টাকা না থাকার কষ্ট

কথায় যতই বলা হোক না কেন- অর্থই অনর্থের মূল আসলে টাকা ছাড়া জীবনের কোন অর্থই হয়না। আধুনিক যুগে জীবনে শুধু ভাল ভাবে বেঁচে থাকার জন্য নয় নূন্যতম উপায়ে জীবন ধারনের জন্য হলেও আপনার টাকা প্রয়োজন। আপনার যদি পকেটে টাকা না থাকে তাহলেই শুধুমাত্র আপনি বুঝতে পারবেন টাকা না থাকার কষ্ট। এছাড়া আসলে আপনাকে বুঝানো একটু কঠিন বৈকি। আসুন আজকের এ লেখায় আমরা টাকা না থাকার কষ্ট নিয়ে আলোচনা করি। এতে হয়ত আপনি টাকা না থাকার কষ্ট সামান্য হলেও উপলব্ধি  করতে পারবেন।

টাকা নিয়ে অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি অনেক উক্তি করেছেন, তবে এর মাঝে বিল গেটসের করা উক্তিটি আমার কাছে সবচেয়ে ভাল লেগেছে। বিল গেটস বলেছেন, ” যখন তোমার অনেক টাকা থাকবে তখন তুমি ভুলে যাবে সবাইকে আর যখন তোমার টাকা থাকবেনা তখন সবাই ভুলে যাবে তুমি কে?” অনেক বাস্তব সম্মত কথা।

এছাড়া জনৈক ব্যক্তি বলেছেন আরেকটু দামি কথা- “মানুষের প্রিয় হতে হলে অর্থনৈতিক যোগ্যতা লাগে, নয়ত দীর্ঘদিনের জন্য কারও প্রিয় হতে পারবেন না।”

আরেকজন বিজ্ঞ লোক বলেছেন, “টাকার বোঝা সবাই বহন করতে পারেনা, যারা পারে টাকা শুধু তাদের কাছেই আসে।”

টাকা কেন প্রয়োজন?

যুগ যুগ ধরে পৃথিবীর জ্ঞানী ব্যক্তিরা যতই টাকা বা অর্থকে তাচ্ছিল্য করুক না কেন, টাকার মূল্য তাতে কিছুটা কমেনি। বরং দিনকে দিন এর চাহিদা বেড়েই চলেছে। টাকা মানুষকে আগের চেয়ে অনেক বেশি আকৃষ্ট করছে দিনের পর দিন। কিন্তু কেন?

আসলে এর মূল কারণ কি? অনেক ভেবে দেখলাম টাকার এই চাহিদার মূল কারণ সামাজিকভাবে মানুষের কিছু আচরণগত পরিবর্তন, যেকারনে মানুষের টাকার প্রতি মোহ কমেনি বরং বেড়েছে, গোটা পৃথিবী যেন টাকার হাতে বন্দি হয়ে গেছে- এর আসলে শেষ কোথায়?

একজন মানুষ কি টাকা ছাড়া বেঁচে বর্তে থাকতে পারে? না পারেনা। শুধুমাত্র খেয়েপরে জীবন ধারণ করতে চাইলেও একজন মানুষের জীবনে বেশ অনেক টাকার প্রয়োজন আছে। সামান্য খাবার, পোষাক আর মাথাগোঁজার একটুখানি ঠাই এর জন্য হলেও তার টাকা লাগবে।

তাই বলা যায়- টাকা মানুষের প্রয়োজন। শুধু প্রয়োজন বললে বরং ভুলই বলা হয়- টাকা মানুষের জীবনে অনেক বড় এক প্রয়োজন। টাকা না থাকার কষ্ট তাই কম নয় মোটেই।

মানুষের জীবনে কত টাকার প্রয়োজন?

আসলে একজন মানুষের জীবনে কত টাকার প্রয়োজন? এটাই আসলে একটি কোটি টাকার প্রশ্ন। আপনি নিজেই একটু ভাবুন। কত টাকা হলে আপনি খুশি?

এই প্রশ্নের উত্তর আসলেই আপেক্ষিক। এই প্রশ্নের উত্তর আসলে নির্ভর করে এখন আপনার কাছে কত টাকা আছে তার উপর। এর আসলে সঠিক কোন উত্তর হয়না। কেও এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারবেনা।

আপনার জীবনে আসলে যতটুকু টাকা নাহলেই নয় সেটুকু অর্জন করার পর টাকা উপার্জন করাটা অনেকটা নেশার মত হয়ে যায়, আপনার চাহিদা বাড়তেই থাকে। টাকার চাহিদার কোন শেষ নেই। তাই একজন মানুষের জীবনে আসলে কত টাকার প্রয়োজন তার কোন উত্তর নেই। আপনার জানা থাকলে নিচে কমেন্ট বক্সে জানিয়ে যেতে ভুলবেন না।

টাকা না থাকলে কি হয়

আপনার যদি টাকা না থাকে তাহলে কি হয়? সবচেয়ে বেশি ভয়ংকর যেটা হতে পারে তা হল- না খেয়ে মৃত্যু। আপনি মারা যাবেন, আপনার স্ত্রি-পুত্র-কন্যা-বাবা-মা না খেয়ে মারা যাবে। এর চেয়ে ভয়ংকর বোধহয় আর কিছু হতে পারেনা। টাকা না থাকার কষ্টের মধ্যে এটার সবচেয়ে বড় কষ্ট।

আর আপনার যদি জীবন ধারনের জন্য সামান্য টাকা থাকে? খেয়ে পরে বেঁচে থাকার মত? তাহলে তো আপনি না খেয়ে মারা যাচ্ছেন না। এক্ষেত্রে যা হয় তাহলো আপনি সামাজিকভাবে মর্যাদা পাবেন না। মানুষ আপনাকে দাম দিবেনা। কারণ আমাদের পৃথিবীর সামাজিক মর্যাদা নির্ভর করে কার কত টাকা আছে তার উপর। এও আরেক কষ্ট বৈকি।

পৃথিবীতে একটা সময় ছিল, আপনার টাকা না থেকে যদি জ্ঞান থাকত তাহলেও মানুষ মানুষকে সম্মান দিত। আজকালের দুনিয়ায় টাকা ছাড়া কারও কোন দাম নেই। এখনকার দিনে মানুষের মর্যাদা নির্ভর করে তার কত টাকা আছে তাই দিয়ে- এটাই বাস্তব সত্য কথা।

টাকা হলে মানুষ কি করে?

আচ্ছা, মানুষের টাকা হলে সে কি করে? আগেকার দিনে মানুষের বেশি টাকা হলে বেশিরভাগ মানুষ সমাজসেবা করত। যার অনেক টাকা ছিল সে জনহিতকর কাজে নিজেকে নিয়োজিত করত। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, হাসপাতাল করত। নলকূপ স্থাপন করত- যাতে সাধারণ মানুষের উপকার হয়।

এখনকার দিনেও মানুষ তাই করে কিন্তু তাদের উদ্দ্যেশ্য থাকে ভিন্ন। এখনও মানুষ টাকা হলে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, হাসপাতাল তৈরি করে। কিন্তু তাদের উদ্দ্যেশ্য থাকে ব্যবসা। আরও টাকা বাড়ানো।

মানুষ আরেকটি কাজ করে, তাহলো টাকা হলে মানুষ টাকা জমায়। ভবিষ্যৎ জীবনকে আরও সুরিক্ষিত করার জন্য। মানুষ এখানেই টাকার হাতে বন্দি। তারা সবসময়ই নিজেকে এবং তার পরিবারকে অরক্ষিত মনে করে। তাই সে ভবিষ্যতের জন্য টাকা জমায়।

বেশি টাকা উপার্জন কি দোষের?

বেশি বেশি টাকা উপার্জন করা কি দোষের কিছু? অনেকেই হয়ত বলবেন দোষের। আমি কিন্তু এতে দোষের কিছু দেখিনা। এই জগতে অনেক কিছু আছে যা আপনি টাকা না থাকলে করতে পারবেন না।

এই যেমন ধরেন- আপনি যখনই বেশি টাকা উপার্জন করতে চাইবেন, আপনাকে অবশ্যই আপনার সাথে আরও লোকজন সহকারে কাজ করতে হবে। আপনি তাদের রুটি-রুজির সংস্থান করে দিচ্ছেন, আপনার উপর অনেকগুলো পরিবার নির্ভরশীল হয়ে পরে।

আপনি হয়ত টাকা উপার্জন করছেন, তাতে কি? আপনি আরও অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। এটা খারাপ কি? বরং ভালই।

আবার ধরেন, আপনার গরীব আত্মীয়-স্বজনদের সাহায্য করতেও টাকা লাগে। আপনি টাকা উপার্জন করে তাদের সাহায্য সহযোগীতা করতে পারছেন। আপনি টাকা পয়সা ইনকাম না করলে কিভাবে এটা সম্ভব?

তাই আপনি যদি প্রয়োজনের চেয়ে বেশি টাকা উপার্জন করতে পারেন এতে আমি কিছু দোষের দেখিনা। তবে, উপার্জন কিভাবে করছেন সেটি অবশ্যই দেখার বিষয়।

অন্যায় ভাবে, অসৎ উপায়ে টাকা উপার্জন করে ধনী হয়ে কারও কর্মসংস্থান কিংবা সাহায্য করাকে আমি মোটেই উৎসাহ দিচ্ছিনা। এর চেয়ে টাকা না থাকার কষ্ট পেয়ে মরে যাওয়াও অনেক সুখের।

কিভাবে টাকা উপার্জন করা যায়?

কথাটি কে বলেছেন তা মনে নেই, হয়ত কোন ধনী ব্যক্তির উক্তি হবে- “গরীব হয়ে জন্মানো তোমার দোষ নয়, কিন্তু গরীব হয়ে মৃত্যুবরন করা তোমার দোষ”।

কথাটির পক্ষে বিপক্ষে অনেক যুক্তি দেয়াই যায়। তবে আমি কিন্তু কথাটির পক্ষেই আছি ভাই। কারও জন্মের উপর কারও হাত নেই। কেও গরীব ঘরে জন্মাতেই পারে।

কিন্তু তার মৃত্যু পর্যন্ত সে সময় পাচ্ছে- টাকা উপার্জনের কিংবা বলা যায় ধনী হবার। গরীব হয়ে মৃত্যুবরণ করাতে দোষ না থাকলেও তাকে দায়ি করা যাতেই পারে।

জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কিভাবে সে টাকা উপার্জন করবে এটা তার নিজস্ব ব্যাপার। তাকে সময় এবং সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে হবে। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জীবনকে কাজে লাগাতে হবে, জীবনে পরিশ্রমী হতে হবে।

ছেঁড়া কাথায় শুয়ে শুধু লাখ টাকার স্বপ্ন দেখলে হবেনা- লক্ষ্য স্থির করে এগিয়ে যেতে হবে। হতাসায় বসে থাকা যাবেনা। সব বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।

পৃথিবী অনেক বড় জায়গা। ব্যবসার সুযোগ রয়েছে। এখন পর্যন্ত আমি এমন কাওকে দেখিনি যে পরিশ্রম ছাড়াই টাকা ইনকাম করে বড়লোক হয়েছে। তবে চুরি চামারি করে বড়লোক হতে এই জীবনে কম দেখিনি। ঐ পথে যাবেননা আশা করি। এর চেয়ে টাকা না থাকার কষ্ট অনেক ভাল।

অল্প টাকায় কি ব্যবসা করা যায়? 

আমাদের দেশে আমরা যারা আছি তাদের মাথায় ঢুকে গেছে চাকরি। ভাল মত পড়াশোনা করে ভাল চাকরি বাকরি করে বড়লোক হবার স্বপ্নে সবাই বিভোর। আমি আমার জীবনে চাকরি করে বড়লোক হতে কাওকে দেখিনি। হ্যা, চাকরি করে তারা হয়ত একটি সুরক্ষিত জীবন যাপন করেন- তারা মোটেই বড়লোক নয়- তাদেরকে স্বচ্ছল বলা যায় বড়জোড়। এর চেয়ে বেশি কিছু নয়।

যারা পড়শোনায় ভাল, তাদের আসলেই পড়াশোনায় থাকাই ভাল। তবে, চাকরির উদ্দ্যশ্যে নয়। তারা পড়াশোনায় থাকবে গবেষণার কাজে, তারা রিসার্চ করবে। তারা পৃথিবীকে কিভাবে আরও সুন্দরভাবে সাজানো যায় সেই কাজে ব্যস্ত থাকবে।

আর যারা পড়াশোনায় কাঁচা কিংবা যারা পড়াশোনায় দুর্বল তারা আসলে পড়শোনায় থাকলে আমার কাছে তাদের পড়াশোনা আসলে সময়ের অপচয় ছাড়া আর কিছুই মনে হয়না। এর চেয়ে এই স্ময় তারা অন্য কোথাও দিতে পারে।

তাহলে কি আমি তাদেরকে পড়াশোনায় অনুৎসাহিত করছি মোটেই না। একটা লেভেল পর্যন্ত লেখাপড়া আসলে সবারই করা দরকার। আমাদের দেশের এডুকেশন সিস্টেমে ইন্টার পর্যন্ত পড়লেই চলে।

ইন্টার পাশ করার পর- উচ্চ শিক্ষা শুধুমাত্র তাদেরই করা উচিত যারা পড়াশোনায় ভাল। কিম্বা জীবনমুখী কোন কোর্স করে অথবা যে যেদিকে উৎসাহ পায় সেই লাইনে চলে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। অযথা সময় নষ্ট করার মানেই হয়না।

টাকা উপার্জনে নেমে যান – টাকা না থাকার কষ্ট থেকে বাঁচার চেষ্টা করুন।

ধর্মের সাথে টাকার কি সংঘর্ষ আছে?

ইসলাম ধর্মে আছে “দুনিয়াতে যার সম্পদ কম, আখিরাতে তার হিসাব সহজ হবে।” এই কথার মাধ্যমে আপনি টাকা উপার্জনকে অনুৎসাহিত করতে পারেননা। অন্তত আমার মাথায় আসেনা। যদিও আমি ফতোয়া দেয়ার মত কেই নই।

হিসাব সবাইকে দিতে হবে। দুনিয়াতে সম্পদ কম হলে আখিরাতে আপনার হিসাব কম হবে তা অবশ্যই ঠিক। তার মানে এই না যে আপনি সম্পদ অর্জন করতে পারবেননা।

নবী করিম (সাঃ) এবং তার সাহাবাদের মাঝে কি ধনী ব্যক্তি ছিলেননা। অবশ্যই ছিলেন। রাসুলুল্লাহ (আঃ) এর প্রথম স্ত্রী ধনী ব্যবসায়ী ছিলেন। হযরত উমর (রাঃ) ধনী ছিলেন।

তাই আমি মনে করি, ধনী হবার সাথে ইসলাম ধর্মের কোন সংঘর্ষ নেই। বরং আপনি ধনী হলে ইসলামের কাজে আরও বেশী নিজেকে নিয়োজিত করতে পারবেন। মানুষের উপকার করতে পারবেন।

টাকা না থাকার কষ্ট

টাকা না থাকার কষ্ট আসলে কি বা কতটুকু সেবিষয়ে আমি বলছিনা। বলে বুঝানোর ক্ষমতা কলমের কিংবা আমার ল্যাপটপের কী বোর্ডের নেই। অনাহারে-অর্ধাহারে থাকার কষ্টের ফিলিংস কখনই আমার ছিলনা, টাকার অভাবে পরীক্ষার ফি না দিতে পারা কিংবা স্কুলের বেতন দিতে না পারার মত অসহায় অবস্থায়ও আমি কখনও পরি নাই।

টাকার অভাবে মেয়ের বিয়ে না দিতে পারা, ছেলেমেয়েকে ইচ্ছা থাকা স্বত্তেও ইদের সময় নতুন কাপড় কিনতে না পারার কষ্ট আমি কখনও পাইনি। তাই টাকা না থাকার কষ্ট কেমন সেটা আমি এখানে আর লিখতে চাচ্ছিনা।

তাইবলে, টাকা না থাকার কষ্ট একদমই যে আমি পাইনি তা নয়। যেটুকু কষ্ট আমি পেয়েছি- সেটা আসলে উপরের কষ্ট গুলোর বিচারে তেমন কিছুই নয়। বললে, অনেকে বিলাসিতাও ভেবে বসতে পারেন। তাই থাকুক সেসব কথা।

টাকা না থাকার কষ্ট থেক মুক্তি

এখানে আমি এটুকু না বলে পারছি না- আসে পাশের কেও টাকা না থাকার কষ্টে থাকলে আমাদের সবারই উচিত সাধ্যমত সাহায্য করে তাকে সেই কষ্ট থেকে মুক্তি দেবার চেষ্টা করা।

অনেক সময়ই আমাদের অনেকের আসে পাশে অনেক মানুষ থাকে যারা অসহায়, যারা টাকা না থাক্র কষ্টে আছেন। মানুষ হিসেবে আমাদের সবারই উচিত তার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে সেই কষ্ট থেকে মুক্তি দেয়া। দশজন মিলে একজনকে সাহায্য করলে এটা কোন ব্যবপারই নয়।

আসুন, আমরা সবাই সবার জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই- টাকা না থাকার কষ্ট থেকে মুক্তি দেই। ধন্যবাদ সব্বাইকে।

Previous articleইউটিউব থেকে আয় করার সহজ উপায়
Next articleবিট কয়েন একাউন্ট খুলুন এবং বিট কয়েন নিরাপদে রাখুন।
Mamun
যে ব্যর্থ সে অজুহাত দেখায়, যে সফল সে গল্প শোনায়। আমি অজুহাত নয় গল্প শোনাতে ভালবাসি। আসুন কিছু গল্প শুনি, নিজের গল্প অন্যকে শুনাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here