টিকটিকি
টিকটিকি

টিকটিকি দেখেনি এমন মানুষ বিরল আর টিকটিকির ডাক নিয়ে বেশ কিছু কুসংস্কারও আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে। টিকটিকি নিয়ে আরেকটি মজার যে ব্যাপার আছে তা হল টিকটিকির লেজ খসে পড়া এবং নতুন লেজ গজানো। কমবেশি আমরা সবাই টিকটিকির এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছি। কিন্তু কখনও কি ভেবে দেখছি কেন টিকটিকির লেজ খসে পড়ার ঘটনা ঘটে? আসুন আজ জেনে নেই-

টিকটিকির লেজ কখন খসে পড়ে? দেয়াল পরিস্কার করার সময় হঠাত যদি টিকটিকিকে আঘাত করে থাকেন তাহলে হয়ত টিকটিকির লেজ ফেলে পালানোর ঘটনা আপনার সামনেই ঘটে থাকতে পারে। কিংবা টিকটিকির প্রধান শত্রু পাখি কিংবা বিড়াল যদি টিকিটিকিকে আক্রমন করে সেক্ষেত্রেও টিকটিকিকে লেজ গুটিয়ে না পালিয়ে লেজ ফেলে পালাতে দেখা যায়। বিজ্ঞানীরা এ নিয়ে বিস্তর গবেষনা করেছেন। গবেষনা করে যা পেলেন তা হল টিকটিকির শরীরের অন্যান্য অংগের চেয়ে লেজটা অনেক দুর্বল। তাই বলে এত দুর্বল নয় যে তা খসে পড়ে যাবে। লেজ তখনই খসে পড়ে যখন লেজের ভেতরে এক বিশেষ রাসায়নিক পদার্থ উৎপন্ন হয়। আরও মজার ব্যাপার হল লেজ খসে পড়ার পরে লেজটা তিড়িং-বিড়িং করে লাফাতে থাকে।

তাহলে ব্যাপারটা দাঁড়ালো, টিকটিকি বিপদে কিংবা আক্রমণের শিকার হলে টিকটিকি নিজের লেজ খসায় এবং আক্রমণকারী লেজ খসা দেখে কিছুটা বিভ্রান্ত হয় এবং কিছুক্ষন তিড়িং-বিড়িং করা লেজের দিকে দৃষ্টি দেয়, এই সুজুগে টিকটিকি সটকে পরে। এটা টিকটিকির আত্মরক্ষার একটি কৌশল। ( বিমানের ব্লাক বক্স নিয়ে আমার আরও একটি ব্লগ পড়ুন)

কিন্তু লেজ খসে পড়াই শেষ নয়, টিকটিকির লেজ তার শরীরের একটি অতিব গুরুত্বপূর্ণ অংগ। আমরা অনেকেই জানিনা, টিকটিকি লেজ নাড়িয়ে একে অপরের সাথে কথা বলে। তাই লেজ না থাকা মানে টিকটিকি বোবা হয়ে যাওয়া। লেজ ছাড়া কি তার চলে? এছাড়া টিকটিকির শারীরিক ভারসাম্য বজার রাখা এবং লাফ দেয়ার কাজেও এর লেজের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই দ্রুতই টিকটিকির লেজ আবার গজিয়ে যায়।তবে সব টিকটিকি তার লেজ ফেরত পায়না। মজার ব্যাপার হল বিপদ কেটে গেলে টিকটিকি আবার তার লেজের কাছে ফেরত আসে এবং নিজের লেজটি নিজেই খেয়ে ফেলে, এতে তার শরীর কিছুটা পুষ্টি পায়। এমনকি কোন কোন টিকটিকি একবার নয় ছয়- ছয়বার পর্যন্ত তার লেজ গজাতে পারে। কিন্তু কিভাবে?

বিজ্ঞানীরা গবেষনাগারে একটি লেপার্ড গেকোর লেজ খসিয়ে দেন এবং তারা দেখতে পান গেকোর স্নায়ুরজ্জুতে রেডিয়াল গ্লিয়া নামক এক বিশেষ স্টেম কোষ সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং দ্রুত সংখ্যায় বৃদ্ধি পায় এবং স্নায়ুরজ্জু মেরামত হয়ে যায়। শুধু যে লেজের স্নায়ু তন্ত্রই এরা মেরামত করতে পারে তাই নয় বরং দেহের অন্যান্য অংশ আঘাতপ্রাপ্ত হলে টিকটিকি তা মেরামত করতে পারে।

এঘটনা থেকে বিজ্ঞানীরা খুবই উৎসাহিত বোধ করছেন। কারণ সব মেরুদন্ডিয় প্রাণীরই স্নায়ুরজ্জুতে রেডিয়াল গ্লিয়া নামক এক বিশেষ স্টেম কোষ আছে যা প্রানির প্রাথমিক স্নায়ুতন্ত্র গঠন করে এবং পরে নিস্ক্রিয় হয়ে যায়। মজার ব্যাপার তাই না?

আসুন টিকটিকি নিয়ে আরও কিছু জেনে নেই-

টিকটিকির বৈজ্ঞানিক নাম Hemidactylus frenatus, সরীসৃপ জাতীয় মেরুদন্ডি প্রানি, দেখতে কুমিরের ছোট ভাই মনে হলেও এরা মোটেও নিকট আত্মীয় নয়। পায়ের আঙ্গুলের আঠালো পাতার ( কোন তরল নেই, সূক্ষ খাজকাটা ) মাধ্যমে এরা আপনার ঘরের দেয়ালে কিংবা ছাদে বেশ আরামছে চলাচল করতে পারে।  বেশিরভাগ টিকটিকিই নিশাচর, দিনের বেলা লুকিয়ে থাকে, রাতে এরা খাবারের সন্ধানে বের হয়। বাসাবাড়ির টিকটিকি ৩ থেকে ৬ ইঞ্চি লম্বা, এদের গড় আয়ু প্রায় ৫ বছর। এই ছোট ছোট টিকটিকিগুলো মোটেই বিষাক্ত নয়। সাধারনত পোকামাকড়, মাকড়সা, তেলাপোকা, মৌমাছি, প্রজাপতি ইত্যাদি এদের খাবার। মোটকথা টিকটিকি আপনার ঘরকে পোকামাকড় মুক্ত রাখতে সহায়তা করে থাকে।

ধন্যবাদ।

Previous articleবিদ্যুৎ বিল হিসাব কিভাবে তৈরি হচ্ছে ২০২২ সালে তা জেনে রাখুন।
Next articleক্যাপসুলের আবরন কিসের তৈরি? মানবদেহে কিভাবে কাজ করে?
যে ব্যর্থ সে অজুহাত দেখায়, যে সফল সে গল্প শোনায়। আমি অজুহাত নয় গল্প শোনাতে ভালবাসি। আসুন কিছু গল্প শুনি, নিজের গল্প অন্যকে শুনাই।