বর্তমান পৃথিবীর বয়স ৫৪ বিলিয়ন বছর। আর বহুকাল থেকেই আমাদের এই পৃথিবীতে মানুষসহ বিভিন্ন জীবযন্তু বসবাস করে আসছে। কালের বিবর্তনে বর্তমানে মানুষ এই পৃথিবীকে পরিচালনা করছে। কিন্তু বেঁচে থাকার তাগিদে মানুষের কর্মকান্ড পৃথিবীতে এক অন্যরকম বিপর্যয় নিয়ে আসছে। পৃথিবী দিন দিন যেমন বাস অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে, তেমনি পৃথিবী ধ্বংসের দিকে চলে যাচ্ছে। এর মূল কারণ গ্লোবাল ওয়ার্মিং। এটি আমাদের কাছে একে বারেই নতুন শব্দ নয়। যতই দিন যাচ্ছে গ্লোবাল ওয়ার্মিং শব্দটি যেন আরও বেশি করে শোনা যাচ্ছে চারিদিকে। কিন্তু কেন?
গ্লোবাল ওয়ার্মিং মূলত ইংরেজি শব্দ Global Warming । বাংলা অর্থ হলো বৈশ্বিক উষ্ণায়ন। অর্থাৎ এক কথায় বলতে গেলে, মানুষের কিছু কর্মকাণ্ডের কারনে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়াকেই মূলত বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বলা হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যে আমাদেরকে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা দিয়েছেন এবং একই সাথে সতর্ক করে দিচ্ছেন এর সুদূর প্রসারি প্রভাব সম্পর্কে।
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি নিউক্লিয়ার এনার্জি কারা প্রোডাকশন করছে, জানতে হলে নিচের ভিডিও দেখুন।
তো চলুন তাহলে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং সম্পর্কে জেনে নেই।
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং কি?
বর্তমানে মানুষের কর্মকাণ্ডের ফলে (যেমন-বিভিন্ন কলকারখানার ধোঁয়া, যানবাহনের ধোঁয় সহ প্রযুক্তিগত নানা উন্নয়ন কর্মকান্ড) পৃথিবীতে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমান বৃদ্ধি করে তুলছে, যার ফলে বায়ুস্তরে কার্বন ডাই-অক্সাইড এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং পাচ্ছে অহরহ।
আমরা জানি, সূর্য পৃথিবীকে আলো ও তাপ দেয়। সূর্যের আলোতে পৃথিবী গরম হয়। আর বায়ু মন্ডলে থাকা গ্যাসগুলো পৃথিবী হতে এই তাপকে বের হতে দেয় না। কিন্তু বায়ুমন্ডলে যে পরিমাণে কার্বন ডাই-অক্সাইড সহ অন্যান্য গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে, তার ফলে পৃথিবী আরও তাপ ধরে রাখছে।
তাই সূর্য থেকে পৃথিবীর ভেতরে আসা তাপ, কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও অন্যান্য বিষাক্ত গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় আর বের হতে পারছে না। ফলে ধীরে ধীরে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মূলত পৃথিবী এই তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়াকেই বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং বলা হয়।
ক্রমবর্ধমান এই তাপমাত্রার কারনে আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এখনই কিছু করুন, নাহলে সংকটের ঝুঁকিতে থাকুন। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তাপমাত্রার বিপজ্জনক বৃদ্ধি এড়াতে বিশ্বকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে, তা নাহলে শীঘ্রই বিপদে পড়তে যাচ্ছে পৃথিবী নামের আমাদের সুন্দর এই গ্রহটি।
ধারণা করা হয়, তাপমাত্রা বৃদ্ধির এই ঝুঁকি আমরা যদি এড়াতে না পারি শীঘ্রই আমাদের পৃথিবীর আবহাওয়া অস্বাভাবিক রুপ নিবে। অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, দাবানল, খাদ্য সংকট, বন্যা, মহামারী ইত্যাদি নানা রকম সংকটে পড়তে যাচ্ছি আমরা।
নাসার গ্লোবাল ক্লাইমেট চেঞ্জ ওয়েবসাইট বলছে,
“Global warming is the long-term heating of Earth’s climate system observed since the pre-industrial period (between 1850 and 1900) due to human activities, primarily fossil fuel burning, which increases heat-trapping greenhouse gas levels in Earth’s atmosphere. The term is frequently used interchangeably with the term climate change, though the latter refers to both human- and naturally produced warming and the effects it has on our planet।”
অর্থাৎ, প্রাক-শিল্পকালীন সময় (১৮৫০-১৯০০ সাল) থেকে মানুষের বিভিন্ন কার্যকলাপ, জীবাশ্ম জ্বালানীর দহনের কারনে বায়ুস্তরে আটকে পরা গ্রীন হাউজ গ্যাসের পরিমান বৃদ্ধি পাওয়ায় পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির যে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে তাই বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং।
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর কারণ!
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এর মূল কারনই হলো মানুষের কর্মকাণ্ড। কারন মানুষ প্রতিদিনই লক্ষ লক্ষ টন কয়লা পোড়াচ্ছে ফলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড সৃষ্টি হচ্ছে। তাছাড়াও আমরা প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের যানবাহন ব্যবহার করছি, বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি পোড়াচ্ছি, গ্যাস পোড়াচ্ছি আরো বিভিন্নভাবে আমরাই কার্বন ডাই-অক্সাইড সহ অন্যান্য গ্যাস তৈরি করছি।
এই কার্বন ডাই অক্সাইড বৃদ্ধির ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা একদিকে যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তার সাথএ আবার আমারা আমাদের কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ কারি গাছপালা গুলো কেটে ফেলছি। পৃথিবীতে গাছই একমাত্র জীব যারা কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহন করে। গাছপালা কেটে ফেলার ফলে আরও কার্বন ডাই অক্সাইড বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কার্বন ডাই অক্সাইড এর মত আরো ক্ষতিকর গ্যাস গুলো যেমন, কার্বন-মনোক্সাইড, সিএফসি, নাইট্রাস অক্সাইড ইত্যাদি গ্যাসগুলোও মানুষের দ্বারা তৈরি। আর বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য বহুলাংশে দায়ি ধনী রাস্ট্রগুলোই, কারণ তারাই এসবের ব্যবহার বেশি করে থাকে।
তাহলে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর কারণ হিসেবে আমরা নিচের পয়েন্টগুলোকে চিহ্নিত করতে পারি-
- জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহার বৃদ্ধি
- CFC-এর ব্যবহার
- নাইট্রাস অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, সালফারের কণা উৎপাদন বৃদ্ধি
- গাছ কাটা
- মিথেনের পরিমান বৃদ্ধি
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর প্রভাব!
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই মানুষের জনজীবনও ব্যাহত হচ্ছে। তাছাড়াও পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে আমাদের যেমন শারীরিক অসুস্থতার সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি আমাদের পৃথিবীর মেরু অঞ্চলের বরফ গুলো গলে যাচ্ছে। এই বরফ গুলো যদি অতিরিক্ত পরিমাণে গলে যায়, তাহলে ধারণা করা হচ্ছে ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীর নিম্ন অঞ্চলের দেশগুলো যেমন, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, ভারত, শ্রীলঙ্কা সমুদ্রের পানিতে প্লাবিত হয়ে যাবে।
তাছাড়াও মানুষের তৈরি কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস পৃথিবীর একদম ওপরের স্তরের ওজন গ্যাসকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এই গ্যাস আমাদেরকে সূর্য হতে নির্গত ক্ষতিকর রশ্নি থেকে রক্ষা করে। কিন্তু সূর্য থেকে অতিবেগুনি রশ্মি পৃথিবীতে ঢুকে বিভিন্ন ধরনের নতুন রোগের আবির্ভাব ঘটছে।
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর প্রভাব বা ফলাফল হিসেবে আমরা পাচ্ছি-
- পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি
- মেরু অঞ্চলের বরফ গলন
- সমুদ্র জলতলের উচ্চতা বৃদ্ধি
- এলারজি, এ্যাজমা জাতীয় রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি
- বাস্তুতন্তের বিনাশ
- আবহাওয়ার প্রকৃতি পরিবর্তন
- ফসলের ক্ষতি
- বনাঞ্চল ধ্বংস
- পরিবেশ দূষন বৃদ্ধি
- বন্যজন্তুর সংখ্যা হ্রাস
- মানুষের আবাসস্থলের সংকট
- বিশ্বজুড়ে খাদ্যভাব
- স্থানবিশেষে কোথাও ক্ষরা, আবার কোথাও বন্যার প্রকোপ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি
- দুর্ভিক্ষ, মহামারী, খাদ্যদাঙ্গা শুরু হবে
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর হাত থেকে রক্ষার উপায়!
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এর হাত থেকে রক্ষার উপায় হলো মানুষের কর্মকান্ড ঠিক করা। কারণ আমারা যদি কার্বন ডাই অক্সাইড এর ব্যবহার কমিয়ে ফেলি, তাহলেই আমরা পৃথিবীকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে পারবো। তাছাড়াও আমাদের সবচেয়ে বড় সতেচনতা মূলক কাজ হলো গাছ লাগানো।
মূলত গাছ লাগানোর মাধ্যমেই আমরা পৃথিবীকে রক্ষা করতে পারি। কারণ পৃথিবীতে গাছই একমাত্র কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে এবং আমাদের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন ত্যাগ করে। তাই আমরা বেশি বেশি করে গাছ লাগাবো এবং একটি গাছ কাটলে দুইটি গাছ লাগাবো এমন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হবো।
একটি তথ্য দেই। যেখানে একটি দেশে শতকরা ২৫ শতাংশ জায়গা বনভূমি থাকা প্রয়োজন সেখানে আমাদের দেশে আছে মাত্র ১৭ শতাংশ। বনভূমির এই অপর্যাপ্ততা তাই আমাদের গাছ লাগিয়ে পুষিয়ে দিতে হবে। এছড়া আর কোন উপায় নেই।
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এর হাত থেকে রক্ষার জন্য আমাদের যা করতে হবে-
- জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহার হ্রাস করতে হবে
- রাসায়নিক সারের ব্যবহার হ্রাস করতে হবে
- মিথেন নির্গমনের পরিমাণ হ্রাস করতে হবে
- অচিরাচরিত শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে
- ই-ওয়েস্ট বা ইলেক্ট্রনিক বর্জ্য আমদানী বন্ধ করতে হবে
- পরিকল্পিত বনায়ন করতে হবে
- শক্তিসাশ্রয়ী আবাসন বাস্তবায়ন করতে হবে
- পরিবেশ রক্ষাসংক্রান্ত চুক্তিগুলির দ্রুত বাস্তব রূপায়ণ করতে হবে
- বিকল্প ও পরিবেশবান্ধব দ্রব্য ব্যবহার করতে হবে
- নাগরিক দায়িত্ব পালন করতে হবে
- নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন করতে হবে
পৃথিবীকে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এর হাত থেকে বাঁচানোর জন্য অনেক বড় বড় সংগঠন কাজ করে যাচ্ছে নিরন্তর। এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় সংগঠন হল ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি (National Geographic Society)।
আশা করি সবাই বৈশ্বিক উষ্ণায়ন সম্পর্কে ধারণা পেয়ে গেছেন। আর আমরা সবাই সচেতন হব এবং সবাইকে সচেতন করববো। কারণ সচেতনতাই পারে পৃথিবী কে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে। ধন্যবাদ।।।
আমাদের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করেও আমাদের উৎসাহিত করতে পারেন। ইউটিউব চ্যানেল লিংক এখানে। আশা করি অবশ্যই ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে আমাদের সহযোগীতা করবেন। তাহলে আমরা উৎসাহিত হয়ে আরও লেখা পাবলিশ করব।
বর্তমানে সবচেয়ে আলোচ্যে ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়