google থেকে টাকা ইনকাম

আজকাল পড়াশোনা জানা কেও যদি বেকার হয়ে ঘরে বসে থাকে তাকে আপনি এককথায় অপরাধী বলতে পারেন। কারণ, ডিজিটাল এই যুগে ইনকামের পথের কোন অভাব নেই। দরকার শুধু নিজের স্কিল ডেভেলপ করা এবং নিজের স্বদিচ্ছা। আর এই ইনকাম আপনি google থেকেই করতে পারেন। অবাক হচ্ছেন, তাইনা?  ভাবছেন google থেকে আবার কিভাবে টাকা ইনকাম করা যায়? আপনি তো আর google এ চাকরি করেন না। google থেকে টাকা ইনকাম করার জন্য আপনাকে যে google এ চাকরি করতে হবে তা নয়। google এ চাকরি না করেও প্রতি মাসে মোটা টাকা google থেকে টাকা ইনকাম করতে পারেন।

গুগল থেকে টাকা আয় করার বেশ কিছু উপায় আছে। যার যে কোন একটি যদি আপনি করতে পারেন আপনাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবেনা। google থেকে টাকা ইনকাম করার উপায় হলঃ

  • ব্লগিং করে google থেকে টাকা ইনকাম
  • ভিডিও বানিয়ে google থেকে টাকা ইনকাম
  • এফিলিয়েশন করে google থেকে টাকা ইনকাম
  • মোবাইল এ্যাপ বানিয়ে google থেকে টাকা ইনকাম

ব্লগিং করে google থেকে টাকা ইনকাম

ব্লগিং শব্দটি আপনার কাছে আপরিচিত হলে একটু ব্যাখ্যা প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি। ব্লগিংকে সহজ ভাষায় আপনি লেখালেখি বলতে পারেন। তবে, এই লেখালেটি একটু ভিন্ন ধাঁচের। একে আপনি কনটেন্ট রাইটিং বলতে পারেন।

ব্লগিং নিয়ে বিস্তারিত জানতে পড়ুনঃ ব্লগিং কি? কিভাবে ব্লগিং থেকে টাকা আয় করতে পারবেন।

আসুন মূল কথায় ফিরে আসি। ব্লগিং করতে হলে আপনার যা লাগবে তা হল আপনার একটিই নিজস্ব ওয়েবসাইট দরকার হবে যেখানে আপনি লেখালেখি করবেন। সবচেয়ে ভাল হয় আপনি যে বিষয়ে অভিজ্ঞ, যে বিষয়ে লিখতে আপনার কখনও বিরক্তি আসবেনা, মাসের পর মাস যে বিষয় নিয়ে কাজ করলেও আপনার ক্লান্তি আসবেনা এমন একটি বিষয়কে সিলেক্ট করলে। কনটেন্ট লিখতে গিয়ে হাল ছেড়ে দিলে হবেনা।

কনটেন্ট নিয়ে বিস্তারিত জানতে পড়ুনঃ কিভাবে ভাল কনটেন্ট রাইটার হবেন?

আপনার ওয়েবসাইট এর এই বিষয়বস্তুকে বলা হয় নিশ। নিশ নির্বাচনের ক্ষেত্রে আপনাকে হতে হবে খুব সাবধানী।

এখন কথা হল, আপনি আপনার ওয়েবসাইট ব্যবহার করে কিভাবে google থেকে টাকা ইনকাম করতে পারবেন?

এখানেই চলে আসে বিজ্ঞাপনের আর গুগল এ্যাডসেন্স এর প্রসংগ। গুগল এ্যাডসেন্স হল এ্যাড নেটওয়ার্ক। যার কাজ হল বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এ্যাড সংগ্রহ করা। এবং বিভিন্ন ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা।

আপনার ওয়েবসাইটে ভিজিটর থাকলে, আপনি গুগল এ্যাডসেন্স আপনার ওয়েবসাইটে এপ্লাই করলে গুগল যদি এপ্রুভ করে তাহলে আপনার ওয়েবসাইটে গুগল এ্যাডসেন্স এর পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হবে। গুগল এইসব বিজ্ঞাপন থেকে যা আয় করবে আপনি তার দুই তৃতীয়াংশ (৬৮%) টাকা আপনার একাউন্টে পেয়ে যাবেন।

গুগল এডেন্স থেকে টাকা আয়ের পরিমান আসলে নির্ভর করে আপনার ওয়েবসাইটে ভিজিটর কেমন তার উপর। আপনার কাজ হল আপনার ওয়েবসাইটে ভিজিটর নিয়ে আসা। এজন্য আপনাকে আরেকটি জিনিস জানতে হবে যা না জানলে আসলে আপনি মোটামুটি ব্যর্থ হবেন, তা হল এসইও (SEO)।

আপনাকে মোটামুটি লেভেলের এসইও(SEO) জানা থাকতেই হবে। শুনে ভয় পাবেন না। এটাও আপনি পারবেন না, তেমন কিছুই নয়।

এসইও(SEO) নিয়ে বিস্তারিত জানতে পড়ুনঃ এসইও কি? এসইও  নিয়ে বেসিক ধারনা।

কি কি নিশ নিয়ে আপনি কাজ করতে পারেন বলে ভাবছেন? শিক্ষামূলক, ট্রাভেল ব্লগ, ছবি, রিভিও, ইসলামিক, রান্নার রেসিপি, ইত্যাদি নানা নিশ নিয়ে আপনি কাজ করতে পারেন।

একটি ওয়েবসাইট নিয়ে আরও নানা ভাবে কাজ করা যায়। এ্যাডসেন্স তার মাঝে মাত্র একটি উপায়।

ভিডিও বানিয়ে google থেকে টাকা ইনকাম

এমন মানুষ দেশে কমই আছেন যারা ইউটিউব চিনেন না, দিনে একবার হলেও ইউটিউবের ভিডিও দেখেন না। আর আপনি অবশ্যই জানেন ইউটিউব গুগলের কম্পানি। গুগল ইউটিউবকে ২০০৫ সালে কিনে নেয়।

সে যাই হোক, ইউটিউব হল একটি অনলাইন ভিডিও শেয়ারিং ওয়েবসাইট। কিন্তু এই ইউটিউবে যত ভিডিও রয়েছে তার একটি ভিডিওও ইউটিউব নিজে বানায়নি। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইউটিউবারেরা এই ভিডিও কনটেন্টগুলো তৈরি করেছেন। কারন তারা সেখান থেকে টাকা ইনকামের রাস্তা করে নিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হল কিভাবে? ভিডিও বানিয়ে কিভাবে google থেকে টাকা ইনকাম করা যায়।

খুব সহজ কাজ। আপনার জিমেইল একাউন্ট দিয়ে সবার আগে ইউটুবে একটি চ্যানেল খুলে নিবেন। তারপর আপনি ভিডিও তৈরি করে সেখানে আপ্লোড দিতে থাকবেন। আপনার ভিডিও যত মানুষ দেখবে তত আপনার লাভ? কিন্তু কিভাবে।

এখানেও চলে আসছে বিজ্ঞাপনের প্রশ্ন। আপনার ভিডিও এর ফাকে ফাকে ইউটিউব বিজ্ঞাপন প্রচার করবে। সেখান থেকে যা আয় হবে আর একটি শেয়ার আপনার একাউন্টে জমা হবে।

ইউটিউব চ্যানেল

উপরে একটি বাংলা ইউটিউব চ্যানেলের স্ক্রিনশট দেয়া হল।

এখানেও কিছু জিনিষ জানার বা শেখার রয়ে গেছে।

  • আপনার ভিডিও বানানোর বা এডিটিং করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
  • কিছু এসইও জ্ঞানো থাকতে হবে।

এক্ষেত্রেও আপনাকে আপনার শখের বিষয়টিকে মাথায় রেখেই চ্যানেলের নিশ নির্বাচন করতে হবে। তা নাহলে আপনি একদিন থেমে যাবেন। আপনার google থেকে টাকা ইনকাম করার পথও বন্ধ হয়ে যাবে।

কোন সফটওয়্যার দিয়ে ভিডিও এডিট করবেন? পড়ুনঃ ভিডিও এডিট করার সেরা এ্যাপ নিয়ে লেখাটি।

আর ইউটিউব ভিডিও বানাতে কি কি লাগে জানতে পড়ুনঃ ইউটিউব ভিডিও বানাতে কি কি লাগে?

তবে মনে রাখবেন, আপনার চ্যানেলকে আগে মনিটাইজ করে নিতে হবে। এজন্য আপনার লাগবে ১০০০ সাবস্ক্রাইবার এবং ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ আওয়ার। তাহলেই আপনার চ্যানেলে প্রচারিত বিজ্ঞাপনের জন্য আপনাকে পেমেন্ট করবে ইউটিউব।

আপনার ইউটিউব চ্যানেল যদি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় তাহলে আপনি এই চ্যানেল ব্যবহার করে আরও অনেক উপায়ে টাকা ইনকাম করতে পারবেন। শুধু ইউটিউব এর উপর আপনাকে ভরসা করতে হবেনা। যেমন- আপনি প্রোডাক্ট সেল করতে পারবেন। স্পন্সরশীপ পেতে পারেন বিভিন্ন কম্পানি থেকে।

কি কি নিশ নিয়ে আপনি কাজ করতে পারেন বলে ভাবছেন? নাচ-গান, কৌতুক, নাটক, রান্না, ট্রাভেলিং ব্লগ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ইনফরমেটিভ ইত্যাদি যেকোন বিষয়েই আপনি চ্যানল খুলে ভিডিও আপলোড করতে পারেন।

এফিলিয়েশন করে google থেকে টাকা ইনকাম

প্রথমে আপনাকে বুঝতে হবে এফিলিয়েশন কি? কিভাবে এটা কাজ করে? আপনারা নিশ্চই আলিবাবা কিংবা এমাজন ওয়েবসাইট কি সেটা জানেন। হ্যা, এরা ই-কমার্স ভিত্তিক একটি সাইট। এখানে নানা ধরনের পন্য বিক্রয় করা হয়।

এফিলিয়েশন এর সোজা মানে হল এদের ওয়েবসাইট থেকে আপনি পন্য বিক্রয় করে সেখান থেকে কমিশন পাওয়া। এজন্য আপনি গুগল এর যে সারভিস্টি ব্যবহার করতে পারেন তা হল গুগল এ্যাড ওয়ার্ড। গুগল এ্যাড ওয়ার্ড এ আপনি বিজ্ঞাপন দিবেন, সেই বিজ্ঞাপন থেকে কেও যদি আপনার লিংকে ক্লিক করে কোন পন্য কিনে আপনি আপনার কমিশন আপনার একাউন্টে পেয়ে যাবেন।

একই কাজ আপনি আপনার ওয়েবসাইটে রিভিও লিখে কিংবা ইউটিউব চ্যানেল থেকেও করতে পারেন। কমিশন আপনার পকেটে চলে আসবে।

গুগল এ্যাড ওয়ার্ড নিয়ে যদি বুঝতে সমস্যা হলে, আরেকটু বলে রাখি।

আপনি যখন গুগলে কোন কিছু সার্চ দেন তখন দেখবেন, সার্চ বক্সের নিচে দুই-একটি অপশন থাকে যার বাম পাশে  Ad লেখা থাকে। যার মানে হলে কেও একজন আপনি যে কি ওয়ার্ড দিয়ে সার্চ দিয়েছেন সেই কি ওয়ার্ডের বিপরীতে এই বিজ্ঞাপন দেবার জন্য গুগলকে পেমেন্ট করেছে।

gugole থেকে টাকা আয়

উপরের ছবিতে খেয়াল করে দেখুন, আমি যখন iq option লিখে সার্চ দিয়েছি গুগলে, গুগল সার্চ রেজাল্টের প্রথমেই যে রেজাল্ট দেখিয়েছে সেটি আসলে আকটি বিজ্ঞাপন। হয়ত কেও একজন মার্কেটিং করার জন্য এই বিজ্ঞাপনটি গুগল এ্যাড ওয়ার্ডের মাধ্যমে দিয়েছে।

যেকারনে গুগল এই বিজ্ঞাপন দেখাচ্ছে। এই বিজ্ঞাপনে যদি আপনি ক্লিক করেন তাহলে যে ব্যক্তি ঐ বিজ্ঞাপন দিয়েছে তার কাছ থেকে গুগল টাকা নেবে।

মোবাইল এ্যাপ বানিয়ে google থেকে টাকা ইনকাম

এটিও google থেকে টাকা ইনকাম করার আরেকটি বেশ জনপ্রিয় মাধ্যমে। কিন্তু এজন্য আপনাকে অবশ্যই এন্ড্রয়েড এ্যাপ তৈরি করতে জানতে হবে।

আপনি মোবাইল এ্যাপস বানিয়ে গুগল প্লে স্টোরে সাবমিট করবেন। এরপর কেও যদি আপনার এ্যাপসটি ডাউনলোড করে ইন্সটল করে তাহলে গুগল এ্যাপ ব্যবহারকারিকে বিজ্ঞাপন দেখাবে।

ব্লগ এবং ইউটিউবের মতই বিজ্ঞাপন দেখিয়ে যে টাকা গুগল আয় করবে তার একটা অংশ গুগল আপনাকে পেমেন্ট করবে।

বুঝতেই পারছেন, আপনাকে এ্যাপ বানানোর কায়দা জানতে হবে। এক্ষেত্রে আপনাকে একটু প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ জানা থাকা বার কিছুটা আইডিয়া থাকা লাগবে। তাহলে, আপনি পারবেন। আপনার যদি শিখার আগ্রহ থাকে তাহলে আপনি এই কাজে নামতে পারেন।

অন্যান্য সেবা থেকে টাকা আয়

এছাড়াও গুগল পে (G pay) থেকেও টাকা ইনকাম করা যায়। এটা মূলত একটি পেমেন্ট সিস্টেম যেমন পেপাল, নেটেলার কিংবা স্ক্রিল ইত্যাদি। এর মাধ্যমে আপনি মোবাইল ফ্লেক্সি, টাকা ট্রান্সফার, বিদ্যুৎ বা ইউটিলিটি বিল ইত্যাদি দিতে পারবেন।

জিপে বা গুগল পে তে অন্যদের ইনভাইট করে আপনি ইনকাম করতে পারেন।

আর তাছাড়া আপনি অনলাইনে যেখান থেকেই আয় করেন না কেন দেখবেন গুগলের সাথে সেটি কোন না কোনভাবে জড়িত।

google থেকে টাকা ইনকাম নিয়ে শেষ কথা

আমি আগেই বলছি, আজকের দিনে আসলে ঘরে বসে থেকে বেকার থাকাটা একটি অপরাধ। আপনার সামান্য নলেজ ধীরে ধীরে আপনাকে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে যেখান থেকে আপনাকে আর পেছনে ফিরতে হবেনা। তবে কয়েকটা বিষয় আপনাকে মনে রাখতে হবে, যেগুলো না থাকলে আপনি আসলে সফলতার কাছেও যেতে পারবেননা।

প্রথম যেটি লাগবে, সেটি হল- কাজ করার মত অফুরন্ত সময়। আপনি যদি মনে করেন আপনি অন্য একটি কাজের ফাকে ফাকে এসব চালিয়ে যাবেন তাহলে আপনি হয়ত টাকা আয় করতে পারবেন কিন্তু  সেটা হবে খুবই সামান্য। আপনি যদি অনেক বেশি টাকা আয় করতে চান আপনাকে এই কাজে ডেডিকেটেড হতে হবে।

দ্বিতীয় যেটি আরও বেশি ইম্পরট্যান্ট সেটি হল, এক কথায় অসীম ধৈর্য থাকতে হবে আপনার। মনে রাখবেন, বেশির ভাগ মানুষ ৩/৪ মাস কাজ করে ইনকাম না করতে পেরে ধৈর্য হারা হয়ে কাজ করা বাদ দিয়ে দেয়। যেকোন কাজে প্রথম ইনকাম পেতে আপনাকে ৬/৭ মাস অপেক্ষা করতে হবে বা চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আর দুই বছর কাজ করার পর মূলত আপনার আসল মজা শুরু হয়। এই সময় লেগে থাকাটা খুবই জরুরী।

তৃতীয় বা শেষ কথা হল, রেগুলারিটি বা নিয়মানুবর্তিতা। আপনাকে রেগুলার হতে হবে। প্রতি সপ্তাহে আপনাকে কনটেন্ট আপলোড করতে হবে সে হোক ইউটিউব কিংবা ব্লগ। গুগল চায় রেগুলারিটি। আপনি দুই মাস কাজ করে তারপর আবার কাজ ছেড়ে দিলে, আবার ২ মাস পর আবার কাজ শুরু করলে হবেনা। আপনাকে হতে হবে রেগুলার।

আশা করি, আমার আজকের ব্লগ পড়ে আপনি কিছুটা নতুন জিনিস শিখতে পেরেছেন। যেটি থেকে আপনি উৎসাহিত হয়ে কাজ শুরু করে দিতে পারবেন। google থেকে টাকা ইনকাম করা আসলে আপনার ইচ্ছার উপরই নির্ভর করে। স্কিল তো আপনার আছেই। ধন্যবাদ সবাইকে।

Previous articleবাংলা ওয়েবসাইট থেকে আয় করা কি সম্ভব? কিভাবে?
Next articleBangla keyword research কিভাবে করবেন?
যে ব্যর্থ সে অজুহাত দেখায়, যে সফল সে গল্প শোনায়। আমি অজুহাত নয় গল্প শোনাতে ভালবাসি। আসুন কিছু গল্প শুনি, নিজের গল্প অন্যকে শুনাই।