আমার এই ওয়েবসাইটটি আসলে অনেক শখ থেকে তৈরি করা। অনেকেই ফেসবুকে বা বিভিন্ন ব্লগে লেখালেখি করে থাকেন কিন্তু সবসময়ই আমার ইচ্ছা হত নিজস্ব প্লাটফর্মে আমি লেখালেখির কাজ করব। লেখা-লেখির কাজ মানে নিজস্ব চিন্তা-ভাবনাগুলোকে একটু লিপিবদ্ধ করে রাখা আর কিছু না। আর আমি এমন কোন লেখকও না। তারপরেও এটা আমার শখ। তো সে যাই হোক। আজকে আমার মাথায় একটা চিন্তা ঘুর-পাক খাচ্ছিল তাই ভাবলাম লিখে ফেলি। সুরা ফাতিহার প্রথম আয়াতটি নিয়ে ভাবছিলাম। প্রথম আয়াতটি হলঃ
সুরা ফাতিহার প্রথম আয়াতটি হলঃ الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ এর উচ্চারন হলঃ আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আ -লামি-ন এবং এর বাংলা অর্থ করলে হয়ঃ যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার যিনি সকল সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা। এবং একইসাথে যদি ইংরেজি অনুবাদ করি এর অর্থ হয়ঃ Praise be to Allah, Lord of the Worlds।
বাংলা এবং ইংরেজি দুই ভাষাতে কেন অনুবাদ করলাম? আমরা যেহেতু এই দুইটি ভাষাতেই মোটামুটি দক্ষ তাই যাতে সহজে বুঝতে পারি। এটাই মূল কারণ আর কিছুই না।
আয়াতে দুইটা অংশ রয়েছে। আয়াতের প্রথম অংশে মহান আল্লাহর প্রসংশা করা হয়েছে এবং দ্বিতীয় অংশে আল্লাহর একটা পরিচয় দেয়া হয়েছে। আমি দ্বিতীয় অংশ নিয়েই আলোচনা করব।
দ্বিতীয় অংশে বলা হয়েছে, রব্বিল আ -লামি-ন যার বাংলা হল সকল সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা এবং ইংরেজি হল Lord of the Worlds। সুরা ফাতিহার প্রথম আয়াতটি এবার আসুন একটু চিন্তা করে দেখি।
ভাল করে খেয়াল করে দেখুন, আ -লামি-ন একটি বহুবচন শব্দ যার একবচন হল আলম। ‘আলম’ এটি মূলত আরবি শব্দ।, আলম নামের বাংলা অর্থ : বিশ্ব,পৃথিবী,দুনিয়া।। মানে হল আল্লাহ সকল বিশ্বের রব। রব‘ শব্দের আভিধানিক অর্থ হল “পালনকর্তা, লালনকর্তা, প্রভু, প্রতিপালক”।
একারনেই ইংরেজিতে যখন অনুবাদ করা হয়েছে তখন Lord of the Worlds বলা হয়েছে। World না বলে বলা হয়েছে Worlds মানে বহুবচন শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। মানে হল এই বিশ্বের বাইরেও আরও অনেক বিশ্ব আছে আল্লাহ সকল বিশ্বের রব।
আবার এখানে কিন্তু সৃষ্টিকর্তা বলা হয়নি। বলা হয়নি-আল্লাহ এই সকল বিশ্বের সৃষ্টিকর্তা, বলা হয়েছে সকল বিশ্বের পালনকর্তা। সৃষ্টিকর্তা এবং পালনকর্তা দুইটি শব্দ ভিন্ন এবং অর্থের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। সৃষ্টিকর্তা শব্দের চেয়ে পালনকর্তা শব্দটি অনেক ব্যাপক। এর আগে কখনই আমি সুরা ফাতিহার প্রথম আয়াতটি নিয়ে ভেবে দেখিনি।
ধরেন, আমি একটা বাড়ি বানিয়েছি বা কোন কিছু তৈরি করেছি এরপর আর কোন কিছু না করে ফেলে রেখেছি। ধীরে ধীরে ঐ বাড়ি বা ঐ জিনিশটি নষ্ট হয়ে যাবে মেইন্টেন্যান্সের অভাবে। তাইনা? পার্থিব দৃষ্টিকোন থেকে আমি ঐ বাড়িটির সৃষ্টিকর্তা (যদিও আল্লাহই সকল কিছুর সৃষ্টি কর্তা, এটা উদাহরণ হিসেবে বলছি শুধু) কিন্তু পালনকর্তা নই। আমি যদি পালনকর্তা হতাম তাহলে ঐ বাড়ির মেইনটেন্যান্সও আমি করতাম।
এবার আসুন পালনকর্তা বলতে কি কি বুঝায় তাই বলি। পালনকর্তা মানে হল প্রতিপালক বা রক্ষাকারী। তারমানে, সুরা ফাতিহার প্রথম আয়াতে আল্লাহ তায়ালা কি বলছেন? যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার যিনি সকল সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা।
সুরা ফাতিহার প্রথম আয়াতটি আমার কাছে এতটাই বিশ্বয়কর মনে হয়েছে যে আমি আপনার সাথে শেয়ার না করে পারলাম না।
সকল প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার এবং আল্লাহ পৃথিবী সহ সকল সৃষ্টিজগতের পালনকর্তা। এই যদি প্রথম আয়াতের অর্থ হয় তাহলে আমরা এই ছোট্ট দুনিয়াতে কি নিয়ে আজ মারামারি- কাটাকাটি করছি? ভবিষ্যৎ নিয়ে কত ইনসিকিউরিটি আমাদের। আমরা টাকা আয় করি অনলাইনে, অফলাইনে জমাই, বাড়ি করি। ভবিষ্যতের জন্য কত চিন্তা- তাই না? অথচ আল্লাহই সবকিছুর দেখভাল করছেন। তিনিই আমাদের পালনকর্তা।
আশা করি, আমার আজকের লেখাটি (সুরা ফাতিহার প্রথম আয়াতটি নিয়ে আলোচনা) আপনাদের ভাল লেগেছে। ধন্যবাদ সবাইকে।
Alhamdulillah