লকডাউন
লকডাউন

 

ভাল নেই বাংলাদেশ, ভাল নেই বাংলাদেশের মানুষ, আজ ভাল নেই গোটা পৃথিবীর মানুষ। আচ্ছা, পৃথিবীর অন্যান্য প্রানীদের খবর কি? তারা কি ভাল আছে? শুনেছি পৃথিবীতে এখন মানুষ ছাড়া আর সব প্রানী অসম্ভব রকমের ভাল আছে, তাই কি? তাদের ভাষা যেহেতু আমরা বুঝিনা, তাই তাদের ভাল থাকা না থাকা আমার বোধগম্য নয়, তবে, আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি তারাও ভাল নেই। তাদের চারদিক থেকে ঘিরে আছে এক অদৃশ্য লকডাউন  ।

আচ্ছা, মানুষের ভাল থাকার জন্য আসলে কি লাগে? আপেক্ষিক প্রশ্ন। উত্তরটা হয়ত একেজনের একেক রকম হবে। সে যে যাই উত্তর দিক না কেন মুখে আর আমরা যতই বলি না কেন, অর্থই অনর্থের মূল আসলে কার্যত আমরা সবাই জানি একটা লেভেল পর্যন্ত ভাল থাকার জন্য অর্থটাই দরকার সবচেয়ে বেশি। আর বিশেষ করে এই সময়ে বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষের ভাল থাকার জন্য লাগবে টাকা। তাহলে টাকাই কি সব? দেশের সব মানুষ যদি টাকা হাতে নিয়ে বসে থাকে তাহলে কি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে?

দুইমাস আগে এরকমই আরেকটা লেখা লিখেছিলাম। করোনা ভাইরাস নিয়ে আমরা কিভাবে বেঁচে থাকব? পড়ে নিতে পারেন। একটা গাইড লাইন দিতে চেষ্টা করেছি সেখানে।

না, তাও হবেনা। এই পরিস্থিতি থেকে বের হতে হলে আমাদের লাগবে সম্মিলিত প্রচেষ্টা। প্রত্যেকের যার যার নিজস্ব জায়গা থেকে কাজ করতে হবে। কাজ? কাজ পাব কোথায়? দেশে কোন কাজ নাই, যা আছে তাও বন্ধ হবার যোগাড়। তাহলে কি করব? একটু ভাবুন তো। একটু লম্বা পরিকল্পনা করুন। ধরেই নেন না কেন আগামী আরও ছয় মাস পরিস্থিতি খারাপই হতে থাকবে, এরপর হয়ত আস্তে আস্তে উন্নতির দিকে যাবে। মনে রাখবেন, করোনা আক্রান্তের রেখা এখনও ঊর্ধ্বমুখী, আপাতত গ্রাফ এনালাইসিস করে ২/৩ মাসের মধ্যে এই রেখা নিম্নমুখী হবার তেমন কোন সম্ভাবনা দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা। সবকিছু আগের মত স্বাভাবিক হতে সময় লাগতে পারে আরও প্রায় দুই বছর। লকডাউন কতদিন চলবে তার ঠিক নাই।

তাহলে উপায়? প্রথমত গভীরভাবে চিন্তা করুন। আপনি যদি এই মুহূর্তে বেকার থাকেন আর আপনার কাছে কিছু পরিমান টাকা থাকে, সবচেয়ে ভাল হয় আপনি যদি গ্রামের বাড়ি চলে যান। এতে প্রতি মাসে মাসে বাসা ভাড়া দেওয়ার হাত থেকে অন্তত আপনি বেচে যাবেন। ঢাকায় থেকে আসলে কোন লাভ নেই, পরিস্থিতি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত আপনার কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা তেমন নাই। পরিস্থিতি ভাল হলে আবার আসতে পারবেন, কাজও পাবেন।

আপনার মাসিক নূন্যতম বাজেট ঠিক করুন। সর্বনিম্ন কত টাকা হলে এক মাস আপনি চলতে পারবেন আর আপনার কাছে কত টাকা আছে। হিসেব করে দেখুন কত মাস চলার টাকা আপনার আছে। ৩ মাস চলার টাকা রেখে বাকি টাকা দিয়ে কিছু করতে পারেন কিনা দেখুন। আপনার চারপাশের মানুষের চাহিদা বুঝার চেষ্টা করুন, তারা তাদের টাকা-পয়সা কোথায় খরচ করছে দেখুন। সব কিছু মিলিয়ে পারলে কোন ব্যবসা শুরু করা যায় কিনা চিন্তা করুন। মনে রাখবেন, ১৫০ টাকার একটা দেশী মুরগি বাড়িতে পাললেও মাসে ১০ টা ডিম দেয় যার বাজার মূল্য ১০০ টাকা নূন্যতম। আর নিজের পরিবারের চাহিদা মেটাতে পারলে ত আরও ভাল। ইমিউনিটি সিস্টেম স্ট্রং হবে। ইনিউনিটি সিস্টেম কিভাবে বাড়াবেন? ভিটামিন সি শুধুই কি কমলায়? সে ব্যাপারে আরেকটি ব্লগ আছে। পড়ে দেখুন।

এছড়াও আপনি ভাবতে পারেন, আপনার স্কিল কি? কি বিষয়ে আপনি অভিজ্ঞ? নিজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগান। মনে রাখবেন, আপনার পকেটে যা আছে তা শেষ হবার আগেই আপনাকে টাকা ইনকাম করতে হবে। অযথা টাকা নষ্ট করবেন না। প্রতিটি টাকাই আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই লকডাউন সময়ে ।

আপনি ভাল ছাত্র, অনলাইনে টিউশনি করান, অনেকেই তাদের বাচ্চাকে এখনও অনলাইনে পড়াচ্ছে। টিউশনি খুজুন, সবাইকে জানান, পেয়ে যাবেন।

আপনার এলাকায় মৌসুমী ফল খুব ভাল হয়? ঢাকা শহরে সাপ্লাই দিন। কত জন এই কাজ করছে। বিশেষ করে এই সিজনে আম/লিচু প্রচুর বিক্রি হচ্ছে অনলাইনে। কাস্টমার নেটওয়ার্ক গড়ে তুলুন।

বড় বড় ই-কমার্স সাইটে সাপ্লাই দিতে পারেন কিনা দেখেন, শুধু আম/লিচুই না, গরু-হাস-মুরগী-মাছ সবই ওরা ভাল দামে কেনে। গুগল সার্চ দিয়ে ওদের অফিসের নম্বর নিয়ে যোগাযোগ করুন। এই লকডাউন সময়ে মানুষ অনলাইনে কেনাকাটা বেশি করছে।

এছাড়া আপনার যদি কম্পিউটার বিষয়ক জ্ঞান থেকে থাকে চেস্টা করেন অনলাইন বেজ কোন কাজ করতে পারেন কিনা, কোন ব্যাপারে ভাসা ভাসা জ্ঞান থাকলে এই ফ্রি টাইমে ঝালাই করে নিন। আরও স্কিল্ড হয়ে যান। তারপর মাঠে নেমে যান। লেখা লেখি করেও আয় করছেন অনেকে এই লকডাউন পরিস্থিতিতে।

বসে থাকবেন না। একদম না। সময় খুব খারাপ। ভাল থাকার জন্য এইটুকু কষ্ট করাই যায়।

Previous articleনিষিদ্ধ বইঃ যেগুলো না পড়লেই নয় (পর্ব-০১)
Next articleবিখ্যাত লেখকদের মজার কিছু গল্প!
Mamun
যে ব্যর্থ সে অজুহাত দেখায়, যে সফল সে গল্প শোনায়। আমি অজুহাত নয় গল্প শোনাতে ভালবাসি। আসুন কিছু গল্প শুনি, নিজের গল্প অন্যকে শুনাই।

2 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here