তিনটি বাংলা বই

 

আমাদের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আমরা বিভিন্ন পরিবেশের মধ্য দিয়ে যাই। পারিবারিক পরিবেশ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগত পরিবেশ, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গ সহ আরো অনেকগুলো পরিবেশ আমাদের জীবনের সাথে জড়িত। এতে করে আমাদের মানসিক বিকাশ হয় একেক জনের একেক রকম। সবাই সবকিছু সমানভাবে নিতে পারে না। সমান ভাবে ভাবতেও পারে না। যারা যে পরিবেশে বেড়ে উঠে তারা সেভাবেই সবকিছু ভাবে। কিন্তু আমাদের জীবনের কিছু ঘটনা, নিজস্ব কিছু কর্মকাণ্ড আমাদের সেই চিরচেনা পরিবেশের উপর প্রভাব ফেলে। আমাদেরকে ভিন্নভাবে ভাবতে শেখায়। আমরা এতদিন যেভাবে ভেবে এসেছি তাতে আঘাত করে। নিয়মিত, অভ্যাসে পরিণত হওয়া মস্তিষ্ককে নতুন ভাবে ভাবতে শেখায়৷ ভ্রমণ, সিনেমা দেখা কিংবা বই পড়া আমাদের সেই কিছু কর্মকাণ্ডগুলোর মধ্যে অন্যতম।আমি আজ তিনটি বাংলা বই সম্পর্কে আলোচনা করবো যা আমাকে আমার জীবন নিয়ে দ্বিতীয়বার ভাবতে বাধ্য করেছে। যে বইগুলো পড়ে আমি বুঝতে পেরেছি না এভাবে চক্রে আটকিয়ে গেলে হবে না।আমাকে নতুন করে শুরু করতে হবে। প্রিয় পাঠক, আজ আমি আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেব আমার জীবন বদলে দেয়া তিনটি বাংলা বই এর সাথে। সাথেই থাকুন। আশা করি ভাল লাগবে।

 

মরণ বিলাসআহমদ ছফা

মরণ বিলাস- আহমদ ছফা

মরন-বিলাস বইয়ে রাত ১২:১৩ মিনিট থেকে ভোর পর্যন্ত মৃত্যুশয্যায় কাতর মন্ত্রী তাঁর সহচর মাওলা বক্সের কথোপকথনে মন্ত্রীর শৈশব থেকে যৌবনের সব গল্প উঠে আসে। আর তার সাথে সাথে উঠে আসে এমন এক সমাজের গল্প যেখানে অনৈতিকতাই উপরে উঠার একমাত্র সিঁড়ি। কিন্তু সব কিছুরই যেমন শেষ আছে তেমনিভাবে উপরে উঠারও শেষ আছে। সারাজীবনের অনৈতিক কর্মকান্ডের স্মৃতিচারণের সময় জীবনের শেষ মুহুর্তে স্ত্রীসন্তানরা যখন কেউই তার পাশে ছিলো না, তা নিয়েও ছিলো আফসোস আর হতাশা। একবার ভাবুন, কল্পনা করুন নিজেকে সেই অসহায় পরিস্থিতিতে।

বইটি পড়ার সময় নিজের অজান্তেই আমার চোখের সামনে চলে এসেছিলো বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা। আজকাল প্রায় শুনতে পাই বৃদ্ধ বয়সে ছেলেমেয়েস্ত্রী কেউই দায়িত্ব নিতে চায় না। সারাজীবন যাদের জন্য এতকিছু করা হলো তারাই উঠতে দেয় না নিজের বাসায়৷ তাদের প্রায়ই দেখা যায় রাস্তাঘাটে কিংবা শেষ আশ্রয় স্থল কারো দয়ায় বৃদ্ধাশ্রমে। পত্র-পত্রিকায় প্রায়ই এমন খবর দেখা যায়।

বইটি আমাকে মনে করিয়ে দেয় এই পৃথিবী আমার জন্য ক্ষনস্থায়ী। এখানে আমি সারাজীবন থাকবো না। মানুষের সাথে অন্যায় করলে আমার জীবনেও ফলাফল ভালো হবে না। বইটি পড়লে আপনার জীবনবোধ পালটে যেতে বাধ্য। এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলার মত বাংলা বই। 

অনলাইনে কিংবা ডাউনলোড করে পড়তে চাইলে এই লিংক এ পড়ুন।

 

মৃত্যুক্ষুধাকাজী নজরুল ইসলাম

মৃত্যুক্ষুধা - কাজী নজরুল ইসলাম

একদিকে কৃষ্ণনগর গ্রামে প্যাকেলের গরীব পরিবারের ক্ষুধায় মৃত্যু আরেকদিকে সবকিছু থাকা সত্বেও শ্রমজীবী মানুষের জন্য আন্দোলনে নামা আনসারের কাহিনি নিয়েই রচিত নজরুলে অসাধারণ এই উপন্যাসটি শুধু আমি জীবন নয় পুরো বাঙ্গালির জীবনবোধকে নাড়া দিয়েছে। পরিবারের এক মাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি প্যাকেলের উপর বিশাল পরিবারের দায়িত্ব। কিন্তু তার একার পক্ষে সম্ভব হয়নি সবার মুখে খাবার তুলে দিয়ে ভাইয়ের সন্তানদের বাঁচিয়ে রাখা।  অন্যদিকে আনসার গঠন করে শ্রমিক সংঘ। দেখা হয় তার পুরাতন প্রেমিকার সাথেও। কি হয়েছিলো সেইসবের পরিণতিজানতে বইটি পড়ে ফেলুন।

একটি পরিবারের দায়িত্ব, খাবারের কষ্ট আমাকে চমকিয়ে দিয়েছিলো। দিনে তিন বেলা খাবার খেয়েও আমাদের অভিযোগের শেষ থাকে না, যেখানে সেখানে খাবার নষ্ট করি, একটি বারও ভাবি না কত মানুষ না খেয়ে আছে। অন্তত একদম সমস্যা না থাকলে আমার দ্বারা একটি ভাতও যেন নষ্ট না হয় আমি বিষয়টি সব সময় খেয়াল রাখি। পড়ে দেখতে পারেন বাংলা বই টি, হয়তো আপনার চিন্তাতেও প্রভাব ফেলতে পারে বৈ কি?

বইটি অনলাইন থেকে ডাউনলোড করে পড়তে চাইলে এখানে

 

তেইশ নম্বর তৈলচিত্রআলাউদ্দিন আল আজাদ

তেইশ নম্বর তৈলচিত্র-আলাউদ্দিন আল আজাদ

উপন্যাসের গল্পটি একজন শিল্পীর, যার আঁকা ছবি এক্সিবিশনে প্রথম পুরস্কার পেয়েছে। সেই ছবির পিছনের গল্প নিয়েই এগোতে থাকে মনস্তাত্ত্বিক এই ছোট উপন্যাসের গল্পটি। সেখানে সে তার বন্ধুর বোনের প্রেমে পড়ে, বিয়ে করে এবং বিয়ের পর আবিষ্কার করে তার প্রেমিকা আগে ধর্ষণের স্বীকার হয়েছিলো। ঠিক সেই মুহুর্তে কী করেছিলো সে? কাহিনিটি জানতে বইটি পড়ুন।

কিন্তু ভাবুন আপনি কী করবেন?? ছেড়ে দিবেন নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে? নাকি তার সাথেই থেকে যাবেন? নিজেকে কল্পনা করুন ঘটনার মূল চরিত্রের সাথে। সাথে বর্তমান সমাজের কথা চিন্তা করুন যেখানে ঘন্টায় ঘন্টায় কেউ না কেউ ধর্ষণ হচ্ছে। আপনার প্রেমিকা কিংবা আপনার বিবাহিত স্ত্রীর সাথেও হতে পারে এমন কিছু, যা মোটেই অস্বাভাবিক নয়। বইটি শুধু আমার চিন্তা ভাবনাই পরিবর্তন করেনি সাথে জায়গা করে নিয়েছে আমার পড়া সেরা বাংলা বই গুলোর মধ্যেও।

অনলাইন থেকে ডাউনলোড করে পড়তে চাইলে এখানে আসুন।

প্রিয় পাঠক, উপরের তিনটি বই আমাদের সমাজের বাস্তব চিত্র তুলে ধরে আমাকে পালটে দিয়েছে এক অন্য মানুষে। জীবনবোধ নিয়ে ভাবতে শিখিয়েছে। মরন-বিলাস যেমন আমাকে শিখিয়েছে পৃথিবীকে তুচ্ছজ্ঞান করে আমার আপরাধ প্রবন মনকে নিয়ন্ত্রন করতে, তেমনি মৃত্যুক্ষুধা বইটি আমাকে শিখিয়েছে জীবনের কঠিন বাস্তবতা আবার তেইস নম্বর তৈলচিত্র আমাকে মনস্তাত্ত্বিক শিক্ষা। এছাড়াও নিচের ব্লগ থেকে আরও ৭টি বাংলা বইয়ের তালিকা নিতে পারেন।

এই লকডাউনে আপনার পড়ার তালিকায় রাখতে পারেন  ৭ টি বাংলা বই।

ধন্যবাদ সবাইকে।

Previous articleআপনার বাচ্চা খেতে না চাইলে কি করবেন ?
Next articleঢাকার আশেপাশে বেড়ানোর জায়গা – কম সময়ে ঘুরে আসুন (পর্ব- ১)
Rasel Khan
আমি মোঃ হাবিবুর রহমান রাসেল৷ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ অধ্যয়নরত। বই পড়তে ভালোবাসি। বইয়ের গ্রুপ গুলোতে মাঝে মাঝে রিভিউ লিখি৷ যা পড়ি, তা সবাইকে জানাতে ইচ্ছে করে। সেই আগ্রহ থেকেই টুকটাক লেখার চেষ্টা করি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here