হাইপোথাইরয়েডিজম

শুধু ডায়াবেটিস, হার্টঅ্যাটাক অথবা স্ট্রোকই নয়, হাইপোথাইরয়েডিজম নামের একটি রোগ ধীরে ধীরে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে যেতে শুরু করেছে। কিন্তু এই হাইপোথাইরয়েডই বা কি? এবং কেনই বা হাইপোথাইরয়েডে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ? চলুন আজকের এই আর্টিকেলে আমরা সেটি সম্পর্কে জানব।

থাইরয়েড ও হাইপোথাইরয়েডিজম

প্রজননকালীন সময় থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে থাইরক্সিন নামের এক ধরনের হরমোন নিঃসরণ হয়। অনেকেরই ভুল ধারণা থাকে! অনেকে বলে থাকেন যে, থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে থাইরয়েড নিঃসরণ হয়। কিন্তু মূলত থাইরোড নিঃসরণ হয় না বরং থাইরক্সিন নামের এক ধরনের হরমোন নিঃসরণ হয় যা থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে সরাসরি বিভিন্ন অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। প্রজননকালীন সময় থাইরয়েড গ্রন্থি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত থাইরক্সিন মানসিক এবং শারিরীক গঠন নিশ্চিত করে। দেহের বিপাকীয় প্রক্রিয়া গুলো কে সচল রাখে। এছাড়াও শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে। শরীরে কতটুকু প্রোটিন উৎপাদন হবে তার ওপর যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে থাইরয়েডের এই গুরুত্বপূর্ণ হরমোন।

থাইরয়েড গ্রন্থি দেখতে অনেকটা প্রজাপতির মতো যা আমাদের গলার মাঝে বরাবর অবস্থান করে।

আমরা সকলেই জানি হাইপো শব্দের অর্থ কম, সুতরাং থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে প্রয়োজনের তুলনায় কম থাইরক্সিন নিঃসৃত হয় তাহলে সেই অবস্থাকে হাইপোথাইরয়েডিজম বা হাইপোথাইরয়েড বলা হয়।

হাইপোথাইরয়েডিজম কিভাবে বুঝবেন

বাংলাদেশের মানুষ হাইপোথাইরয়েডিজম সম্পর্কে তেমন অবগত নয়। সুতরাং লক্ষণগুলো প্রকাশ পেলেও সঠিক সময়ে রোগ শনাক্ত করা যায় না। তবে থাইরয়েডিজম রোগের বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে:

  • থাইরয়েডিজমের ফলে থাইরক্সিন হরমোনের পরিমাণ কমে গেলে বিপাক ক্রিয়া দেরিতে সম্পন্ন হয়, সুতরাং ওজন বেড়ে যেতে থাকে।
  • সব সময় ঘুম ঘুম ভাব অনুভব হয় এবং অবসাদগ্রস্ততা লেগেই থাকে।
  • অনেক সময় রোগী কানে শুনতে পায় না অথবা কানে কম শুনে।
  • গলগ দেখা যেতে পারে।
  • মুখ-পা ফুলে যেতে পারে।
  • চামড়া শুষ্ক ও খসখসে হতে পারে।
  • বুকে ব্যথা অনুভব হয়।
  • ঠান্ডা একদমই সহ্য হয় না।
  • মেয়েদের ক্ষেত্রে অনিয়মিত মাসিক হয়।
  • যৌন ক্ষমতা কমে আসে।
  • মাংসপেশিতে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব হয়।
  • পেটে পানি জমা হয়।
  • স্বরের কোমলতা কমে যায়, কন্ঠ কর্কশ শোনায়।
  • মাংস পেশির ওপর রিফ্লেক্স কমে যায়।
  • রক্তচাপ বেড়ে যায়।
  • অনেক সময় মেজাজ খিটমিটে হয়।

উপরের লক্ষন গুলো যদি আপনার মধ্যে বিদ্যমান থাকে তাহলে আর দেরি না করে এক্ষুনি ডাক্তারের পরামর্শ নিন। এবং কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হন যে আপনি হাইপোথাইরয়েডিজমে ভুগছেন কি না? যেহেতু এটি আমাদের অধিকাংশের কাছেই নতুন একটি রোগ, সুতরাং সবাইকে এই রোগের লক্ষণগুলো সম্পর্কে অবগত করা একান্ত প্রয়োজন।

আরও পড়ুনঃ  ইমিউনিটি সিস্টেম শক্তিশালী করবেন কিভাবে? ভিটামিন সি কি শুধুই কমলায়?

হাইপোথাইরয়েডিজম সমস্যা মোকাবেলায় কি খাবেন

হাইপোথাইরয়েডিজম সমস্যা মোকাবেলার ক্ষেত্রে বেশ কিছু খাবার কার্যকর ভূমিকা পালন করবে:

আয়োডিনযুক্ত খাবার

আয়োডিন যুক্ত খাবারের বিকল্প হিসেবে আমরা আয়োডিনযুক্ত লবণ খেয়ে থাকি। তবে অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ করলে উচ্চ রক্তচাপের আশঙ্কা থাকে, যা থাইরয়েডের উপসর্গ। সুতরাং লবণ পরিহার করার চেষ্টা করুন, তার বদলে লইট্টা, কোরাল প্রভৃতি মাছ খাওয়ার পরামর্শ রইল। চিংড়ি এবং টুনা ইত্যাদি মাছেও প্রচুর পরিমাণে আয়োডিন থাকে। এছাড়াও শাকপাতা তেও প্রচুর পরিমাণে আয়োডিন রয়েছে।

নারিকেলের তেল

নারিকেল তেলে রয়েছে মিডিয়াম সেন ফ্যাটি এসিড, যা থাইরক্সিন হরমোনের ঘাটতি পূরণ করতে পারে। এছাড়াও মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি এবং শরীরের বিপাকীয় কার্যকলাপ অক্ষুন্ন রাখে নারিকেলের তেল।

টাইরোসিন আমিষ যুক্ত খাবার

টাইরোসিন আমিষ থাইরক্সিন হরমোন তৈরি করতে সাহায্য করে। সুতরাং উচ্চমানের টাইরোসিন আমিষ হাইপোথাইরয়েডিজম এর একটি প্রতিরোধ মূলক খাবার।

মুরগির মাংস, গরুর মাংস, কলা মিষ্টি কুমড়ার বিচি ইত্যাদির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে টাইরোসিন আমিষ বিদ্যমান।

হাইপোথাইরয়েডিজম সমস্যা মোকাবেলায় কি খাবেন না

হাইপোথাইরয়েডিজমের সমস্যা এড়িয়ে চলতে অবশ্যই ফ্লোরিন ও ক্লোরিন জাতীয় খাবার, কফি, দুধ জাতীয় খাবার, চিনিযুক্ত খাবার রিফাইন্ড ময়দা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকুন।

অবিশুদ্ধ কলের পানির মধ্যে ক্লোরিন এবং ক্লোরিন বিদ্যমান।যা আয়োডিন শোষনে বাধা দেয়। সুতরাং অবিশুদ্ধ পানি এড়িয়ে চলুন। তবে একান্তই যদি কলের পানি খান, অবশ্যই সে পানি ফুটিয়ে খেতে হবে।

আশা করি আজকের পোস্ট আপনাদের কাজে লাগবে।

Previous articleআহমদ ছফা- কালের এক মহানায়ক
Next articleএকজিমা- লক্ষণ, প্রতিকার ও চিকিৎসা
Istiak Ahmed Ullas
টুকিটাকি লেখালখি করি!

2 COMMENTS

  1. আগে জানা ছিলো না এটা সম্পর্কে। ধন্যবাদ লেখার জন্য

    • ধন্যবাদ। একটা কথা মনে রাখবেন এই রোগ ধিরে ধিরে ডাইবেটিক্স এর মতো নিত্যসঙ্গী রোগকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here