ব্লগ শব্দটি যদি আপনার কাছে একদম নতুন মনে হয়, তবে এই সম্পূর্ণ লেখাটি আপনারই জন্য ৷ ব্লগ কি এবং ব্লগ থেকে ইনকাম করা যায় কিনা এটা নতুনদের মাথায় আসা অতি সাধাারণ একটি প্রশ্ন । ব্লগের ইতিহাস কিরূপ – সেটা নিয়ে প্রচুর আর্টিকেল ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ইন্টারনেটে । তাই ওসব অল্প কথায় শেষ করে নতুন কিছু বলব- যা আপনার জানা দরকার ।
ব্লগিং নিয়ে যারা আরও ডিটেইল জানতে আগ্রহি নিচের ভিডিও দেখে জেনে নিন
ব্লগের ইতিহাস
ব্লগ (Blog) শব্দটি এসেছে ওয়েবলগ (Weblog) শব্দ থেকে। নিয়মিত লেখালেখি করা হয় এমন ওয়েবসাইটকে আগে ব্লগ বলা হতো । ‘ব্রুস এবলসন’ নামের এক ব্যক্তি ১৯৯৮ সালের অক্টোবর মাসে ‘ওপেন ডায়েরি’ নাম দিয়ে একটি বিশেষ ওয়েবসাইট তৈরী করেন এবং সেটাকে তিনি ব্লগ নামে সম্বোধন করে । তার ওয়েবসাইটটা ‘বিশেষ’ ধরণের হওয়ার কারণ, সেখানে যে কোনো লেখার নিচে পাঠকদের মন্তব্য (Comment) করার সুযোগ ছিল ।
এখনকার ছেলে মেয়েদের কাছে এটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার ৷ কারণ ফেইসবুকে যে কোনো পোস্ট বা স্ট্যাটাসে ইচ্ছে মতো কমেন্ট করে তারা অভ্যস্ত । কিন্তু তখনকার মানুষের কাছে এই মন্তব্য করার বিষয়টিই ছিল ব্যাপক চমকপ্রদ একটি ফিচার । একারণে খুব দ্রুত এবলসনের সেই ব্লগটি জনপ্রিয় হতে শুরু করে । মানুষ এরকম ব্লগের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে ।
পরের বছর, Pyra Labs নামক এক প্রতিষ্ঠান Blogger.com নামে একটি ব্লগ তৈরীর সহজ প্লাটফর্ম সৃষ্টি করে দেয় । এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষ সহজেই ব্লগ তৈরী করার সুযোগ পায় । Blogging.Com এর পথচলা শুরু হতে না হতেই এটি অত্যাধিক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে । প্রচুর মানুষ সেখানে যুক্ত হতে শুরু করে ৷ Blogger.Com এর এমন জনপ্রিয়তা গুগলকে আকৃষ্ট করে ৷ ফলে ২০০৩ সালে গুগল এই সম্পূর্ণ প্লাটফর্মটি কিনে নেয় । এর ইতিহাস সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন ।
ব্লগ কি?
ব্লগ আসলে একটা অনলাইন প্লাটফর্ম, যেটাকে যে কেউ যেভাবে খুশি ব্যবহার করতে পারে ।অভিজ্ঞদের কাছে ব্লগ কি – তা জানতে চাওয়া হলে তারা প্রায়ই একে ডায়েরীর সাথে তুলনা করেন । ডায়েরীতে একজন মানুষ যেমন নিজের মনের কথা, অনূভুতি, ভালো লাগা, মন্দ লাগা গুছিয়ে সুন্দর করে লিখে রাখে, ব্লগেও সেই একই কাজ করা যায় । কিন্তু পার্থক্য হলো Visibility তে । মানে, ডায়েরী আপনার একান্তই ব্যক্তিগত জিনিস । এখানে আপনি কিছু লিখলে তা আর অন্য কেউ ইচ্ছে করলেই দেখে ফেলতে পারবে না । কিন্তু ব্লগে আপনার লেখা সবার জন্য উন্মুক্ত । যে কেউ, যখন ইচ্ছে, আপনার লেখা পড়তে পারবে। প্রয়োজন শুধু ইন্টারনেট কানেকশন এবং আপনার ব্লগের ঠিকানার ।
তবে, ব্লগকে ‘শুধুমাত্র’ ডায়েরীর সাথে তুলনা করা হতো অনেককাল আগে । এখনকার ব্লগ অনেক উন্নত । ব্লগকে এখন ডায়েরী তো বটেই, সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, এমনকি অনলাইন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথেও তুলনা করা হয়৷ শুধু নিজস্ব অনুভূতিই নয়, বর্তমানে মানুষ এটাকে ব্যবহার করে নিজের জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে, ব্যবসায়িক কাজে, সাহিত্য চর্চা, এমনকি টাকা ইনকাম করতেও ! একজন ব্যক্তি তার রূচি ও ইচ্ছামাফিক উপায়ে ব্লগকে ভালো কাজে ব্যবহার করতে পারে ।
বর্তমানে ব্লগ ব্যবহার করছে– এমন বেশিরভাগ মানুষ প্রযুক্তি সম্পর্কে বিভিন্ন আর্টিকেল লিখে জ্ঞান বিতরণের প্রতি সবচেয়ে বেশি আগ্রহী । তবে অনেকেই অন্যরকম কাজও করে ৷ আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী যেকোনো কিছু লিখতে পারেন । ভ্রমণ সম্পর্কিত লেখা ব্লগ এখন অনেক বেশি জনপ্রিয় । এছাড়া আছে রান্না বান্নার রেসিপি সম্পর্কিত লেখা, কবিতা গল্প, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং এছাড়াও সবকিছু (!)
ব্লগ আর ওয়েবসাইটের মধ্যে পার্থক্য
এক বন্ধু কিছুদিন আগে আমায় জিজ্ঞেস করেছিল, ওয়েবসাইট আর ব্লগ কি একই জিনিস ? নাকি আলাদা ? এই প্রশ্নটা অনেকের মনেই থাকে । আসলে ব্লগ আর ওয়েবসাইট আলাদা কিছু না । ব্লগও এক ধরণের ওয়েবসাইট । তবে বিশেষ ক্যাটাগরির ওয়েবসাইট, যেটায় নিয়মিত আর্টিকেল ছাপতে হয় । এই যে আপনি এই লিখাটি পড়ছেন, এটি একটি আর্টিকেল । ব্লগ সম্পর্কিত লেখা একটি আর্টিকেল । এরকম আরো অনেক আর্টিকেল ছাপিয়ে এই ওয়েবসাইটটাকে আমায় সচল রাখতে হচ্ছে । তাহলে এই ওয়েবসাইটটা কি ধরণের ওয়েবসাইট ? হ্যাঁ , অবশ্যই এটি একটি ব্লগ ওয়েবসাইট !
অন্য যেকোনো সাধারণ ওয়েবসাইটে এরকম নিয়মিত লেখা ছাপতে হয় না । শুধু মাত্র ব্লগ ওয়েবসাইটগুলোতেই এভাবে লেখককে নিয়মিত লেখা ছাপাতে হয়, কারন, ব্লগ বানানোর উদ্দেশ্যই এটা ! একটি ব্লগ হলো অনেকগুলো পোস্টের সমষ্টি । কিন্তু অন্য ক্যাটাগরির যেকোনো সাধারণ ওয়েবসাইট– পোস্ট নয়, অনেকগুলো পেইজের সমষ্টি । সেগুলোতে নিয়মিত আর্টিকেল প্রকাশ করা ওয়েবসাইটের মালিকের উদ্দেশ্য নয় । তার উদ্দেশ্য থাকে নির্দিষ্ট বিষয়ে কিছু তথ্য সাজিয়ে রাখা ।
আবার কিছু ওয়েব সাইট দেখবেন পেইজ আছে কয়েকটা মাত্রঃ About me, Advertisement, Contact Us সহ খুবই কম, ৪-৫ টার মতো । এতো কম পেইজের কারণ, এটি একটি ব্লগ । কিন্তু এমন অনেক ওয়েবসাইট আছে, যেগুলোতে আর্টিকেল লেখার দিকে মনোযোগ দেওয়া হয়না । মনোযোগ দেওয়া হয় পেইজের দিকে । বিভিন্ন পেইজ ওয়েবসাইট শুরুর সময়ই তৈরী করে রাখা হয় এবং তারপর ওয়েবসাইট পড়ে থাকে চরম অবহেলায় । যেমন ধরুন, আপনার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট ! ওখানে ওয়েবসাইট বানানো পর্যন্তই ওয়েবসাইটের মালিক সক্রিয় ছিল । যেহেতু বানানো শেষ, সে এখন নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে । বছরে ২-৩ বার পরীক্ষার আগে একটা নোটিসের পিডিএফ ফাইল আর রেজাল্টের সময় রেজাল্ট ছেড়ে দিলেই তার কাজ শেষ ! কারণ ওটা একটা সাধারণ ওয়েবসাইট, ব্লগ নয় ।
ব্লগার কারা?
ব্লগার তারাই, যারা ব্লগ বানিয়ে সেখানে লিখালেখি করে । যেহেতু আমি এই ব্লগে অর্থাৎ রেডিটুরিডিং.কমে লিখালিখি করছি, তাই অবশ্যই আমি একজন ব্লগার । আপনি যদি আজই একটা ব্লগ খুলে সেখানে একটা কিছু লিখে ফেলেন, তবে আপনিও হয়ে যাবেন একজন ব্লগার !(ব্লগার নামে কিন্তু একটা ব্লগ তৈরীর প্লার্টফর্ম আছে, Blogger.Com । ) এখানে একটা কথা বলা উচিৎ– আমাদের দেশে “ব্লগার” শব্দটা নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি রয়েছে । আমি দেখেছি, ব্লগ বলতে অনেকেই শুধু মাত্র ‘মুক্তমনা’ কেই বোঝে । আর ব্লগার মানেই ধর্ম বিদ্বেষী ! আসলেই কি তাই ? কোনো তথ্য জানার জন্য গুগলে সার্চ দিলে যেসব রেজাল্ট প্রদর্শিত হয়, ওইসব রেজাল্টের ৮০%ই বিভিন্ন ব্লগ থেকে প্রকাশিত তথ্য । এই সবাই কি ধর্মবিরোধী কথা লেখে ? কক্ষনো না । তাই ব্লগার মাত্রই খারাপ, ব্লগ মাত্রই ধর্মীয় নীতি পরিপন্থী– এমনটা কেন আমাদের দেশের অনেকে ভাবে, তা আমার অজানা । প্রযুক্তি থেকে পিছিয়ে থাকা বোধহয় একটা বড় কারণ ।
ব্লগ থেকে ইনকাম
প্রযুক্তিগত দিক থেকে এগিয়ে থাকা বড় বড় দেশের (যেমনঃঃ চিন, আমেরিকা, ভারত ইত্যাদী) প্রচুর মানুষ ব্লগিং কে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন । তারা লেখালেখি করেই স্বাচ্ছন্দ্যে জীবিকা নির্বাহ করছেন । ওখানে ব্লগ আছে– এমন কারো কাছে যদি তার পেশা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়, তবে সে বুক ফুলিয়ে বলতে পারে– সে একজন ব্লগার । তবে ব্লগিং পেশা হিসেবে নয়, নেশা হিসেবেই বেশি জনপ্রিয় ৷ কিন্তু ‘ফায়দা’ না পেলে সব নেশাই একসময় স্বাদহীন হয়ে পড়ে । এজন্য উপার্জনের বিষয়টা পরিষ্কার করে বলা জরুরী ।
ব্লগ থেকে ইনকাম করা যায়- এই কথাটা চাঁদ তারার অস্তিত্বের মতোই ধ্রুব সত্য ।
পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ মানুষ ব্লগিং করে আয় করছে । আমাদের দেশেও আয় করছে । কিন্তু সংখ্যায় খুব কম। এর কারণ ধৈর্যের অভাব । ধৈর্য না থাকলে, ভালো কাজ না করলে এমনি এমনি কেউ আপনার পকেটে টাকা ভরে দেবে না । উপার্জনের জন্য আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে । আর এই অপেক্ষার প্রহর কবে নাগাদ শেষ হবে, তা নির্ভর করছে আপনি কেমন কনটেন্ট তৈরী করছেন তার উপর ।
একজন ব্লগার তখনই আয় করতে পারে, যখন তার ব্লগে নিয়মিত ভিজিটর আসতে শুরু করে । ভিজিটর আসতে শুরু করলে এ্যাডসেন্স, প্রোডাক্ট প্রমোটিংসহ বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে আয় করা সম্ভব । এই পদ্ধতিগুলো নিয়ে আমরা পরে জানব । এখন কথা হচ্ছে, ভিজিটর আসতে শুরু করবে কখন ? সহজ উত্তর– যখন আপনার ব্লগে ভিজিটরদের দরকারি বিভিন্ন ইলিমেন্ট/কনটেন্ট/লেখা থাকবে । আপনি যদি ২-৩ টা আর্টিকেল লিখেই টাকার আশা করেন, তাহলে হতাশা ছাড়া কিছু পাবেন না । আপনাকে অনেক লিখতে হবে, ভিজিটরদের আপনার ব্লগের প্রতি বিশ্বাস এবং আগ্রহ জন্মে দিতে হবে । আর এই আগ্রহ, বিশ্বাস তৈরী করতে আপনাকে প্রথমে নিজের ব্লগের প্রতি আগ্রহ আর বিশ্বাস আনতে হবে ।
নিয়মিত ভিজিটর আসা শুরু হলে বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে ইনকামের রাস্তা তৈরী করা যায় । আর তারপর ব্লগ থেকে আপনা আপনি ইনকাম হবে । ব্লগ হয়ে যাবে আপনার জন্য একটা সোনার ডিম পারা রাঁজহাস । একটা সময় দেখা যাবে, ঘরে বসেই আপনি প্রচুর অর্থ কামাচ্ছেন । হয়তো ৫-১০ বছর আগে একটা আর্টিকেল লিখেছিলেন, সেই আর্টিকেলটা হটাৎ করেই গুগলে র্যাংক করেছে । আপনি পরবর্তী ১০ বছর ধরে সেই একটা আর্টিকেল থেকেই হাজার হাজার ডলার কামিয়ে নিলেন !
ভাই! বিশ্বাস করুন, এটা কোনো আজগুবি বা অতিরঞ্জিত কথা নয় । এমনটাই হচ্ছে । আপনি গুগলে এখনই কোনো একটা টপিকে সার্চ দিন । দেখবেন অনেক আর্টিকেল আসবে, যেগুলো আজ থেকে বেশ কয়েক বছর আগের লিখা । তখন হয়তো ওগুলো গুগলে ভালো জায়গা পায়নি । কিন্তু আজ গুগলের সার্চলিস্টের প্রথম পেইজে এবং এ্যাডসেন্সের মাধ্যমে সেই লিখাটির লেখক এখনও টাকা পাচ্ছে ! যতদিন তার ওয়েবসাইট আছে, তার ব্লগ থেকে ইনকাম হতেই থাকবে । এই জিনিসটা ইংরেজী ভাষায় সার্চ করলে ভালোভাবে বুঝতে পারবেন । কারণ ব্লগ থেকে ইনকাম আমাদের দেশে নতুন । কিন্তু ইংরেজী ভাষাভাষী অন্য দেশে এটা অনেক পুরানো ব্যাপার । ওখানে অনেকেই ২০১০ সালের আগে ব্লগিং শুরু করেছে, এবং গুগলে র্যাংক করা কোনো একটা লিখার জন্য বিগত ৪-৫ বছর ধরে ডলার পকেটে ভরছে । ভাই, ব্লগ একটা সম্পদ । জমি জমার মতোই এটার দাম অনেক বেশি । এই জিনিসটা যে যত দ্রুত বুঝতে পারবে, সে তত দ্রুত এগিয়ে যাবে ।
এরপরও আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না ? আচ্ছা বেশ । তাহলে আপনাকে আশার পরিপূর্ণ আলো দেখাই ৷ বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্লগ তৈরীর প্লাটফর্ম হলো ওয়ার্ডপ্রেস.ORG । বিশাল ইন্টারনেটের প্রায় ৩৭ শতাংশ ওয়েবসাইট ওয়ার্ডপ্রেস দ্বারা তৈরী। সেখানে হোস্টিং আর ডোমেইন কিনে ব্লগ ব্যবহার করতে হয় । ডোমেইনের জন্য একজন ব্লগারকে বছরে প্রায় এক হাজার টাকা এবং হোস্টিং এর জন্য প্যাকেজের ভিত্তিতে ‘প্রতি’ মাসে গড়ে সত্তর টাকা থেকে ছয় হাজার টাকা পরিশোধ করতে হয় !
তাহলে এখন আপনাকে প্রশ্ন করি ভাই, এই যে এতো টাকা ব্লগাররা খরচ করছে, আবার কষ্ট করে কনটেন্টও লিখছে, কেন করছে ? তাদের কি কোনো স্বার্থ নেই ?
আসল কথা হলো, তাদের প্রতি মাসে ব্লগ থেকে অর্জিত আয়ের কাছে এই সামান্য খরচা কিছুই না ! কিংবা আর কিছুদিন কাজ করলেই একদিন সে এই ইনভেস্টের টাকা সুদে আসলে উসুল করে নেবে এবং আরও অনেক বেশি ইনকাম করবে ।
আশা করি বুঝতে পেরেছেন ।
ব্লগিং শুরু করবেন যেভাবে
ব্লগ কি এবং এর থেকে টাকা ইনকাম সম্পর্কে ধারণা দিতে আদৌ পারলাম কিনা জানি না । যদি পেরে থাকি, তবে আপনার মনে নিশ্চয়ই এখন প্রশ্ন জেগেছে, কিভাবে ব্লগিং শুরু করবেন । ব্লগিং শুরু করার জন্য আপনি Blogger.com কে বেছে নিতে পারেন । কারণ এটি সম্পূর্ণ ফ্রি । এখানে ব্লগিং শুরু করলে আপনার হোস্টিং এর টাকা, সেইফটি, বিভিন্ন ফাইলের প্যাঁচ– কোনো কিছুর দুঃচিন্তা থাকবে না । নিশ্চিন্তে আগাতে পারবেন । যদি কয়েকটা আর্টিকেল লেখার পর ব্লগিং এ সিরিয়াস হতে চান, তবে কিছুদিন পর একটা টপ লেভেলের ডোমেইন কিনে নেবেন । তারপর একটা আত্মবিশ্বাস এলে তবেই ওয়ার্ডপ্রেসে মাইগ্রেট করবেন । কারণ ওয়ার্ডপ্রেস হলো সবচেয়ে বৃহৎ, ফিচার সমৃদ্ধ এবং শক্তিশালী প্লার্টফর্ম ।
কিন্তু Blogger.Com ও খারাপ নয় । Blogger.com থেকেও আপনি ভালো পজিশনে যেতে পারেন । আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, ওখানে নিজের এম্বির খরচা ছাড়া আর কোনো খরচা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না। Blogger.com-এ কিভাবে ফ্রি একাউন্ট করে ব্লগিং শুরু করবেন সেটা শিখুন এখান থেকে। তবে আপনার ব্লগকে ভিজিটরদের সামনে প্রিমিয়াম হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইলে একটা টপ লেভেল ডোমেইন (মান .Com, .Net, .Info ইত্যাদী) কিনতে হবে আপনাকে। না কিনলেও সমস্যা নেই৷ শুধু এটুকুই খরচ!
নোটঃ এখানে আমি ওয়ার্ডপ্রেস.OrG এর কথা বলছি, ওয়ার্ডপ্রেস.Com এর নয় । ওয়ার্ডপ্রেস.Com আর ওয়ার্ডপ্রেস.Org ভিন্ন দুইটি প্লাটফর্ম ।
একদম ফ্রিতে ব্লগ তৈরী করতে Blogger.Com এ যান, জিমেইল আইডি চাইলে দিন । তারপর টাইটেল আর পছন্দমতো একটা নাম দিয়ে ব্লগ খুলে ফেলুন । Blogger.Com এ ব্লগসাইট খোলা খুব সহজ । এর জন্য কোনো কাঠখড় পোড়াতে হয় না ।
‘আপনার’ দ্বারা ব্লগ থেকে ইনকাম সম্ভব কিনা
অনেকেই আছে আত্মবিশ্বাসের অভাবে কাবু । নতুন কিছু করতে বললেই বলে ওঠে, আমি কি পারব, দাদা ?
আপনি পারবেন কিনা আমি বলে দিচ্ছি । নিচের পয়েন্টগুলো খেয়াল করুন । এগুলোর সবগুলোতে যদি ‘হ্যাঁ’ হয়, তবে আপনি খুব শিগ্রই ব্লগিং এর রাজ্যে রাজ করবেন, লিখে রাখুন আমার কথা ! আর এর তিনটার মধ্যে যে কোনো একটাও যদি ‘না’ হয়, তবে ভাই, ঝামেলা আছে !
পয়েন্টগুলো হলোঃ
- আপনি কি লিখালিখি করতে খুব ভালোবাসেন ? নিজের মনের ভাব শব্দে ফুটিয়ে তোলার মধ্যে ট্যালেন্ট খুঁজে পান ? (হ্যাঁ / না)
- আপনার কৌতুহল কেমন ? আপনি কি নিজেকে কৌতুহলী একজন মানুষ মনে করেন ? (হ্যাঁ / না)
- আপনি কি এই লেখাটা পুরোটা পড়েছেন ? (হ্যাঁ/ না)
৩ নাম্বার পয়েন্টটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।এই আর্টিকেলের এক বা একাধিক টপিক স্কিপ করে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার মানে ব্লগিং এর প্রতি আপনার তেমন জোরালো কোনো আগ্রহ নেই । অথবা এতো বড় লেখা পড়ার ধৈর্য নেই । এই দুইটা জিনিসই ব্লগিং শুরু করতে সবচেয়ে বেশি কাজে লাগে । আপনিও যদি ব্লগিং শুরু করতে চান, তবে এরকম অনেক বড় বড় আর্টিকেল আপনার নিজেকেই লিখতে হবে । যেখানে আপনি এত বড় আর্টিকেল পড়তেই ধৈর্যহারা হয়ে যাচ্ছেন, সেখানে নিজে ধৈর্য্য নিয়ে লিখবেন কিভাবে ? তাই যদি এটার উত্তর “না” হয়, তাহলে হয়তো ব্লগিং করা সত্যিই আপনার জন্য কষ্টদায়ক ব্যাপার, নাও পারতে পারেন ।
আরও পড়ুনঃ ব্লগ থেকে ইনকাম কেমন আর আমি কেন ব্লগিং করি
পরিশেষে
অনলাইনে এক সিনিয়র ব্লগার ভাইয়ের সাথে পরিচয় ঘটেছিল । আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ব্লগ আসলে কি ? সে বলেছিল, ব্লগ হলো সৃজনশীল মানুষদের একটা শখ (Hobby) ।
যার কাছে ব্লগিং সত্যিই একটা শখ, সে অর্থ উপার্জনের চেয়ে কনটেন্ট বানানোর দিকেই বেশি মনোযোগ দেবে । আর কনটেন্টের দিকে মনোযোগ ধরে রাখলে আপনার ব্লগ থেকে ইনকাম আপনা আপনিই হবে ৷ ব্লগে কনটেন্ট বানানো বা লিখালিখি যদি আপনার শখের তালিকায় না থাকে, শুধুমাত্র রাতারাতি বড়লোক্স হওয়ার লোভে পড়ে ব্লগিং করতে চান, তবে খুব বেশি আশা করবেন না । বেশি আশা করলে হতাশ হবেন । তারচেয়ে ভালোভাবে পড়াশোনা করুন, টিউশনি করিয়েও টাকা কামাতে পারেন । আর তাছাড়া, বাচ্চাকাল থেকে তো “My Hobby” প্যারাগ্রাফ লিখেই আসছেন । ওইসব প্যারাগ্রাফে নিশ্চয়ই ব্লগের কথা লিখতেন না, যেটার কথা লিখতেন, সেটার পেছনে সময় ব্যয় করুন । শান্তিতে থাকুন ।
এই লেখাটি পড়ে উপকৃত হয়ে আপনি যদি রেডিটুরিডিং ব্লগকে ডোনেট করতে চান তাহলে বিকাশ-০১৬১৪১৭১৭৬৫ অথবা নগদ-০১৭১৪১৭১৭৬৫ অথবা ইউক্যাশ-০১৭১৪১৭১৭৬৫ এ আপনার ডোনেশন পাঠাতে পারেন।
অথবা,
আমাদের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করেও আমাদের উৎসাহিত করতে পারেন। ইউটিউব চ্যানেল লিংক এখানে। আশা করি অবশ্যই ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে আমাদের সহযোগীতা করবেন। তাহলে আমরা উৎসাহিত হয়ে আরও লেখা পাবলিশ করব।