বিখ্যাত লেখকদের মজার কিছু গল্প! ঠিক গল্প, ঘটনা বা উপ্যাখ্যান দিয়ে বিষয়টাকে তেমন বোঝানো যায় না । আর এখানেই বাংলা শব্দ নিয়ে জটিলতায় পড়ি আমরা। যাহোক, ইংরেজি ভাষায় কিন্তু এর জন্য আছে জবরদস্ত একটা শব্দ, Anecdotes! গ্রিক শব্দ ” anékdotos” থেকে যার উৎপত্তি। কিছুটা উদ্ভট, লুকোচুরি ধরনের বিষয় বোঝাতে ব্যবহার হয় শব্দটি। তবে কালের বিবর্তনে শব্দটা ব্যাবহারে এসেছে ঢল। বর্তমানে বিখ্যাত কারো জীবনে ঘটে যাওয়া মজার কিছু ঘটনাকে ইঙ্গিত করতে শব্দটা বহুল ব্যবহৃত হয় । আজকের এই পর্বে আপনাদের জন্য নিয়ে হাজির হয়েছি বিখ্যাত লেখকের কিছু চমকপ্রদ অজানা ঘটনা যা আপনার ঠোঁটে বাঁকা এক চিলতে হাসি আনতে সক্ষম! তবে আর দেরি কেন? চলুন নেমে পড়া যাক!
1) Victor Hugo (1802-1885)
ভিক্টর হুগো বিখ্যাত ফরাশি লেখক। তাকে ফরাশি সাহিত্যে রোমান্টিকতার জনক বলে আখ্যা দেয়া হয়। গীতিকবিতা থেকে শুরু করে নাটক, প্রহসন, ঐতিহাসিক, সামাজিক উপন্যাস পর্যন্ত সাহিত্যের সব ধারায় সমানভাবে পারদর্শী ছিলেন তিনি। তিনি তার “Notre Dame de Paris” এবং “Les Misérables” এর জন্য সাহিত্যপ্রেমীদের কাছে ব্যাপক নন্দিত। যাহোক বই প্রকাশের পর পর তিনি ব্যাপক চিন্তায় পড় যান পাঠকমহলে কিভাবে সমালোচিত হচ্ছে বইটা৷ আগ্রহ চাপা না রাখতে পেরে তিনি সম্পাদককে চিঠি লিখেন, যাতে তার উৎকণ্ঠা বোঝাতে ছিল কেবল কতগুলো প্রশ্নবোধক চিহ্ন। জবাবে বইয়ের ব্যাপক সফলতা বোঝাতে সম্পাদক তাকে পেজভর্তি আশ্চর্যবোধক চিহ্ন পাঠিয়েছিলেন।
2) Mark Twain (1835-1910)
আসল নাম Samuel Langhorne Clemens এর চেয়ে Mark Twain নামেই বেশি প্রসিদ্ধ তিনি। তিনি ছিলেন আমেরিকান লেখক, সফল উদ্যোক্তা, প্রভাষক ও প্রকাশক। ধ্রুপদী কিশোর সাহিত্য ধারায় তার সমকক্ষ কেউ নেই। William Faulkner তাকে আখ্যা দিয়েছেন আমেরিকান সাহিত্যের জনক হিসেবে। তার বিখ্যাত সাহিত্যকর্মের মাঝে উল্লেখযোগ্য “The Adventure of Huckleberry Fin”, “the adventure of tom sawyer” , “Life on the Mississippi”.
ঘটনাটা সেসময়কার, মার্ক টোয়েন তখনাকার যখন সবার মধ্যমনি, প্রায়শই দুর দুরান্তে ভাষণ দেবার জন্য তার ডাক পড়ত । তেমনি এক ভ্রমণে দাড়ি কামাতে এক নাপিতের কাছে যান টোয়েন। কথায় কথায় টোয়েন নাপিতকে বলে এই শহরে এটা তার প্রথম ভ্রমণ। প্রত্যুত্তরে নাপিত বলে, “ভালো একটা সময়ে এসেছেন সাহেব।”
টোয়েন বলেন, “তাই বুঝি?”
খুশি হয়ে নাপিত জবাব দেন, “আজ মার্ক টোয়েন ভাষণ দেবেন। আপনিও যেতে চাইবেন নিশ্চয়!”
“তাই তো মনে হচ্ছে!”
“আপনি টিকেট কেটেছেন তো নাকি?”
“না, না তো!”
“খায় খোদা। সব টিকেট যে বিক্রি শেষ। তো আপনাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে দেখছি!””আমার ভাগ্যটা দেখ” মৃদু শ্রাগ করে টোয়েন বললেন, “এই লোকের প্রতিটা ভাষণের সময় আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়!”
3) Issac Asimov (1920-1992)
আইজ্যাক অসিমভ তার সায়েন্স ফিকশন লেখাগুলোর জন্য বিশ্বজুড়ে প্রসিদ্ধ। একদা একজন সম্পাদক তার লেখা গল্প বাতিল করে দেন এবং সেটাকে “Meretricious” বলে আখ্যা দেন। Meretricious শব্দটার উৎপত্তি ল্যাটিন শব্দ “meretrix” থেকে যার অর্থ যৌনকর্মী তথা বেশ্যা। যা দিয়ে তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন অসিমভ তার মেধা দিয়ে বেশ্যাবৃত্তি চালাচ্ছেন এবং ভালো গল্পের পেছনে শ্রম না দিয়ে, তার বিখ্যাত নাম দিয়ে বাজে গল্প চালানোর পাঁয়তারা করছেন। তার বিরক্তি উপেক্ষা করে অসিমভ মৃদু স্বরে বলেন “তুমি কি শব্দ ব্যবহার করলে?” অসিমভ জানে না এমন একটা শব্দ ব্যবহার করতে পেরে মনে মনে খুশি হন সম্পাদক এবং অহম নিয়ে বলে “Meretricious”. সাথে সাধে তাকে ব্যাঙ্গ করে অসিমভ বলেন “হ্যাপি নিউ ইয়ার টু য়্যু.” (পরবর্তীতে এই গল্প অন্য প্রকাশনী থেকে প্রকাশ পায় এবং উল্লেখযোগ্য পরিমাণে প্রসংশা কুড়োয়। )
4) Alexandre Dumas (1802-1870)
আলেকজান্ডার দ্যুমো ছিলেন ফরাশি লেখক ও নাট্যকার, ঐতিহাসিক উপন্যাস লেখায় তার হাত সুনিপুন। তিনি তার “The Count of Monte Cristo” এবং “The Three Musketeers” এর জন্য পাঠকমহলে নন্দিত। বলা হয়ে থাকে তার মা-বাবা ভিন্ন বর্ণের ছিলেন বলে তাকে সবসময় বিষাক্ত বর্ণবাদের শিকার হতে হতো, সহ্য করতে হতো অকথ্য অপমাণ ও খোঁটা। একদিন প্রতিবাদে তিনি বলেন, “আমার বাবা ছিলেন Mulatto ( শ্বেতাঙ্গ ও নিগ্রোর সংসর্গজাত সন্তান) , আমার দাদা ছিলেন নিগ্রো আর আমার প্রপিতামহ ছিল বানর। দেখতেই পারছেন জনাব, আমার পরিবারের শুরুটা সেখানে, যেখানে আপনার পরিবার শেষ হয়!”
5) Leo Tolstoy (1828 – 1920)
“কাউন্ট লিভ নিকোলাইভ্চ তলস্তয়” (“লিও তলস্তয়” নামে অধিক পরিচিত) বিখ্যাদ রাশিয়ান লেখক । “War and Peace” , “Anna Karenina” র মতো কিছু কালজয়ী লেখার মাধ্যমে তিনি অসীন হয়েছেন বিশ্বসাহিত্যের প্রথম কাতারের লেখকদের মাঝে। ব্যক্তিজীবনে তলস্তয় ছিলেন প্রচুর শান্তিবাদী এবং এক সময় তিনি সব সৃষ্টির প্রতি অহিংস হবার তাৎপর্য নিয়ে ভাষণ দিচ্ছিলেন। শ্রোতাদের একজন মাঝপথে তাকে থামিয়ে প্রশ্ন করে “আচ্ছা কেউ মাঝ জঙ্গলে আটকে গেল এবং একটা হিংস্র বাঘ তাকে আক্রমন করে, তখন কি করা উচিত?” তলস্তয় স্মিত হেসে জবাব দিলেন, “সেক্ষেত্রে নিজের সর্বোচ্চটা করবে। এমন ঘটনা তো আর রোজ রোজ ঘটে না!”
6) George Bernard Shaw (1856-1950)
বিখ্যাত নৃত্যশিল্পী ইসাডোরা ডানক্যান বিখ্যাত আইরিশ নাট্যকার, সমালোচক, রাজনৈতিক পুরোধা জর্জ বার্নাড শ কে সুপ্রজনন মুলনীতি নিয়ে লিখেছিলেন, “ভেবে দেখো একবার, আমাদের সন্তান কেমন হতো! আমার রুপ আর তোমার মগজ! কি চমৎকার হত!” শ’ চটজলদি জবাব দিয়েছিলেন “হ্যাঁ, কিন্তু ভেবে দেখেছো কি, যদি সে আমার রুপ আর তোমার বুদ্ধি পায়?”
7) Johann Wolfgang von Goethe (1749-1832)
ইয়োহান ভোলফগাং ফন গ্যোটে ছিলেন বিখ্যাত জার্মান কবি ও লেখক । গ্যোটে একবার তার এক বন্ধুকে বেশ ঢাউশ সাইজের একটা চিঠি লিখেছিলেন। তার জবাবদিহি করতে একটা পোস্টকার্ড সংযুক্ত করেছিলেন যাতে লেখা ছিল, “তোমাকে এত দীর্ঘ পত্র লেখার জন্য দুঃখিত। তবে বুঝলে ছোট করে লেখার মত পর্যাপ্ত সময় হাতে ছিল না!”
8) James Joyce (1882-1941)
জেমস জয়েস ছিলেন আইরিশ লেখক, কবি ও নাট্যকার। যদিও তার সাহিত্যকর্ম খুব বেশি নেই, কিন্তু উনিশশো কুড়ির দশকে আধুনিক সাহিত্যকর্ম হিসেবে তার জুড়ি মেলা ছিল ভার। তাকে নিয়ে একটা খুব মজার গল্প প্রচলিত আছে। আর গল্পটা শোনা যায় স্বয়ং হরর কিং “Stephen king” এর জবানে। তিনি বলেন, একদিন লেখকের এক বন্ধু তার সাথে দেখা করতে আসেন এবং ডেস্কের ওপর বিষণ্ন ভাবে শোয়া অবস্থায় আবিস্কার করেন লেখকে। “জেমস হয়েছেটা কি তোমার? ” বন্ধুটি জানতে চায়, “কাজের জন্য এমন হচ্ছে?” জয়েস কিছু বলেনি এবং শত চেষ্টায়ও মাথা তোলে তাকায়নি। বন্ধুটির বুঝতে বাকি থাকল না অবশ্যই এটা কাজের সাথে সম্পৃক্ত।
বন্ধুটি বারবার জিঙ্গেস করতে থাকল, “কতটুক লিখেছ আজ তুমি?” জয়েস আগের মতোই গোমড়া মুখ করে ডেস্কে মাথা গুঁজে বলল, “সাত”।
“সাত? মন্দ কি বলো?”
“হ্যাঁ”, জয়েস অবশেষে পরাস্ত হলো এবং মুখ তোলল এবং তার কথা শেষ করল এভাবে,
“I suppose so, but I do not know in what order they go in!”.
অর্থাৎ, ” আমারো তেমন মনে হচ্ছে, কিন্তু আমি জানি না তাদের কোন ক্রমে সাজাবো!”
9) Honoré de Balzac (1799-1850)
তিনি ছিলেন ফরাশি লেখক, নাট্যকার, সাহিত্য সমালোচক, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক এবং চিত্রশিল্পী । তার হাত ধরেই উনবিংশ শতকে ফরাশি সাহিত্যে বাস্তবধর্মী উপন্যাসের প্রচলণ শুরু হয়।
বলা হয়ে থাকে খ্যাতি কামানোর আগের সময়টাতে, তরুণ লেখক “The Last Fairy” নামের একটা উপন্যাস প্রকাশকের কাছে নিয়ে যান। প্রকাশক মুগ্ধ হয়ে ৩০০০ ফ্র্যাঙ্ক দিয়ে বইটার গ্রন্থস্বত্ব কিনে নিতে চান। প্রকাশক তার ঠিকানা চেয়ে নেন। পরবর্তীতে প্রকাশক লেখকের বাড়িতে যখন যাত্রা করেন। লেখকের বাসা শহরের বেশ সম্ভ্রান্ত এক এলাকায়। চারদিকের চাকচিক্য দেখে প্রকাশক মনে মনে ঠিক করেন এমন অবস্থাসম্পন্ন কারোর জন্য ২০০০ ফ্যাঙ্কই যথেষ্ট হবে। অবশেষে যখন তিনি ষষ্ঠ তলায় পৌঁছান, তিনি ভাবে লেখক হয়ত ১০০০ ফ্যাঙ্ক পেলেই খুশি হয়ে যাবেন। অতঃপর তিনি এসে পৌঁছালেন লেখকের এপার্টমেন্টে। প্রকাশক বললেন, “জনাব, এই হলো আপনার বইয়ের গ্রন্থস্বত্বের ৩০০ ফ্র্যাঙ্ক!” এবং বেচারা লেখক প্রকাশকের প্রাথমিক অভিপ্রায় না জেনে, বিনা শব্দব্যয়ে টাকটা গ্রহণ করে নেন।
বই নিয়ে আমার আরেকটি লেখা পড়ুন।
নিষিদ্ধ বইঃ যে বইগুলো না পড়লেই নয় (পর্ব-০১)
ধন্যবাদ এতদূর পর্যন্ত সাথে থাকার জন্য। আপনার ভালো লাগা মন্দ লাগা, অভিযোগ অনুযোগ সব জানাতে পারেন কমেন্টে। আপাতত বিদায় নিচ্ছি। দেখা হবে জলদিই নতুন কোনো কন্টেন্ট নিয়ে, ততক্ষণ পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন!
এই লেখাটি পড়ে উপকৃত হয়ে আপনি যদি রেডিটুরিডিং ব্লগকে ডোনেট করতে চান তাহলে বিকাশ-০১৬১৪১৭১৭৬৫ অথবা নগদ-০১৭১৪১৭১৭৬৫ অথবা ইউক্যাশ-০১৭১৪১৭১৭৬৫ এ আপনার ডোনেশন পাঠাতে পারেন।
অথবা,
আমাদের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করেও আমাদের উৎসাহিত করতে পারেন। ইউটিউব চ্যানেল লিংক এখানে। আশা করি অবশ্যই ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে আমাদের সহযোগীতা করবেন। তাহলে আমরা উৎসাহিত হয়ে আরও লেখা পাবলিশ করব।
Nice…💕
thanks for reading