ক্যাপসুলের আবরন কিসের তৈরি
ক্যাপসুলের আবরন কিসের তৈরি

মুখ দিয়ে যেসব ঔষধ সেবন করা হয় সেগুলো তিন প্রকারের হয়ে থাকে- ট্যাবলেট, ক্যাপসুল আর সিরাপ জাতীয়। এর মধ্যে ক্যাপসুল ঔষধটা সবসময়ই আমার কাছে আকর্ষণীয় মনে হত, সেই ছোটবেলা থেকেই। আমি ভাবতাম ক্যাপসুলের বাইরের আবরণ বা কাভারটা হয়ত প্লাস্টিকের তৈরি। ভিটামিন জাতীয় কিছু ক্যাপসুল আবার অনেকটা নরম নরম, সেটা ভাবতাম রাবারের তৈরি হয়ত। কিন্তু আসলে ক্যাপসুলের আবরন কিসের তৈরি? জানা দরকার তাইনা? আসুন আজ জেনে নেই এবং একই সাথে আরও কিছু তথ্য যা খুবই চমকপ্রদ ।

যারা ভিডিও দেখে পুরো ব্যাপারটি জেনে নিতে আগ্রহি তারা নিচের ভিডিও থেকে দেখে নিতে পারেন।

প্রথমে জেনে নেই ক্যাপসুল এ কেন আবরণ থাকে

ক্যাপসুল আর ট্যাবলেট মূলত একই জিনিস এবং মানব শরীরে এদের কার্যকারিতাও একইভাবে হয়ে থাকে। ক্যাপসুলে কাভার বা আবরণ থাকার যে কারণগুলো রয়েছে তার মাঝে উল্লেখযোগ্য হল-

১। ক্যাপসুলে আবরণ থাকায় ভেতরের ঔষধের স্বাদ কিংবা দুর্গন্ধ সেবনকারী পায় না। এটা স্বাদহীন হয়।

২। যেহেতু ক্যাপসুলের ভেতরের ঔষধ পাউডার কিংবা জেলি আকারে থাকে তাই ঔষধ খুব দ্রুততার সাথে দ্রবিভুত হয়ে কাজ শুরু করে দিতে পারে, ট্যাবলেটের তুলনায়। তাই দ্রুত কার্যকারিতার দিক থেকে ক্যাপসুল ট্যাবলেটের চেয়ে এগিয়ে থাকবে।

৩। একই সাথে কয়েক প্রকারের ঔষধ একত্রে কার্যকরী করার প্রয়োজন থাকলে ক্যাপসুল খুবি কাজের। এটা নির্দিষ্ট সময় পরে দ্রবিভুত হয়ে কাজে লাগতে পারে। ডুয়েল একশনে এটা খুবই কার্যকর।

এবার ক্যাপসুলের কিছু অসুবিধা জেনে নেওয়া যাক

১। ক্যাপসুলের স্থায়িত্ত কম, মানে বায়ুর আদ্রতার কারনে ক্যাপসুল ট্যাবলেটের তুলনায় নষ্ট হয় দ্রুত।

২। ক্যাপসুল এর দ্রুত মেয়াদ তারাতারি উত্তীর্ণ হয়ে যায়।

৩। ক্যাপসুল তৈরির উপাদানগুলো দামি হওয়ায় এর উৎপাদন খরচ অনেক বেশি।

৪। ক্যাপসুলে ঔষধের পরিমান কম থাকে ট্যাবলেটের চেয়ে, অর্থাৎ সমপরিমাণ ডোজের ঔষধ সেবন করতে চাইলে ট্যালেটের চেয়ে আপনাকে বেশি ক্যাপসুল খেতে হবে।

৫। ক্যাপসুল চিবিয়ে কিংবা চুষে খাওয়া যায় না। ভাঙা যায় না।

এর মানে মনে হচ্ছে, দ্রুত কার্যকারিতা ছাড়া ক্যাপসুলের চেয়ে ট্যাবলেট অনেক এগিয়ে।

ক্যাপসুল কত প্রকারের হয়ে থাকে

ক্যাপসুল সাধারনত দুই প্রকারের হয়ে থাকে। হার্ড-শেল ক্যাপসুল আর সফট জেল ক্যাপসুল।

হার্ড-শেল ক্যাপসুল এর বাইরের আবরণ বা খোসাটা দুই ভাগে বিভক্ত থাকে, এক অংশ অন্য অংশের মধ্যে দিয়ে ঢুকিয়ে লক করা থাকে বা আটকানো থাকে। ভেতরে শুকনা পাউডারের মত কিংবা দানাদার মেডিসিন থাকে। কিছু হার্ড শেল ক্যাপসুলের ভেতর তরল জাতীয় ঔষধও থাকে। এয়ারটাইট বা বায়ুনিরোধক হবার কারনে একই ক্যাপসুলের মধ্যে দুই প্রকার ঔষধও মিশ্রিত থাকতে পারে।

সফট জেল ক্যাপসুল দেখতে হার্ড শেল্ড ক্যাপসুলের চেয়ে একটু আলাদা। এগুলো একটু সেমি ট্রান্সপারেন্ট টাইপের হয়ে থাকে। বিভিন্ন ভিটামিন জাতিয় ঔষধ এরকম হয়ে থাকে।

ক্যাপসুলের আবরন কিসের তৈরি

ক্যাপসুলের এর কাভার বা আবরণ সাধারণত জিলেটিন এর তৈরি হয়। জিলেটিন মূলত প্রানিদেহের প্রোটিন থেকে তৈরি। এর কারন হিসেবে বলা যায় জিলেটিন নন-টক্সিক, দেহের তাপমাত্রায় দ্রুত দ্রবিভুত হয় আর স্বাদহীন বলা যায়। আধুনিক কালে ক্যাপসুলের কিছু আবরণ গাছ-পালা বা ভেজিটেবল থেকে তৈরি করা হয় কিন্তু সেটা তেমন জনপ্রিয় হয়নি। তাই জিলেটিন দিয়েই প্রায় সব ক্যাপসুলের আবরণ তৈরি হয় বলা যায়।

কিন্তু এই জিলেটিন আসেলে কি ? এটা একপ্রকারের প্রোটিন যা পাওয়া যায় কোলাজেন থেকে। কোলাজেন প্রাকৃতিক প্রোটিন যা স্তন্যপায়ী প্রানির রগ, হাড় এবং চামড়ায়। সাধারনত হাড়-চামড়া ফুটিয়ে সিদ্ধ করে ঠান্ডা করলে যে জেলিটি পাওয়া যায় তাই জেলাটিন। জেলি কিংবা গুড়াদুধ তৈরিতে জেলাটিন বহুল ব্যবহৃত হয়।

ক্যাপসুল মানবদেহে কিভাবে কাজ করে?

যদিও একটু আগেই বলেছি ক্যাপসুল এর আবরণ মানুষের দেহের তাপমত্রায় দ্রবিভুত হয়ে যায় কিন্তু ব্যাপারটা আসলে মোটেও এরকম নয়। ক্যাপসুলের বাইরের আবরণ দ্রবিদুত হয় মানুষের পাকস্থলির হাইড্রোক্লোরিক এসিডের কারনে। ক্যাপসুল সেবনের কিছুক্ষনের মাঝেই দ্রুত বাইরের আবরণ দ্রবিভুত হয়ে কার্যকারিতা শুরু করে দেয়। এছাড়া কিছু ক্যাপসুল এমনভাবে প্রস্তুত করা হয় যাতে বাইরের আবরণ নির্দিষ্ট সময় পরে দ্রবিভুত হয়।কিছু কিছু চিকিৎসায় এটিও প্রয়োজন হতে পারে।

ধন্যবাদ, আশাকরি তথ্যগুলো আপনার ভাল লেগেছে। এরকম মজার মজার আরও তথ্যবহুল ব্লগ পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন

এই লেখাটি পড়ে উপকৃত হয়ে আপনি যদি রেডিটুরিডিং ব্লগকে ডোনেট করতে চান তাহলে বিকাশ-০১৬১৪১৭১৭৬৫ অথবা নগদ-০১৭১৪১৭১৭৬৫ অথবা ইউক্যাশ-০১৭১৪১৭১৭৬৫ এ আপনার ডোনেশন পাঠাতে পারেন।

অথবা,

আমাদের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করেও আমাদের উৎসাহিত করতে পারেন। ইউটিউব চ্যানেল লিংক এখানে। আশা করি অবশ্যই ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে আমাদের সহযোগীতা করবেন। তাহলে আমরা উৎসাহিত হয়ে আরও লেখা পাবলিশ করব।

Previous articleটিকটিকি কেন লেজ গুটিয়ে না পালিয়ে লেজ খসিয়ে পালায়?
Next articleস্ট্যাচু অব লিবার্টি-সাম্য, স্বাধীনতা আর মুক্তির প্রতিক এবং সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।
যে ব্যর্থ সে অজুহাত দেখায়, যে সফল সে গল্প শোনায়। আমি অজুহাত নয় গল্প শোনাতে ভালবাসি। আসুন কিছু গল্প শুনি, নিজের গল্প অন্যকে শুনাই।