হযরত আদম আঃ
পৃথিবীর শুরু লগ্ন থেকেই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন, দুনিয়াতে অনেক নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। তাদের মাঝে, হযরত আদম আঃ হলেন সর্বপ্রথম একজন মানব ও নবী। তিনি আল্লাহর একত্ববাদের দাওয়াত দিয়েছেন। তিনি-ই প্রথম ব্যক্তি, যিনি পৃথিবী টা সর্বপ্রথম আবাদ করেছিলেন। তার কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে সহিফা নাযিল হয়েছিল। সেটার নাম ছিল ( صحيفه ادم)। তার জীবনটা অনেক বৈচিত্র্যময় এবং আলোচনা সাপেক্ষ। আমাদের জন্য রয়েছে তার জীবন থেকে অনেক শিক্ষা। এবার আসুন তাঁর পুরো জীবন নিয়ে একটু আলোচনা-পর্যালোচনা করা যাক।

আদম আঃ এর সৃষ্টির রহস্য

আর স্মরণ করুন, যখন আপনার রব ফেরেশতাদের বললেন, নিশ্চয় আমি যমীনে খলীফা সৃষ্টি করছি’, তারা বলল, আপনি কি সেখানে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন যে ফাসাদ ঘটাবে ও রক্তপাত করবে? আর আমরা আপনার হামদসহ তাসবীহ পাঠ করি এবং পবিত্রতা ঘোষণা করি। তিনি বললেন, নিশ্চয় আমি তা জানি, যা তোমরা জান না। (সুরা বাকারা, আয়াতঃ ৩০)
অতঃপর আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদেরকে নির্দেশ দিলেন যেন, আদমের একটি অবয়ব তৈরি করেন। ফেরেশতারা অনেক যত্ন করে একটি অবয়ব তৈরি করলেন। তারপর আল্লাহ তাআলা সেটাতে রূহ ফুঁকে দিয়ে জীবন দান করেন।

ফেরেশতাদের উপর আদমের শ্রেষ্ঠত্ব

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
আর স্মরণ করুন, যখন আমরা ফেরেশতাদের বললাম, আদমকে সিজদা কর, তখন ইবলিস ছাড়া সকলেই সিজদা করল; সে অস্বীকার করল ও অহংকার করল। আর সে কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হল।
(সুরা বাকারা, আয়াত ৩৪)

শয়তানের যুক্তি ও অহংকার

আল্লাহ তাআলা যখন সকল ফেরেশতাদেরকে সিজদার আদেশ করলেন, সকলেই সিজদা করল তবে শয়তান সিজদা করল না এবং সে যুক্তি দাঁড় করালো। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেনঃ
তিনি বললেন, আমি যখন তোমাকে আদেশ দিলাম তখন কি তোমাকে নিবৃত্ত করল যে, তুমি সিজদা করলে না? সে বলল, আমি তার চেয়ে শ্ৰেষ্ঠ; আপনি আমাকে আগুন দিয়ে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে কাদামাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন।
(সুরা আরাফ, আয়াত ১২)
আল্লাহ বললেন,
তিনি বললেন, তাহলে তুমি এখান থেকে নেমে যাও, এখানে থেকে অহংকার করবে, এটা হতে পারে না। সুতরাং তুমি বের হয়ে যাও, নিশ্চয় তুমি অধমদের(১) অন্তর্ভুক্ত।
(সুরা আরাফ, আয়াত ১৩)
আল্লাহ তাআলা শয়তানকে তার অহংকারের জন্য জান্নাত থেকে বের করে দিলেন। এবং আদম আঃ এর সম্মান আরো বাড়িয়ে দিলেন।

সিজদার নির্দেশ কি জ্বীনদের প্রতিও ছিল

সিজদার নির্দেশ মূলত দেওয়া হয়েছিল সকল ফেরেশতাদেরকে। আর ফেরেশতা ছিল সর্ব উত্তম এবং সর্বোকৃষ্ট জাতি। যেহেতু সর্ব উত্তমদেরকে সেজদার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, সেহেতু সকলেই এর অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাওয়া, এটাই স্বাভাবিক। তাই জ্বীন জাতি এর অন্তর্ভুক্ত ছিল এতে কোন সন্দেহ নাই।
(তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন)

হযরত আদম আঃ ও হাওয়া আঃ এর বিবাহ

হযরত আদম আঃ জান্নাতে থাকতে লাগলেন, তবে তিনি অস্বস্তি বোধ করতেন এবং কেমন যেনো একটা শূন্যতা অনুভব করতে লাগলেন। এই অবস্থা দেখে আল্লাহ তাআলা আদমের বাঁ  পাঁজর থেকে হযরত হাওয়া আঃ কে সৃষ্টি করলেন। অতঃপর আল্লাহ তাআলা  উভয়ের মাঝে দশবার দুরুদের বিনিময় মোহরানা ধার্য করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে দিলেন। তাদের সম্পর্ক টাকে পবিত্র করে দিলেন।
আদম আঃ ও হাওয়া আঃ এর জান্নাতে বসবাস
আর আমরা বললাম, ‘হে আদম! আপনি ও আপনার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করুন এবং যেখান থেকে ইচ্ছা স্বাচ্ছন্দ্যে আহার করুন, কিন্তু এই গাছটির কাছে যাবেন না; তাহলে আপনারা হবে যালিমদের অন্তর্ভুক্ত।
(সুরা বাকারা, আয়াত ৩৫)
আরবি অভিধানে  رغدا বলা হয় সেই সব নেয়ামত ও আহার্য বস্তুকে, যা লাভ করতে কোন শ্রম বা সাধনার প্রয়োজন হয় না। অর্থাৎ আদম এবং হাওয়া কে বলা হলো যে, তোমরা জান্নাতে এত পরিমাণে ফুলমূল পাবে যা তোমাদের কোন শ্রম সাধনার মাধ্যমে লাভ করতে হবে না এবং তাহা নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার কোন চিন্তাও করতে হবে না। কিন্তু শয়তান হযরত হাওয়া আঃ কে প্ররোচনা দিয়ে ওই নিষিদ্ধ গাছ থেকে ফল খাইয়ে দেয়। সাথে সাথে তাদের শরীর থেকে জান্নাতি পোশাক খুলে পরে যায়।
 এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা কোরানে বলেনঃ
অতঃপর শয়তান সেখান থেকে তাদের পদস্খলন ঘটালো এবং তারা যেখানে ছিল সেখান থেকে তাদেরকে বের করল। আর আমরা বললাম, ‘তোমরা একে অন্যের শক্র রূপে নেমে যাও; এবং কিছু দিনের জন্য তোমাদের বসবাস ও জীবিকা রইল যমীনে।
(সূরা বাকারা, আয়াত ৩৬)
তারা প্রভুর আদেশে উভয়ে পৃথিবীর দুই প্রান্তে দুজনে নেমে গেলো। এবং  দুজনেই প্রচুর পরিমাণে কান্নাকাটি করতে লাগলো।

আদম আঃ আবার জান্নাতে যাবে কিন্তু জ্বীনে আর কখনই যাবে না

আল্লাহ তাআলা বলেনঃ  قال فاخرج منها فانك رجيم অর্থাৎ শয়তানকে বলা হলো, তুমি সেখান থেকে বের হয়ে যাও নিশ্চয় তুমি অভিশপ্ত বা বিতারিত আর আদম আঃ কে বলা হলো,  قلنا اهبطوا منها جميعاঅর্থাৎ তোমরা উভয়ে পৃথিবীতে নেমে যাও। তার মানে হলো, শয়তান বিতারিত সে আর কখনোই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর আদম আঃ বিতারিত নয় বরং নামিয়ে দেয়া হয়েছে সুতরাং তিনি  এবং তার সন্তান-সন্ততিরা আবার জান্নাতে প্রবেশ করবে।

আল্লহর সাথে ইবলিসের চ্যালেঞ্জ

আল্লাহ তাআলা যখন ইবলিসকে জান্নাত থেকে বিতাড়িত করে বের করে দিলেন, তারপর ইবলিশ আল্লাহর সাথে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন যে, আমি দেখে নিবো, কিভাবে আপনার বান্দারা জান্নাতে প্রবেশ করে। আমি সিরাতে মুস্তাকিম এর কাছে বসে থাকবো এবং তাদেরকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাবো।
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
قَالَ اَنۡظِرۡنِیۡۤ اِلٰی یَوۡمِ یُبۡعَثُوۡنَ ﴿۱۴﴾ قَالَ اِنَّکَ مِنَ الۡمُنۡظَرِیۡنَ ﴿۱۵﴾ قَالَ فَبِمَاۤ اَغۡوَیۡتَنِیۡ لَاَقۡعُدَنَّ لَهُمۡ صِرَاطَکَ الۡمُسۡتَقِیۡمَ ﴿ۙ۱۶﴾ ثُمَّ لَاٰتِیَنَّهُمۡ مِّنۡۢ بَیۡنِ اَیۡدِیۡهِمۡ وَ مِنۡ خَلۡفِهِمۡ وَ عَنۡ اَیۡمَانِهِمۡ وَ عَنۡ شَمَآئِلِهِمۡ ؕ وَ لَا تَجِدُ اَکۡثَرَهُمۡ شٰکِرِیۡنَ ﴿۱۷﴾قَالَ اخۡرُجۡ مِنۡهَا مَذۡءُوۡمًا مَّدۡحُوۡرًا ؕ لَمَنۡ تَبِعَکَ مِنۡهُمۡ لَاَمۡلَـَٔنَّ جَهَنَّمَ مِنۡکُمۡ اَجۡمَعِیۡنَ ﴿۱۸﴾
অর্থাৎ সে বললঃ আমাকে কেয়ামত দিবস পর্যন্ত অবকাশ দিন, আল্লাহ বললেনঃ তোকে সময় দেয়া হলো, সে বললঃ আপনি আমাকে যেমন উদভ্রান্ত করেছেন, আমিও অবশ্য তাদের জন্য আপনার সরল পথে বসে থাকবো, এরপর তাদের কাছে আসব তাদের সামনের দিক থেকে, পিছন দিক থেকে, ডান দিক থেকে এবং বাম দিক থেকে। আপনি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবেন না। (সুরা আ’রাফ, আয়াত ১৪-১৮)

আদম ও হাওয়ার তওবা

পৃথিবীতে নেমে তারা আল্লাহর দরবারে এতো পরিমাণে কান্নাকাটি করতে লাগলো যে, কোন কোন বর্ণনায় পাওয়া যায়, সাড়ে তিনশত বছর একাধারে তারা কান্নাকাটি করল, অতঃপর আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে তওবা করার কিছু কালিমা-বাক্য শিক্ষা দিলেন, সেগুলোর মাধ্যমে তারা অবশেষে মুক্তি পেল।
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
তারপর আদম তার রবের কাছ থেকে কিছু বাণী পেলেন। অতঃপর আল্লাহ তার তাওবা কবুল করলেন। নিশ্চয় তিনিই তাওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। (সুরা বাকারা, আয়াত ৩৭)

আদম ও হাওয়া আঃ এর মিলন

আল্লাহ তাআলা তাদের যে দোয়া শিখিয়ে দিয়েছিলেন সেটি হল
তারা বলল, হে আমাদের রব! আমরা নিজেদের প্রতি যুলুম করেছি। আর যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং দয়া না করেন, তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব।
(সুরা আ’রাফ, আয়াত ২৩)
এভাবে তারা কান্নাকাটি করার পর আল্লাহ তাআলা আরাফার ময়দানে ফজরের সময় তাদের সাক্ষাৎ করিয়ে দিলেন। তারপর তারা দু’জন মিলে দু’রাকাত শুকরানার নামাজ আদায় করেন, যা পরবর্তীতে ফজর নামাজ হিসাবে সাব্যস্ত হয়।

আদম আঃ এর সন্তান সন্ততি

কিতাবের মধ্যে পাওয়া যায় যে, তার ১৪০ জোড়া ছেলে-মেয়ে ছিলো। এবং  আগের ঘরের মেয়ে আর পরে ঘরের ছেলে এভাবে বিজোড় ভাবে তাদের বিয়ে হতো। এই নিয়ম শুধুমাত্র আদম আঃ এর শরীয়তেই প্রযোজ্য ছিলো পরে তা রহিত করে দেয়া হয়।

হাবিল কাবিলের ঘটনা

এরা দু’জনই ছিল হযরত আদম আঃ এর সন্তান। সুন্দরী বোনকে বিয়ে করাকে কেন্দ্র করে, কাবিল তার বড় ভাই হাবিলকে অন্যায় ভাবে হত্যা করে। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কালামের মধ্যে বলেন
 واتل عليهم نبا ابني ادم بالحق اذ قربا قربانا فتقبل من احدهما ولم يتقبل من الاخر  قال لاقتلنك قال انما يتقبل الله من المتقين
অর্থঃ তুমি তাদেরকে আদমের পুত্রদ্বয়ের (হাবিল-কাবিল) ঘটনা সঠিকভাবে পাঠ করে শুনিয়ে দাও, যখন তারা উভয়েই এক একটি কুরবানি পেশ করলো। তাদের মধ্য হতে একজনের (হাবিল) কুরবানী কবুল হলো অপরজনের (কাবিল) কুরবানী কবুল হলো না। অপরজন (কাবিল) বলল নিশ্চয় আমি তোমাকে হত্যা করবো। প্রথমজন (হাবিল) বলল নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকীদের আমল কবুল করেন।
অতঃপর কাবিল তার বড় ভাই, হাবিলকে অন্যায় ভাবে হত্যা করে। আর হাবিল জুলুমের স্বীকার হয়ে জান্নাতে তার বাসস্থান বানিয়ে নেয়। তারপর কাবিল তার ভাইকে মাটি খনন করে দাফন করে। সেখান থেকে ই মুলত কবর দেয়ার প্রচলন শুরু হয়ে এসেছে।

আদম আঃ এর বয়স

আল্লাহ সুবহানা হুয়া তা’লা আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করবার পর কি করেছিলেন সেই সম্পর্কিত সহিহ হাদিস
حَدَّثَنَا عَبْدُ بْنُ حُمَيْدٍ، حَدَّثَنَا أَبُو نُعَيْمٍ، حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ سَعْدٍ، عَنْ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ لَمَّا خَلَقَ اللَّهُ آدَمَ مَسَحَ ظَهْرَهُ فَسَقَطَ مِنْ ظَهْرِهِ كُلُّ نَسَمَةٍ هُوَ خَالِقُهَا مِنْ ذُرِّيَّتِهِ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَجَعَلَ بَيْنَ عَيْنَىْ كُلِّ إِنْسَانٍ مِنْهُمْ وَبِيصًا مِنْ نُورٍ ثُمَّ عَرَضَهُمْ عَلَى آدَمَ فَقَالَ أَىْ رَبِّ مَنْ هَؤُلاَءِ قَالَ هَؤُلاَءِ ذُرِّيَّتُكَ فَرَأَى رَجُلاً مِنْهُمْ فَأَعْجَبَهُ وَبِيصُ مَا بَيْنَ عَيْنَيْهِ فَقَالَ أَىْ رَبِّ مَنْ هَذَا فَقَالَ هَذَا رَجُلٌ مِنْ آخِرِ الأُمَمِ مِنْ ذُرِّيَّتِكَ يُقَالُ لَهُ دَاوُدُ ‏.‏ فَقَالَ رَبِّ كَمْ جَعَلْتَ عُمْرَهُ قَالَ سِتِّينَ سَنَةً قَالَ أَىْ رَبِّ زِدْهُ مِنْ عُمْرِي أَرْبَعِينَ سَنَةً ‏.‏ فَلَمَّا انْقَضَى عُمْرُ آدَمَ جَاءَهُ مَلَكُ الْمَوْتِ فَقَالَ أَوَلَمْ يَبْقَ مِنْ عُمْرِي أَرْبَعُونَ سَنَةً قَالَ أَوَلَمْ تُعْطِهَا ابْنَكَ دَاوُدَ قَالَ فَجَحَدَ آدَمُ فَجَحَدَتْ ذُرِّيَّتُهُ وَنَسِيَ آدَمُ فَنَسِيَتْ ذُرِّيَّتُهُ وَخَطِئَ آدَمُ فَخَطِئَتْ ذُرِّيَّتُهُ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ ‏.‏ وَقَدْ رُوِيَ مِنْ غَيْرِ وَجْهٍ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ‏.‏
আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন –
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যখন আল্লাহ তা’আলা আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করলেন তখন তিনি তার পিঠ মাসেহ করলেন. এতে তাঁর পিঠ থেকে তাঁর সমস্ত সন্তান বের হলো, যাদের তিনি ক্বিয়ামাত পর্যন্ত সৃষ্টি করবেন. তিনি তাদের প্রত্যেকের দুই চোখের মাঝখানে নূরের ঔজ্জল্য সৃষ্টি করলেন, অতঃপর তাদেরকে আদম (আঃ) এর সামনে পেশ করলেন. আদম (আঃ) বললেনঃ হে প্রভু! এরা কারা? আল্লাহ বললেন, “এরা তোমার সন্তান”. আদমের দৃষ্টি তার সন্তানদের একজনের উপর পড়লো যাঁর দুই চোখের মাঝখানের ঔজ্জল্যে তিনি বিস্মিত হলেন. তিনি বললেন, “হে আমার প্রভু! ইনি কে?” আল্লাহ তা’আলা বললেন, “শেষ যামানার উম্মাতের অন্তর্গত তোমার সন্তানদের একজন। তার নাম দাউদ (‘আঃ)”. আদম (‘আঃ) বললেন, “হে আমার রব! আপনি তাঁর বয়স কত নির্ধারণ করেছেন?” আল্লাহ বললেন, “৬০ বছর”. আদম (‘আঃ) বললেন, “পরোয়ারদিগার! আমার বয়স থেকে ৪০ বছর (কেটে) তাকে দিন”. আদম (‘আঃ) এর বয়স শেষ হয়ে গেলে তাঁর নিকট মালাকুল মউত এসে হাযির হন. আদম (‘আঃ) বললেন, আমার বয়সের কি আরো ৪০ বছর অবশিষ্ট নেই? তিনি (মালাকুল মউত) বললেন, আপনি কি আপনার সন্তান দাউদকে দান করেননি? রাসুলুল্লাহ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “আদম (‘আঃ) অস্বীকার করলেন, তাই তার সন্তানরাও অস্বীকার করে থাকে, আদম (আঃ) ভুলে গিয়েছিলেন, তাই তাঁর সন্তানদেরও ভুলে যায়, আদম (আঃ) অপরাধ করেছিলেন তাই তাঁর সন্তানদেরও গুনাহ করে”. (জামে’ আত-তিরমিজি, হাদিস নং ৩০৭৬)

দুনিয়াবী ব্যবস্থাপনায় হযরত আদম আঃ এর অবদান

  • প্রত্যেক নবী রাসুল ই দুনিয়াতে কোন না কোন কাজ করেছেন। ঠিক তেমনি হযরত আদম আঃ কৃষি কাজ করেছিলেন এবং ওহীর মাধ্যমে কৃষি কাজ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা অবগত করান কিভাবে জমি চাষাবাদের উপযুক্ত করে সেখানে ফসল ফলাতে হয়। এবং কোন জমিতে কি রকম ফসল উৎপন্ন হবে ওহীর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা আদম আঃ কে শিখিয়ে দেন।
  • চাকার গাড়ি শুরু হয় হযরত আদম আঃ  থেকে। তিনি চাকা দিয়ে গাড়ি নির্মাণ করেন, যা পরবর্তীতে এখনো পর্যন্ত আমাদের মাঝে রয়েছে। সুতরাং বলা-ই যায় যে চাকার গাড়ির আবিষ্কারক হযরত আদম আঃ।

আদম আঃ এর  কয়েকটি শ্রেষ্ঠত্ব

  • আল্লাহ তাআলা নিজ হাতে তিনাকে সৃষ্টি করেন।
  • তিনিই একমাত্র সরাসরি মাটি থেকে সৃষ্টি হোন বাকি সকলে পিতা মাতা থেকে সৃষ্টি।
  • তিনাকে আল্লাহ তাআলা  সব কিছুর নাম শিক্ষা দেন।
  • সকল ফেরেস্তা তিনাকে সিজদা করেন।
  • আল্লাহ তাআলা নিজে তিনার ভিতর রূহ ফুঁকে দিয়েছেন।
  • তিনার মাধ্যমে ফজরের নামাজ চালু হয়।

আদম আঃ এর জীবন থেকে আমাদের শিক্ষা

  • আদম সন্তানের গোনাহ হবে এটাি স্বাভাবিক, তবে সাথে সাথে তওবা করে গোনাহ থেকে ফিরে আসতে হবে।
  • দুনিয়াবী সকল সমস্যার সমাধানের জন্য আল্লাহর দিকে রুজু হতে হবে।
  • শয়তানের মত অহংকার বা আত্মম্ভরিতা করা যাবে না। তাহলে তার মতই ধ্বংস অনিবার্য।
  • দুনিয়া থেকে নিজেকে একেবারে পরহেজ না রেখে নবী রাসূলদের মত শরীয়ত সম্মত ভাবে দুনিয়াকে কাজে লাগানো।
  • জ্ঞান আহরণে নিজে যুক্ত রাখা। যেমন, আল্লাহ আদম আঃ কে সব কিছুর নাম শিখিয়েছেন।
  • বিবাহ বহির্ভূত কোন সম্পর্কে নিজেকে জড়ানো যাবে না। প্রয়োজনে বিয়ে করে নিতে হবে।
  • ফজর নামাজ গুরুত্বসহকারে আদায় করা।
  • মাটি খনন করে কবর দিতে হবে। বিধর্মীদের মত আগুনে পুড়ানো বা পানিতে ভাসানো যাবে না।
  • শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করা যাবে না। বরং তার সাথে বিরুদ্ধাচারণ করে আমাদের জান্নাতে যেতে হবে।
  • অনেক বেশি কান্নাকাটি  করতে হবে আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য।
আমরা যদি ওনার পুরো জীবন টা ভালো ভাবে স্টাডি করে ওনার জীবনের প্রতিটি কাজ ফলো করি এবং সেভাবে সাজাই তাহলে আমরাও ইহকালে শান্তি ও পরকালে মুক্তি পাবো ইনশাআল্লাহ।
Previous articleলকডাউন এবং আমার ব্লগ ও ইউটিউব চিন্তা
Next articleপানামা খাল – জাহাজকে পাহাড়ে তোলার ইতিহাস

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here