বিকাশ মোবাইল নাম্বার পরিবর্তন করবেন কিভাবে?

আমার আগের মোবাইল নম্বরটি আমি চেঞ্জ করে ফেলি নানা কারণে। কিন্তু আমার আগের নাম্বারের সাথে বেশ কিছু জিনিষ এসোসিয়েটেড ছিল। যেমনঃ নাম্বারটি বিভিন্ন ব্যাংক একাউন্টে দেয়া ছিল, অনলাইনে অনেক জায়গায় একাউন্ট খুলেছি সেখানে ছিল। ইত্যাদি নানা জায়গায়, বুঝেনই তো। তো আমি সবগুলোতেই আমার নাম্বার পরিবর্তন করে নতুন মোবাইল নাম্বার দিয়ে দিয়েছি। কিন্তু এক জায়গায় এসে আটকে গেলাম। বলেন তো কী সেটা? ঠিকই ধরেছেন। বিকাশ একাউন্টে এসেই আটকে গেলাম। বিকাশ মোবাইল নাম্বার পরিবর্তন করব কিভাবে? আর সবই ত করে ফেলেছি, শুধু এটাই করতে পারলাম না।

বিকাশ মোবাইল নাম্বার পরিবর্তন করতে পারলাম না কেন?

বিকাশ একাউন্ট খুলেছিলাম আমার ন্যাশনাল আইডি দিয়ে, যেহেতু আগের মোবাইল নাম্বারে একবার বিকাশ একাউন্ট খুলে ফেলেছি তাই নতুন নাম্বারে আর একাউন্ট খুলা যাবেনা এটাই স্বাভাবিক। খুলতে গেলে দেখবেন আর ভেরিফাই করতে পারছেন না। কারণ, সরকারের নিয়ম হল এক ন্যাশনাল আইডির বিপরীতে আপনি শুধু একটিই বিকাশ বা নগদ বা যেকোন মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট খুলতে পারবেন।

এই সমস্যার সমাধান কি?

কিন্তু সব সমস্যারই একটা না একটা সমাধান রয়েছে। অবশ্যই এই সমস্যারও সমাধান আছে। প্রথম সমাধান হল। বিকাশ ব্যবহার না করে অন্য কোন মোবাইল ব্যাংকিং এ সুইচ করে ফেলা। যেমন – নগদ, ইউক্যাশ, রকেট ইত্যাদি। কিন্তু বিকাশ এত বেশি জনপ্রিয় যে এটা ছাড়া কোন উপায় নেই বলেই মনে হল।

সমাধান নাম্বার দুই হল- অন্য কারও ন্যাশনাল আইডি কার্ড ব্যবহার করে একাউন্ট খুলে ফেলা। বাবা-মা কিংবা অন্য কারও ন্যাশনাল আইডি দিয়ে। ব্যাপারটি আমার কাছে খুব একটা সমীচীন মনে হল না। নিজের একাউন্ট নিজের নামেই হওয়া উচিত। তাই এটিও বাদ।

দুইটি সিম কার্ড ব্যবহারঃ আগের সিম কার্ড শুধু বিকাশের জন্য ব্যবহার করা একটা সমাধান হতে পারে। কিন্তু এতেও সমস্যা হল, কেও বিকাশ নাম্বার চাইলে আবার আরেকটি নাম্বার দিয়ে দিতে হয়। যেই নাম্বারে কথা বলি ঐ নাম্বার বাদে আবার অন্য নাম্বার দেয়াটাও আমার কাছে ঝামেলা মনে হল। তাই এটিও বাদ সিলাম মাথা থেকে।

তাহলে উপায় কি?

বিকাশ কাস্টোমার কেয়ার নাম্বার ১৬২৪৭ তে ফোন দিলাম, তারাই আমাকে এর সমাধান দিল। আমি চাইলেই আমার একাউন্ট আগের মোবাইল নাম্বার থেকে সরিয়ে নতুন নাম্বারে ট্রান্সফার করে নিতে পারব। তবে এজন্য কিছু কাজ করতে হবে। কি কি করতে হবে আমাকে জানিয়ে দেয়া হল।

বিকাশ মোবাইল নাম্বার পরিবর্তন করবেন কিভাবে?

বিকাশ মোবাইল নাম্বার পরিবর্তন করতে হলে প্রথমে যেটি করতে হবে তা হল একাউন্ট ব্যালেন্স জিরো করে নিতে হবে। আপনার মোবাইলে যদি ব্যালেন্স থাকে তাহলে তা আপনার পরিচিত কারও বিকাশে ট্রান্সফার করে নিন। এরপর সোজা বিকাশের কাস্টোমার কেয়ারে নিজেই চলে যান। বাকি কাজ তারাই করে দিবে। আপনাকে আর কিছুই করতে হবেনা। তবে সাথে করে ন্যাশনাল আইডি কার্ড আর নতুন মোবাইল নাম্বারটি নিতে ভুলবেন না।

ঢাকা সহ সারা দেশে বিকাশের কাস্টোমার কেয়ার রয়েছে। ঠিকানা জানতে চান? এখান থেকে দেখে নিন। আমার অফিসের পাশের বিল্ডিং এই বিকাশের কাস্টোমার কেয়ার ছিল, এতদিন তা জানতামই না। তো পরের দিন অফিসের লাঞ্চের টাইমে চলে গেলাম।

কাস্টোমার কেয়ারে যাওয়ার পর

বিকাশের কাস্টোমার কেয়ার যে এতটা আধুনিক তা আমার জানাই ছিলনা। আমি ভাবছিলাম অনেক ভীড় হবে সময় লাগবে বেশি, ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু ভেতরে ঢুকে আমার তো চক্ষু চড়ক গাছ। প্রথমেই সিকিউরিটি গার্ড আমাকে টোকেন প্রিন্টিং মেশিন থেকে একটা টোকেন প্রিন্ট করে দিল, বলল- অপেক্ষা করতে।

দেখছিলাম, অনেকগুলো কাউন্টার। গুনে দেখি নয়টা। সবাই কাজ করছে। ৫ মিনিটের মধ্যেই আমার সিরিয়াল চলে আসল, কাউন্টার নাম্বার ৫ এ। চলে গেলাম।

বললাম, আমি বিকাশ একাউন্ট এর মোবাইল নাম্বার চেঞ্জ করতে চাই। আমার আগের নাম্বার জানতে চাইল। দিলাম। ন্যাশনাল আইডি কার্ড চাইল। তাও দিয়ে দিলাম।

প্রথমে ভদ্র মহিলা আমার আগের একাউন্ট ক্লোজ করে দিল। তারপর জানতে চাইল, নতুন একাউণ্ট যেই নাম্বারে খুলতে চাই সেই মোবাইল সাথে আছে কিনা? ছিল সাথেই।

সে নিজেই আমার একাউন্ট খুলে দিল। শুধু পিন নাম্বারটি আমি নিজে দিলাম। ব্যাস, প্লে স্টোর থেকে বিকাশ এপটি ডাউনলোড করে নিজেই লগইন করে নিলাম। ব্যাস আমার নতুন নাম্বারে বিকাশ হয়ে গেল। আমার সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেল। কত সহজে, তাইনা?

আপনারও যদি সেম সমস্যা হয় তাহলে কি করবেন?

এই সমস্যা শুধু যে আমার তা তো নয়। আপনারও নিজের এই সমস্যা হতে পারে। কোন চিন্তা না করে প্রথমে আপনার মোবাইলে ব্যালেন্স খালি করে ফেলুন আর তারপরে হাতে ন্যাশনাল আইডি কার্ড নিয়ে দৌড় দিন কাস্টোমার কেয়ারে।

বিকাশ ব্যাবহারকারীদের জন্য টিপস

আমার মত আপনারা যারা বিকাশ ব্যবহার করেন, তাদেরকে একটি টিপস দেই। এতে আপনার খরচ কমে যাবে। আসুন জেনে নেই কি সেই টিপস।

 প্রিয় এজেন্ট নাম্বার যোগ করুন

দেখুন, আমরা ক্যাশ আউট তো হর হামেশাই করে থাকি। একটু খেয়াল করে নিজের এলাকার বিকাশের দোকান যদি প্রিয় এজেন্ট নাম্বার হিসেবে যোগ করে নেই তাহলে হাজারে ১৪.৯০ টাকা দিয়ে ক্যাশ আউট করে নিতে পারি।

প্রতি মাসে একজন এজেন্টকে প্রিয় এজেন্ট নাম্বার হিসেবে যোগ করতে পারবেন। মাসে ২৫০০০ টাকা পর্যন্ত এই এজেন্ট থেকে ক্যাশ আউট করতে পারবেন।

প্রিয় নাম্বার যোগ করুন

যেসব পার্সোনাল বিকাশ নাম্বারে আপনি ঘন ঘন টাকা পাঠান, সেই সব নাম্বারের মধ্যে ৫ জনকে আপনি প্রিয় নাম্বারে যোগ করে নিন। এদেরকে আপনি কোন ট্রান্সফার ফি ছাড়াই সেন্ড মানি করতে পারবেন।

সবসময় বিকাশ এপ ব্যবহার করুন

*২৪৭# ডায়াল না করে বিকাশ এপ ব্যবহার করুন। এতে খুব সহজেই আপনি বিকাশে সার্ভিসগুলো নিতে পারবেন।

বিভিন্ন মারচেন্টকে পেমেন্ট করুন বিকাশে

অহরহ আমরা নানা প্রয়োজনে বিভিন্ন দোকানে পেমেন্ট করে থাকি, অনলাইনে কেনাকাটা করে থাকি। চেষ্টা করুন সব পেমেন্ট বিকাশে করার। এতে করে শুধু যে পকেটে তাকা রাখার ঝামেলা থেকে বেঁচে যাবেন তাইনা, দেখবেন বিভিন্ন মার্চেন্টে ডিস্কাউন্ট বা ক্যাশব্যাক ও পেয়ে যাবেন। বিকাশ এপে সবসময় খেয়াল রাখুন, কোথায় কখন ডিস্কাউন্ট চলে।

নিজের মোবাইল রিচার্জ নিজেই করুন

নিজের মোবাইল নিজেই রিচার্জ নিজেই করুন, দেখবেন অনেক ক্যাশ ব্যাক অফার পেয়ে যাবেন। এছাড়া বিকাশে বা অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিং এর জন্য আলাদা ক্যাশব্যাক অফার  সবসময় চালু থাকে। সুযোগ হাতছাড়া করবেন কেন?

বিকাশ রিওয়ার্ড পয়েন্ট

বিকাশ রিওয়ার্ড পয়েন্ট বিকাশের নতুন সংযোজন। আপনার ব্যাবহারের উপর ভিত্তি করে আপনাকে বিকাশ রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিবে। বিকাশের সব এক্টিভিটিজ থেকেই আপনি রিওয়ার্ড পয়েন্ট পেতে পারেন। যেমন- সেন্ড মানি, ক্যাশ আউট, পেমেন্ট ইত্যাদি। নিয়মিত লেনদেন করে পয়েন্ট অর্জন করুন।

এই রিওয়ার্ড পয়েন্ট জমতে শুরু করবে অটোমেটিক, আপনার একাউন্টে জমা হতে থাকবে। বিকাশ এপে ঢুকে আপনি নিজেই চেক করতে পারবেন। পরবর্তীতে আপনি চাইলে এই পয়েন্টগুলো ক্যাশ ব্যাক হিসেবে নিয়ে নিতে পারবেন।

আর মনে রাখবেন, আপনার লেনদেন যত বেশি হবে, আপনার লেভেল তত আপগ্রেড হবে আর আপনি তত বেশি সুবিধা পাবেন। তাই বেশি বেশি সকল লেনদেনে বিকাশ ব্যবহার করুন।

আশা করি, আমার আজকের লেখাটি আপনার কাজে লাগবে বিকাশ মোবাইল নাম্বার পরিবর্তন করেতে। যদি সামান্য উপকারেও লেগে যায় আমার লেখাটি তাহলে কষ্ট করে লেখাটি সার্থক হবে। সবাই ভাল থাকবেন, সুস্থ্য থাকবেন, এই কামনায় আজকের মত বিদায় নিচ্ছি। আল্লাহ হাফেজ।

Previous articleইউনিভার্সিটি ভর্তি পরীক্ষা এক কঠিন দুঃসময়
Next articleফরেক্স ট্রেডিং থেকে আয় কিভাবে করবেন? আদৌ সম্ভব?
Mamun
যে ব্যর্থ সে অজুহাত দেখায়, যে সফল সে গল্প শোনায়। আমি অজুহাত নয় গল্প শোনাতে ভালবাসি। আসুন কিছু গল্প শুনি, নিজের গল্প অন্যকে শুনাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here