আর্টিকেল লেখার কৌশল

ইন্টারনেটের এই যুগে আর্টিকেল লিখে আয় করার কথা অনেকেই ভাবেন কিন্তু কিভাবে আর্টিকেল লিখতে হয় বা আর্টিকেল লেখার কৌশল অনেকেই জানেন না। আসলে আপনার ভাষার মাধুর্য যতই থাকুক না কেন আর্টিকেল লেখার কৌশল না মেনে কোন আর্টিকেল লিখলে আসলে তা কারও কোন কাজেই আসে না।

আজকাল ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে অনেকেই আর্টিকেল লিখে টাকা আয় করছেন। আপনার লেখা আর্টিকেল যদি ভাল মানের না হয় তাহলে আয় করবেন কিভাবে? এজন্য আয় করতে হলে ভাল মানের প্রফেশনাল আর্টিকেল রাইটার হওয়া জরুরী।

আর্টিকেল লেখার সকল নিয়ম সহজে জেনে নিন নিচের ভিডিও থেকে।

আর্টিকেল কেন কাজে আসে না ?

ভাবছেন এ আবার কেমন কথা? আমার লেখা কারও কোন কাজে আসবেনা? আসুন ব্যাপারটি একটু বুঝিয়ে বলি তবে সংক্ষেপে।

আপনি যে আর্টিকেলটি লিখছেন তা অবশ্যই কোন ওয়েবসাইটের জন্যই লিখছেন, তাই না? এই পৃথিবীতে কোটি কোটি ওয়েবসাইট আছে, আছে কোটি কোটি আর্টিকেল। পাঠক বা ভিজিটর তার প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে কোন ওয়েবসাইটের আর্টিকেল পড়বে তা নির্ভর করে সার্চ ইঞ্জিন তাকে কোন ওয়েবসাইটকে প্রথমে দেখাচ্ছে তার উপর। ব্যাপারটিকে বলে র‍্যাংকিং।

আপনার আর্টিকেল সার্চ ইঞ্জিনের র‍্যাংকিং এর কত নম্বরে আছে তার উপর নির্ভর করে পাঠক বা ভিজিটরের সংখ্যা। গুগল কিংবা অন্য যে কোন সার্চ ইঞ্জিনের একটা নিজস্ব এলগরিদম আছে যার উপর বেজ করে র‍্যাংকিং ঠিক করে। তাহলে আপনাকে সার্চ ইঞ্জিনের এলগরিদম মেনেই লিখতে হবে তবেই আপনার আর্টিকেল র‍্যাংকিং এর প্রথম দিকে থাকার সম্ভাবনা থাকবে।

আর্টিকেল লেখার কৌশল জানা কেন জরুরী তা অলরেডি আপনি আশা করি বুঝেই গেছেন। চলুন সামনে আগানো যাক। তাহলে ভাল আর্টিকেল এর দুইটি বৈশিষ্ট আমরা অলরেডি পেয়ে গেছি। সহজ ভাষায় বলতে পারি-

  • পাঠক বা ভিজিটর কি চায় সেটা মাথায় রেখে লেখা; রিডেবিলিটি বাড়ানো।
  • সার্চ ইঞ্জিন যেভাবে র‍্যাংকিং করে সেটা মাথায় রেখে লেখা; এসইও ফ্রেন্ডলি কনটেন্ট লেখা।

আর হ্যা, ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রে আসলে আর্টিকেল শব্দটি যায় না, একে বলা হয় কনটেন্ট রাইটিং। আপনি যদি একজন ভাল কনটেন্ট রাইটার হতে চান আপনাকে এই ব্লগের পরবর্তী লেখা পড়ে দেখার জন্য অনুরোধ করছি।

ভাল কনটেন্ট লেখক বা রাইটার হতে হলে আপনাকে নিচের বিষয়গুলো অবশ্য অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। আসুন সেরা আর্টিকেল রাইটিং টিপসগুলো জেনে নেই।

রিডেবিলিটি কিভাবে বাড়াবেন?

আর্টিকেল লেখার কৌশল জানতে হলে আপনার লেখার রিডেবিলিটি কি তা জানতে হবে। আসলে আপনার লেখটি পাঠক পড়ে কতটুকু মজা পাচ্ছে তা বুঝার সূচকই হল রিডেবিলিটি। তার মানে হল আপনার লেখার রিডেবিলিটি স্কোর ভাল হলেই পাঠক আপনার লেখা পড়ে মজা পাবে, আপনার লেখা পড়ার ব্যাপারে তার আকর্ষণ বাড়বে। রিডেবিলিটি স্কোর কিভাবে বাড়াবেন? পড়তে থাকুন।

কি ওয়ার্ড নির্বাচন করুন সবার আগে

কি ওয়ার্ড কি সেটা তো আপনাকে জানতে হবে সবার আগে। সংক্ষেপে জানুন- আমরা ইন্টারনেটে কোন কিছু খুঁজে বের করার জন্য সার্চ ইঞ্জিনে যা লিখে সার্চ করি তাই হল কি ওয়ার্ড। কোন কনটেন্ট লেখার শুরুতেই কি ওয়ার্ড এনালাইসিস করাটা খুবই জরুরী।

আপনি এমন কি ওয়ার্ড নিয়ে লিখলেন যা নিয়ে মানুষের কোন আগ্রহই নাই- তাহলে ঐ লেখা লেখার কোন প্রয়োজনই নাই, কারণ পাঠকই লেখার প্রাণ।

কি ওয়ার্ড নিয়ে আরও বিস্তারিত জানুন এখানেঃ এসইও কি এবং এসইও নিয়ে বেসিক ধারনা পর্ব ০৪ (কী ওয়ার্ড কি ও কত প্রকার)

আপনি যদি শুধু একজন কনটেন্ট রাইটার হয়ে থাকেন তাহলে কি ওয়ার্ড এনালাইসিসের কাজটা আপনার নয়। আপনাকে যিনি লিখতে বলেছেন এটা তার কাজ।

টপিক নিয়ে পড়াশোনা করুন প্রচুর

কি ওয়ার্ড নির্বাচনের পরের ধাপ হল পড়াশোনা করা। আপনার কি ওয়ার্ডের উপর গবেষণা করুন। গুগলের সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ করুন। ঐ সম্পর্কিত যত ওয়েবসাইট আছে সব ওয়েব সাইট থেকে ধারণা নিন। মনে রাখবেন, আপনার কন্টেন্টটি হতে হবে সবার চেয়ে বেশি তথ্যবহুল।

আর্টিকেল লেখার কৌশল এর মাঝে অন্যতম হল টপিক নিয়ে প্রচুর স্টাডি করা। যত পড়বেন তত জানবেন, তত ভাল ডেলিভারি দিতে পারবেন।

আর্টিকেল লেখার কৌশল

প্রয়োজনে আরও সময় নিন। একটি লেখা একদিনেই লিখে ফেলতে হবে এমন নয়। আরও পড়াশোনা করুন। যত বেশি পড়বেন, তত বেশি জানবেন- আপনার লেখাও তত বেশি তথ্য সমৃদ্ধ হবে। আপনার লেখাটি র‍্যাংকিং এ আশার সম্ভাবনাও তত বাড়বে।

আকর্ষণীয় শিরোনাম দিন

পাঠক শুধুমাত্র আপনার কন্টেন্টের শিরোনাম দেখেই আপনার লেখাটি পড়ে দেখার সিদ্ধান্ত যেমন নিতে পারে তেমনি শিরোনাম পছন্দ না হলে ফিরেও যেতে পারে। আর্টিকেল লেখার কৌশল এর মাঝে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার এটি।

তাই আপনার লেখার মতই জরুরী হলে আপনার লেখার শিরোনাম। তাই শিরোনাম আকর্ষণীয় করার ব্যাপারে জোড় দিন। একটি দুর্দান্ত শিরোনাম নির্বাচন করুন।

ভূমিকা লিখুন আর তা অবশ্যই আকর্ষণীয় হওয়া চাই

একটা ভাল মানের কন্টেন্টের একটা ভাল ভূমিকা থাকা দরকার। আপনার ভূমিকা এমন হওয়া উচিত যা আপনার পাঠককে সামনের দিকে আরও পড়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করবে। প্রথম ২৫০ থেকে ৩০০ শব্দের মধ্যেই আপনার পাঠককে বুঝিয়ে দিতে হবে যে তিনি সঠিক জায়গাতেই এসেছেন এবং এখান থেকেই তিনি তার কাংখিত তথ্যটি পেতে যাচ্ছেন।

সূচিপত্র সংযুক্ত করুন

আপনার লেখার শুরুতে একটি সূচিপত্র দিন। এটি যেমন একটি লেখাকে আকর্ষণীয় করে তেমনি আপনার পাঠককে শুরুতেই জানিয়ে দিতে পারে তার আকাংখিত তথ্যটি কোথায় আছে।

ছোট ছোট প্যারাগ্রাফ আকারে লেখুন

আপনার লেখাটি ছোট ছোট প্যারা আকারে লেখুন। বড় বড় প্যারা অনেক ক্ষেত্রেই পাঠককে বিরক্ত করে। অনেকেই বড় প্যারা পড়তে চান না। দুই-তিন বাক্য দিয়েই একটি প্যারা শেষ করুন। প্রতিটি বাক্যই ছোট রাখুন।

প্রতিটি বিষয়ের হেডিং দিন

আপনার লেখার প্রতিটি বিষয়ের হেডিং যুক্ত করুন, এতে পাঠকের আকর্ষণ বাড়ে। ঠিক ছোট বেলায় স্কুলের রচনা যেভাবে লিখেছেন। H1, H2, H3 ইত্যাদি মেনে হেডীং দিন।

সহজ ভাষা ব্যবহার করুন

মনে রাখবেন আপনার কনটেন্ট কোন সাহিত্য না, আপনি আপনার পাঠকের মান কি তাও জানেন না। তাই সহজবোধ্য প্রাঞ্জল ভাষায় লিখুন। জটিল বাক্য ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। আর্টিকেল লেখার কৌশল মানেই সহজ প্রাঞ্জল ভাষায় আপনার পাঠককে তার দরকারি তথ্য উপস্থাপন করা।

আকর্ষণ ধরে রাখুন

আপনার লেখাটি যেন কোনভাবেই খাপছাড়া না হয়। একেকটি বাক্যের সাথে অন্য বাক্যের কিংবা একেক প্যারার সাথে অন্য একটি প্যারার যেন মিল থাকে। লেখার আকর্ষণ ধরে রাখুন। পাঠক যেন ছুটে যেতে না পারে।

মনে রাখবেন, টিভির রিমোট পাঠকের হাতে সে চাইলেই চ্যানেল পরিবর্তন করে নিতে পার, মানে অন্য সাইটে চলে যেতে পারে তার ভাল না লাগলে। সবাই আর্টিকেল লেখার কৌশল এর এই কৌশল অবলম্বন করতে পারেনা।

অপ্রাসঙ্গিক বিষয় এড়িয়ে চলুন

অপ্রয়োজনীয় কথা এড়িয়ে চলুন। এতে পাঠক যেমন আকর্ষণ হারিয়ে ফেলে তেমনি আপনার লেখার মানও কমে যায়। অযথা শব্দ বাড়িয়ে কনটেন্ট বড় করার কোন দরকার নেই। তাই অযথা শব্দের কলেবর বাড়িয়ে পাঠককে বিরক্ত করবেন না।

বুলেট পয়েন্ট ব্যাবহার করুন

প্রয়োজনে বুলেট পয়েন্ট ব্যবহার করুন। এতে পাঠক সহজে তার জন্য দরকারি তথ্য পেতে পারে। লেখার সৌন্দর্যও এতে বাড়ে।

নিরিবিলি জায়গায় লিখুন

আপনি অবশ্যই লেখার জন্য একটি নিরিবিলি জায়গা নির্বাচন করবেন। কোলাহলপূর্ণ জায়গায় লিখতে বসবেন না। এতে আপনার মনোযোগ ব্যহত হবে। আর কে না জানে, মনোযোগ দিতে না পারলে আপনি ভাল আউটপুটও দিতে পারবেন না।

প্রাসঙ্গিক ছবি সংযুক্ত করুন

একটি ছবি একসাথে অনেক কথা বলে। লেখকই বুঝতে পারে তার লেখার সাথে কোন ছবিটি যায়। তাই আপনার লেখার সাথে যায় এমন তথ্য ভিত্তিক ছবি প্রয়োজনে যুক্ত করতে পারেন। এতে লেখার আকর্ষণ বাড়বে বই কমবেনা। পাঠকও ধরে রাখতে পারবেন। এটিও আর্টিকেল লেখার কৌশল এর মাঝে অন্যতম।

তবে ছবি যেন অবশ্যই কপিরাইট ফ্রি হয়, এ বিষয়ে নজর দিতে হবে। কপিরাইট ফ্রি ছবির ব্যাপারে জানতে হলে এখানে দেখুন।

প্লাগিয়ারিজম চেক করে দেখুন

আজকাল নেট ঘাটলে একই টপিকে অনেক লেখাই চোখে পরে। আপনার নির্বাচিত কি ওয়ার্ডেও অনেক লেখা পাবেন। তাই বলে কপি করে অন্যের লেখা লিখবেন না।

প্রয়োজনে অন্যের লেখা পড়ুন, বুঝুন তারপর নিজেই নিজের মত করে লিখুন। সরাসরি কপি করলে প্লাগিয়ারিজম চেক করে ধরা খাওয়া আজকাল ওয়ান-টুর ব্যাপার মাত্র। তাই অন্য কেও ধরার আগে নিজেই চেক করে দেখুন। অনলাইনে ফ্রি প্লাগিয়ারিজম চেক করা যায় এমন অনেক সাইট আছে। যেমনঃ ডুপ্লিচেকার, স্মলএসইওটুলস ইত্যাদি।

প্লাগিয়ারিজম কি জানতে চান? আমার এই লেখাটি পড়ুন। লিংক এখানে।

নিজেই নিজের লেখা বারবার পড়ুন

লেখা শেষ হলে নিজের লেখা বারবার পড়ুন। বানান এবং গ্রামাটিক্যাল ভুল থাকলে তা শুধরে নিন। এটা খুবই দৃষ্টিকটু। বারংবার লেখা না পড়লে নিজের ভুল নিজে বের করা খুবই কঠিন কাজ।

এসইও ফ্রেন্ডলি কনটেন্ট কিভাবে লিখবেন

এতক্ষণ আমি যা বলেছি তা সবই পাঠক কেন্দ্রিক। এবার আসুন কিভাবে সার্চ ইঞ্জিন র‍্যাংকিং মাথায় রেখে কিভাবে লিখবেন সেটা নিয়ে আলোচনা করা যাক। আর্টিকেল লেখার কৌশল জানতে হলে এটাও আপনাকে মাথায় রাখতেই হবে।

এসইও ফ্রেন্ডলি কনটেন্ট লিখুন। এসইও (SEO) মানে হল সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন। বিস্তারিত জানতে হলে আপনাকে নিচের লেখগুলো পড়ে দেখতে হবে। কিন্তু একজন কনটেন্ট রাইটারের এত বেশি জানার প্রয়োজন আমি দেখছি না। তারপরেও যদি আপনার জানার আগ্রহ প্রবল হয়, লিংকগুলো দিয়ে দিচ্ছি।

এসইও ফ্রেন্ডলি কনটেন্ট লেখার জন্য আপনাকে নিচের বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবেঃ

  • আপনার হেডিং (H1) এ অবশ্যই আপনার কি ওয়ার্ড থাকতে হবে। এটা মাস্ট।
  • প্রথম প্যারা বা ভূমিকাতে আপনার কি ওয়ার্ড থাকতে হবে।
  • সাব হেডিং (H2) এ আপনার কি ওয়ার্ড থাকতে পারে, নাও থাকতে পারে।
  • আপনার আর্টিকেল এ কি ওয়ার্ড সমানভাবে বিন্যাস্ত থাকতে হবে। আবার অতিরিক্ত থাকা যাবেনা।
  • উপসংহারে অবশ্যই আপনার কি ওয়ার্ড থাকতে হবে।
  • আপনার লেখার সাথে সম্পর্কিত অন্য কোন লেখা একই ওয়েবসাইটে যদি থাকে তার লিংক থাকতে হবে।
  • অন্যের লেখা কপি করা যাবেনা। তবে রেফারেন্স হিসেবে দেয়া যেতে পারে, আউট বাউন্ড লিংক হিসেবে দিয়ে দিন।
  • ছবি দিলে সেটাও কোথাও থেকে মানে কোন ওয়েবসাইট থেকে কপি করা যাবেনা। অনেক সাইট আছে যেখান থেকে আপনি কপি রাইট ফ্রি ইমেজ নিতে পারেন। যেমনঃ ক্যানভা, পিক্সেলস ইত্যাদি।

আশা করি আমার আজকের ব্লগ পড়ে আপনি আর্টিকেল লেখার কৌশল নিয়ে বেশ ভাল ভাবেই জানতে পেরেছেন। তবে সবকিছু ত আর একবারেই হয় না। চর্চা করতে থাকুন ধীরে ধীরে আপনিও একজন ভাল মানের প্রফেশনাল কনটেন্ট রাইটার হয়ে উঠতে পারবেন।

ধন্যবাদ সবাইকে।

Previous articleকিভাবে প্রিন্টার ওয়াইফাইয়ের সাথে যুক্ত করবেন
Next articleবারকোড কি? বারকোড কিভাবে কাজ করে? -বিস্তারিত!!
যে ব্যর্থ সে অজুহাত দেখায়, যে সফল সে গল্প শোনায়। আমি অজুহাত নয় গল্প শোনাতে ভালবাসি। আসুন কিছু গল্প শুনি, নিজের গল্প অন্যকে শুনাই।

2 COMMENTS

  1. ধন্যবাদ আপনার পোস্ট এর জন্যে। এখানে প্রতিটা পয়েন্ট খুব সুন্দর করে উপস্থাপন করা হয়েছে।