THE ONES WHO WALK AWAY FROM OMELAS

অল্প পরিসরে বাজিমাত!  জ্বি বন্ধুরা,  আমাদের বিপুল সাহিত্য ভান্ডারে লেখকের অল্প কথার তালে মাঝে মাঝে ফুটে ওঠেছে কিছু সুবিশাল প্রগাঢ়তা, তার আকারে বৈচিত্র্য না থাকলেও প্রকারের সুবিশাল আবেগের জন্য  সাহিত্যকর্মগুলো থিতু হয়েছে আমাদের মানসপটে। বিনোদনের পাশাপাশি গল্পগুলো সুযোগ দেয় ভাববার,  মগজাস্ত্রে শাণ দেবার। কালে কালে এই গল্প বা উপন্যাসিকাগুলো আলোচিত সমালোচিত হয়েছে সমান তালে।  তার গভীরতা অনুধাবণের জন্য প্রস্তাবিত হয়েছে বেশ অনেক থিওরি ও ব্যাখ্যা যার কোনো কোনোটা ক্ষেত্রবিশেষে আসল গল্পের চেয়েও আকারে বড় হয়ে যায়।  এই অল্প পরিসরে বাজিমাতের বিপুল সংগ্রহের কিছু অনবদ্য গল্প ও তার পেছনকার ব্যাখ্যার ঝুড়ি নিয়ে আমি তিয়াশ হাজির হয়েছি আপনাদের সাথে। চলুন মাতা যাত দেশীয় ও বিশ্বসাহিত্যের এমন দুর্মূল্য কিছু বইয়ের আলোচনায়,তবে আর দেরি কেন? আজকের আয়োজনে থাকছে  বিশ্বসাহিত্যের দরবারে বারংবার প্রসংশিত ও বহুবার নানা ভাবে ব্যাখ্যা হওয়া  Ursula K. Le Guin এর সেরা সাহিত্যকর্ম THE ONES WHO WALK AWAY FROM OMELAS ।

১৯৭৩  সালে Robert Silverberg সম্পাদিত বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী সংকলন New Dimensions এর তৃতীয় ভলিউমে প্রথম প্রকাশ পায় গল্পটি। পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালে Le Guin এর  The Wind’s Twelve Quarters বইতেও গল্পটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল THE ONES WHO WALK AWAY FROM OMELAS এবং  ১৯৯৩ সালে কেবল এই গল্পটিই আলাদা মলাটে প্রকাশ করা হয়েছিল।  মোটে ২০ পেজের এই গল্পটি তখন থেকেই নজর কেড়েছে নেটিজনের কাছে। এর দার্শনিক ও ইউটোপিয়ান চিন্তাভাবনার জন্য ডিস্টোপিয়ান, সাইন্স ফিকশন প্রেমীদের কাছে বহুল সমাদৃত হবার পাশাপাশি বিভিন্ন দর্শনের পাঠ্যসূচিতেও একে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

২০১৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারিতে জনপ্রিয় কেপপ ব্যান্ড BTS এর Spring Day এর অফিসিয়াল মিউজিক ভিডিও প্রকাশ পেলে এই গল্পটি সাধারণ মানুষের কাছে আরো আকর্ষণীয় বস্তু বলে পরিণত হয়।  তার কারণ ইউটিউবে ৩৫০ মিলিয়নের চেয়েও অধিকবার দেখা Spring Day  গানের ভিডিওটি “দ্যা ওয়ানস হু ওয়াক এওয়ে ফ্রম ওমেলাস”  গল্পের আদলে গড়ে তোলা হয়েছিল। ভিডিওতে বড় OMELAS  লেখা সাইন এবং আন্ডারগ্রাউন্ড ঘরে বন্ধ হয়ে থাকা এক ছেলে! তার সাথে গানের সুর।  সবমিলিয়ে ভক্তজনের কাছে ভিডিওটি রেখে যায় একগাদা প্রশ্ন।

গানটির ব্যাপক সফলতার পর ভক্তজনের মাঝে হিড়িক পড়ে যায় গল্পটি নিয়ে।    এবার চলুন জানা যাক এই রহস্যময় “ওমেলা” আসলে কি আর কেনই বা তার এত হাকডাক।

আরও পড়ুন- জহির রায়হান- একজন শব্দের যাদুকর।

THE ONES WHO WALK AWAY FROM OMELAS

THE ONES WHO WALK AWAY FROM OMELASগল্পটিকে আমরা তিনটা ভাগে বিভক্ত করতে পারি। প্রথম অংশে লেখিকা ওমেলা শহরের বর্ণনা দিয়েছেন৷  এই শহর আর আট দশটা শহরের মতো না।  এই শহর নিতান্তই আমাদের স্বপ্নের মতো। এর বাসিন্দা সবার মুখে থাকে হাসি। সবকিছুর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা এতে রয়েছে।  সব সুখের বন্দোবস্ত এতে রয়েছে। আছে কোনোরকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বিহীন ড্রাগ বা নাহলে নেশার জন্য বিয়ারেরও পর্যাপ্ত সুযোগও রয়েছে। এই শহরে লোকজন একদমই কম,  কোনো যানজট নেই, সবাই সম্মিলিত উদ্দ্যোগে সমানভাবে তাদের সমাজ গড়ে তুলেছে। তাই  এই শহরে উচু নিচু ভেদাভেদ নেই, নাই কোনো রাজা প্রজা ব্যবস্থা।  মানুষের গোপন চলাচল কোনো সরকারি গুপ্তচর পর্যবেক্ষণ করে না,  কোনো সন্ত্রাসবাদ নেই শহরে।

আছে বাইরের  জগতের সাথে ভালো যোগাযোগ।  তারা বিলাসবহুল ট্রেনে চেপে প্রবেশ করে শহরে। তবে এই শহরে সুখ থাকলেও নাই বিলাসিতা করার সুযোগ, যার যা চাই তার ততটুকুই তারা পাবে।  কিন্তু বিলাসিতা কেউই করে না। তারা বৈদ্যুতিক বিলাসবহুল যন্ত্রপাতি যেমন ধরুন টিভি, ওয়াশিং মেশিন এসবের থেকে দুরে থাকে।  এক কথায় ওমেলা সেই শহর যার স্বপ্ন আমরা দেখি। তবে,

দ্বিতীয় অংশে গিয়ে ভোল পাল্টায় ওমেলা।  জানেন তো সব সুখের জন্য মুল্য তো দিতেই হয়।  আর ওমেলার সেই মুল্য উসুল করে একটা ছোট্ট শিশু। যার বয়স দশের মতো হবে কিন্তু তাকে দেখতে লাগে বছর ছয়ের মতো৷  ওমেলার সবাই জানে তাদের সুখ সমৃদ্ধি সব আসে এই  শিশুর কাছ থেকে। অবিধিত নিয়ম হিসেবে সবাই জানে সামাজিক সমৃদ্ধি বজায় রাখতে হলে তাদের এই ছেলেকে আটকে রাখতে হবে এক ক্লজেটে। এই ক্লজেটে প্রবেশের কেবল একটাই দরজা, কোনো জানালা বা ভেন্টিলেটরের বন্দোবস্ত সেখানে নেই। সবাই জানে ছেলেটা সেই অন্ধকার ঘরে বন্দি আছে। মাঝে মাঝে অতি উৎসাহী কিছু লোক তাদের দেখতে যায়। কেউ কেউ বা ছুড়ে দেয় খাবার,  কেউ আবার মানবতা বিসর্জন দিয়ে উত্তম মধ্যম লাগায় ছেলেটাকে। কিন্তু তারা কেউ এই শহর থেকে প্রস্থান করে না।  তারা থেকে যায় ওমেলায় আজীবন।  প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। দ্বিতীয় অংশের স্বরুপ এখানেই সমাপ্তি ঘটে।

শেষ অংশে আমরা দেখতে পাই নতুন প্রজন্মের ওমেলাবাসীদের কেউ কেউ অনুভব করে শিশুটার কষ্ট,যন্ত্রণা।  তারা বুঝতে পারে তাদের শান্তি সব আসছে নিষ্পাপ কারো তীব্র যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে।  সেই ছেলের যে কখনও দিনের আলো দেখতে পায় না,  রাত দিন যার জন্য এক, ক্ষুৎপিপাসায় দেখার মত কেউ নেই। যাদের এই উপলব্ধি হয় তারাই চলে যায় ওমেলা ছেড়ে।  ছেলে বুড়ো সবাই চলে যায় দল বেধে, কিন্তু কিছু মানুষ তখনো পড়ে থাকে তথোকথিত সুখ নিয়ে ওমেলার জমিন আঁকড়ে।  এভাবেই  লেখিকা কোনো রকম ভনিতা এবং সুনির্দিষ্ট সমাপ্তি  ছাড়াই গল্পের ইতি টানেন গল্পের।

কিন্তু পাঠকের দিকে ছুঁড়ে যান একঝাঁক প্রশ্নবাণ।  প্রশ্ন তোলের নৈতিকতা কি তার দিকে, প্রশ্ন তোলেন পাঠক একজন ওমেলাবাসী হলে তিনিও কি ওমেলা ছেড়ে চলে আসতেন জঞ্জাল পরিপূর্ণ এই মানবজগতে  নাকি অনৈতিক জেনেও সুখের স্বরুপ আস্বাদন করতেন?

নৈতিকতা ও বাস্তববাদিতার এক উৎকৃষ্ট দর্শনের মিশেল এই গল্প “দ্যা ওয়ানস হু ওয়াক এওয়ে ফ্রম ওমেলাস”, যার পরিসর মোটে কুড়ি পেজ হলেও তার বিষয়বস্তু নেহাতই হালকা নয়। এই কুড়ি পেজের দর্শনের ব্যাখ্যা দিয়ে অনায়াশে দুইশো পেজ পাড় করে দেয়া যায়।  তবে কি এমন লুকানো রয়েছে গল্পে।  চলুন অল্প বিস্তর আলোচনা করা যাক।

সমালোচকদের মতে গল্পটা postmodernism এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ! তবে এই পোস্টমর্ডানিজম বস্তুটা কি?  দর্শন মতে আধুনিকায়ন যতটা উপকারী তার নেতিবাচকতাও নেহাতই কম নয়।  সভ্যতা ও আধুনিকায়নের ফলে জন্ম নেয়া সামাজিক অসামঞ্জস্যতা ও তার বাস্তবিক প্রভাবের আলোচনার নামই postmodernism.  এই গল্পর সেই বিষয়টার অত্যান্ত স্পষ্ট ও বাস্তব প্রয়োগ দেখতে পাই। ওমেলা সবদিক থেকে পরিপুষ্ট হলেও তার ভেতরটা একেবারেই ফাঁপা, সেখানে সামগ্রিক সুখ সমৃদ্ধির জন্য তারা নিজেদের বিবেকবোধ বিসর্জন দিতে পিছপা হয় না।

তেমনি আধুনিকায়নও আমাদের জনজীবনে প্রভাব রাখছে। মানুষের মাঝে আত্মকেন্দ্রিকতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এবং সেই আত্মকেন্দ্রিক কিছু লোক সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে সামষ্টিক সমৃদ্ধির বিবেচনা শুরু হলে আমাদের সমাজও পরিণত হতে পারে ওমেলায়। গল্পের আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ দিক নৈতিকতা।  ওমেলায় সবাই নিজের ইচ্ছায় থাকছে, কেউ কাউকে জোড় করছে না। তার মানে নৈতিকতা নেহাতই ব্যক্তিনির্ভর। সরবপরি গল্পের মুল উদ্দেশ্য সুখ সহজ নয়, প্রতিটা সুখী উপলব্ধির অন্তরালে চাপা পড়ে কিছু অদেখা গল্প।

এছাড়াও THE ONES WHO WALK AWAY FROM OMELAS গল্পের ব্যাখ্যা নানাজন নানান ভাবে দিয়েছেন, কারও মতে গল্পের শেষটা প্রকাশ করছে আত্মহত্যাকে।  কেউ কেউ এই গল্পে স্বর্গ মর্তের থিওরি প্রয়োগ করেছেন। কেউ কেউ গল্পে পেয়েছেন স্যাটানিজমের ছায়া। সব মিলিয়ে অল্প পরিসরের গল্পটি অস্ফুট কুহেলিকার সৃষ্টি করেছে যার ব্যাখ্যা শব্দসীমার দ্বারা মাপা অসম্ভব।  তো এই ছিল আজকের আয়োজন।  জানাতে ভুলবেন না আপনার ভালো মন্দ, অভিযোগ অনুযোগ সবকিছু। দেখা হবে জলদিই। ততদিন সুস্থ থাকুন৷

Previous articleন্যানো টেকনোলজি – বিজ্ঞানের এক অপার সম্ভাবনা
Next articleকিভাবে সবচেয়ে সহজ উপায়ে ইউটিউব ভিডিও ডাউনলোড করবেন।
আমার জন্য জীবন মানে বই আর সোশাল মিডিয়া। বইতে বাঁচি, সোশাল মিডিয়তে শ্বাস নিই। দুইয়ের কোনোটিতেই একটু ভাটা পড়লেই মেঘ জমে আমার আকাশে। বৃষ্টিভেজা দিনে বা খর রৌদ্র দুপুরে ছাদের রেলিং এ হাতে বই নিয়ে বা জানালার ধারে একমনে প্রিয় তারকাদের প্রোফাইল ঘাটা, দুটিতেই সমান পারদর্শী। মাঝে মাঝে Indie pop গানের জগতে বা কখনো kpop নিয়ে মাতি। কখনো korean rom-com মুভি দেখে হাসতে হাসতে প্রেমে পড়ি, কখনো Titanic দেখে বিশাদরসে হাবুডুবু খাই। জীবন এভাবে চলছে। মন্দ কি?