সেটা নিয়ে একটু আলোকপাত করা যেতে পারে।

চিন্তা করুন তো ভিডিও দেখলে কি কেও কাওকে টাকা দেয়? হাস্যকর মনে হচ্ছে না? কিন্তু একটু অন্যভাবে ভেবে দেখুন, কিভাবে ভাববেন? নিচে পড়ে দেখুনঃ

ধরেন, আপনি একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলেছেন। ইউটিউবে মনিটাইজেশন পেতে হলে আপনাকে ১০০০ সাবস্ক্রাইবার এবং ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ আওয়ার হতে হবে। ১০০০ সাবস্ক্রাইবার তো বুঝলেন, ৪০০০ ওয়াচ আওয়ার আবার কি?

৪০০০ ওয়াচ আওয়ার মানে হল আপনার আপ্লোড করা ভিডিও দুনিয়ার মানুষ ৪০০০ ঘন্টা সময় ধরে দেখতে হবে। এই দুইটি ক্রাইটেরিয়া মিললেই আপনি পেয়ে যাবেন মনিটাইজেশন। মানে ভিডিও থেকে ইনকামের ব্যবস্থা হয়ে গেল।

নতুন চ্যানেল যারা তৈরি করে তাদের জন্য ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ আওয়ার ম্যানেজ করা অনেক টাফ এবং সময় সাপেক্ষ। তখনই আরেকটি পার্টির আবির্ভাব হয় যারা এই নতুন চ্যানেল মালিকদের ওয়াচ আওয়ার সার্ভিস দেয়, মানে হল ভিডিও দেখে দেয় এবং এর বিনিময়ে টাকা নেয়। এই পার্টি আবার তাদের ওয়েব সাইটে ঐ ভিডিও এর লিংক দিয়ে মানুষকে দিয়ে দেখিয়ে টাকা পেমেন্ট করে। আশা করি, ধরতে পেরেছেন ব্যাপারটি।

একইভাবে শুধু ভিডিও এর ক্ষেত্রে নয়, ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রেও ক্লিকের মাধ্যমে ভিজিটর আনা একটা ব্যবসা। অনেকে দেখবেন ক্লিক করে টাকা আয় করার কথা বলে, আবার বিজ্ঞাপনেও একইভাবে ক্লিক করে টাকা ইনকাম করা যায়। কিন্তু ব্যাপারটি হল গুগল এখন এইভাবে দেয়া ক্লিকের উপর টাকা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে।

প্রতারনা কোথায়? জানুন।

অনেক সময় আপনি দেখবেন ভিডিও দেখে টাকা ইনকাম করার আগে ঐ সাইটে অল্প টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে নিতে বলা হয়। মনে করেন ৫০০ বা এক হাজার টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে নিলেন। মনে করুন সারা বাংলাদেশে ৫০০০০ আপনার মত লোক রেজিস্ট্রেশন করে নিল। তাহলে তাদের আয় হল ৫০০ টাকা করে প্রতিজন দিলে মোট দুই কোটি পঞ্চাশ লক্ষ টাকা।

এরপর কিছুদিন এভাবে ভিডিও দেখিয়ে লাখ পঞ্চাশ আপনাদের দিয়ে দেয়, আপনারা আবার অন্যদেরও রেজিস্ট্রেশন করাতে উৎসাহিত করেন, যেহেতু আপনারা নিজেরাই টাকা পেয়ে গেছেন । তারা আরও দুই-আড়াই কোটি ইনকাম করে ফেলে। এবং এক পর্যায়ে এরা মার্কেট থেকে পলায়ন করে।

আমাদের দেশে যেহেতু বেকারত্বের হার বেশি, তাই এভাবে মানুষজনকে প্রতারিত করতে সুবিধা হয়। আর আমাদেরও এক চরিত্র আছে- “গেলে যাক ৫০০ টাকা, কত টাকা তো কত জায়গায় নষ্ট করি”।

সবশেষে তাহলে দাড়াল কি

সবশেষে আমি আসলে একটি উপসংহারে যেতে চাচ্ছি। প্রতিদিন ১০০০ টাকা ইনকাম করার লোভে পরে থাকাটাই আমাদের উচিত হবে নাকি আমরা দক্ষতা গড়ে তুলব? কোনটা আমাদের জন্য লাভজনক। প্রথমে আপনারাই ভেবে নিন। তারপর আমার নিচের লেখাটি পড়ে দেখুন।

প্রতিদিন ১০০০ টাকা ইনকাম করার যেসব পেইজ আপনি পাবেন এগুলো বেশির ভাগই (প্রায় শতভাগ) হচ্ছে স্ক্যাম। এরা কেও কিছুদিন টাকা দিলেও এর ভবিষ্যৎ আসলে অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই নয়।

আর আপনি যদি দক্ষতা অর্জন করে নিতে পারেন যে কোন একটি বিষয়ের উপর তাহলে আপনি সেই দক্ষতা ভাঙ্গিয়ে প্রায় আজীবন খেতে পারবেন। সেই দক্ষতা যত ছোটই হোক না কেন।

“আপনার বিষয়ে আপনিই বস” ঠিক এমনটাই হতে চেষ্টা করে দেখুন। সব বিষয়ে জ্ঞানী হয়ে আসলে কোন লাভ নেই। অলরাউন্ডার শুধু ক্রিকেটেই হয়ে লাভ আছে, বাস্তব জীবনে অলরাউন্ডার হয়ে তেমন লাভ নেই।

Previous articleব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম জানুন নিরাপদ রাখুন আপনার টাকা।
Next articleইন্টারনেট থেকে আয় করার উপায় – একসাথে সবকিছু।
যে ব্যর্থ সে অজুহাত দেখায়, যে সফল সে গল্প শোনায়। আমি অজুহাত নয় গল্প শোনাতে ভালবাসি। আসুন কিছু গল্প শুনি, নিজের গল্প অন্যকে শুনাই।