আজকালকার বাবা-মা বলতেই খুব সহজেই বাচ্চাদের ঔষধ খাইয়ে দেন। বাচ্চার সামান্য জ্বর-সর্দি-কাশিতেই তারা হয় ডাক্তারের শরণাপন্ন হন কিংবা নিজেরাই ডাক্তার সেজে যান। অসুখে-বিসুখে তারাই অনেক সময় বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বনে যান। এমনকি তারা নিজেরাই অনেক সময় এন্টিবায়টিক দিয়ে দেন, কি ভয়ংকর কথা। মনে রাখবেন, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া যেকোন ঔষধ অনেক সময় বিপদের কারন কিংবা কখনও ঔষধ আপনার বাচ্চার উপর দীর্ঘ মেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে।
গোপাল ভাঁড়ের গল্পটি যদিও আমাদের সবারই জানা। তারপরেও গল্পটি বলার লোভ সামলাতে পারছিনা বলে দুঃখিত। কারন গল্পটি আমাদের বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে খুবই মানানসই। গল্পটি আগে বলি তবে খুব সংক্ষেপে-
একদিন, রাজামশাই রাজসভায় জিজ্ঞেস করলেন- আচ্ছা আমার রাজ্যে কোন পেশার লোক সবচেয়ে বেশি আছে? কেও বলল দোকানদার, কেও নাপিত কেও কৃষক আর আমাদের গোপাল ভাড় বলল বলল ডাক্তার। রাজা তো শুনে খেপেই আগুন সাথে অন্যান্য সভাসদ। রাজা ক্ষেপে বললেন, তোমাকে ৭ দিনের সময় দিলাম এর মাঝে তুমি প্রমান করবে কিভাবে রাজ্যে ডাক্তার পেশায় লোক সবচেয়ে বেশি? নইলে তোমার গর্দান নিব। অন্যান্য সভাসদেরা মনে হল একটু খুশিই হল, কারন গোপাল ভাঁড় রাজার প্রিয় পাত্র হওয়ায় তারা অনেক সময় তারা রাজার কাছে ঘেষতে পারত না। কিন্তু একি গোপাল ভাড়কেএকদম নিশ্চিন্ত দেখা যাচ্ছে।
যাইহোক, পর পর তিন দিন গোপাল ভাড় রাজসভায় অনুপস্থিত। সবাই ভাবল আহা! বেচারা বোধ হয় গর্দান যাবার ভয়ে আর আসছেই না সভায়। চার দিনের দিন রাজা মশাই নিজেই পেয়াদা পাঠালো গোপালকে ধরে আনার জন্য।
পেয়াদা বেচারা গোপাল ভাঁড়কে একপ্রকার টেনে হেঁচড়ে রাজসভায় হাজির করল। রাজামশাই জিজ্ঞেস করলেন- কিহে? পরপর তিন দিন তুমি কেন অনুপস্থিত? সবাই কেমন কৌতুক দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিল যেন খুব মজা পাচ্ছে।
গোপাল ভাঁড় যেন খুব অসুস্থ এমন ভাব করে বলল- আর বলবেন না রাজামশাই, তিন দিন ধরে জ্বর-কাশি, বলেই কাশতে লাগল। সবাই একথা শুনে হো হো করে উঠল। কেও বা হাঁসতে হাঁসতে ফেটে পরতে চাইল।
জ্বর-কাশি রোগের কথা শুনে, নানাজনে নানা পরামর্শ দিতে লাগল। কেও বা কোন কবিরাজি ঔষধ, কেওবা সরিষার তেল বুকে ঘষা, কেও বা পেয়াজ দিয়ে মুড়ি মাখিয়ে খাবার কথা বলল।
রাজামশাই বললেন, খামোশ! গোপাল একি বলছ তুমি? সামান্য জ্বরে তুমি রাজসভায় আসা থেকে বিরত আছ? এ আর এমন কি রোগ? এর জন্য ত সামান্য বটিকাই যথেষ্ট।
রাজার কথা শুনে গোপাল যেন জানে পানি পেল। হাঁসতে হাঁসতে বলল। দেখলেন তো রাজামশাই? এই রাজসভায় রোগী শুধু আমি একাই, এর ডাক্তার আপনি সহ আরও কম করে হলেও আরও চার-পাঁচ জন কম করে হলেও।
এই সভাতেই যদি ডাক্তারের সংখ্যার এই অবস্থা হয় তাহলে সারা রাজ্যে কত ডাক্তার আছে? গোপালের কথা শুনে সভাসদেরা কেমন চুপসে গেলেন। কিন্তু রাজা হো হো করে হেসে উঠলেন। বললেন, বাহ গোপাল! বাহ! সত্যি তোমার বুদ্ধির তারিফ করতে হয়। তিনি গোপালের জন্য পুস্কার ঘোষনা দিলেন।
আমাদের দেশের মানুষের অবস্থাও অনেকটা এমনই। আমরা নিজেরাই সবাই ডাক্তার বনে গেছি। নিজেই নিজের কিংবা অন্যের চিকিৎসা করে যাচ্ছি ঔষধের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। কি ভয়ংকর! উন্নত বিশ্বে যেখানে পেস্ক্রিপসন ছাড়া ঔষধই বিক্রি হয় না, সেখানে আমরা হরহামেশা ঔষধ বিক্রি করে যাচ্ছি।
হেলথ টিপস নিয়ে আরও দুটি ব্লগ পড়ুন-
নতুন দশকের শুরুতে বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর ২০টি Heath Tips
ঘুমের ইতিবৃত্ত। ঘুম এক প্রশান্তির নাম, এক রহস্যে ঘেরা দ্বীপ
যাইহোক এবার মূল টপিকে ফিরে আসি।
ডা. শ্যামল চক্রবর্তী তার ঔষধ যখন রোগ বাড়ায় বইতে খুব ছোট বাচ্চার ঔষধ নিয়ে লিখেছেন,
- এক থেকে দেড় মাস বয়স পর্যন্ত বাচ্চাদের শরীরের ঔষধ বিপাকের নানা ধরনের উতসেচক বা এনজাইম তৈরি হয়না। কিডনীর ছাকার খমতা কম থাকায় ঔষধ শরীর থেকে বেরিয়ে যাবার পদ্ধতিপুরোপুরি কাজ করতে পারেনা। যেকোন ঔষধ তাই ছোট বাচ্চার শরীরে তীব্র প্রতিক্রিয়া করতে পারে।
দেখলেন তো, ছোট বাচ্চাকে ঔষধ দেয়ার ব্যাপারে কেন খুবই সাবধান হতে হবে?
এছাড়াও ছোট বাচ্চার ক্ষেত্রে কি কি ঔষধ বেশি প্রতিক্রিয়া দেখতে পারে সে ব্যাপারেও তিনি বলেছেন-
- ছোট বাচ্চার শরীরে এরকম প্রতিক্রিয়া বেশি হতে পারে নির্দিষ্ট কিছু ঔষধ ব্যবহারে। যেমন ভিটামিন কে গোত্রের ঔষধ, সালফোনামিড, মরফিন, বারবিচুরেট ইত্যাদি ঔষধ।
অবশেষে তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেছেন-
- খুব ছোট বাচ্চাকে এর ওর কথায় বা স্বঘোষিত চিকিৎসকের পরামর্শে ভুলেও কোন ঔষধ খাওয়াতে যাবেন না। আর মনে রাখুন যোগ্য চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বাচ্চাকে ঔষধ খাওয়ানো আর বাচ্চাকে বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া একই ব্যাপার।
আসুন আমরা সবাই যেকোন রোগে ঔষধ কেনার আগে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেই কারন আপনার রোগের সিম্পটম অনুযায়ী ঔষদের মাত্রার হেরফের হতে পারে যা শুধুমাত্র একজন চিকিৎসকই বলতে পারবেন।