কফি রেসিপি

আমাদের এই পৃথিবীতে, কত ধরনের যে কফির অস্তিত্ব আছে তা হিসাব করা কঠিন। ইন্টারনেটে সার্চ দিলে বিভিন্ন প্রকারের কফির নাম আর কফি রেসিপি আমাদের সামনে হাজির হয়।  তবে এর মধ্যে হাতে গোনা কিছু কফির নামের সাথেই হয়ত আমরা পরিচিত। এর অন্যতম একটি কারন হচ্ছে, আমাদের মধ্যে অনেকেই, আমাদের সংস্কৃতি এবং অভ্যাসের কারনে কফির চেয়ে চা কে বেশি প্রাধান্য দেই। তবে বর্তমানকালে কফির চাহিদা আর নাম আমাদের দেশের মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়।

এখন ছেলে বুড়ো, জোয়ান বৃদ্ধ সবাই বিভিন্ন প্রকারের কফি এবং এর বিভিন্ন স্বাদের প্রতি আসক্ত। এখন আমাদের মধ্যে অনেকেরই কফি ছাড়া দিন শুরুও হয় না আবার শেষও হয় না।

আগের পর্বে আমি আপনাদের জানিয়েছি কফি আবিস্কারের ইতিহাস। যারা পড়েননি তারা নিচের লিংক থেকে পড়ে নিন। কফি সমাচার- কিভাবে কফি আবিস্কার হয়

বিভিন্ন প্রকারের কফি এবং রেসিপি

আজকে আমি মূলত আপনাদের কিছু জনপ্রিয় কফির সাথে পরিচিত করাবো আর সাথে থাকবে কফি রেসিপি । এরমধ্যে কিছু নাম হয়ত আপনাদের অনেক পরিচিত আবার কিছু নাম হয়ত আপনাদের জন্য নতুন হবে। তবে আশা করি যে কফি নিয়ে করা আমার এই প্রচেষ্টা আপনাদের কাছে পছন্দনীয় হবে।

এসপ্রেসো কফি

কফির জগতে জনপ্রিয় এবং অত্যন্ত পরিচিত একটি কফির নাম। এসপ্রেসো কফিকে মৌলিক ধাপের কফি বলাও চলে। এসপ্রেসো কফি তৈরির জন্য কফি পাউডারের সঙ্গে সামান্য পরিমাণে পানি মিশিয়ে কফির একটা ঘন মিশ্রণ তৈরি করা হয়। এই ঘন মিশ্রণটিকেই এসপ্রেসো বলা হয়।

এরপর এই এসপ্রেসোর সাথে অন্যান্য উপকরণ দিয়ে তৈরি করা হয় এই জনপ্রিয় কফিটি। এই কফির স্বাদ কিছুটা তিতা হয়, যার ফলে অনেকে একে ব্ল্যাক কফির বিকল্প মনে করে। সাধারণত যাদের স্ট্রং কফি পছন্দ তাদের জন্য এই এসপ্রেসো কফি অনেক বেশী উপযোগী।

এক কাপ এসপ্রেসো কফি তৈরি করতে চাইলে সাধারনত ৩০ থেকে ৩২ মিলি লিটার এসপ্রেসো ব্যবহার করতে হয়। তবে কেউ যদি খুব বেশি কড়া স্বাদের কফি খেতে চাই, তবে ডাবল এসপ্রেসো দিয়ে তৈরি করা কফি হতে পারে তার পছন্দসই কফি।

ক্যাপাচিনো কফি

আপনি যদি আমার মত অতি মিষ্টি, চকলেটে, এবং  ক্রিমের প্রেমী হয়ে থাকেন, তবে ক্যাপাচিনো কফির চেয়ে বেশী সুস্বাদু কোনো কফি পৃথিবীতে আছে বলে আপনার মনে হবে না। স্বাদের দিক দিয়ে এই কফিটি সত্যি অতুলনীয়।

ক্যাপাচিনো তৈরি করার জন্য এসপ্রেসো কফি সাথে দুধ এবং চকোলেট সিরাপ মিশানো হয়। স্বাদে, পরিবেশনা, এবং দেখতে এই কফি এসপ্রেসো কফি থেকে একদম আলাদা। এই কফির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর মিষ্টি স্বাদ এবং এর মিল্কফোম।

ক্যাপাচিনো তৈরি করার বিশেষ পদ্ধতি রয়েছে। এই কফি তৈরিতে সকল উপাদান সমান অনুপাতে ব্যবহার করা হয়। উদহারনস্বরূপ, ১০০ মিলি লিটার কফি তৈরি করার জন্য ৩৩ মিলি এসপ্রেসো, ৩৩ মিলি দুধ ও ৩৩ মিলি মিল্ক ফোম ব্যবহার করা হবে। ক্যাপাচিনো কফি অনেকটাই ল্যাটে কফির মতই, তবে ল্যাটের চেয়ে কিছুটা বেশি কড়া স্বাদের হয়ে থাকে।

ক্যাপেচিনো কফির ফোমের উপরে বিভিন্ন ধরনের ডিজাইন করে পরিবেশনার চল রয়েছে। বর্তমানে নিজের ছবি দিয়ে  ক্যাপাচিনো কফি বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট পরিবেশন করা হয়, যা অনেক জনপ্রিয়।

ল্যাটে কফি

ক্যাপচিনোর মত ল্যাটেও হচ্ছে অনেক জনপ্রিয় ধরনের একটি কফি। ল্যাটে কফিও ক্যাপাচিনোর মতো এসপ্রেসো, দুধ ও মিল্ক ফোমের মিশ্রণে তৈরি করা হয়। ল্যাটে কফি তৈরির জন্য একটি কাপে চার ভাগের একভাগ এসপ্রেসো, দুই ভাগ দুধ ও একভাগ মিল্ক ফোম নিতে হবে। এরপর এইসব উপকরণের মিশ্রনের মাধ্যমে এই কফি তৈরি করা হয়। দুধের পরিমাণ বেশি থাকায় এই কফি ক্যাপাচিনোর মত কড়া স্বাদের হয় না। ল্যাটে কফিতে চিনির পরিমান অনেক বেশি হয়। আর ক্যাপাচিনোর মতই এই ফোমের উপর বিভিন্ন ডিজাইন দিয়ে এই কফি পরিবেশনা করা হয়।

আইরিশ কফি

কফির একটি বিশেষ ধরন হচ্ছে আইরিশ কফি। আইরিশ কফি তৈরির জন্য এসপ্রেসোর গুঁড়া এবং চিনির সাথে সামান্য পরিমানে হুইস্কি মিশানো হয়। এই কফি অনেক বেশি জনপ্রিয় না হলেও ভিন্ন ধরনের একটা স্বাদের সৃষ্টি করে এই কফি রেসিপি ।

মকা কফি

কফির জগতে এক অনন্য স্বাদের কফি হচ্ছে মকা কফি। এই কফি তৈরির জন্য এসপ্রেসো, দুধ এবং মিল্ক ফোমের সঙ্গে যুক্ত করা হয় চকলেট সিরাপ। এই কফির বিশেষত্বই হচ্ছে এতে ব্যবহৃত চকলেট সিরাপ। চকলেট ফ্লেভারের অনন্য স্বাদ এই  কফিকে করেছে অত্যন্ত সুপেয় এবং মজাদার। এই কফি সাধারনত বিভিন্ন প্রকারের ক্রিম দিয়ে পরিবেশনা করা হয়।

মকা কফির নামকরণ করা হয়েছে  ইয়েমেনের মকা নগরীর নামে । কথিত আছে যে, ইয়েমেনের এই নগরীতে কফির প্রচুর কেনাবেচার প্রচলন ছিল। এরপর এখান থেকেই মকা কফির নামের উৎপত্তি হয়। মকা কফিকে মকা চিনো কফিও বলা হয়।

অ্যামেরিকানো কফি

অ্যামেরিকানো কফিটি হচ্ছে ব্ল্যাক কফির আরেকটি রূপ। এসপ্রেসোর সঙ্গে পরিমানমর গরম পানি এবং চিনি মিশিয়ে দিলেই তৈরি হয়ে যায় অ্যামেরিকানো কফি। এটি এক ধরনের ব্ল্যাক  কফি বিধায় এতে কোনো  দুধ, মিল্কফোম বা ক্রিম ব্যবহার করা হয় না। এর স্বাদ অনেকটাই এসপ্রেসোর মতই।

সর্বপ্রথম ল্যাটিন আমেরিকায় এই কফির প্রচলন ছিল বিধায় এর নাম অ্যামেরিকানো রাখা হয়। তবে অনেকের মতে ইতালিতেও এ ধরনের কফির প্রচলন ছিল বলে জানা যায়।

ফ্ল্যাট হোয়াইট কফি

মিল্ক কফির আরেকটি নতুন রূপ হচ্ছে ফ্ল্যাট হোয়াইট কফি। এসপ্রেসোর সঙ্গে ধোয়া উঠানো দুধ, মিল্ক ফোম, চিনি, ক্রিম ইত্যাদি মিশিয়ে তৈরি করা হয় ফ্ল্যাট হোয়াইট। এই কফি প্রথম উদ্ভাবন করা হয় ১৯৮০-এর দিকে অস্ট্রেলিয়াতে। আবার অনেকের মতে নিউজিল্যান্ডকে এ কফির জন্মস্থল হিসেবে  মতবাদ দেন। তবে যে দেশেই এর উৎপত্তি হোক না কেনো, এর স্বাদ বিশ্বব্যাপী বিখ্যাত।

এফোগ্যাটো কফি

কফির জগতে বিভিন্ন ধরনের নতুনত্বের দেখা মিলে। মিল্ক কফির আরেকটি নতুন রূপ হচ্ছে এফোগ্যাটো কফি। বিশেষ এই কফিটি তৈরি করার জন্য দুধের সঙ্গে ভ্যানিলা আইসক্রিম দিয়ে তার ওপর এসপ্রেসো দিয়ে দেয়া হয়। এই কফিটি কফির সাথে সাথে ডেজার্ট হিসেবেও খাওয়া হয়।

এফোগ্যাটো কফিটির উৎপত্তি ইউরোপে। ইউরোপে এটির জনপ্রিয়তাও অনেক। তবে এশীয় দেশসমূহে এই কফিটি অতটা প্রচলিত না।

কোল্ড কফি

কোল্ড কফি চিনে না এমন কফি প্রেমিক পৃথিবীতে নাই বলেই বলা যায়। কোল্ড কফি কফির জগতে এক নতুন সংযোজন। বরফকুচি আর মিল্ক ফোমের এক অনন্য স্বাদ হচ্ছে এই কোল্ড কফি। এই কফির প্রতি চুমুকে মিশে থাকে প্রশান্তি আর ঠান্ডা অনুভূতি। বিভিন্ন ধরনের কোল্ড কফি আমরা দেখতে পাই, যেমন চকলেট কোল্ড কফি, ক্যারামেল কোল্ড কফি ইত্যাদি।

আশা করি আমার উল্লেখ করা কফি রেসিপি আপনাদের ভাল লেগেছে আর অবসরে এই কফি রেসিপি অনুযায়ি কফি তৈরি করে আপনারা আপনাদের অবসর সময়কে আরও রঙিন করে তুলবনে। সবাইকে ধন্যবাদ।

Previous articleআলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট – বিশ্ব বিজেতাদের একজন
Next articleগ্লোবাল ওয়ার্মিং কি? এর প্রভাব এবং প্রতিকার।
amina khatun
আমি আমিনা খাতুন তিশা। আমি লিখালিখিতে অসামান্য কেউ না, তবে লিখতে ভালই লাগে। গদবাধা লেখালেখির চেয়ে আমি নিজের জীবনের কাহিনি বা গল্প লিখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। জীবনে কিছু ভালো করার ইচ্ছা আছে। জানি না কতটুকু সফল হব, তবে আশাহত হতে চাই না।

2 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here