Black Box
Black Box

 

হাজার হাজার ফুট উপর দিয়ে উড়ে যাওয়া বিমানের দুর্ঘটনা ঘটার হার সড়ক কিংবা জলপথে চলাচল করা যেকোন প্রকার যানবাহনের দুর্ঘটনা ঘটার চেয়ে অনেক কম। তাইবলে এমন নয় যে, দুর্ঘটনা ঘটেনা। প্রায় প্রতিবছরই কিছু বিমান দুর্ঘটনার শিকার হয়ে থাকে। যেকোন বিমান দুর্ঘটনা ঘটার পর প্রথমে যাত্রী উদ্ধারের চেষ্টা করা হলেও এর পরেই যে জিনিশটি উদ্ধার কর্মীরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন তা হল বিমানের ব্লাক বক্স (Black Box)। একারনেই বিমান দুর্ঘটনা ঘটলেই  ব্লাক বক্স শব্দটি আমরা প্রায়ই শুনে থাকি।

তাহলে প্রথমেই আসুন আমরা জানি ব্লাক বক্স (Black Box) আসলে কী?

ব্লাক বক্স হল বিমানের এমন একটি ইলেক্ট্রনিক রেকর্ডিং যন্ত্র যাতে বিমানের সমস্ত কারিগরি তথ্য ও ককপিটের যাবতীয় কথাবার্তা রেকর্ড হয়ে থাকে। এটার নাম ব্লাক বক্স  হলেও এর রং মোটেও কালো নয়। এটি উজ্জ্বল কমলা রঙের হয়ে থাকে। বিমানের ধ্বংসাবশেষ থেকে উদ্ধার করার সময় সহজেই যেন উদ্ধার কর্মীরা খুঁজে পায় একারনেই এর রং উজ্জ্বল কমলা। বিমান নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা একে ব্লাক বক্স  নামে ডাকেন না, তারা একে বলেন ফ্লাইট রেকর্ডার।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রথম এই যন্ত্র আবিষ্কারের উদ্যগ নেয়া হলেও ব্লাক বক্স তৈরির কাজ শুরু হয় ১৯৫০ দশকের গোড়ার দিকে। অ্যারোনটিক্যাল রিসার্চ ল্যাবরেটরি, অস্ট্রেলিয়াতে বিজ্ঞানী ডেভিড ওয়ারেন ব্লাক বক্স প্রথম আবিষ্কার করেন। ১৯৬২ সালের ২৩শে মার্চ অস্ট্রেলিয়ার একটি বিমানে প্রথম পরীক্ষামূলক ভাবে ব্লাক বক্স ব্যবহার করা হয়।

ব্লাক বক্স (Black Box) এর গঠনঃ

ব্লাক বক্স (Black Box) অত্যন্ত শক্ত ধাতব পদার্থ দিয়ে তৈরি একটি যন্ত্র। কয়েকটি লেয়ার দিয়ে এটি  তৈরি করা হয়, যাতে প্রচণ্ড তাপ, ভাঙচুর, পানি বা প্রচণ্ড চাপের মধ্যেও এটি টিকে থাকে। এটি ১০০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রাতেও অক্ষত থাকতে পারে। স্টেইনলেস স্টীল বা টাইটেনিয়ামের খোলস দিয়ে বাক্সের আবরণ তৈরি করা হয়। সমুদ্রের তলদেশেও ৩০দিন পর্যন্ত ব্লাক বক্স অক্ষত থাকতে পারে।

ব্লাক বক্স (Black Box) এ কি থাকে?

ব্ল্যাক বক্সে দুই প্রকার তথ্য থাকে। একটি  ফ্লাইট ডাটা রেকর্ডার বা FDR, যাতে বিমানের উড্ডয়ন, ওঠা-নামা, বিমানের অভ্যন্তরীণ টেম্পারেচার, চাপ বা তাপের পরিবর্তন, টাইম, শব্দ ইত্যাদি বিভিন্ন তথ্য নিজের সিস্টেমের মধ্যে সংরক্ষণ করে। ককপিট ভয়েস রেকর্ডার বা CVR নামের আরেকটি অংশে ককপিটে পাইলটদের নিজেদের কথপকথন, পাইলটদের সঙ্গে বিমানের ক্রূদের কথা, ককপিট এর সাথে বিভিন্ন বিমান বন্দরের রেডিও যোগাযোগের কথা সার্বক্ষণিকভাবে সংরক্ষন হতে থাকে।

ব্লাক বক্স (Black Box) কিভাবে কাজ করে?

আধুনিক ব্ল্যাকবক্স গুলো ২৫ ঘণ্টা পর্যন্ত বিমানের তথ্য ধারণ করে রাখতে পারে। এর ভেতর অনেকগুলো মেমরি চিপ থাকে। ব্ল্যাকবক্স এ তথ্য সাপ্লাই করার জন্য বিমানের বিভিন্ন অংশে অনেকগুলো সেন্সর লাগানো থাকে। এসব সেন্সর অনবরত বিমানের গতি, তাপমাত্রা, সময়, ভেতর বাইরের চাপ, উচ্চতা ইত্যাদি নানা রকম তথ্য বিমানের সামনের দিকে থাকা ফ্লাইট ডাটা অ্যাকুইজিশন ইউনিট (FAU)নামের একটি মডিউলে সার্বক্ষণিকভাবে পাঠাতে থাকে। সেখান থেকে ঐসব তথ্য চলে যায় ব্ল্যাক বক্সে এবং সংরক্ষিত হতে থাকে।

পাইলট, কো-পাইলট, ক্রূদের বসার কাছাকাছি স্থানে বেশকিছু সেন্সর বসানো থাকে। তাদের সব কথাবার্তা, মুভমেন্ট বা সুইচ চাপা ইত্যাদি সব রেকর্ড হতে থাকে। সেগুলো এ্যাসোসিয়েটেড কন্ট্রোল ইউনিট (ACU) নামের একটি মডিউলে পাঠায়। এরপর সেসব তথ্য ব্ল্যাক বক্সে গিয়ে জমা হয়। বিমান চলাচলের একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ব্ল্যাক বক্স তথ্য সংরক্ষণ করে রাখে। মূলত শেষের দিকে তথ্য এটিতে জমা থাকে। নির্দিষ্ট সময় পরপর ফাস্ট ইন ফাস্ট আউট (FIFO) পদ্ধতিতে আগের তথ্য মুছে যেতে থাকে আর নতুন তথ্য জমা হয়। ফলে যেকোন দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সর্বশেষ তথ্য  পাওয়া যায়।

ব্লাক বক্স (Black Box) খুঁজে পাবার পর কি করা হয়?

বিমানের ধ্বংসাবশেষ থেকে উদ্ধার করার পর উদ্ধার কর্মীরা নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের কাছে ব্লাক বক্স জমা দেন। তারা খুব সতর্কতার সাথে এ থেকে বিমান দুর্ঘটনার কারণসহ অন্যান্য তথ্য উদ্ধারের চেষ্টা করে থাকেন। অনেক সময় ব্লাক বক্স (Black Box) ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে গেলে তথ্য উদ্ধারে বেশ সময় লেগে থাকে।

ভবিষ্যত ব্লাক বক্স (Black Box) কেমন হবে?

ব্লাক বক্স ডিভাইসের এর উন্নয়নের জন্য বিজ্ঞানীরা কাজ করে যাচ্ছেন। তারা শুধু অডিও নয় ভিডিও সংযোজনের জন্য কাজ করছেন। পাশাপাশি আরও কত বেশি তথ্য এতে সংরক্ষন করা যায় তা নিয়ে কাজ চলছে। এছাড়া দুর্ঘটনার পরে নয়, রিয়েল টাইম ডাটা ব্লাক বক্স যেন বিভিন্ন বিমানবন্দরে সাথে সাথে পাঠাতে পারেন সে ব্যাপারেও কাজ চলছে।

আর শুধু বিমানে নয় এখনকার আধুনিক গাড়িতেও ব্লাক বক্স ব্যবহার করা হয়, একে বলা হয় ইভেন্ট ডাটা রেকর্ডার।

আশাকরি আপনাকে ব্লাক বক্স নিয়ে একটা পরিস্কার ধারণা দিতে পেরেছি। ধন্যবাদ।

আমার আরও ব্লগ পড়ার জন্য হোমপেজে  চলে আসুন।

Previous article১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় ম্যারি অ্যানঃ বাংলাদেশ বিমান ও নৌবাহিনীর বিস্মৃত স্মৃতি
Next articleমিশরের ফারাও সম্রাট তুতেনখামেন এর ইতিহাস, সমাধি আবিস্কার এবং অভিসাপ
যে ব্যর্থ সে অজুহাত দেখায়, যে সফল সে গল্প শোনায়। আমি অজুহাত নয় গল্প শোনাতে ভালবাসি। আসুন কিছু গল্প শুনি, নিজের গল্প অন্যকে শুনাই।