সুশান্ত সিং রাজপুত
সুশান্ত সিং রাজপুত

 

গত ১৪ জুন নিজের বাসায় সুশান্ত সিং রাজপুতকে নিজ ঘরে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।  সিলিং ফ্যানে ফাঁসি নিয়ে আত্মহত্যা  করে এই তারকা।  তার মৃত্যুর খবর পুরো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে মুহুর্তেই।  তার মৃত্যুর পেছনে তার ভগ্নপ্রায় মানসিক অবস্থা ও ডিপ্রেশনকে দায়ী করা হয়।  এবং মুহুর্তেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুইটি শব্দ ট্র্যান্ড করতে থাকে,  ডিপ্রেশন ও মেন্টাল হেলথ।  কিন্তু সুশান্তের এই ডিপ্রেশনের পেছনে দায়ী কে বা কারা?

বর্তমান বলিউড ইন্ডাস্ট্রি আত্মীয়দের ভীরেই হারিয়ে যাচ্ছে।  যেখানে বাবা মা এক্টর তো ছেলে মেয়েও এক্টর হবে।  চাচা মামা ফুফু খালা সবাই বাই ডিফল্ট ডিরেক্টর, রাইটার বা কোনো না কোনো পদে অসীন হবে।  খুব কম তারকাই এই নেপোটিজমে ভরা ইন্ডাস্ট্রিতে আউটসাইডার হিসেবে এসে নিজের স্থান থিতু করতে পারে।  তাদের মাঝে অন্যতম ছিল সুশান্ত

PK, Chhichhore,  MS Dhoni র মতো ব্লকবাস্টার হিট সিনেমা দিয়ে নিজের স্থান থিতু করেছিলেন তিনি।  কিন্তু তার যাত্রাটা মোটেও সুখকর ছিল না।  পদে পদে পড়তে হয়েছে বাধায়। হ্যালো পাঠক ,  আমি তিয়াশ, হাজির হয়েছি নিয়ে সুশান্তর সাথে ঘটে যাওয়া কিছু অন্যায্য ঘটনা,  বলবো সবিস্তারে  কেন তার এই ডিপ্রেশন এবং কারা দায়ী তার পিছনে।  তবে চলুন আর কোনো বাক্যব্যয় না করে সোজা চলে যাওয়া যাক ভেতরে।

মিডিয়া-ব্লগ এবং তাদের চটকদার খবর নিয়ে কিছু বলার নেই।  সৃষ্টির সুচনা থেকেই তাদের কাজ গরম মশালাযুক্ত খবর খুঁজে বের করা।  না পেলেও সমস্য নেই।  নিজের ইমাজিনেশন মিশিয়ে যা মনে আসবে তাই ছেপে দিতে পিছপা হয় না অনেকেই।   সুশান্তের মৃত্যুর পর পরই মুখ খুললেন বলিউড কুইন কঙ্গনা রণৌত।

তার সরাসরি ইশারা নেপোটিজমের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিবর্গের দিকে।  তিনি আরো বলেন সুশান্তের মৃত্যু  নিয়ে তদন্ত করা উচিত।  এবং তাতে সংশ্লিষ্ট সকল স্বজনপ্রীতি দেখানো লোকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে তিনি সরাসরি কথা বলবেন।  ম্যাগাজিন ও ওয়েব পোর্টাল নিয়েও তার অভিজ্ঞতা তিক্ত।  তিনি শেয়ার করেন কিভাবে সরাসরি তার নাম না নিয়ে “কোঁকড়া চুলের সাইকো এক্ট্রেস” এবং এমন আরো কিছু তুচ্ছতাচ্ছিল্য শব্দ ব্যবহার করে ইঙ্গিতে তাকে নিয়ে বাজে কথা বলেছে মিডিয়ার লোকজন।  একবার তো কোনো ভনিতা ছাড়াই তাকে সরাসরি পাগল বলে আখ্যা দিয়ে দেয় তারা।

সুসান্ত সিং কেও পড়তে হয়েছে এমন বিষাক্ত আলোচনার ঝড়ে।  বলিউডে আউটসাইডার হিসেবে বরাবরই তাকে নীচু দেখানোর সর্বপ্রকার চেষ্টা চালানো হয়েছে।  ইঙ্গিতে তাকে ট্রাক ড্রাইভারের সাথে তুলনা করা হয়েছে, ছাপা হয়েছে সুশান্তের সাথে ডিরেক্টর এক্টরদের বাকবিতন্ডার ভুঁয়া খবর।  সীমা অতিক্রম করে একবার তাকে নিয়ে #metoo মুভমেন্টে জড়িত হবার ভবিষ্যতবাণীও করে ফেলে এক রিপোর্টার।  সম্প্রতি তার মৃত্যুর পর Karan Johar সহ অনেকের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠলে এই ম্যাগাজিন রিপোর্টার  ও  PR ডিপার্টমেন্ট খুঁড়ে খুঁড়ে বের করেছে তাদের দুজনের একসাথের ছবি।  কিন্তু মশাই ছবিই কি সবসময় সত্য বলে?  মোটেও না!

সদাহাস্য Sahid Kapoor এর কথাই ধরা যাক।  সম্প্রতি ফাঁস হওয়া এক ভিডিওতে আমরা দেখতে পাই এক পার্টিতে সুশান্ত সো কল্ড প্রথম কাতারের অভিনেতাদের সাথে নাচার চেষ্টা করেন।  Sahid Kapoor তখন তাকে ঠেলে দুরে সরিয়ে দিয়ে Varun Dhawan,  Alia Bhatt এবং Katrina এর সাথে নাচতে থাকে।  বলতে গেলে খুব সহজ লাগতে পারে ঘটনাটি।  কিন্তু মশাই নিজে একবার কল্পনা করে দেখুন এমন অপমানের। ডিপ্রেশন এ আপনিও পরবেন।

মিডিয়া নিউজ বরাবরই তিক্ত ছিল এই আউটসাইডার তারকাদের ওপরর। তার আরো একটি উদাহরণ সুশান্তের 2017 সালের সিনেমা Raabta র কথা ।  মিডিয়াতে তারকাদের মধ্যে চলতে থাকা ভুঁয়া প্রেমের সুড়সুড়ি দেয়া খবর ছাপিয়ে পাবলিকের মনোরঞ্জন করার ঘটনা বিরল না। কিন্তু এই বিষয়টা জটিলতর হয়ে ওঠে সুশান্তের ক্ষেত্রে।  ঠিক Raabta মুভি রিলিজের আগে আগে মুভির মুখ্য চরিত্রের অভিনেত্রী Kriti Sanon এর সাথে তার নাম জুড়ে বের হতে থাকে একের পর এক রসালো গল্প।  শুধু কি তাই সাথে সাথে সুশান্তর তার প্রাক্তন প্রেমিকা Ankita কে ধোঁকা দেয়ার মিথ্যে খবরও প্রচার করতে থাকে মিডিয়া।  আর তা মুহুর্তেই ছড়িয়ে পড়ে সবখানে। ফলাফল Raabta মুভির ব্যাপকভাবে ব্যাবসায় ব্যর্থতা ।

এওয়ার্ড ও সম্মাননা অভিনেতাদের জীবনে প্রচুর বড় একটা ভুমিকা রাখে।  তাদের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে মানা হয় এওয়ার্ডগুলোকে।  কিন্তু এই এওয়ার্ড শো গুলোও ধীরে ধীরো কলুষিত হয়ে পড়ছে। Aamir Khan, Kangana Ranaut, Akshay Kumar, Irfaan Khan এর মতো তারকারাও সময়ে সময়ে এই ঘৃণ্য এওয়ার্ড শো র বিচার ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলেছেন।  যদি এওয়ার্ড শো তে ডান্স পার্ফর্মেন্স না করেন, বড় বড় কোম্পানির আন্ডারে আপনার মুভি না থাকে বা নামের পেছনে খান, কাপুর, ভাট এর মতো কোনো টাইটেল যদি না থাকে তবে এওয়ার্ড পাওয়ার চিন্তা ছেড়ে দিন।

গতবছরের অন্যতম সেরা মুভি ছিল সুশান্তর Chichhore এবং অন্য বাজে মুভি ছিল Student of the Year 2.  কিন্তু এওয়ার্ড জাজদের কাছে Chhichhore মুভিকে নমিনেশন পাবার যোগ্যও বলে মনে হয়নি।  আর student of the year 2 মুভির জন্য তিন তিনটে এওয়ার্ড!

কারণ খুব সহজ।  Chichhore মুভির পরিচালক Nitesh Tiwari নিজে একজন আউটসাইডার এবং Student of the Year 2 র পরিচালক বলিউডের গডফাদার Karan Johar,  তো এওয়ার্ড কোনদিকে যাবে তা বলার অবকাশ থাকে না।  এমন অসম আচরণ নিয়ে মুখ খোলেছেন Abhay Deol ও।  তার Zindagi Na Milegi Doobara মুভিতে তিন বন্ধুর গল্প সমান ভাবে দেখানো হয়েছে। সবার সম্মাননা পাওয়ার দাবি তাই সামান   কিন্তু Hrittik Rosan বেস্ট এক্টর ক্যাটাগরিতে এওয়ার্ড পায় কিন্তু Abhay Deol ও Farhan Akhtar তাদের সেরাটা দিয়েও সাপোর্টিং এক্টরের ক্যাটাগরিতে নমিনেশন অব্ধি পাননি।

বর্তমানে ট্যালেন্টের চেয়ে বেশভুশা মুল্য পায় বেশি।  ডিজাইনার জামাকাপড় না পড়লে, পার্টির শোভা না বাড়ালে যতই ট্যালেন্ট থাকুক না কেন কোনো মূল্যায়ন হয় না বলিউডে।  এনিয়ে Dirty Picture খ্যাত Vidya Balan বলেন “আমাকে বলা হয় আমি শাড়ির ফ্যাশন আবার নিয়ে এসেছি,  কিন্তু আমি বলি শাড়ি তো সবসময়ই ছিল, শুধু আমি শাড়িটা একটু বেশি পরি!”

তবে এসবের চেয়েও বেশি অন্যায় হয়েছে সুশান্তের সাথে।  চলুন জানা যাক তার ডিপ্রেশনের অন্যতম প্রধান কারণ নিয়ে।  Yash Raj Film (YRF) এর সাথে সুশান্তের কন্ট্রাক্ট হয় তিনটে মুভি করার।  আর এই ব্যানারের প্রথম দুটি মুভি “Shuddh Desi Romance” ও “Detective Byomkesh Bakshi” নির্বিঘ্নে রিলিজ পেলেও তার তৃতীয় মুভি “Befikre” -র জন্য জনগণের আগ্রহ দেখে YRF  সুশান্তকে বাতিল করে এর লিড কাস্টে Ranveer Singh কে দিয়ে দেয়া হয়।

সুশান্ত  তার YRF এর মুভি কন্ট্রাক্টের  জন্য সঞ্জয় লীলা বানসালির সিনেমা “Ramleela” কে মানা করে দেয়।  এবং যখন সে তার চরিত্রে রানবীরকে রিপ্লেসের কথা শোনে,  তখন সে তার প্রতিবাদ করে৷  তাতে হিতে বিপরীত হয়।  সুশান্তকে মুল চরিত্রে রেখে Shekhar Kapoor এর আপকামিং সিনেমা “paani” কে YRF এর ব্যানার থেকে সরিয়ে নেয়া হয়।  শুধু তাই নয়, এই প্রতিবাদ করায় দেশবরেণ্য বড় বড় সাতটি প্রোডাকশন হাউজ থেকে তাকে প্রায় নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়।  তো বলুন ডিপ্রেশন কেন হবে না? যেখানে ভিক্টিমকেই শাস্তি দেয়া হয়,  ডিপ্রেশন সেখানে অনিবার্য৷

তবে চলুন আজ থেকে শুধু সুশান্তের মৃত্যুর জন্য আক্ষেপ ও ডিপ্রেশন ও মেন্টাল হেলথ নিয়েই কেবল কথা বলা নয়৷  কথা বলি তার পেছনের কারণ নিয়ে।  কথা বলি বলিউডে শুরু থেকে চলে আসা স্বজনপ্রীতি ও অন্যায় কার্যকলাপ নিয়ে।  আওয়াজ তুলি নিজের সর্বোচ্চটা দিয় যাতে আর না হারাই অন্য কোনো সুশান্তকে।  যাতে সিনেমাজগতে পরিচয় হয় শিল্পীর মেধার জোরে,  নামের পেছনে জুড়ে থাকা টাইটেল দিয়ে নয়।  সিনেমা স্বাধীনতা স্থায়ী হোক এই প্রত্যাশায় বিদায় নিচ্ছি আজ।  এই বিষয়ে আপনার ভালো লাগা মন্দ লাগা কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না।  দেখা হবে শীঘ্রই৷ ততদিন ভালো থাকুন,  সুস্থ থাকুন।

আর হ্যা, সেরা ৫টি কোরিয়ান রোমান্টিক মুভির রিভিউ জানতে চাইলে আমার নিচের ব্লগ ঘুরে আসতে পারেন। আশা করি ভাল লাগবে।

লকডাউনে দেখতে পারেন এই পাঁচটি সাউথ কোরিয়ান রোমান্টিক মুভি

ধন্যবাদ।

Previous articleবনি ইসরাইল আল্লাহর অসীম রহমত প্রাপ্ত এক অকৃতজ্ঞ  জাতি
Next articleপি এইচ পি নিয়ে কিছু সাধারন তথ্য জেনে রাখুন
আমার জন্য জীবন মানে বই আর সোশাল মিডিয়া। বইতে বাঁচি, সোশাল মিডিয়তে শ্বাস নিই। দুইয়ের কোনোটিতেই একটু ভাটা পড়লেই মেঘ জমে আমার আকাশে। বৃষ্টিভেজা দিনে বা খর রৌদ্র দুপুরে ছাদের রেলিং এ হাতে বই নিয়ে বা জানালার ধারে একমনে প্রিয় তারকাদের প্রোফাইল ঘাটা, দুটিতেই সমান পারদর্শী। মাঝে মাঝে Indie pop গানের জগতে বা কখনো kpop নিয়ে মাতি। কখনো korean rom-com মুভি দেখে হাসতে হাসতে প্রেমে পড়ি, কখনো Titanic দেখে বিশাদরসে হাবুডুবু খাই। জীবন এভাবে চলছে। মন্দ কি?