চুক্তিপত্র লেখার নিয়ম

আজকাল আমাদের দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজে চুক্তিপত্র লিখতে হয়, সেটা হতে পারে ব্যবসায়িক কিংবা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে। তাছাড়া যেকোন লেনদেনের কাজে লিখিত চুক্তিপত্র আমাদের দৈনন্দিন আমাদের জীবনকে আরও সহজ করে দেয়। যেকোন সম্পদ ক্রয়-বিক্রয় কিংবা ভাড়া অথবা আর্থিক যেকোন লেনদেনের কাজে চুক্তিপত্র করা থাকলে উভয়পক্ষ দায়বদ্ধ থাকেন, ভবিষ্যতে তারা কেও কথার বরখেলাফ করতে পারেননা, চুক্তিপত্রের বরখেলাফ হলে কিংবা প্রতারনার শিকার হলে যেকোন পক্ষ আইনের সহায়তা নিতে পারেন। চুক্তিপত্র লেখার নিয়ম জানাটা তাই খুবই জরুরী।

লেনদেনের পরবর্তী সময়ে যেকোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে উপযুক্ত সাক্ষির উপস্থিতিতে চুক্তিপত্র সম্পাদনের কোন বিকল্প নেই।

আমাদের আজকের ব্লগে আপনি জানতে পারবেন চুক্তিপত্র কি, চুক্তিপত্র কেন প্রয়োজন, চুক্তিপত্র লেখার নিয়ম ইত্যাদি নানা বিষয়। তাহলে আসুন দেরি না করে শুরু করা যাক।

চুক্তিপত্র কি

কোন বিশেষ কারনে নির্দিষ্ট উদ্দ্যেশ্য নিয়ে নানাবিধ শর্তাবলীর উল্লেখপূর্বক দুই বা ততোধিক ব্যক্তির সম্মতিতে কোন কাজের লিখিত রুপের নামই চুক্তিপত্র।

চুক্তি এবং চুক্তিপত্র নিয়ে ১৮৭২ সালে আইন প্রণয়ন করা হয় এবং সেই আইনে বলা হয়, একজন সুস্থ, স্বাভাবিক মস্তিষ্কের অধিকারী ব্যক্তি এবং অবশ্যই আইনের দৃষ্টিতে সাবালক হতে হবে শর্তে আরোপিত হয়ে যদি অন্য কোন একই শর্তে আরোপিত ব্যক্তির সঙ্গে কোনো বস্তু অর্থের বিনিময়ে কিংবা কোন নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বস্তুর বিনিময়ে আদান প্রদানের জন্য লিখিতভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোন নতুন উদ্যোগের শামিল হয়, সেই পুরা প্রক্রিয়াকে চুক্তি বলে।

আর চুক্তিবদ্ধ হবার যাবতীয় প্রক্রিয়ার লিখিত্রুপকেই বলা হয় চুক্তিপত্র।

চুক্তিপত্র ব্যবসায়িক এবং ব্যক্তিগত কাজের জন্য হতে পারে। ব্যবসায়িক কাজে অংশীদারি চুক্তিপত্র হতে পারে, আবার ব্যক্তিগত কাজে টাকা লেনদেন কিংবা কোন কিছু ভাড়া বা ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য হতে পারে। আমাদের আজকের ব্লগে আমরা ব্যক্তিগত লেনদেন কিংবা ভাড়া ও ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তিপত্র নিয়ে আলোচনা করব। তবে, মনে রাখবেন চুক্তিপত্র কার্যকর হবার জন্য কিছু সাধারণ শর্ত রয়েছে, নিচে দেয়া হল।

  • চুক্তিপত্র সম্পাদনকারী ব্যক্তিকে অবশ্যই আইনের দৃষ্টিতে সাবালক, সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন ব্যক্তি হতে হবে।
  • চুক্তিপত্রে একজন অপরজনকে অবশ্যই প্রস্তাব করবে।
  • অপরজনকে অবশ্যই চুক্তির প্রস্তাব গ্রহন করে কিছু প্রতিদান করতে হবে।
  • প্রতিদান ছাড়া কোন চুক্তিই কার্যকর হবেনা।

চুক্তিপত্র কেন প্রয়োজন

মানুষ সামাজিক প্রাণী আর মানুষ মাত্রই নানা প্রকার লেনদেনের সাথে জড়িত। তাই এসকল লেনদেনের জন্য চুক্তিপত্র থাকাটা খুবই জরুরী। যেকোন লেনদেনে চুক্তিপত্র করা থাকলে ভবিষ্যতে যেকোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়।

চুক্তিপত্র করা থাকলে উভয় পক্ষ ভবিষ্যতে নির্দিষ্ট শর্তাবলী মেনে চলতে দায়বদ্ধ থাকেন। তাই, যেকোন পক্ষই শর্তাবলী মেনে চলতে বাধ্য থাকেন।

উভয়পক্ষের সম্মতিতে এবং সাক্ষির উপস্থিতিতে চুক্তিপত্র করা হয় তাই চুক্তিপত্রকারি সামাজিকভাবেও দায়বদ্ধ থাকেন।

সর্বনিম্ন ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে চুক্তিপত্র করা হয়, তাই যেকোন পক্ষই চুক্তিপত্রের শর্তভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেন।

চুক্তিপত্রের শর্তাবলী মানার মাধ্যমে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও মজবুত হয়, ব্যবসা-বানিজ্যের প্রসার ঘটে।

স্বয়ং আল্লাহ-তায়ালা পবিত্র কুরআনে সাক্ষীর উপস্থিতিতে চুক্তিপত্র করার নির্দেশ দিয়েছেন। চুক্তিপত্র লেখার নিয়ম মেনেই চুক্তিপত্র লেখাটি দরকর।

চুক্তিপত্র লেখার নিয়ম

চুক্তিপত্র লেখার কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন রয়েছে। নিয়ম না মেনে যেভাবে ইচ্ছেমত যেভাবে খুশি সেভাবে চুক্তিপত্র লিখলে তা কার্যকর হবেনা। নিচে চুক্তিপত্র লেখার সাধারণ নিয়মাবলি উল্লেখ করা হল।

১. তারিখঃ সবার প্রথমে চুক্তিপত্রে চুক্তিপত্র সম্পাদন হবার তারিখ অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে। তা নাহলে ভবিষ্যতে সমস্যায় পরতে পারেন।

২.পক্ষঃ যে দুই পক্ষের মাঝে চুক্তিপত্র সম্পাদন করা হবে তাদের পূর্ণ নাম, পিতার নাম এবং ঠিকানা উল্লেখ করতে হবে। সুবিধার জন্য উভয় পক্ষের এনআইডি নাম্বার এবং মোবাইল নম্বর যুক্ত করতে পারেন। এতে ব্যক্তির পরিচয় আরও সঠিকভাবে দেয়া হয়। দুইজনের একজনকে প্রথম পক্ষ এবং আরেকজনকে দ্বিতীয় পক্ষ নামে পরিচয় দেয়া হয়।

৩.চুক্তিপত্রের নামঃ কি কাজের বা কি উদ্দ্যেশ্যে চুক্তিপত্র সংগঠিত হচ্ছে তার নাম চুক্তিপত্রে পরিস্কার করে উল্লেখ করতে হবে।

৪. শর্তাবলীঃ উভয়পক্ষ কি কি শর্তে চুক্তিপত্রে আবদ্ধ হচ্ছেন, তা পরিস্কারভাবে লিপিবদ্ধ করতে হবে। চুক্তির শর্তে কোন প্রকার গ্যাপ বা ফাক রাখা যাবেনা। তাহলে, ভবিষ্যতে আইনগতভাবে সমস্যায় পরে যেতে পারেন।

৫. ভূমিকাঃ চুক্তিকালিন সময়ে কোন পক্ষের কি ভূমিকা তার পরিস্কার উল্লেখ থাকতে হবে।

৬. চুক্তির মেয়াদকালঃ চুক্তিপত্র কতসময়ের জন্য করা হচ্ছে তার মেয়াদকাল অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে। নির্দিষ্ট সময়কাল উল্লেখ করে দেয়া না থাকলে উভয় পক্ষই ভবিষ্যতে সমস্যায় পরতে পারেন।

৭. সাক্ষী এবং স্বাক্ষরঃ চুক্তিপত্রের নিচে উভয় পক্ষের স্বাক্ষর এবং উভয় পক্ষের সাক্ষীর স্বাক্ষর দিতে হবে। সাধারণত উভয় পক্ষের মোট দুইজন করে সাক্ষী থাকে।

৮. চুক্তির অগ্রহনযোগ্যতাঃ চুক্তি করার সময় যে দুই পক্ষকে নিয়ে চুক্তি করা হচ্ছে তাদের কেও যদি নাবালক, পাগল, দেউলিয়া ব্যক্তি, সরকারি কর্মচারী, রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রী, বিদেশি রাষ্ট্রদূত, বিদেশি শত্রু ও দেশদ্রোহী ব্যক্তি প্রমাণিত হয় তাহলে চুক্তিটি বাতিল বলে গন্য হবে এবং যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

৯. চুক্তিপত্রের ভঙ্গের ফলাফলঃ কোন কারণে কোন পক্ষ চুক্তিপত্রের কোন শর্ত ভঙ্গ করলে অপর পক্ষ কি ব্যবস্থা নিতে পারবে তার উল্লেখ চুক্তিপত্রে থাকা উচিত, তাহলে উভয়পক্ষ চুক্তির শর্তের প্রতি সন্মান দেখাতে চায়।

চুক্তিগুলি গোপনীয় এবং সুরক্ষিত বিষয় দ্বারা পরিপূর্ণ, তাই নিরাপত্তার জন্য সেগুলিকে পিডিএফ তৈরি করে নেয়া ভাল৷ একবার আপনি আপনার চুক্তির জন্য PDF তৈরি করলে, এতে একটি পাসওয়ার্ড যোগ করতে theonlineconverter এ যান।

কি কি কাজে চুক্তিপত্র করা উচিত

লেনদেনের সাথে মানুষের জীবন ওতপ্রোত ভাবে জড়িত তাই যেকোন লেনদেনের কাজেই চুক্তিপত্র করে নেয়াটা একান্ত জরুরী বিষয়। সাধারণত নিম্নলিখিত কাজে চুক্তিপত্র করে নেয়া ভালঃ

  • যেকোন প্রকার আর্থিক লেনদেনের কাজে চুক্তিপত্র করে নেয়া উচিত।
  • যেকোন প্রকার সম্পদ (জমি বা বস্তু) লীজ, ক্রয়-বিক্রয় কিংবা ভাড়া দেয়ার কাজে চুক্তিপত্র করে নেয়া উচিত।
  • যেকোন প্রকার ব্যবসায়িক কাজে অংশীদারি চুক্তিপত্র করা একান্তই জরুরী।
  • বিদেশ থেকে যেকোন দ্রব্য আমদানি কিংবা বিদেশে যেকোন দ্রব্য রপ্তানি করার কাজে চুক্তিপত্র করা হয়ে থাকে।

ইসলামের দৃষ্টিতে চুক্তিপত্র

ইসলাম মানুষকে উন্নত চরিত্রের শিক্ষা দেয়, উন্নত চরিত্রের একটি অন্যতম উদাহরন হল অঙ্গিকার রক্ষা এবং প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন। পবিত্র কোরআনে অঙ্গিকার রক্ষার প্রতি গুরুত্ব প্রদান করে ইরশাদ করা হয়েছে,

‘হে ইমানদারগণ! তোমরা অঙ্গীকারগুলো পূর্ণ করবে।’ (সুরা আল-মায়িদা, আয়াত : ১)

এমনকি পবিত্র কুরআনে অমুসলিমদের সাথে সম্পাদিত চুক্তির ক্ষেত্রেও তা রক্ষা করার কথা হয়েছে। চুক্তি মোতাবেক কাজ করা ইমানের একটি অপরিহার্য অংশ। ইসলামে চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে মুসলিম-অমুসলিম, সাদা-কালো, শত্রু-মিত্র কারও সাথেই কোন ভেদাভেদ নেই।

ইসলামে চুক্তির একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হল হুদাইবিয়ার সন্ধি। ৬২৮ খ্রিষ্টাব্দে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে কুরাইশদের এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। কিন্তু কুরাইশরা যখন এই চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এই চুক্তি নাকচ করে দেন।

এছাড়াও কাফেরদের সাথেও রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর অনেক চুক্তি হয়েছিল। যেসব চুক্তি কাফেররা ভঙ্গ করেনি পবিত্র কুরআনে তাদের সাথে চুক্তি রক্ষার জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন।

এছাড়াও ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেও নানা চুক্তির ব্যাপারে ইসলামে পরিপূর্ণ বিধান রয়েছে। সুরা বাকারার ২৮২ নম্বর আয়াতে কিভাবে লেনদেনের ক্ষেত্রে কিভাবে লিখিত চুক্তিনামা করতে হবে তার পরিস্কার বর্ণনা রয়েছে। দুইজন সাক্ষীর উপস্থিতির কথাও বলে দেয়া আছে। ঋণ নেয়া-দেয়ার এবং ক্রয়-বিক্রয়ের সময় যেন অবশ্যই দুইজন সাক্ষী রেখে লিখিত চুক্তি করে নেয়া হয় এব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইসলামেও চুক্তিপত্র লেখার নিয়ম নিয়ে ভাল দিক নির্দেশনা দেয়া আছে।

চুক্তিপত্রের নমুনা

 

চুক্তিপত্র

চুক্তপত্রটি অদ্য ২৬ ডিসেম্বর, ২০২১ ইং তারিখে সম্পন্ন করা হলো। 

প্রথম পক্ষ

জনাব ইসরাফিল ইসলাম, ম্যানেজিং ডিরেক্টর, এক্সট্রিমো লিমিটেড। ঠিকানাঃ লায়লা টাওয়ার, ফ্ল্যাট- ৪/এ, গুলশান এভিনিউ, ঢাকা-১২০৫। জাতীয়তা- বাংলাদেশী, পেশা- ব্যবসা, এন,আই,ডি নম্বর-২৫৫ ৩৫০ ৯৯২৫, মোবাইল নম্বর-০১৭১৫-৫৫৮৫১৫।

দ্বিতীয় পক্ষ

জনাব কলিম উদ্বদিন, ম্যানেজিং ডিরেক্টর, পাওয়ার টেক লিমিটেড। ঠিকানাঃ মানিক ম্যানসন, বিল্ডিং-০২, ফ্ল্যাট-সি৫, বাগানবাড়ী, দক্ষিণ ভাষাণটেক, ঢাকা-১২০৬। জাতীয়তা- বাংলাদেশী, পেশা- ব্যবসা,  এন,আই,ডি নম্বর-১৬৫ ৩৫২ ৯১২৬, মোবাইল নম্বর-০১৫৭৯-৯৫৪২৮৯।

প্রথম পক্ষ ইসরাফিল ইসলাম এবং দ্বিতীয় পক্ষ জনাব কলিম উদ্দিন স্বেচ্ছায়, স্বজ্ঞানে এবং কারো দ্বারা প্ররোচিত না হয়ে এক্সট্রিমো লিমিটেড এবং পাওয়ার টেক লিমিটেড এর মধ্যকার যাবতীয় দেনা-পাওনা নিম্নলিখিত শর্ত সাপেক্ষে নিষ্পত্তি করতে সম্মত হয়েছেন।

শর্তাবলীঃ

১। প্রথম পক্ষ ইসরাফিল ইসলাম, দ্বিতীয় পক্ষ জনাব কলিম উদ্বদিনকে সর্বমোট ২২,০০,০০০.০০ (বাইশ লক্ষ) টাকা মাত্র আগামী ৩০ জুন, ২০২২ ইং তারিখের মধ্যে ব্রাক ব্যাংকের ক্যাশ চেক এর মাধ্যমে প্রদান করবেন। চেকের বিবরণী নিম্নরূপঃ

সিঃ একাউন্টের নাম একাউন্ট নম্বর চেক নম্বর তারিখ টাকার অংক

এক্সট্রিমো লিমিটেড ১৫৩১-২৫৪৬২৩ S-২৫৬১১ ৩০-জুন-২২   ৬০০,০০০.০০

এক্সট্রিমো লিমিটেড ১৫৩১-২৫৪৬২৩ S-২৫৬১২ ৩০-জুন-২২ ৫০০,০০০.০০

এক্সট্রিমো লিমিটেড ১৫৩১-২৫৪৬২৩ S-২৫৬১৩ ৩০-জুন-২২   ৬০০,০০০.০০

এক্সট্রিমো লিমিটেড ১৫৩১-২৫৪৬২৩ S-২৫৬১৪ ৩০-জুন-২২  ৫০০,০০০.০০

 

২। এই চুক্তিপত্রে উল্লেখিত ২২,০০,০০০.০০ (বাইশ লক্ষ) টাকা মাত্র প্রথম পক্ষ জনাব ইসরাফিল ইসলাম, দ্বিতীয় পক্ষ জনাব কলিম উদ্বদিনকে  পরিশোধ করার পর প্রথম পক্ষ জনাব ইসরাফিল ইসলাম এবং দ্বিতীয় পক্ষ জনাব কলিম উদ্বদিন এক্সট্রিমো লিমিটেড এবং পাওয়ার টেক লিমিটেড এর মধ্যকার দেনা-পাওনা সংক্রান্ত আর কোন দাবি-দাওয়া থাকবে না।

৩। এই চুক্তি মোতাবেক প্রথম পক্ষ জনাব ইসরাফিল ইসলাম আগামী ৩০ জুন, ২০২২ তারিখের মধ্যে দ্বিতীয় পক্ষ জনাব কলিম উদ্বদিনকে চুক্তিতে উল্লেখিত ২২,০০,০০০.০০ (বাইশ লক্ষ) টাকা মাত্র পরিশোধ করতে ব্যার্থ হলে দ্বিতীয় পক্ষ জনাব কলিম উদ্বদিন, প্রথম পক্ষ জনাব ইসরাফিল ইসলামের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহন করতে পারবেন।

৪। উপরে উল্লেখিত শর্তাবলী ভঙ্গ করলে যেকোন পক্ষ আইনের আশ্রয় নিতে পারবেন।

স্বাক্ষর

প্রথম পক্ষ দ্বিতীয় পক্ষ
জনাব ইসরাফিল ইসলাম জনাব কলিম উদ্বদিন
ম্যানেজিং ডিরেক্টর ম্যানেজিং ডিরেক্টর
এক্সট্রিমো লিমিটেড পাওয়ার টেক
সাক্ষী সাক্ষী
১। ১।
২। ২।

নমুনা চুক্তিপত্রে খেয়াল করে দেখুন

উপরের চুক্তিপত্রটি একটু ভালভাবে খেয়াল করে দেখুন। তাহলে নিচের পয়েন্টগুলো আপনার কাছে পরিস্কার হয়ে যাবে। চুক্তিপত্র লেখার নিয়ম গুলোও ভাল করে দেখে নিতে পারেন এখান থেকে।

  • প্রথমে তারিখ দেয়া হয়েছে।
  • তারপর প্রথম পক্ষ ও দ্বিতীয় পক্ষ কে বা কারা তাদের পরিচয় দেয়া আছে।
  • কি কারণে চুক্তিপত্র করা হয়েছে তার বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে দুইটি কম্পানির দেনা নিয়ে চুক্তিপত্র হচ্ছে।
  • স্বেচ্ছায়, স্বজ্ঞানে এবং কারো দ্বারা প্ররোচিত না হয়ে চুক্তিপত্র করা হচ্ছে তার উল্লেখ রয়েছে।
  • চুক্তির শর্তাবলী উল্লেখ করা হয়েছে।
  • দেনা কবে শোধ করা হবে এবং কিভাবে শোধ করা হবে তার পরিপূর্ণ বর্ণনা রয়েছে।
  •  শর্ত ভংগকারির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা উভয়পক্ষ নিতে পারবে তার উল্লেখ আছে।
  • নিচে উভয় পক্ষের স্বাক্ষর দেয়া আছে।
  • উভয়পক্ষের দুইজন করে সাক্ষীর জায়গা রাখা হয়েছে।
  • এছাড়াও চুক্তিপত্রে প্রতি পৃষ্ঠায় উভয় পক্ষের স্বাক্ষর থাকাটা জরুরী।

চুক্তিপত্র লেখার পর বার বার পড়ে নিন অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে। কোন কিছু বাদ পড়ল কিনা দেখে নিন। অপর পক্ষের তৈরি করা চুক্তিপত্র বার বার পড়ে নিন, আপনার কোন শর্ত থাকলে স্বাক্ষর করার আগে তা সংযুক্ত করে নিন। উভয় পক্ষ একমত হলে তারপর চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করুন।

আশাকরি, আমাদের আজকের এই লেখা থেকে চুক্তিপত্র নিয়ে আপনার যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছেন, চুক্তিপত্র লেখার নিয়ম ও জেনে গেছেন। ধন্যবাদ সবাইকে। ভাল থাকুন, সুস্থ্য থাকুন।

Frequently Asked Question (FAQ)

১. চুক্তিপত্র কাকে বলে?

উত্তরঃ কোন বিশেষ কারনে নির্দিষ্ট উদ্দ্যেশ্য নিয়ে নানাবিধ শর্তাবলীর উল্লেখপূর্বক দুই বা ততোধিক ব্যক্তির সম্মতিতে কোন কাজের লিখিত রুপের নামই চুক্তিপত্র।

২. চুক্তিপত্রে কি দুইয়ের অধিক পক্ষ থাকতে পারে?

উত্তরঃ অবশ্যই থাকতে পারে।

৩. ৩০০ টাকার  স্ট্যাম্প না ব্যবহার করে কি চুক্তিপত্র করা সম্ভব?

উত্তরঃ না, আপনাকে নূন্যতম ৩০০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ব্যবহার করতেই হবে।

৪. স্বাক্ষি কতজন বাধ্যতামূলক?

উত্তরঃ দুইপক্ষের কমপক্ষে ২ জন করে মোট ৪জন স্বাক্ষি বাধ্যতামূলক। তবে বেশি হলে ক্ষতি নেই।

৫. কোন পক্ষ চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করলে কি আমি আইনের আশ্রয় নিতে পারব?

উত্তরঃ অবশ্যই পারবেন।

Previous articleভিসা কার্ড কি ? কিভাবে ভিসা কার্ড পাবেন?
Next articleসেরা দশ ধনী ক্রিকেটার : কার চেয়ে কে বেশি ধনী ২০২২ সালে ।
যে ব্যর্থ সে অজুহাত দেখায়, যে সফল সে গল্প শোনায়। আমি অজুহাত নয় গল্প শোনাতে ভালবাসি। আসুন কিছু গল্প শুনি, নিজের গল্প অন্যকে শুনাই।