আমার অফিস ঢাকার গুলশান-বাড্ডা লিংক রোডে আর বাসা হাতিরঝিল মহানগর প্রজেক্টে। সাধারণত সন্ধ্যা ৬.৩০ মিনিটে আমি অফিস থেকে বের হয়ে একটা রিকশা নিয়ে পুলিশ প্লাজা চলে আসি। সেখান থেকে হেঁটে প্রতিদিন বাসায় ফিরি। কম-বেশি ৩০ মিনিটেই আমি বাসায় চলে আসি। আজকে ২৯ জানুয়ারি ২০২৩ একইভাবে বাসায় আসছিলাম। পুলিশ প্লাজা থেকে আস্তে আস্তে হেঁটে বাসায় ফেরার পথে মনে মনে নানা রকম কথা ভাবছিলাম। আসলে এই পথটুকু প্রতিদিন হাটার সময়টা- আমি খুব এনজয় করি।
আজ ৩৭ বছর আমি এই এলাকায় থাকি। কি থেকে কী হয়ে গেল এই সময়ের মধ্যে। মনে আছে, সেই ছোট বেলায় একবার কিছু পোলাপানের সাথে প্যাক-কাদা পার হয়ে গুলশান শুটিং ক্লাবের সামনে এসেছিলাম। রামপুরার এই বিলে এক সিজন ধান চাষ হত ঐ সময়ে। প্রতি বছর বন্যা হত। বন্যার সময় নৌকায় করে মাটি আসত। নৌকার সাইজ অনুযায়ি ৮০-১০০ টাকা আবার বড় ট্রলারের মাটি ১৫০-২৫০ টাকায় বিক্রি করত। ৮৮ সালের বন্যায় বড় বড় মাছ ধরার নৌকাও আসত।
ঐ সময়ে, মানে ১৯৯০ সালের দিকে এখানে জমির দাম কেমন ছিল? তেমন একটা মনে পড়েনা। হয়ত কাঠা প্রতি দের-দুই লাখ বা তার কিছু বেশি হবে। আর এখন কি অবস্থা- চিন্তা করা যায়? এক কাঠা জমি এক কোটি দিয়েও কিনতে পারা যাবে কিনা সন্দেহ আছে। কি পরিমান বেড়ছে জমির দাম, ভাবা যায়?
এখনকার দিনে চাকরি করে ঢাকা শহরের কোথায়ও এক টুকরো জমি আপনি কিনতে পারবেন না। শেয়ারে হয়ত কিনতে পারবেন, ভাগে কত স্কয়ারফিট করে পাবেন আল্লাহ ভাল জানেন। সুতরাং প্রপার্টি কিনা এখনকার দিনে আসলে এক কথায় অসম্ভব!
মানে হল, আপনার হাতে যদি সেই পরিমান টাকা না থাকে জমি কিনতে পারবেন না। তাহলে কি করবেন? এক কাজ করতে পারেন। চাইলে, ডিজিটাল প্রপার্টি কিনতে পারেন। অল্প দাম, আপনার সাধ্যের মধ্যেই পাবেন। আবার ঠিকমত যত্ন করে পেলে-পুষে বড় করতে পারলে পরবর্তীতে ভাল দামে বেচতেও পারবেন। আবার ভাড়া দিয়েও ইনকাম করতে পারবেন। আমার মত আপনারও যদি টাকা-পয়সা না থাকে এইদিকে একটু নজর দিতে পারেন।
নিশ্চই ভাবছেন- কিভাবে সম্ভব, তাইনা। আসেন ব্যাপারটা ক্লিয়ার করি।
আমি জানিনা একে আসলে ডিজিটাল প্রপার্টি বলা যায় কিনা, কিন্তু আমি একে ডিজিটাল প্রপার্টি বলছি, কারন জিনিষটা ডিজিটাল তাই।
বিনা মূল্যের ডিজিটাল প্রোপার্টি কিনুন
আপনি ইউটিউবে একটা চ্যানেল ওপেন করেন প্রথমে। এটা করতে আপনার মোটেই কোন টাকা-পয়সা লাগবেনা – ফ্রিতে খুলে ফেলতে পারেন। তারপর এখানে নিয়মিত ভিডিও আপ্লোড করতে থাকুন। হয়ত ভাবছেন আমি আবার কি ভিডিও আপ্লোড করব?
আপনি যা পারেন তাই আপ্লোড করতে থাকেন। কোথাও ঘুড়তে গেলে সেটা আপ্লোড করুন। নতুন কিছু শিখলে সেই ঘটনা শেয়ার করুন। আপনি যা পারেন তাই। এটা আপনার চ্যানেল। নিজে যা ভাল পারেন তাই করেন।
ধীরে ধীরে দেখবেন, আপনার ভিডিও মানুষ দেখা শুরু করেছে। অনেকেই আপনার চ্যানেলকে সাবস্ক্রাইব করতে শুরু করেছে। আপনার একটা ফ্যান-ফলোয়ার বেজ তৈরি হয়ে যাচ্ছে।
ভাবছেন, আপনার চ্যানেল কেন মানুষ দেখবে? তাইনা। ভাইরে মানুষ কত কি দেখে সে সম্পর্কে কিছুই জানেন না আপনি। আসলে মানুষ দেখেনা এমন কিছু নাই। সাধারণ একটা মাছ কাটার ভিডিও কোটি কোটি মানুষ দেখে সেখানে আপনি তো আরও কোয়ালিটিফুল ভিডিও দিচ্ছেন।
একটা চ্যানেলের মালিক আপনি।
রামপুরার বিল যেমন এখন হাতিরঝিল, ১ লাখ টাকার জমি যেমন এখন এক কোটি টাকা তেমন আপনার এই চ্যানেলেও একদিন এক লাখ সাবস্ক্রাইবার হবে। অটোমেটিক হতে থাকবে। আপনাকে কিছুই করতে হবেনা। আপনি শুধু ভিডিও আপ্লোড করতে থাকুন। ধৈর্য সহকারে।
যখন আপনার একটা ফ্যানবেজ তৈরি হয়ে যাবে, তখন দেখবেন। আপনি ইউটিউব থেকে মনিটাইজেশন পেয়ে যাবেন। ইউটিউবে মনিটাইজেশন পেতে হলে কি কি ক্রাইটেরিয়া ফিলাপ করতে হয় এখান থেকে জেনে নিতে পারেন।
ইউটিউবে মনিটাইজেশন পেয়ে গেলে, আপনার ভিউজ থেকে টাকা আসতে শুরু করবে। এছাড়াও আপনি বিভিন্ন কম্পানি থেকে বিজ্ঞাপনের অফার পাবেন। আপনার নিজস্ব কোন প্রোডাক্ট থাকলে আপনি তা বিক্রি করতে পারবেন। আরও কত কি? অথচ আপনি কিন্তু চ্যানেলটি করেছিলেন একদম ফ্রিতে। আপনার কোন টাকাই খরচ হয়নি। ভিডিও তৈরি করেছিলেন আপনার হাতের মোবাইল ফোন ব্যবহার করে।
ভিডিও এডিট কিভাবে করবেন? এখানে পড়ুন।
খেয়াল করে দেখেন, অনেক পরিচালক এখন তাদের নাটক আর টিভিতে দেয়না। তারা সরাসরি ইউটিউবে আপ্লোড করে। কারন তারা বুঝে গেছে- টিভিতে সম্প্রচার করলে একবার টাকা পাওয়া যায়- কিন্তু ইউটিউবে আপ্লোড করে দিলে সেখান থেকে আজীবন টাকা আসতেই থাকবে কম-বেশি।
আপনার বিনা-পয়সার ইউটিউব চ্যানেল থেকে আপনি হয়ত একসময় মাসে লাখ টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
ডিজিটাল প্রপার্টি ওয়েবসাইট কিনুন
আপনার যদি লেখালেখি করার অভ্যাস থাকে তাহলে আপনি একটা ওয়েব সাইট কিনতে পারেন। এটাও আমার মতে আরেকটি ডিজিটাল প্রপার্টি। কিন্তু এজন্য আপনাকে কিছু খরচ করতে হবে এবং একই সাথে কিছু নলেজ গেদার করতে হবে- তবে তা খুব বেশি কিছু নয়, সামান্য কিছুই।
একটা পছন্দসই নাম ঠিক করে নিয়ে একটা ডোমেইন কিনে ফেলুন। এজন্য আপনাকে প্রতি বছর কিছু চার্জ দিতে হবে। এই ধরেন ১০০০ টাকা বা তার কিছু বেশি। আর একটি হোষ্টিং নিতে হবে। শুরুতে খুব বেশি খরচ না করে কমের মধ্যে বছরে ২০০০-৩০০০ টাকার মধ্যে নিতে পারেন।
ডোমেইন-হোষ্টিং কি? কিভাবে ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে একটা ওয়েবসাইট তৈরি করা যায়?
মানে, আপনার সর্ব সাকুল্যে বছরে খরচ কত? ৩ থেকে ৪ হাজার টাকার মত খরচ হবে। এখানে আপনি আপনার লেখা লেখি চালিয়ে যেতে পারবেন।
একবার লেখা শুরু করলেই দেখবেন আপনি ধীরে ধীরে আরও অনেক কিছু শিখে ফেলছেন। এই মনে করেন-
এসইও কি? কিভাবে এসইও কাজ করে? কি ওয়ার্ড কি? কিভাবে কিওয়ার্ড এনালাইসিস করতে হয়? ইত্যাদি আপনি ধীরে ধীরে এমনিতেই শিখে যাবেন।
আপনি যখন আপনার ওয়েবসাইটে লেখা দিতে থাকবেন- দেখবেন আপনার ওয়েব সাইটের ডোমেইন অথোরিটি বাড়তে থাকবে। আস্তে আস্তে আপনার ওয়েবসাইটে অরগানিক ট্রাফিক আসতে শুরু করবে। আপনার লেখা বিভিন্ন ব্লগ গুগলে র্যাংক করতে থাকবে।
গুগল এডসেন্স থেকে আপনি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে টাকা ইনকাম করতে থাকবেন হয়ত বছর খানেকের মধ্যেই। বছরে আপনি যে টাকাটা পেমেন্ট করছেন তা খুব দ্রুতই রিটার্ন আসতে শুরু করবে, ২/৩ বছরের মধ্যেই আপনি আরও অনেক ভাবেই আয় করতে শুরু করবেন।
আপনি চেনেনও না- এমন কেও আপনাকে খুঁজে বের করে আপনার ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন দিতে উৎসাহী হবে। তারা আপনাকে ফোন করবে- ইমেইল করবে। কেও কেও হয়ত আপনার ওয়েবসাইট কিনে নেবার জন্য কল বা ইমেইল করতে পারে।
এখন নিশ্চই বুঝতে পারছেন কেন আমি এগুলোকে ডিজিটাল প্রপার্টি বলছি।
আমার বিশ্বাস আমি যে দুইটি ডিজিটাল প্রপার্টির কথা বললাম সেই দুইটি যদি আপনি মোটামুটি চালিয়ে যান ৫/৭ বছরের মধ্যেই আপনাকে মাসে একটা ভাল এমাউন্টের রিটার্ন দেবে। জিজ্ঞেস করতে পারেন কত? এটা আসলে ডিপেন্ড করছে আপনি কতটা সময় দিচ্ছেন তার উপর। হতে পারে মাসে ৫০ হাজার আবার হতে পারে মাসে ২ লাখ। আবার মাসে ১০ হাজারও হতে পারে। সম্পূর্ণই আপনার উপর নির্ভর করছে।
কিন্তু আমি এটা বলতে পারি- আপনাকে হতাশ হতে হবেনা। ডিজিটাল প্রপার্টি আপনাকে নিরাশ করবেনা। বরং জিরো থেকে হিরো করে তুলতে পারে।
তাই আমি আপনাকে বলব, আর দেরি করবেন না। এখনই একটা ইউটিউব চ্যানেল খুলে ফেলুন কিংবা একটা ডোমেইন কিনে ফেলুন। কিছু কিছু কাজ করতে শুরু করুন। বলা যায় না- আপনার আজকের এই সিদ্ধান্ত হয়ত আপনাকে একসময় স্বাবলম্বি করে গড়ে তুলতে পারে। ধন্যবাদ আপনাকে।