ইংরেজি বই পড়া

বাংলা সাহিত্যের রস আস্বাদন করার পাশাপাশি যখন মনে হয় পুরো জগতের সাহিত্যের চিত্র আসলে কেমন তারও একটু স্বাদ নেয়া প্রয়োজন, তখন অনেকেই ঝোঁকেন অনুবাদের দিকে। কারণ শুরুতেই ইংরেজিতে বই পড়া শুরু করার সাহস করতে পারেন না অনেকে। অনেকে অনুবাদ পড়তে অভ্যস্ত হয়ে যান কিংবা অনুবাদে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। আবার অনেকে পড়েন কিছুটা বাধ্য হয়ে, যেমন – সে খুব আগ্রহী হতে পারে আসল বইটি পড়ে দেখার জন্য কিন্তু মনে মনে ভেবে বসে থাকে, “আমি ইংরেজিতে ভালো নই। বই পড়লে হয়তো কিছু বুঝতে পারবো না।” তাই বলে কি ইংরেজি বই পড়া বাদ থাকবে?

এই ব্যাপারটা কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সত্য নয়, অভ্যাস আর চেষ্টার দ্বারা এই ভয় কাটানো সবার পক্ষেই সম্ভব। ইংরেজি বই পড়া বিষয়ে যে প্রশ্নটা বেশি শোনা যায় তা হলো, “কিভাবে পড়া শুরু করবো? কার লেখা প্রথমে পড়া উচিত?” আজ এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবো। সাথে শেষার্ধে থাকবে একবার ইংরেজি বইতে অভ্যস্ত হয়ে যাবার পর কি কি বই পড়তে পারেন যাতে আগ্রহটা আরো বেড়ে যায়।

কিভাবে শুরু করবেন

সর্বপ্রথমে আপনার কি দরকার? চট করে একটা বই ধরে ফেলার সাহস, আর কিছুই নয়। আমার নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে বলি – উচ্চবিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় যখন প্রথম প্রথম আন্তর্জাতিক সাহিত্যের স্বাদ পেয়েছিলাম, তখন বুঝলাম অনেক বড় জ্ঞানের ভাণ্ডার এখনো অদেখাই রয়ে গিয়েছে। তখন বেশ ভালো কয়েকজনের অনুবাদের সুবাদে প্রচুর অনুবাদ বই পড়েছিলাম।

আলাদা ধরণের সাহিত্য-সংস্কৃতি সম্পর্কে পড়তে আর আলাদা লেখার ধরণগুলো ভালো লাগতো বেশ। এক সময়ে এসে মনে হলো কেন অরিজিনাল ইংরেজিতে লেখা বইগুলোই পড়ছি না! আরো বড় কথা হলো – অনুবাদ আমার পড়াকে সীমিত করে দিচ্ছে এভাবে যে আমি একটি বই মন চাইলেই পড়তে পারবো না সেটার অনুবাদ ইতোমধ্যে বের হয়ে না থাকলে। হয়তো ভবিষ্যতেও নাও আসতে পারে সেটি। তাহলে কি শুধু অনুবাদের আশায় থেকে পড়ার সুযোগ হারাবো? উত্তরটা হচ্ছে “না”। আমি ছিলাম অস্থির প্রকৃতির মানুষ, মনের মধ্যে গেড়ে বসা চিন্তা দূর হচ্ছিল না।

সে সময়ে রবার্ট লুইস স্টিভেনসনের দু’টি ইংরেজি বই ঝোঁকের বশে কিনে ফেলি, কিছুদিন বাদে পড়া শুরু হয় এগুলো দিয়েই। কয়েক বছর পর এসে বলবো বিগিনার ইংরেজি বই পড়ুয়াদের জন্য আর এল স্টিভেনসনের বই ঠিকঠাক সাজেশন নয়। কিন্তু যে উৎসাহটা দরকার ছিল সেটা সেখান থেকেই পেয়ে গিয়েছিলাম।

মাতৃভাষা ছাড়া অন্য একটি ভাষার বই যখন আপনি পড়তে যাবেন তাতে প্রথম সমস্যা হলো স্বল্প ভোকাবুলারি। অন্য একটি ভাষা অনেক বছর পড়া হলেও তার শব্দভাণ্ডারে আপনার মাতৃভাষার সমান দখল থাকবে না, এটা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। সে কারণে এটাও মনে রাখবেন যে বই পড়তে গেলে প্রচুর পরিমাণে অপরিচিত শব্দ আপনার সামনে আসবে। তার মানে কিন্তু এই নয় যে আপনি বইটি পড়ে উঠতে পারবেন না কিংবা বুঝবেন না। খেয়াল করে দেখুন, একটি বাক্যে অধিকাংশ শব্দ থাকবে আপনার পরিচিত। যে দু’চারটি শব্দ বুঝতে পারছেন না, তা ডিকশনারি ঘাটা কিংবা গুগল করা ছাড়াই বাক্যের বাকিটায় কি বলা হচ্ছে তার দ্বারা অথবা কাহিনীর স্রোতের মাধ্যমে আপনি বুঝে নিতে পারবেন। শুরুর দিকে বই পড়া মানে এটা নয় যে শততে শতভাগ বোঝা, কয়েকটি বই পড়ার পর ওই টার্গেটটা আপনা আপনি পূরণ হয়ে যাবে।

কি ধরণের বই পড়বো?

কি ধরণের বই পড়বো? একটি সাজেশন হলো ক্লাসিক বই প্রথমেই না পড়লে ভালো হয়। ক্লাসিক বই বলতে যে উদাহরণগুলো পাওয়া যায় সেগুলো সাধারণত পুরানোকালের সাহিত্য হয়ে থাকে। পঞ্চাশ বছরের ভেতরই একটি দেশের সাহিত্যে তুমুল পরিবর্তন হয়, লেখার ধরণ কিংবা শব্দের ব্যবহারে পরিবর্তন আসে। সেখানে একশ বছর আগেকার লেখা সূচনাতেই পড়তে গিয়ে আশা না হারনোই ভালো। একদম হালকা বই পড়ার চেষ্টা করুন, ইদানীংকালে “Young Adult” নামে একটি ঘরানা বিখ্যাত হয়েছে – যেগুলোর গল্প গড়ে উঠে কিশোর বা তরুণ বয়সী চরিত্রদের ঘিরে। লেখার ধরণ সাধারণত খুব সহজ হয়ে থাকে। বইতে থাকে ছোট ছোট বাক্য। গল্পগুলো হয় বেশ আকর্ষণীয়। ব্রিজিড কেমারারের লিখা “Letters To The Lost” নামে একটি বই এক্ষেত্রে বেশ সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে পারে। উপভোগ করার মতো একটি সুন্দর কাহিনী, সাথে সহজ লেখা। এই বইটি ভালো লেগে থাকলে এটির সিক্যুয়েল “More Than We Can Tell” পড়ে দেখতে পারেন। আরো একটি ইয়াং-এডাল্ট ঘরানার বিখ্যাত বই হলো জন গ্রীন লিখিত “The Fault In Our Stars“। সাহিত্যপ্রেমী অধিকাংশ মানুষই এই বইটির নাম শুনে থাকবেন। হৃদয় আর্দ্র করে দেয়ার মতো লেখাটি হতে পারে আপনার আন্তর্জাতিক সাহিত্য পাঠের প্রথম পদক্ষেপ।

কয়েকটি ইয়াং-এডাল্ট ঘরানার বই পড়ার পর যদি আপনার মনে হয় আপনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন কিংবা এই বইগুলো খুব সহজে বুঝতে পারছেন, তবে অন্য ঘরানার দিকে যেতে পারেন। দ্বিতীয় ভাগে ভালো সিদ্ধান্ত হতে পারে থ্রিলার কিংবা সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার। অনেকে থ্রিলার দিয়ে ইংরেজি বই পড়া শুরু করে থাকে, সেটি নির্ভর করে আপনার ব্যক্তিগত পছন্দের উপর। আপনার সবচেয়ে প্রিয় ঘরানা যদি হয় রহস্য-রোমাঞ্চ তবে আপনি এই ঘরানা দিয়ে শুরু করতে পারেন, কিন্তু যদি নির্দিষ্টভাবে প্রিয় কিছু না থাকে বা প্রিয় জন্রার ব্যাপারে দ্বিধা থাকে তবে ইয়াং-এডাল্ট সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা।

যাই হোক, ফিরে আসি থ্রিলারের কথায়। এই ঘরানাটিতে হাতে বোনাস সুবিধা হিসাবে থাকে রোমাঞ্চকর অংশগুলো। কাহিনীর গতির কারণে এগিয়ে যাওয়া, পড়ায় লেগে থাকে অনায়াসে হয়ে যায়। ক্যারেন এম ম্যাকম্যানাসের লেখা উপন্যাস “One Of Us Is Lying” একটি ইয়াং এডাল্ট ও থ্রিলার উপন্যাস। এটির সিক্যুয়েল “One Of Us Is Next“-ও প্রথমটির মতোই লাগবে পড়তে। এছাড়া পড়তে পারেন আলী ল্যান্ডের লেখা সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার ফিকশন “Good Me Bad Me” কিংবা পলা হকিন্সের “The Girl On The Train“। বর্তমান কালের সুলেখিকা Gillian Flynn রোমাঞ্চপ্রেমীদের কাছে একটি প্রিয় নাম। তার প্রতিটি লেখার আলাদা আবেদন আপনাকে বাধ্য করবে তার পরের লেখাটি পড়তে। এই পর্যন্ত মোট তিনটি বই লিখেছেন তিনি – “Gone Girl“, “Sharp Objects” এবং “Dark Places“। তিনটিই সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার ঘরানার, প্রতিটির মধ্যে রয়েছে অন্যরকম চমৎকারিত্ব আর রোমাঞ্চের ছোঁয়া।

বেশকিছু বই পড়ে অভ্যস্ত হবার পর নিশ্চিন্তে আপনি পা ফেলতে পারেন ক্লাসিক কিংবা ফ্যান্টাসির জগতে। ক্লাসিককে সাহিত্যের সবচেয়ে মূল্যবান শাখা হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়ে থাকে একারণে যে – এখানে কেবল বই্ পড়া নয়, জীবনবোধ-সমাজবোধের পাশাপাশি পুরো একটি সময়ের চিত্র আপনার চোখের সামনে জীবন্ত দৃশ্যের মতো ফুটে উঠবে। এই শাখাটিতে পড়বার মতো উপাদানের কোনো অভাব নেই, যেকোনোকিছু নিজের পছন্দ অনুসারে খোঁজ করে পড়া শুরু করে ফেলতে পারেন।

কয়েকটি সেরা ক্লাসিক উপন্যাসের নাম

আমার পঠিত বই থেকে কয়েকটি সেরা ক্লাসিক উপন্যাসের নাম বলতে হলে বলবো “To Kill A Mockingbird“, “Great Expectations“, “Pride & Prejudice“, “Wuthering Heights“, “Of Mice & Men“, “The Outsiders” (S. E. Hinton), “The Bell Jar” ইত্যাদির কথা। এছাড়া পড়তে পারেন “Little Women“, “The Picture Of Dorian Grey“, “Fahreinheit 451“, “Book Thief“, “Great Gatsby“, “Jane Eyre” এই বইগুলোও।

To Kill A Mockingbird বইটির অজানা কিছু তথ্য নিয়ে এই ব্লগটি পড়ুন।

ফ্যান্টাসি জগতের সর্বাপেক্ষা পরিচিত নাম হ্যারি পটার। এই সুবাদে বলে রাখি – যারা ইতোমধ্যে এই বইগুলোর বাংলা অনুবাদ পড়ে ফেলেছেন তারা এই সিরিজের ইংরেজি দিয়েও ইংরেজি বই পড়া শুরু করতে পারেন। আর যদি না পড়ে থাকেন, আপনার জন্য অপেক্ষা করছে অসাধারণ একটি জগত। ফ্যান্টাসি ঘরানার সঙ্গে আমার নিজের পরিচিতি অনেকদিনের হলেও পড়ার অভিজ্ঞতা খুবই কম, স্বল্প যা কিছু পড়া হয়েছে তার ভিত্তিতে বলবো “Grisha Trilogy” নামক ইয়াং-এডাল্ট ফ্যান্টাসি সিরিজটি এই ঘরানা শুরু করার ক্ষেত্রে হতে পারে চমৎকার।

অনেকদিন ধরে যারা ইংরেজি বই পড়ছেন তাদের জন্য বলি – ফ্যান্টাসি ঘরানার বহুদিনের পাঠকদের দ্বারা উচ্চারিত নামগুলো হলো “Dresden Files“, “The Lord Of The Rings“, “A Song Of Ice & Fire Series“, “The Wheel Of Time Series“, “The Kingkiller Chronicle” ইত্যাদি। আরো প্রচুর সাজেশন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এখানে সেখানে যেগুলো একবার আন্তর্জাতিক সাহিত্যজগতে প্রবেশের পর নিজে নিজেই খুঁজে পাবেন।

ধন্যবাদ সবাইকে।

Previous articleAK 47 Gun আবিস্কারের ইতিহাস এবং অন্যান্য
Next articleসফল যারা কেমন তারাঃ ব্যবসায় সফল হওয়ার উপায়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here