কিভাবে এসইও-এর জন্য কন্টেন্ট লিখতে হয়

সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO) এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল কন্টেন্ট। যদিও এসইও শুধু লেখার নয় আরও অনেকগুলি বিষয় নিয়ে করা হয়। তবে, আপনি কন্টেন্ট ছাড়া এসইও করতে পারবেন না।

কিন্তু এসইও অপ্টিমাইজড কন্টেন্ট কি? আপনি কীভাবে সার্চ ইঞ্জিনের জন্য লিখবেন ও তার নিয়মকানুন কী? একজন ভাল এসইও ফ্রেন্ডলি (SEO friendly) রাইটার হতে চাহিলে সেই প্রক্রিয়াটি কেমন হবে?

আজকের আর্টিকেলে আমি বলতে চলেছি কিভাবে আপনি এসইও ফ্রেন্ডলি কন্টেন্ট লিখতে পারেন বা নিজেকে এসইও ফ্রেন্ডলি কন্টেন্ট রাইটার হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন।

এসইও কন্টেন্ট বলতে কি বুঝায়?

এসইও ফ্রেন্ডলি কন্টেন্ট রাইটিং বলতে বোঝায় সার্চ ইঞ্জিনের প্রথম পৃষ্ঠায় রেংকিং করার উদ্দেশ্যে নিয়ে লেখার একটি বিশেষ প্রক্রিয়া। সাধারণ রাইটিং এর থেকে এর পার্থক্য হল, এখানে আপনাকে কিছুটা নিয়মনীতি মেনে লিখতে হবে।

অনেকে মনে করেন একটি এসইও ফ্রেন্ডলি লেখা মানুষের জন্য হয় না। কিন্তু ধারণাটি ভুল, কেউ যদি এমন ধারণা করে থাকেন তাহলে তিনি ২০১০-২০১২ সালের মধ্যে পড়ে আছেন।

বর্তমান সময়ে নিম্ন-মানের, হালকার উপর ঝাপসা কন্টেন্টের দিয়ে সার্চ ইঞ্জিনের র‌্যাঙ্কিং বাড়ানোর সম্ভব নয়। একটি  কন্টেন্টকে এসইও ফ্রেন্ডলি করতে হলে আপনাকে কিওয়ার্ড রিসার্চ, আর্টিকেল স্ট্রাকচারিং এইচটিএমএল হেডিং ট্যাগ এর মতো বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে।

এখন আপনি যদি একজন রাইটার হন সেক্ষেত্রে একজন SEO Expert আপনার জন্য কিওয়ার্ড রিসার্চ ও আর্টিকেল স্ট্রাকচারিং এর মত কাজগুলো করে দেবে। কিন্তু আপনাকে এই বিষয়ে বিশধ ধারণা নিতে হবে।

আসুন আমরা জেনে জেনে নেই এসইও  কন্টেন্ট লেখা নিয়মনীতি সম্পর্কে-

আরও পড়ুনঃ

SEO কন্টেন্ট লেখার নিয়ম

ব্লগার এবং কন্টেন্ট মার্কেটাররা সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন তা হল এমন একটি কন্টেন্ট লেখা – যা সার্চ ইঞ্জিনের জন্য অপ্টিমাইজ করা ও মানুষের জন্য অর্থবোধক হয়।

আর এটি করার জন্য, আপনাকে তিনটি জিনিসের উপর ফোকাস করতে হবে:

  • আপনি যে কিওয়ার্ড টার্গেট করেছেন, সেটি মানুষ কেন সার্চ দেয়, অর্থাৎ সেই কিওয়ার্ডে সার্চ দিয়ে কি জানতে, পড়তে বা দেখতে চায় তা জানতে হবে।
  • প্রথম ধাপে যা পেলেন সেটি নিয়ে সম্ভাব্য সর্বোত্তম উত্তর তৈরি করুন। উত্তরটি এমনভাবে উপস্থাপন করুন যাতে কারো জন্য সেটি পড়তে এবং বুঝতে সহজ হয় (অর্থাৎ, ভাল লেখার দক্ষতা থাকতে হবে)।
  • এর বাইরে, আপনাকে মেটা টাটল,ট্যাগ, ইমেজ অল্ট টেক্সট, ইন্টারনাল লিঙ্ক ইত্যাদির মতো অন-পেজ এসইও উপাদানগুলির মূল বিষয়গুলিও বুঝতে হবে ও সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে।

এখন, শুধু মাত্র সার্চ ইঞ্জিন টার্গেট করে কন্টেন্ট লিখলে সেটা মানুষের পড়ার জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে। কিন্তু আপনার কন্টেন্ট আসলে মানুষই পড়বে।

এখন জেনে নেই ধাপে ধাপে কিভাবে আপনি একটি এসইও ফ্রেন্ডলি কন্টেন্ট লিখতে পারেন।

কন্টেন্ট লেখার আগে বেসিক কাজ

একটি কন্টেন্টলেখার আগে কিছু বেসিক কাজ সেরে নিতে হবে। হুটহাট করে কন্টেন্ট লেখা শুরু করে দেওয়া বোকামি ছাড়া কিছু নয়। লেখা শুরু করার আগে রিসার্চ না করা অন্ধকারে পথ চলার মত। তাই কন্টেন্ট লেখার আগে কিছু বেসিক কাজ করে ফেলতে হয়।

টার্গেট কিওয়ার্ড রিলেটেড কীওয়ার্ডস খুঁজে বের করা

আপনি যে কিওয়ার্ড নিয়ে কন্টেন্ট লিখতে যাচ্ছেন সেটি সম্পর্কে ভালোভাবে রিসার্চ করতে। এখানে আপনার নজর রাখতে হবে এই কিওয়ার্ড লিখে সার্চ দিচ্ছে তারা কোন আসলে কি জানতে চায়।

উক্ত বিষয়ে যারা প্রথম পৃষ্টায় আছে তারা যা যা নিয়ে লিখেছে সেই সম্পর্কে ধারণা নিলে আপনি সার্চার এর ইন্টেনশন বুঝতে পারবেন। কেননা গুগোল প্রথম পৃষ্ঠায় সার্চার এর জন্য সবচেয়ে ভাল রেজাল্ট গুলো রাখবে।

সুতরাং, এতে এনালাইসিস করার মাধ্যমে উক্ত কিওয়ার্ড লিখে যারা সার্চ দেয় তারা কি বিষয়ে জানতে আগ্রহী তা বুঝতে পারবেন। এছাড়াও, গুগোল সার্চ অটোসাজেস্ট ও কিওয়ার্ড রিসার্চ দেওয়ার পরে ওই পেজের শেষে রিলেটেড সার্চ গুলো করে সেগুলো থেকে আইডিয়া নিতে পারেন।

এরপরে আপনার কাজ হবে, টার্গেট কীওয়ার্ড এর রিলেটেড অন্যান্য কিওয়ার্ডসমূহ খুঁজে বের করা। তারপর এই কী-ওয়ার্ড গুলোর উপর ভিত্তি করে আপনাকে একটি আর্টিকেল স্ট্রাকচার তৈরি করে নিতে হবে।

আর্টিকেলের স্ট্রাকচার

আর্টিকেল স্ট্রাকচার একটি ওয়েব পেজ রেংকিং এর ক্ষেত্রে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

একটি কন্টেন্ট লেখার আগেই স্ট্রাকচার তৈরি করে নিতে হবে। অর্থাৎ লেখাটিতে হেডিং সাব হেডিং কি কি থাকবে সেগুলো আপনাকে লিস্ট করে নিতে হবে। একজন নতুন লেখক এর জন্য এই বিষয়টি ঝামেলা হতে পারে।

তবে এই বিষয়ে গুগলের অটোসাজেশন, people also ask, ও রিলেটেড সার্চ থেকে আইডিয়া নিতে পারবেন। আর কম্পিটিটরদের কন্টেন্টগুলো তো থাকছেই তারা কিভাবে কন্টেন্ট সাজিয়েছে সেটি এনালাইসিস করে একটি সুন্দর স্ট্রাকচার তৈরি করে নিতে হবে।

স্ট্রাকচার তৈরি করার সময় খেয়াল রাখবেন যাতে করে সার্চার যে বিষয়ে জানতে চেয়েছে ওই বিষয়ে সম্পর্কিত কিওয়ার্ডগুলো বাছাই করা হয়।আর স্ট্রাকচার এর মধ্যে আপনি সেগুলো কে হেডিং বা সাব হেডিং বা  কন্টেন্ট এর মধ্যে ব্যবহার নিশ্চিত করবেন।

আর্টিকেলের দৈর্ঘ্য

একটা সময় আমাদের আর্টিকেলের দৈর্ঘ্য বা ওয়ার্ড সংখ্যা অহেতুক টেনেটুনে লম্বা করতে বলা হত। কিন্তু বর্তমান সময়ে একটি টপিক কাভার করতে যতটুকু লেখা প্রয়োজন ঠিক ততটুকু লেখা জন্য উৎসাহিত করা হয়। তবে এর মানে এই নয় যে আপনি কম্পিটিটরদের আর্টিকেল এর দৈর্ঘ্য কোন আমলে নিবেন না। তারা কি পরিমান কন্টেন্ট লিখেছে সেটা থেকে একটি গড় বের করে ফেলুন। এবং তারা যে যে বিষয় গুলো নিয়ে লিখেছে সে বিষয়গুলো লিস্ট করে ফেলুন।

এসইও ফ্রেন্ডলি আর্টিকেল অপটিমাইজেশন করবেন যেভাবে

উপরে ধাপগুলোতে আপনারা একটি আর্টিকেল লেখার জন্য যা যা প্রয়োজন সবকিছু পেয়ে যাবেন। এরপর আপনার কাজ হবে লেখাটি অপটিমাইজ করা।

এসইও ফ্রেন্ডলি আর্টিকেল অপটিমাইজেশন করার জন্য নিচের টিপসগুলো কাজে লাগাতে পারেন।

  • হেডিং ও সাব হেডিং ব্যবহার করুন। পাঠকদের এনগেজ করতে বিষয়বস্তুকে যৌক্তিক, অর্থপূর্ণ হেডিং বা সাব হেডিং এ ভাগ করুন।
  • H2, H3 হেডিং দিয়ে আপনার লেখা শুরু করবেন না। প্রথমে H1 হেডিং এবং তারপর H2 এবং কয়েকটি H3 সাব হেডিং ব্যবহার করুন। একটি আর্টিকেল এর মধ্যে বেশ কয়েকটি H2 এবং H3 শিরোনাম থাকতে পারে যা কন্টেন্টটিকে শ্রেণিবিন্যাস করতে সাহায্য করবে।
  • একটি এসইও ফ্রেন্ডলি টাইটেল ট্যাগ তৈরি করতে এতে কীওয়ার্ড এর ব্যবহার নিশ্চিত করুন।
  • কন্টেন্ট এর মধ্যে কিওয়ার্ড এর ব্যবহার নিশ্চিত করুন। তবে রেংকিং পাবার উদ্দেশ্যে কিওয়ার্ড স্টাফিং করা যাবে না।
  • আর্টিকেল এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ শব্দ বা শব্দগুচ্ছ কে হাইলাইট করুন। হাইলাইট করতে আপনি সেই অংশটুকুকে বোল্ড বা ভিন্ন কালার করে দিতে পারেন।
  • বুলেট পয়েন্ট ও নাম্বার লিস্ট ব্যবহার করুন।
  • আর্টিকেলটি রিডারের বোঝার সুবিধার্থে প্রয়োজনীয় ইন্টার্নাল ও এক্সটার্নাল লিংক ব্যবহার করুন।
  • অহেতুক টেনেটুনে বা ঘুরিয়ে পেচিয়ে একই বিষয় লেখার মানসিকতা বর্জন করতে হবে।
  • যেকোনো কন্টেন্ট লেখার সময় টার্গেট কি ওয়ার্ড এর কম্পিটিটরদের থেকে ভালো ও তথ্যবহুল লেখার মানসিকতা নিতে হবে।
  • কন্টেন্টের প্রয়োজনে ইমেজ ভিডিও ব্যবহার করতে হবে।

মন্তব্য

একটি এসইও ফ্রেন্ডলি কন্টেন্ট লিখতে পর্যাপ্ত সময় ও রিসার্চ এর প্রয়োজন। একজন লেখক হিসেবে আপনার সার্থকতা হবে যদি আপনার লেখাটি মানুষ পড়ে আনন্দ পায় তবে। তাই অধিক মানুষের কাছে আপনার লেখাটি পৌঁছাতে হলে সেটি গুগলের প্রথম পেজে রেঙ্ক হওয়া আবশ্যক। আর এই উদ্দেশ্য পূরণ করতে আশা করি আমার এই আর্টিকেলটি আপনাদের কিছুটা সাহায্য করবে।

Previous articleআপনার ওয়েবসাইটের জন্য Best photo editing software কোনটি?
Next articleআত্মসম্মান নিয়ে কিছু কথা