ফিবোনাক্কি সংখ্যা কাকে বলে

শুধুমাত্র গণিতই নয় ফিবোনাক্কি সিরিজ এর ব্যবহার দেখা যায় প্রকৃতিতেও এমনকি অনেকের ধারনা প্রকৃতির অনেক রহস্যের সমাধান রয়েছে  ফিবোনাক্কি সিরিজে। শুধুমাত্র ধারনা বললেও ভুল হবে কারণ এমন অনেক ঘটনা আবিষ্কৃত হয়ে গেছে যার সাথে ফিবোনাক্কি সিরিজের ধারনা সম্পূর্ণভাবে মিলে যায়। আজকের ব্লগে আমরা জানব ফিবোনাক্কি সংখ্যা কাকে বলে এবং প্রকৃতিতে ফিবোনাক্কি সিরিজ এর উদাহরণসহ আরও অনেক কিছু।

ফিবোনাক্কি সংখ্যা কাকে বলে

পরপর দুইটি সংখ্যার যোগফল পরবর্তী সংখ্যার সমান হলে এ ধরনের সংখ্যাকে ফিবোনাক্কি সংখ্যা বলা হয়। যেমনঃ ০, ১, ১, ২, ৩, ৫, ৮, ১৩, ২১, ৩৪… … … … … … … …ইত্যাদি। একইভাবে বলা যায় এই রাশিমালার যেকোন সংখ্যা তার পরবর্তী দুইটি সংখ্যার বিয়োগ ফলের সমান।

এটি একটি রহস্যময় মজার সিরিজ। যারা ভাইকিং জাতিদের নিয়ে জানতে আগ্রহি তারা অবশ্যই নিচের ভিডিওটি দেখবেন। ধারনা করা হয় কলোম্বাসের ৫০০ বছর আগেই ভাইকিংরা আমেরিকা আবিস্কার করে।

ফিবোনাক্কি সিরিজের আবিস্কারক

ত্রয়োদশ শতাব্দীর বিখ্যাত গণিতবিদ লিওনার্দো দ্য পিসা (Leonardo Da Pisa) এই রাশিমালার আবিস্কারক। তারমতে সৃষ্টির মূল রহস্য এই রাশিমালায় রয়েছে। তার জন্ম ইতালির পিসায়। তিনিই প্রথম ইউরোপীয়দের এই সংখ্যার সাথে পরচয় করিয়ে দেন।

যদিও ভারতীয় গণিত শাস্ত্রে আরও আগেই এই সংখ্যার উল্লেখ পাওয়া যায় তথাপিও লিওনার্দো দ্য পিসার ডাক নাম (ফিবোনাচ্চি) নামেই এই সিরিজ বহুল পরিচিত।

১২০৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি খরগোসের প্রজননের প্রথম এই সিরিজের প্রভাব লক্ষ্য করেন। দুইটি খরগোস থেকে যদি প্রজনন হয় আর একটি খরগোসও না মরে, তাহলে ১০ মাস পর ৫৫টা খরগোস হয় আর ১১ মাস পর ৮৯টা এবং ১২ মাস পর হবে ১৪৪ টা।

আরও পড়ুনঃ পিথাগোরাসে কাপ-পিথাগোরাসের মজার এক আবিস্কার।

ফিবোনাক্কি সিরিজ এর বৈশিষ্ট্য

  • যেকোন সংখ্যা তার আগের দুইটি রাশির যোগফলের সমান।
  • যেকোন সংখ্যা তার পরবর্তী দুইটি সংখ্যার বিয়োগ ফলের সমান।
  • এই সিরিজের যেকোন ৪টি পরপর সংখ্যা নিলে ১মও ৪র্থ সংখ্যার যোগফল থেকে ২য় ও ৩য় সংখ্যার যোগফল বিয়োগ দিলে সবসময় ওই চারটি সংখ্যার প্রথমটি পাওয়া যাবে।
  • এই শ্রেণীর যেকোন ৫টি সংখ্যা নেওয়া হলে ১মও ৪র্থ সংখ্যার গুনফল থেকে ২য় ও ৩য় সংখ্যার গুণফল বিয়োগ দিলে সবসময় বিয়োগফল ১ বা -১ হবে।
  •  ফিবোনাক্কি সংখ্যাকে তার আগের সংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে গোল্ডেন রেশিও বা ১.৬১৮ পাওয়া যায়। ০, ১, ২ বাদে।

ফিবোনাক্কি সিরিজ

প্রকৃতিতে ফিবোনাক্কি সিরিজ

আমাদের চারপাশের প্রকৃতিতে ফিবোনাক্কি সিরিজের অসংখ্য ব্যবহার রয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হলঃ

  • পাখিরা আকাশে ঝাক বেধে উড়ার সময় ফিবোনাক্কি সিরিজ ফলো করে উড়ে।
  • সূর্যমূখী ফুলের পাপড়ির বিন্যাশ ফিবোনাক্কি সিরিজ অনুযায়ী বিন্যাস হয়।
  • শামুকের প্যাঁচেও ফিবোনাক্কি সিরিজ দেখা যায়।
  • পাইন গাছের মোচায় ফিবোনাক্কি সিরিজ লক্ষ করা যায়।
  • মৌমাছির পরিবার তন্ত্রে ফিবোনাক্কির ব্যবহার রয়েছে।
  • ফুলকপির বিন্যাস এই সিরিজ অনুযায়ী হয়।
  • বিভিন্ন গাছে শাখা-প্রশাখার বিন্যাসে ফিবোনাক্কির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
  • গোলাপ সহ বেশিরভাগ ফুলের পাপড়ি সংখ্যা ফিবোনাক্কি সংখ্যক হয়ে থাকে।
  • মহাকাশের ছায়াপথেও ফিবোনাক্কির ছাপ দেখা যায়।
  • বিভিন্ন কিটের দেহ ভঙ্গিমায় এই সিরিজের প্রভাব দেখা যায়।

ফিবোনাক্কি সিরিজ

মিউজিকে ফিবোনাক্কি সিরিজ

বড় বড় ব্যন্ডদলের কিছু মিউজিকে ফিবোনাক্কির ছন্দ ব্যবহার করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষনে ফিবোনাক্কি সংখ্যার ব্যবহার

বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষনে ফিবোনাক্কি সংখ্যার ব্যবহার হয়ে আসছে অনেক আগে থেকেই। বিশেষ করে স্টক মার্কেটের তথ্য বিশ্লেষনে এই সিরিজ খুবই কাজের যা Fibonacci Retracement নামে সুপরিচিত। যারা ফরেক্স মার্কেটের সাথে সুপরিচিত তারা এই টুলের ব্যবহার করে ক্যান্ডেলের রিট্রেস্মেন্ট হিসাব করে থাকেন।

প্রকৃতির অনেক কিছুর মাঝেই ফিবোনাক্কি সিরিজ এর উপস্থিতি পাওয়া যায় আর তাই অনেকেই ধারনা করে থাকেন মহাবিশ্বের সৃষ্টিতে এই সিরিজের উপস্থিতি থাকলেও অবাক হবার কিছু নেই যদিও তা এখনও অনাবিষ্কৃত।

ধন্যবাদ সবাইকে।

Frequently Asked Question (FAQ)

 

১. ফিবোনাক্কি সংখ্যা কাকে বলে?

উত্তরঃ পরপর দুইটি সংখ্যার যোগফল পরবর্তী সংখ্যার সমান হলে এ ধরনের সংখ্যাকে ফিবোনাক্কি সংখ্যা বলা হয়। যেমনঃ ০, ১, ১, ২, ৩, ৫, ৮, ১৩, ২১, ৩৪… … … … … … … …ইত্যাদি।

২. ফিবোনাক্কি সংখ্যা কে কবে আবিস্কার করেন?

উত্তরঃ ত্রয়োদশ শতাব্দীর বিখ্যাত গণিতবিদ লিওনার্দো দ্য পিসা (Leonardo Da Pisa) এই রাশিমালার আবিস্কারক। ১২০৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি এটি আবিস্কার করেন।

 

Previous articleআমাদের সময় ঈদে বাড়ি যাবার গল্প
Next articleইংরেজি নতুন বছরের শুভেচ্ছা সবাইকে।
যে ব্যর্থ সে অজুহাত দেখায়, যে সফল সে গল্প শোনায়। আমি অজুহাত নয় গল্প শোনাতে ভালবাসি। আসুন কিছু গল্প শুনি, নিজের গল্প অন্যকে শুনাই।