অটোম্যান সাম্রাজ্যের পতনের কারণ

বিশ্ব ইতিহাসে সবচেয়ে বিস্তৃত, দোর্দণ্ড প্রতাপশালী ও দীর্ঘমেয়াদি শাসনব্যবস্থা হলো অটোম্যান সাম্রাজ্য বা উসমানী সাম্রাজ্য। যার ভিত্তি ছিলো কুরআন সুন্নাহ। ক্ষুদ্র একটি জায়গিক সূচনা থেকে এই শাসন ব্যবস্থা ছড়িয়ে পড়েছিলো তিনটি মহাদেশে। তাদের শাসন ব্যবস্থায় ছিলো ন্যায়, ইনসাফ, বাকস্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকার। রাজা প্রজায় ছিল না কোনো ব্যবধান। ছিলো না কোনো অপচয় আর বিলাসিতা, অন্যায় জুলুম আর অত্যচার৷ কিন্তু সবকিছুরই যেমন শেষ আছে তেমনি শেষ হয়েছিলো এই বিশাল অটোম্যান সাম্রাজ্য। কালের বিবর্তনে সেই সাম্রাজ্যের পতন হয়েছিলো খুব করুণভাবে।

অটোম্যান শাসন ব্যবস্থার ছিলো প্রধান দুটি অবস্থা – উত্থান আর পতন। মহান পুরুষ এরতুগরুলের সুযোগ্য উত্তরসূরী উসমান খান থেকে সুলতান সুলায়মান কানুনি পর্যন্ত ছিলো উত্থানপর্ব। এর পর থেকেই শুরু হয় অবনতি। যদিও একদিনেই এই পতন হয়নি৷ সময় লেগেছে বেশ কয়েক বছর। দুই পর্বের এই অংশে আমরা অটোম্যান সাম্রাজ্য এর উত্থান নিয়ে আলোচনা করবো৷

অটোম্যান সাম্রাজ্য
Image from: http://web.cocc.edu/cagatucci/classes/hum213/Maps/Maps1.htm

তুর্কদের পূর্বপুরুষ ও সেলজুক সাম্রাজ্য

পূর্বে মঙ্গোলিয়া ও চীনের পাথুরে পাহাড়ি ভূমি থেকে পশ্চিমে কাস্পিয়ান সাগর পর্যন্ত এবং উত্তরে সাইবেরিয়ার আদিগন্ত ভূমি থেকে  দক্ষিণে হিন্দুস্থান ও পারস্যের প্রান্ত-ছোঁয়া বিশাল বিস্তীর্ণ যে অঞ্চলটি ইসলামের ইতিহাসে মা-ওয়ারাউন নাহার নামে পরিচিত, যে ভূ-খন্ডকে আমরা তুক্তিস্থান নামেও স্মরণ  করে থাকি- এককালে সেটা ছিলো বিখ্যাত গুক গোত্রের জন্মভূমি। ওই গোত্রের বড় বড় যে কটি শাখা বংশ সেখানে বাস করত, তাদেরকে তুর্ক বা আতরাক নামেও ডাকা হত।

খ্রিষ্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীর শেষে এ গোষ্ঠীগুলো তাদের জন্ম স্থানকে বিদায় জানিয়ে দলে দলে অভিবাসি হচ্ছিল এশিয়া মাইনর অভিমুখে। ইতিহাসবিদগণ মনে করেন অর্থনৈতিক কারণেই তারা জন্মস্থান ত্যাগ করছিলো। তবে কেউ কেউ মনে করেন মঙ্গোলদের মত শত্রুর আক্রমণ এর শিকার হয়ে তারা জন্মস্থান ত্যাগ করে। এরপর তারা কালপরিক্রমায় তাবরিস্তান ও জুরজানে এসে বসত গড়ে তুলে। এভাবেই তারা ২১ হিজরি/৬৪১ খ্রিষ্টাব্দে মুসলমানদের জয় করা কিছু মুসলিম অঞ্চলের প্রতিবেশি হয়ে ওঠে।

পরবর্তীতে তারা মুসলিম অঞ্চলের সাথে সন্ধি করে ওমর (রাঃ) এর সময়ে রোমানদের বিরুদ্ধে একত্রে লড়াই করে। কালের পরিক্রমায় আব্বাসিয় খলিফাদের সময় তাদের সম্পর্ক আরো গভীর হতে থাকে। সেনাবাহিনি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রিয় বিভিন্ন পদে তাদের উপস্থিতি বৃদ্ধি পায়। তখন ফাতেমি সাম্রাজ্যে তাদেরকে নিয়ে ঐক্য করতে চাইলে আব্বাসিয়রাও তাদেরকে দলে নিতে চায়। কিন্তু তাদের এই অভ্যন্তরীন টানাপোড়ন এ না গিয়ে আলাদা যে সাম্রাজ্য গড়ে তুলা হয় তাই সেলজুক সাম্রাজ্য নামে পরিচিত। তবে একটা সময় পর এই সাম্রাজ্যেরও পতন হয়। খন্ড খন্ড দলে পরিণত হয়ে নিজেদেরকে স্বাধীন বলে ঘোষণা করে।

অটোম্যান সাম্রাজ্য
অটোম্যানদের অস্র

অটোম্যান সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা

উসমানীরা ছিলো তুর্কমেনি বংশোদ্ভূত। উসমানের দাদা সুলায়মান ৬১৭ হিজরি;১২২০ সালে আপন গোত্রকে মোঙ্গলদের ধ্বংস থেকে বাঁচাতে কুর্দিস্তান থেকে হিজরত করে আনাতোলিয়ার আখলাতে বসতি গড়ে তুলেন। তিনি মারা যাবার পর তার ছেলে এরতুগরুলকে স্থলাভিষিক্ত করে যান। মোঙ্গলদের তাণ্ডব বাড়তে থাকলে এরতুগরুল তাঁর গোত্রের মানুষদের নিয়ে উত্তর-পশ্চিমে রওনা করেন। যাত্রা পথে তিনি এক জায়গায় প্রচন্ড শোরগোল শুনতে পেয়ে সেদিকে এগিয়ে গিয়ে দেখলেন একদল মুসলিম আর বাইজেন্টারন খ্রিষ্টানদের সাথে যুদ্ধ চলছে। মুসলিম বাহিনীর অবস্থা খুব শোচনীয়প্রায় ছিলো। পরে এরতুগরুল তাদের সাহায্য করার জন্য নিজের লোকদের নিয়ে যুদ্ধে নামলে বাইজেন্টাইনদের বিপক্ষে মুসলিম বাহিনী জয় লাভ করে। যুদ্ধ শেষে সেলজুক মুসলিম অধিপতি এরতুগরুলকে অভিনন্দন জানান এবং আনাতোলিয়ার পশ্চিমপ্রান্তে একটি জায়গা দান করেন।

পরবর্তীতে এরতুগরুল মারা গেলে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন উসমান। উসমানের জন্ম হয় সেই বছর, যখন মোঙ্গলদের আক্রমণে আব্বাসিয় খলিফার পতন ঘটে। তাঁর জন্মের বছর ও পরবর্তীতে তাঁর যুদ্ধ কৌশল, রাষ্ট্র পরিচালনার কৌশল, বীরত্ব, রাজ্যের সম্প্রসারণ সহ ইসলামের ভিত্তিতে তাঁর নানা কর্মকান্ডের জন্য ইতিহাসবিদ্গণ তাঁকে উসমানী সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আখ্যা দেন। পশ্চিমাসহ পুরো বিশ্বে যা ‘অটোম্যান এম্পায়ার’ নামে পরিচিত।

বিখ্যাত অটোমান সুলতানদের তালিকা

দীর্ঘসময়ের রাজত্বে অটোমানদের নেতৃত্ব দিয়েছেন অসংখ্য সুলতানগণ। ইতিহাসের পাতায় তাদের কেউ কেউ চিরস্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে৷ অটোম্যান সাম্রাজ্য উত্থান পর্বে তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সুলতানগণ হলেনঃ

  • প্রতিষ্ঠাতা সুলতান উসমান
  • সুলতান উরখান বিন উসমান
  • সুলতান প্রথম মুরাদ
  • সুলতান প্রথম বায়েজিদ
  • সুলতান মুহাম্মদ আল ফাতিহ
  • সুলতান প্রথম সালিম
  • সুলতান সুলায়মান আল কানুনি
অটোম্যান
অটোম্যানদের তৈজসপত্র

অটোমানদের বিজয়সমূহ

খেলাফতে রাশেদিন এর পর সবচেয়ে বড় মুসলিম সাম্রাজ্য হিসেবে প্রকাশ পায় অটোম্যান সাম্রাজ্য। ইউরোপ, আফ্রিকা, এশিয়া তিন মহাদেশেই তাদের জয়জয়কার। একের পর এক অঞ্চল নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করতে থাকে তারা। ফলে দীর্ঘায়িত এবং একই সাথে বিস্তৃত হতে থাকে তাদের শাসনামল।

কসোভোর যুদ্ধ জয়

সুলতান প্রথম মুরাদের সময় সংগঠিত কসোভোর যুদ্ধে জয় লাভ করে অটোম্যানরা। বলকান অঞ্চলে নিজেই নেতৃত্ব দিয়েছেন এই যুদ্ধের৷ সার্বিয়ানরা বসনীয়দের সাহায্য নিয়ে ক্রূসেড বাহিনী তৈরি করে। অটোমানদের এক মন্ত্রী কোরআন  এর আয়াত পাঠ করে এবং তা থেকে কল্যাণমূলক অর্থ গ্রহণ করেন। বিষয়টি সেনাবাহিনীর সদস্যদের মধ্যে জানাজানি হলে সবার মধ্যে বিশ্বাস বদ্ধমূল হয়৷ তুমুল যুদ্ধ শেষে মুসলমানরা বিজয় লাভ করে।

কনস্টান্টিনোপল বিজয়

১৪৫৩ খ্রিষ্টাব্দে উসমানীয় সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদ কর্তৃক শহরটি অধিকারের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। পূর্বে এটি পূর্ব রোমান (বাইজেন্টাইন) সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল। শহর অধিকারের পূর্বে এটি জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে ১৪৫৩ খ্রিষ্টাব্দের ৬ এপ্রিল থেকে ২৯ মে পর্যন্ত অবরোধের সম্মুখীন হয়। এরপর চূড়ান্তভাবে শহরটি উসমানীয়দের অধিকারে আসে। তারও পুর্বে মহান সেলযুক সুলতান আল্প আরসালান ও শহরটি জয় করেছিলেন কিন্তু এর দখল ধরে রাখতে পারেননি।

কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের জন্য অনেক বেশি কষ্ট করতে হয়েছে অটোম্যানদের৷ দিনের পর দিন অবরোধ করে রাখতে হয়েছে তাদের। বিভিন্ন কলা কৌশল, সেরা সেনাবাহিনী গঠন ও নৌবাহিনীর মাধ্যমে প্রচন্ড যুদ্ধের পর শহরটি অর্জন করেন সুলতান ফাতিহ৷ পরাজিত শহরের নেতা, পোপ, জনগণের সাথে ভালো ব্যবহার করেন অটোম্যানরা । সুলতানের নির্দেশে কোনো প্রকার লুটপাট করা হয়নি সেখানে। পরবর্তীতে নাম পাল্টে ইস্তাম্বুল করা হলে শহরটিকে অটোম্যানদের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

নিকোপোলিসের যুদ্ধ

১৩৯৬ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর দানিউব নদীর উপর অবস্থিত বুলগেরীয় শহর নিকোপোলিসে সংঘটিত হয়। এর এক পক্ষে ছিল উসমানীয় সাম্রাজ্য, এবং অন্য পক্ষে ছিল হাঙ্গেরি, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, জার্মানি, এবং অন্যান্য ইউরোপের এলাকা থেকে আগত সম্মিলিত ৩ লাখেরও বেশি খ্রিস্টান সেনার দল। এটি ছিল মধ্যযুগের সর্বশেষ বড় আকারের ক্রূসেড।

এই যুদ্ধ সংঘটিত হয় চতুর্দশ শতাব্দীর একেবারে শেষের দিকে। হাঙ্গেরির সিংহাসনে সিগিসমুন্ড বসলে তিনি তৎকালীন তুরস্কের উসমানীয় বা অটোম্যান সুলতান বায়েজিদের অধীনে থাকা বুলগেরিয়া আক্রমণ করে দানিয়ুব নদীর অববাহিকায় অবস্থিত নিকোপোলিস নামক শহর দখল করে নেন। এই সংবাদে সুলতান বায়েজিদ একটি শক্তিশালী ওসমানীয় বাহিনী তার বিরুদ্ধে পাঠালে সিগিসমুন্ড তাদের শক্তি বুঝে যুদ্ধ এড়িয়ে গিয়ে তখনকার মতো পশ্চাদপসরণ করেন। এরপর ওসমানীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে তিনি অপরাপর ইউরোপীয় রাজাদের কাছে সাহায্য চাইলে পোপ নবম বেনিফেস এগিয়ে আসেন। তার ডাকে সাড়া দেয় ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, লোম্বার্ডি, স্যাভয়, ব্যাভারিয়া, জার্মানি, হাঙ্গেরি, ওয়ালশিয়া, বোহেমিয়া এবং অস্ট্রিয়া। তারা সম্মিলিত ভাবে উসমানীয়দের বিরুদ্ধে নিকোপোলিসে সমবেত হয়। ধর্ম যোদ্ধারা কোন প্রকার পুর্ব পরিকল্পনা ছাড়াই উসমানীয়দের আক্রমণ করে। মাত্র তিন ঘণ্টার যুদ্ধে সম্মিলিত বাহিনী বায়েজিদের কাছে পরাজিত হয়। সিগিসমুন্ড দানিয়ুব নদী পাড়ি দিয়ে হাঙ্গেরিতে চলে আসেন।

এছাড়াও এই যুদ্ধে বিভিন্ন দেশের খ্রিস্টান ৬০ জন শাহজাদা বন্দি হয়ে ও সুলতান তাদেরকে পরে মুক্ত করে দেন যাতে পরবর্তীতে আবার প্রস্তুতি নিয়ে যুদ্ধ করতে। এটি ছিল মুসলমানদের বিরুদ্ধে ইউরোপীয় খ্রিস্টানদের সম্মিলিত সর্বশেষ ক্রুসেড।

অটোমানদের আফ্রিকা বিজয়

অটোমানদের জয়ের দ্বারা ইউরোপ ছাড়িয়ে আফ্রিকা পর্যন্ত পৌছেছিলো। আলজেরীয় জনগণ যখন তাদের শাসক দ্বারা শোষিত হচ্ছিলো, তখন তারা সুলতান সালিম বরাবর পত্র লিখে সাহায্যের আবেদন করে। পরবর্তীতে সুলতান সেনাবাহিনী পাঠিয়ে আলজেরিয়াকে অটোমানদের আওতায় নিয়ে আসেন। আলজেরিয়ার পর মরক্কো, তিউনিসিয়াসহ উত্তর আফ্রিকার বেশ কিছু অঞ্চলে অটোমানরা বিজয় লাভ করে থাকে।

অটোমানদের সফলতার কারণসমূহ

অটোমানদের এই সফলতা একদিনে বা এমনি এমনি আসেনি। এর জন্য অনেক যুদ্ধ জয় করতে হয়েছে, ধৈর্য ধারণ  করতে হয়েছে। ইসলামের পথে অবিচল থেকে সামনে এগিয়ে গেলে যে সফলতা অর্জন করা যায় তারই প্রমাণ অটোম্যানরা। তাদের এই সফলতার পিছনে ছিলো বেশ কিছু কারণ। চলুন জেনে নেই সেই সকল কারণসমূহ যার ফলে সামান্য একটি অঞ্চল থেকে কীভাবে বিশ্ব শাসন করেছে তারা।

স্থল বাহিনীর পাশাপাশি নৌবাহিনী গঠন

প্রথমদিকে শুধু স্থল বাহিনীর মাধ্যমেই অটোমানরা যুদ্ধ করতো৷ কিন্তু ক্রসেডদের সাথে যুদ্ধে জয়ী হতে নৌবাহিনীর প্রয়োজন দেখা দেয়৷ তখনকার ক্রসেডরা নৌপথে ছিলো অপরাজেয়। তারা বিভিন্ন নৌ পথে অটোমানদের সমুদ্র তীর বর্তী অঞ্চলগুলোতে আক্রমণ করতো৷ ফলে সেই সকল অঞ্চলে বেশির ভাগ সময়ে অরাজকতা বিরাজ করতো। এই সমস্যা সমাধানে অটোমানরা গঠন করে শক্তিশালী নৌবাহিনী। যার ফলাফল হিসেবে কনস্টান্টিনোপল বিজয় করার পথ সহজ হয়েছিলো। ইতিহাসবিদগণ অটোমানদের সফলতার পিছনে নৌবাহিনীর ব্যাপক ভূমিকা আছে বলে মনে করেন।               

ন্যায়পরায়ণতা

অটোম্যান সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো ন্যায়ের উপর ভিত্তি করে। অমুসলিমদের সাথে তাদের ব্যবহার ছিলো খুবই মানসম্মত। অমুসলিম কিংবা নিজেদের শত্রুদের প্রতিও তারা কোনো অন্যায় আচরণ করতো না।

সাহস ও সংকল্পে দৃঢ়তা

অটোমানরা ছিলো অত্যন্ত সাহসী। মাত্র ১০০ পরিবারের ৪০০ সদস্য নিয়ে যে সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন হয়েছিলো তারা পরবর্তীতে শাসন করেছিলো অর্ধ বিশ্ব। এতে তাদের সাহসের পরিচয় পাওয়া যায়। তাছাড়া তারা বিভিন্ন লড়াই থেকে পিছু হটতেন না৷ সংকল্পে অটল থাকলে সফলতা সময়ের ব্যাপার মাত্র।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা

অটোমান শাসনামলে প্রচুর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে৷ ফলে তারা ভালো মন্দের তফার বুঝতে শিখে। জাতিগত কোন্দল বা বিভাজন থেকে দূরে থাকে। একটি সাম্রাজ্য বিস্তৃত করতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন নিজেদের মধ্যে শৃঙ্খলা বজায় রাখা৷ যা কেবল শিক্ষার মাধ্যমেই সম্ভব ছিলো।

আলিমদের সম্মান প্রদর্শন

ইসলামের ইতিহাসে যত খেলাফত বা সাম্রাজ্য বিকাশ লাভ করেছে তারা সবাই তাদের সময়কার আলেমদের সম্মান প্রদর্শন করেছেন। আলেমদের থেকে ধর্মীয় শিক্ষা নিয়েছেন। কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক জীবন গড়তে ও রাষ্ট্র পরিচালনা করতে যুগের আলেমদের বিকল্প নেই। আলেমদের অবজ্ঞা করে মুসলিম সাম্রাজ্যের ভবিষ্যৎ কল্পনা করা যায় না৷ সেই সময়ের অটোমানরা আলেমদের পরামর্শ নিতো এবং তাদের যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা হতো।

সুশৃঙ্খল রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থা

সুশৃঙ্খল রাষ্ট্র ব্যবস্থা গঠনে অটোমানরা ছিলো অগ্রগামী। ইউরোপের অনেক দেশেই এখনো অটোমানদের সমাজ ব্যবস্থা ফলো করা হয়। যেমনঃ কোনো ধনী ব্যক্তি কিছু কেনার সময় সে অতিরিক্ত একটি অংশের দাম দিয়ে যাবে। সেই অতিরিক্ত অংশটি গরীব, অর্থহীন কোনো লোক নিতে পারবে৷

পরিশেষে

ক্ষুদ্র একটি অঞ্চল থেকে যে বিশাল সাম্রাজ্য অটোমানরা গড়ে তুলেছিলো তা সারা পৃথিবীর কাছে বিস্ময়। কয়েক শতাব্দীর প্রবল প্রতাপের সাথে ক্ষমতা চালিয়ে আসলেও এক সময় তাদেরও থামতে হয়েছিলো। সব কিছুর যেমন শুরুর পর শেষ আছে তাদেরও শেষ হয়েছিলো। সেই কাহিনি আমরা আরেকদিন জানবো। ততদিন সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।

Previous articleAirtel Free MB-একদম ফ্রীতে ১ জিবি ইন্টারনেট।
Next articleফেসবুক ভিডিও ডাউনলোড করবেন কিভাবে?
আমি মোঃ হাবিবুর রহমান রাসেল৷ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ অধ্যয়নরত। বই পড়তে ভালোবাসি। বইয়ের গ্রুপ গুলোতে মাঝে মাঝে রিভিউ লিখি৷ যা পড়ি, তা সবাইকে জানাতে ইচ্ছে করে। সেই আগ্রহ থেকেই টুকটাক লেখার চেষ্টা করি।

2 COMMENTS

  1. ধন্যবাদ রাসেল খান, অটোম্যান সাম্রাজ্য জানার আগ্রহ ছিল আগে থেকেই, আপনার লেখা পড়ে জানার আগ্রহ আরও প্রবল হল। পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।