সেরা ১০টি রিসোর্ট

কি ভাবছেন? এই প্রচন্ড গরমে কিভাবে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবেন? কোথায় গেলে একটু আরাম পাবেন? কিংবা ভাবছেন এই ছুটিতে আপনার পরিবারের প্রিয়জনদের সাথে নিয়ে কোথায় যাওয়া যায়? আপনার ভাবনার কোন কারণ নেই। সেরা ১০ টি রিসোর্ট নিয়ে আজকের এই লেখা।

আজকে আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরব বাংলাদেশের সেরা দশটি রিসোর্ট এর নাম এবং সেখানে গেলে আপনারা কি কি সুবিধা অসুবিধা মোকাবিলা করতে পারেন। শেষ পর্যন্ত সাথে থাকার অনুরোধ রইলো। চলুন শুরু করা যাক- 

গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফ, শ্রীমংগল

আপনি যদি সিলেট যাবার কথা ভেবে থাকেন তাহলে অবশ্যই গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট এন্ড গলফ একবার ঘুরে যাবেন। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে শহর থেকে অদূরে ১৩.২ একর জায়গা নিয়ে নয়নাভিরাম এই হোটেলটি আপনাকে আপ্লুত করতে বাধ্য। শুধুমাত্র বাংলাদেশীদের কাছে নয় বরং এশিয়ার মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় একটি রিসোর্ট এটি। যার নির্মাণ ব্যয় হয়েছিল ২৩৫ কোটি টাকা। এ রিসোর্টটি গড়ে উঠেছে লাউড়াছাড়া ন্যাশনাল পার্ককে কেন্দ্র করে। রিসোর্টটির তত্ত্বাবধানে রয়েছেন বাংলাদেশ পর্যটন ও রিসোর্ট এর চেয়ারম্যান খাজা টিপু সুলতান। 

আধুনিক সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা সমৃদ্ধ এই হোটেলটি গড়ে উঠেছে ২০০০ বর্গফুট জায়গার উপর এবং নয়তলা ভবনটিতে রয়েছে সর্বমোট ১৪৫ টি কক্ষ। যার মধ্যে রয়েছে বিছানা সমৃদ্ধ ৪৫টি কিং সাইজ এবং ৪৩ টি কুইন সাইজ রুম।

বিনোদনের কথা ভাবছেন? এখানে রয়েছে পর্যটকদের জন্য শত শত বিনোদন ও আনন্দঘন মুহূর্ত পার করার জন্য অপার সুযোগ। আর আপনি যদি গলফ খেলা পছন্দ করে থাকেন তাহলে তো কথাই নেই! এখানে আপনি খুঁজে পাবেন চমৎকার নয় হোল এমেচার বিশিষ্ট একটি গলফ মাঠ।

এছাড়াও রয়েছে লং টেনিস, বিলিয়ারড, ব্যাডমিন্টন ও টেবিল টেনিস খেলার সুবিধা। আপনার আদরের সোনামনিদের জন্য পাবেন আলাদা প্লে-জোন। বিনোদনের জন্য আপনি আরো খুঁজে পাবেন তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত তিনটি আধুনিক সুইমিং পুল, ৪৪ জন ধারণ ক্ষমতা সমৃদ্ধ থ্রিডি থিয়েটার হল। বই পড়তে ভালবাসলে আপনি ঘুরে আসতে পারেন সুবিশাল পাঠাগার থেকে।

এসব ছাড়াও আরো রয়েছে রোশনি মহল যেখানে ১২০০ জন পর্যন্ত থাকা যায়। আর রয়েছে ৭৫০ জনের জায়গা নিয়ে নওমি মহল। থাকছে বিলাস বহুল একটি ফাইভ স্টার রেস্টুরেন্ট। যেখানে একসাথে সাড়ে তিনশ জন পর্যন্ত বসে খেতে পারবেন। তাছাড়া আপনি পাবেন বেশ কিছু পাহাড়িয়া ডেক, ক্যাফে, মিটিং কক্ষ, জিমনেশিয়াম, স্পা এবং মাসাজ পার্লার।

ঢাকার আশেপাশে ঘুরে বেড়ানোর জন্য পড়ুনঃ পর্ব ০১

দুসাই রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা,মৌলভীবাজার 

আমাদের তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে দুসাই রিসোর্ট এন্ড স্পা, মৌলভীবাজার। সিলেট বিভাগের অত্যন্ত পর্যটন সমৃদ্ধ জেলা মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল মহাসড়কের পাশে অবস্থিত এই রিসোর্ট টি। গিয়াস নগরে অবস্থিত এই রিসোর্টটিতে রয়েছে নিজস্ব গাড়ি আপনি চাইলে যা আপনাকে আপনার নিজস্ব বাড়ি থেকেও পিক করে নিয়ে যাবে। তবে এর জন্য আপনাকে অতিরিক্ত ৩৫০০ টাকা দিতে হবে। 

দুসাই রিসোর্ট এন্ড স্পা তে আপনি পাবেন দুই ক্যাটাগরিতে রুম ভাড়া। হোটেল এবং ভিলা। 

স্বাভাবিকভাবেই হোটেল এর চেয়ে ভিলা এর দাম কিছুটা বেশি। খাবারের জন্য পাবেন বিলাসবহুল ফাইভ স্টার বানানা লিফ রেস্টুরেন্ট। অন্যান্য সুবিধার মধ্যে আপনি এখানে বিনোদনের জন্য পাবেন টেনিস ও ব্যাডমিন্টন কোর্ট। এছাড়াও থাকছে সুইমিং পুল, ব্যায়ামাগার, এবং সাইকেল রাইডিং সহ আরো নানান রকম সুবিধা।

দুসাই রিসোর্ট এন্ড স্পা তে আপনি আরো খুঁজে পাবেন বিবিকিউ, কিডস জোন, ফিসিং জোন, সিনেপ্লেক্স গেম জোন এবং স্পা সেন্টার। তবে এসবের জন্য আপনাকে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হবে। আনুমানিকভাবে একদিন অবস্থান করতে দুইজনের জন্য আপনার মোট খরচ পড়বে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। 

ঢাকার আশেপাশে ঘুরে বেড়ানোর জন্য পড়ুনঃ পর্ব ০২

দ্য প্যালেস লাক্সারি রিসোর্ট, হবিগঞ্জ

সিলেট বিভাগের আরেকটি অন্যতম বিলাস বহুল রিসোর্ট হল দ্যা প্যালেস লাক্সারি রিসোর্ট, হবিগঞ্জ। বাংলাদেশের যে কোন স্থান থেকে আপনি অতি সহজে এখানে পৌঁছাতে পারেন। এটি একটি ফাইভ স্টার হোটেল। আপনি যদি পাহাড় ভালোবাসে থাকেন তাহলে এটি নিঃসন্দেহে আপনাকে চমৎকৃত করতে বাধ্য। কেননা হোটেলের চারপাশে সবুজ পাহাড়ের সমারহ আর বাহারি রকমের মেঘের লুকোচুরি খেলা আপনাকে আপ্লুত করবে।

 দ্য প্যালেস লাক্সারি রিসোর্ট, হবিগঞ্জ এর ভিতরে রয়েছে প্রায় ত্রিশ হাজার গাছ, রাবার বাগান, বেশ কয়েকটি ঝর্ণা ও চা বাগান।প্রাকৃতিক একটি মনোরম পরিবেশ এবং চমৎকার নির্মাণশৈলী নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে এই রিসোর্ট টি। এখানেও আপনি পাবেন বিশেষ স্পা এর ব্যবস্থা। তবে এর জন্য আপনাকে অগ্রিম বুকিং করতে হবে। দুই তিন ক্যাটাগরিতে এখানে রুম বুকিং পাওয়া যায়। ২৪ হাজার থেকে ২৬ হাজার টাকার মধ্যেই সকল প্রকার রুম পাওয়া যায়। 

অন্যান্য সকল হোটেল এবং রিসোর্ট এর মত এখানেও আপনি পাবেন বিনোদনের জন্য বিভিন্ন রকম সুব্যবস্থা। এসব ছাড়াও দ্যা প্যালেস লাক্সারি রিসোর্ট, হবিগঞ্জ এ রয়েছে একটি ব্যাংকুয়েট হল যার ধারণ ক্ষমতা প্রায় ৪০০ জন এবং রয়েছে বড় বড় চারটি সভা কক্ষ। 

ঢাকার আশেপাশে ঘুরে বেড়ানোর জন্য পড়ুনঃ পর্ব ০৩

সাইরু হিল রিসোর্ট

বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলো সাইরু হিল রিসোর্ট। ভৌগোলিক অবস্থান এবংপ্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিক থেকে চমৎকার এই রিসোর্ট টিতে যেতে হলে চিম্বুক থানচি সড়ক হয়ে আপনাকে বান্দরবান শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে চিম্বুক পাহাড়ের কাছে যেতে হবে। যে পাহাড়ের উপর এই রিসোর্ট টি নান্দনিক ডিজাইন বানানো হয়েছে তা ভূমি থেকে প্রায় ১৮০০ ফুট উঁচু।

আপনার অবকাশ সময় উপভোগ্য করে তোলবার জন্য সাইরু হিল রিসোর্ট এর চারপাশে আপনি খুঁজে পাবেন সবুজ পাহাড়ের সারি এবং চোখের সামনে সাদা সাদা মেঘের লুকোচুরি। 

 প্যানারমিক ভিউ এর সত্যিকারের মজা পেতে হলে আপনাকে ছুটে যেতে হবে বান্দরবানের সাইরু হিল রিসোর্ট এ। এখানে থাকা ও খাওয়ার জন্য প্রায় চার ধরনের ২০ টি কটেজ রয়েছে। কটেজের সাইজ এবং অবস্থানের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন রকম দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। অধিবাসীদের খাবার ও দেশি খাবার সমৃদ্ধ রয়েছে একটি ফাইভ স্টার হোটেল। ব্যাম্বো চিকেনের স্বাদ আপনাকে সত্যিই মুগ্ধ করবে।

সাইরু হিল রিসোর্ট এ যেতে হলে আপনাকে কমপক্ষে এক ঘন্টা আগে বুকিং কনফার্ম করতে হবে। আরেকটি বিষয় জেনে রাখা ভালো, এখানে গেলে আপনি ডে-আউটের সুযোগ খুব কম পাবেন। রিসোর্ট এবং রেস্টুরেন্ট এরিয়া ছাড়া আশেপাশে ঘুরে বেড়ানো সম্পূর্ণ নিষেধ।

সাইরু হিল রিসোর্ট এর আশেপাশে আপনি আরো বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থান খুঁজে পাবেন। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো নীলগিরি, নীলাচল, স্বর্ণমন্দির, বগা লেক ইত্যাদি। পরিবার নিয়ে কিংবা হানিমুন অথবা কাপলদের জন্য অন্যতম একটি সেরা রিসোর্ট হল সাইরু হিল রিসোর্ট। 

বান্দরবান ট্যুর গাইড- কম খরচে সম্পূর্ণ ভ্রমণ গাইড

ভাওয়াল রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা

ধুলোবালির শহর ঢাকায় থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে গেছেন? শহরকেন্দ্রিক এই জীবন থেকে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে চাচ্ছেন? বেশিদূর যেতে হবে না। ঢাকার অদূরেই আপনাদের প্রশান্তির কথা ভেবেই গড়ে উঠেছে ভাওয়াল রিসোর্ট এন্ড স্পা।

এর অবস্থান শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মাত্র ৪৫ কিলোমিটার দূরে গাজীপুরের বড়ইপাড়ার মির্জাপুর ইউনিয়নের নলযানি গ্রামে। সর্বমোট ৩৫ একর জমি নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে নান্দনিক এই রিসোর্ট টি।

সুইমিং করতে ভালোবেসে থাকলে ভাওয়াল রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা হতে পারে আপনার জন্য প্রথম চয়েজ। কেননা ঢাকার আশেপাশে এত বড় সুইমিং পুল বিশিষ্ট আর কোন রিসোর্ট আপনি হয়তো খুঁজে পাবেন না। সম্পূর্ণ রিসোর্ট টির মাঝখান দিয়ে শীতলক্ষ্যা নদীর মতো বয়ে চলেছে এই সুবিশাল সুইমিং পুল। তাছাড়াও আপনার খুকুমণিদের জন্য বিশেষভাবে কম উচ্চতার পুলও তৈরি করা হয়েছে।

বিনোদনের জন্য সুইমিংপুলের পাশাপাশি আপনি আরো খুঁজে পাবেন সাইকেলিং, জিমনেশিয়াম, বারবিকিউ জোন, বিলিয়ার্ড, লন টেনিস, ব্যাডমিন্টন এবং আরো অনেক কিছু। এছাড়াও ভাওয়াল রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা তে রয়েছে আরামদায়ক স্পা সেন্টার। 

আপনার পরিবার ও প্রিয়জনদের নিয়ে থাকার জন্য এখানে রয়েছে বেশ কয়েকটি ক্যাটাগরিতে বিভিন্ন রকম রুম। প্রয়োজন অনুযায়ী সহজেই বেছে নিতে পারবেন। ভাওয়াল রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা এর রয়েছে একটি নিজস্ব রেস্তোরা। যেখানে পাবেন সকালের জন্য কমপ্লিমেন্টারি নাস্তা। স্বল্প সময়ের জন্য একটি সুখের পরশ পেতে আপনাকে ভাওয়াল রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা তে আমন্ত্রণ রইল। 

মেঘপুঞ্জি রিসোর্ট

বর্তমানে বাংলাদেশে পর্যটকদের কাছে অন্যতম জনপ্রিয় একটি জায়গা হল সাজেক। সরাসরি আকাশ ছুঁয়ে দেখার অভিজ্ঞতা পেতে হলে আপনাকে ছুটে যেতে হবে সুদূর চট্টগ্রাম বিভাগের রাঙ্গামাটি শহরে। আর সাজেক ভ্রমণকারীদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় জায়গা হল মেঘপুঞ্জি রিসোর্ট। রিসোর্টটি সম্পূর্ণ পাহাড়ের উপর অবস্থিত। এখানে রয়েছে বিভিন্ন রকম কটেজ। যেখানে একটি করে বড় বেড দেয়া হয়েছে।

এছাড়াও এক্সটার ফ্লোরিং বেড সহ এক রুমে অনায়াসে তিন চার জন থাকা যাবে। আকাশের ওপেন ইনফিনিটি ভিউ, সাদা তুলোর মেঘ, ও সবুজ পাহাড়ি দৃশ্য দেখতে চাইলে মেঘপুঞ্জি রিসোর্ট এর কটেজ গুলোর ভিতর থেকেই অনায়াসেই সবকিছু দেখতে পাবেন। 

মেঘপুঞ্জি রিসোর্ট আপনার জন্য নিয়ে এসেছে বেশ কয়েক প্রকার কটেজ ব্যবস্থা। তার মধ্যে অন্যতম হলো তারাশা কটেজ। যেখান থেকে ৩৬০ ডিগ্রি ভিউ পাওয়া যায়। প্রশস্ত এই কটেজের দাম খানিকটা বেশি। এছাড়াও রয়েছে পূর্বাশা, রোদেলা ও মেঘলা। সবগুলো কটেজেই পাবেন এটাচড বাথরুম।

মেঘপুঞ্জি রিসোর্টের আশেপাশে খাবারের জন্য রয়েছে বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্ট। যেমন: ফুডানকি, মনটানা, চিম্বাল ইত্যাদি। এগুলোতে যেতে মাত্র চার পাঁচ মিনিট হাঁটতে হবে। তাছাড়া এদের নিজস্ব রেস্টুরেন্ট রয়েছে। তবে গাড়ি পার্কিং এর জন্য আলাদা ব্যবস্থা নেই। 

 অন্যান্য সুবিধার মধ্যে আপনি প্রত্যেকটি কটেজের মধ্যে পাবেন পূর্ব দিকে মুখ করে খোলা একটি দীর্ঘ বারান্দা। যাকে তারা The Cloud Terrace নাম দিয়েছে। এ জায়গা থেকেও আপনি ওপেন ইনফিনিটি ভিউ ও আকাশ এবং মেঘের বাহারি দৃশ্য দেখতে পাবেন। এছাড়াও মেঘপুঞ্জি রিসোর্টে রয়েছে তিনটি মেঘ দোলনা, দ্যা সেলফি ব্রিজ এবং নাইট গার্ডেন ভিউ। 

মেঘপুঞ্জি রিসোর্ট এ বুকিং দেওয়ার জন্য আপনাকে কেবলমাত্র তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ভিজিট করলেই চলবে। সেখান থেকেই আপনি এভেলেবেল কটেজ দেখে ডিজিটাল ফরম ফিলাপ এবং সাবমিট করতে পারবেন। 

মারমেইড বিচ রিসোর্ট

কক্সবাজারের পেঁচার দ্বীপ বর্তমানে একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় স্থান। কারণ এর এক পাশে রয়েছে ঝাউবানে ঘেরা সমুদ্র সৈকত অন্য পাশে পাবেন পাহাড়ে বেষ্টিত প্যাচারদিয়া গ্রাম। কক্সবাজার থেকে টেকনাফগামী মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশেই রেজু খালের পশ্চিম দিকেই রয়েছে নান্দনিক মারমেইড বিচ রিসোর্ট। সেরা ১০ টি রিসোর্ট এর নাম নিলে এটি তার মধ্যে অন্যতম।

এখানে পৌঁছাতে হলে আপনাকে কক্সবাজার থেকে মাত্র ১৮০ থেকে ২০০ টাকা ভাড়া হলেই চলবে। সিএনজি বা অটোরিকশায় করে খুব সহজেই চলে যাওয়া যায় রেজু ব্রিজের কাছে অবস্থিত মারমেইড বিচ রিসোর্ট। 

সবুজ গাছপালায় ঘেরা এই রিসোর্ট টিতে আপনি খুঁজে পাবেন সম্পূর্ণ কোলাহলমুক্ত একটি মনোরম পরিবেশ। মারমেইড বিচ রিসোর্ট এ রয়েছে ছোট ছোট অনেকগুলো কুটির।যেখানে প্রত্যেকটি ভ্রমণকারী খুঁজে পাবেন আধুনিক সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা। অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য প্রথমেই রয়েছে ওয়েলকাম ড্রিংকস হিসেবে পাশের গাছ থেকেই পেড়ে আনা ডাবের পানি।

স্থপতি জিয়াউদ্দিন খান তার নিজস্ব শৈলী থেকে রিসোর্টটি সাজিয়েছেন বিভিন্ন রকম পরিবেশবান্ধব উপকরণ দিয়ে। ভ্রমণকারীদের আনন্দ দেবার জন্য রয়েছে নৌকা ভ্রমণের সুব্যবস্থা। এছাড়াও মারমেইড বিচ রিসোর্ট এ রয়েছে স্পা, ইয়োগা সেন্টার, প্রেক্ষা গৃহ এবং সম্মেলন কক্ষ। 

মারমেইড বিচ রিসোর্ট এ আপনি পাবেন থ্রি স্টার খাবার হোটেল এবং বিভিন্ন ক্যাটাগরির প্রায় ৩০ টি কটেজ সাইজ রুমের ব্যবস্থা। আপনার বাজেট যদি একটু কম হয়ে থাকে তাহলে এ রিসোর্ট থেকে ১ কিলোমিটার দূরে একই মালিকানায় মারমেইড ইকো রিসোর্ট নামে আরেকটি রিসোর্ট রয়েছে। এছাড়াও মারমেইড বিচ রিসোর্ট এ খাবারের জন্য রয়েছে আলাদা একটি জুসবার।

ব্রাক সিডিএম

ঢাকার মধ্যে আরেকটি অন্যতম হোটেল রিসোর্ট ব্রাকসিডিএম। সাভারে অবস্থিত এ রিসোর্টটিতে যেতে হলে আপনাকে তামান্না ওয়ার্ল্ড ফ্যামিলি পার্ক এবং বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা হতে মাত্র ১৫ মিনিটের দূরত্ব পাড়ি দিতে হবে। সেরা ১০ টি রিসোর্ট এর কথা বলতে গেলে এটি আসবেই।

এটি একটি Four Star হোটেল যেখানে প্রায় বিভিন্ন ক্যাটাগরির ১৭৪ টি রুম রয়েছে৷ অতিথিদের সুবিধার জন্য ব্রাকসিডিএম এ থাকছে ফ্রি ব্রেকফাস্ট, ফ্রি ওয়াইফাই এবং ছাদে যাওয়ার সুব্যবস্থা। যা Rooftop Terrace নামে পরিচিত। 

ব্রাকসিডিএম এ অতিথিদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ হলো সকালের বাফেট ব্রেকফাস্ট। এছাড়াও সারাদিন আপনি যেকোনো সময় ইচ্ছা করলেই রুমে বসে খাবারের জন্য অর্ডার করতে পারবেন। ইচ্ছে করলে রিসোর্টের বাইরে খুঁজে পাবেন বেশ কয়েকটি ফাইভ স্টার রেস্টুরেন্ট এবং কফি শপ।

প্রতিটি রুমে থাকছে কেবল চ্যানেল সমৃদ্ধ টিভি, ফ্রিজ এবং মিনি নিউজপেপার বার। আপনার থাকার ভবনটির নিচেই রয়েছে একটি প্রশস্ত পুকুর। যার চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিভিন্ন রকম বাহারি গাছপালা। হোটেলের বারান্দা থেকেই আপনি এক কাপ কফিতে চুমুক দিতে দিতে এই মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন। এক কথায় আপনার বাজেটের ভিতরে ঢাকার মধ্যে অত্যন্ত বিলাসবহুল একটি রিসোর্ট হতে পারে ব্রাকসিডিএম।

সাইমোন বিচ রিসোর্ট

কককেন্দ্রে অবস্থিত ২০১৫ সালে স্থাপিত একটি জমকালো রিসোর্ট হলো সাইমন বিচ রিসোর্ট। অন্যতম অভিজাত এবং আন্তর্জাতিক মানের এই হোটেলে পাবেন মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ, হোটেলের কর্মচারীদের আন্তরিক সেবা। অনন্য অতিথেয়তার কারণে কক্সবাজার ভ্রমণকারীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় হোটেল এটি। ফ্যামিলি ট্রিপ, বিজনেস কিংবা হানিমুনের জন্য পিপাসু পর্যটকদের কাছে ফাইভ স্টার এই হোটেলটি সব সময় একটি পারফেক্ট ডেস্টিনেশন। 

অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সমৃদ্ধ কলাতলী বীচের মেরিন ড্রাইভ এ অবস্থিত সাইমোন বিচ রিসোর্টে রয়েছে প্রায় ২২৮ টি অভিজাত রুম।এছাড়া রয়েছে ১৬ টি প্যারারোমা ওশান স্যুট এবং ৩৬ টি ডিলাক্স সুট। কেন্দ্রীয় ওয়াটার হিটিং সিস্টেম ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ১৭৬ টি সি ভিউ সম্বলিত রুম। অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য রয়েছে তিনটি রেস্টুরেন্ট।

বিনোদনের জন্য রয়েছে সুইমিংপুল, বার ডেক এবং কর্পোরেট মিটিং কিংবা বিজনেস ইভেন্টের জন্য রয়েছে প্রশস্ত কনভেশন হল। সম্পূর্ণ রিসোর্ট দিতে একাধারে প্রায় ৭০০ ও অতিথির থাকার জন্য সুব্যবস্থা রয়েছে। জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা সাইমোন বিচ রিসোর্ট পৃথিবীর দীর্ঘতম ১২০ কিলোমিটার প্রশস্ত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের একদম সামনেই অবস্থিত। 

অত্যন্ত আধুনিক ব্যবস্থা সমন্বিত সাইমোন বিচ রিসোর্ট এ এক রাত থাকার জন্য প্রতিজনকে গুনতে হয় প্রায় সাড়ে বারো হাজার টাকা। অতিথিদের আনন্দ দেবার জন্য রয়েছে স্পা এবং মাসাজ অপশন ছাড়াও ফিটনেস সেন্টার, প্লে গ্রাউন্ড, চিলড্রেন সুইমিং পুল, ইনডোর এবং আউটডোর গার্ডেন ছাড়াও নানান রকম সুযোগ সুবিধা। যাদের বাজেট একটু বেশি তাদেরকে সাইমোন বিচ রিসোর্ট কখনোই হতাশ করবে না। সেরা ১০ টি রিসোর্ট এর লিষ্টে এটি একটি।

হিল তাজ রিসোর্ট

আমাদের আজকের তালিকায় দশ নম্বরে রয়েছে বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলের আরেকটি জনপ্রিয় একটি রিসোর্ট তথা হিল তাজ রিসোর্ট। দেশী ও বিদেশী পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় একটি স্থান হলো কাপ্তাই লেক। আর এর পাশেই ছোট্ট একটি দ্বীপে গড়ে উঠেছে হিল তাজ রিসোর্ট।

আপনি যদি পিকনিকের জন্য কিংবা পরিবার প্রিয়জনদের নিয়ে পুরো একদিন শহরকেন্দ্রিক এই জীবন থেকে একটু আনন্দঘন মুহূর্ত পার করতে চান তাহলে আপনাকে বলব রাঙ্গামাটি জেলার এই মনোরম রিসোর্ট টিতে একবার ঘুরে যান। সেরা ১০ টি রিসোর্ট এর মধ্যে এটি একটি।

হিল তাজ রিসোর্ট এর রয়েছে নিজস্ব রেস্টুরেন্ট৷ যেখানে আপনি খুঁজে পাবেন বিভিন্ন রকম পাহাড়ি এবং দেশি-বিদেশি মজাদার সব খাবার। যার গুণগত মান অনন্য। রিসোর্টটির ভৌগোলিক অবস্থান এর জন্যও ভ্রমণকারীদের কাছে প্রথম পছন্দ এটি।

কেননা এর পাশেই একটু দূরে আপনি পাবেন শুভলং ঝর্ণা, ঝুলন্ত ব্রিজ, বৌদ্ধ মন্দির, কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, রাজবাড়ি ও রাজবন বিহার, নেভি ক্যাম্পিং এবং আরো নানান দর্শনীয় স্থান। যেগুলো আপনি রিসোর্টে নিজস্ব টুর প্যাকেজ থেকে সহজেই কিনে নিতে পারবেন। দুই ধরনের প্যাকেজ এরা অফার করে থাকে। প্রথম প্যাকেজে রাঙ্গামাটির সাতটি দর্শনীয় স্থান এবং দ্বিতীয় প্যাকেজে কাপ্তাই বোটে চড়ে স্থানীয় পাঁচটি স্থান ভ্রমণের সুযোগ। 

অত্যন্ত স্বল্পমূল্যে এখানে আপনি থাকতে পারবেন। ২০০০/- নন এসি থেকে শুরু করে ৮০০০/- ভিআইপি ডাবল রুমের সুব্যবস্থা। যেখানে প্রতিক্ষেত্রে চারজন করে থাকতে পারবেন। অতিরিক্ত অন্যান্য সুব্যবস্থার মধ্যে এখানে পাবেন টুর প্ল্যান কনসালটেন্সি, ফ্রি ওয়াইফাই আনলিমিটেড ইন্টারনেট, ঠান্ডা ও গরম পানি, বাইরে লেকের পাড়ে এবং ছাতার নিচে বসার সুযোগ।

আপনি যদি চান লেকের পাড়ে বসে মাছ ধরবেন সেটার জন্য রয়েছে ছিপ দিয়ে মাছ ধরার ব্যবস্থা। বুকিং কনফার্ম করার জন্য তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে নাম্বার কালেক্ট করে কয়েকদিন আগে থেকেই তাদেরকে জানিয়ে রাখতে পারেন। এক কথায় রাঙ্গামাটি ভ্রমণকারীদের জন্য অত্যন্ত বিলাসবহুল এবং পছন্দের একটি রিসোর্ট হলো হিল তাজ রিসোর্ট। 

এর মধ্যে দিয়েই আমরা আজকে আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম বাংলাদেশের সেরা ১০ টি রিসোর্ট এর নাম, অবস্থান এবং তাদের সার্ভিস সমূহ। আশা করি কিছুটা হলেও আপনাদের আইডিয়া দিতে পেরেছি। এরকম নিত্য নতুন খবরাখবর পেতে আমাদের পেইজের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।

Previous articleসুরা ফাতিহার প্রথম আয়াত নিয়ে একটু ভেবে দেখি।
I am zakaria. I am small blogger. Side by side I am writing for others blog also. Feel free to knock me if you need me.