সাইকোলজিকাল ট্রিকস

 

আজকের লেখায় যা থাকছে

মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব।মানুষ প্রাচীনকাল থেকেই সৃষ্টি জগতে প্রভুত্ব করে আসছে অন্যান্য প্রাণীর উপর।এর পেছনে মানুষের মস্তিষ্ক সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে। মানুষের প্রখর বুদ্ধি তার চলার পথে শত বাধা বিপত্তি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম করেছে।সামান্য ছোট ছোট কিছু বিষয় না জানার ফলে মানুষকে অনেক সমস্যায় পড়তে হয় কিন্তু এই বিষয়গুলো জানা থাকলে মানুষের অনেক উপকার হয়।কিছু সাইকোলজিকাল ট্রিকস আমাদের জীবন যাপনে অনেক সাহায্য করতে পারে। সাইকোলজিকাল ট্রিকস জানা থাকলে আমরা আমাদের জীবনের অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঝামেলা এড়াতে পারি এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে একটু অতিরিক্ত সুবিধাও পেতে পারি ।

আরও মোটিভেশনাল ব্লগ পড়ুনঃ আমি পিছিয়ে পড়েছি, আপনারা সতর্ক হন, সফলতা সময়ের ব্যাপার

নিজেকে ব্যক্তিত্ববান করে গড়ে তুলুন

আমরা সবসময় নিজেদেরকে অন্যের কাছে আকর্ষনীয় দেখানোর চেষ্টা করি । সত্যি কথা বলতে অন্যরা প্রথম প্রথম আপনার সম্পর্কে ভাল ধারণা রাখেন।আপনার প্রধান কাজ হবে সেই ভালো ধারণা যাতে বজায় থাকে সেটাকে গুরুত্ব দেওয়া। এটা বলা হয়ে থাকে যে বোকা মানুষকেও ততক্ষণ বুদ্ধিমান মনে করা হয়  যতক্ষণ না বোকা মানুষের মুখ থেকে কোন শব্দ বের না হয়। মানুষের কথা এবং মুখের হাসির মাধ্যমে মানুষের ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে অনেক কিছু বোঝা যায়।

শ্রোতাকে বিরক্ত করবেন না

অনেক সময় আমরা একনাগারে অনেক্ষন কথা বলি। এতে করে অনেক শ্রোতাই  বিরক্ত হয় ।তাদের এই বিরক্তি অনেক সময় আমাদের বিব্রত করে। কিছু ছোট ছোট সাইকলজিক্যাল ট্রিক্স আমাদেরকে পরিস্থিতি বুঝতে অনেক সাহায্য করে। যেমন আমরা মুখোমুখি কথা বলার সময় যদি অন্য আরেকজনের পায়ের পাতা বক্তার দিকে ঘোরানো থাকে তবে আমরা বুঝব যে ঐ শ্রোতার বক্তার কথা শোনার মত মনোযোগ বজায় আছে। যদি  শ্রোতার পায়ের পাতা বক্তার দিকে ঘোরানো না থেকে যদি অন্য কোন দিকে ঘোরানো থাকে তবে বুঝতে হবে যে  শ্রোতা বক্তার কথাগুলোতে যথেষ্ট বিরক্ত বোধ করছেন। এখন বক্তার উচিত হবে শ্রোতার সাথে বেশি কথা না বাড়িয়ে ওই জায়গা থেকে প্রস্থান করা।

পড়াশোনায় মনোযোগ ধরে  রাখার সহজ টিপস

আমরা অনেকেই মনে করি কোন বিষয় বেশি সময় ধরে পড়লে বুঝি আমরা সফল হতে পারব। কিন্তু আসলে এর উল্টোটি সত্য। আমাদের মস্তিষ্ক বেশিক্ষন মনোযোগ ধরে রাখতে পারেনা কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর। তাই আমাদের উচিত কমপক্ষে 1 ঘন্টা পরপর একটু হাঁটাহাঁটি করা। কিছু স্বাদবর্ধক খাবার যেমন চকলেট, বিস্কুট ইত্যাদি খাওয়া। আমাদের সময়েের সর্বোত্তম ব্যবহার করতে হবে। এই যে এক ঘন্টা পর পর নিজেকে কিছুটা পুরস্কৃত করার মাধ্যমে আমরা আমাদের মস্তিষ্ককে পূর্ণ সক্রিয় করে আবার আমরা যেকোন বিষয়ের উপর পড়াশোনা করতে পারি। এতে করে আমরা সহজে পড়ায় মনোযোগ ধরে রাখতে সমর্থ হব।

ক্লান্তি দূর করে কাজ করুন সফল হবেন

অনেক সময় কাজ করতে করতে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ি এবং এই ক্লান্তি আমাদের সামনে এগিয়ে যাবার ক্ষেত্রে এক বড় বাধা। আমাদেরকে অবশ্যই এসব ক্লান্তি দূর করার জন্য কিছু ট্রিকস জানতে হবে ।অনেকেই আমরা চুইংগাম চিবিয়ে  থাকি।এর ফলে আমরা আমাদের মস্তিষ্ককে কিছুটা প্রতারিত  করতে পারি। আমরা আমাদের মস্তিষ্ককে বোঝাতে সক্ষম হব যে আমরা ভালো আছি। কারণ এই সময় মস্তিষ্ক চুইংগামের স্বাদ নিতেই বেশি তৎপর থাকবে ফলে আমাদের ক্লান্তি কিছুটা কম অনুভূত হবে।

করমর্দনের সময় হাত শুষ্ক উষ্ণ রাখুন

আমরা যখন অন্যের সাথে করমর্দন করবো তখন আমাদের অবশ্যই একটা বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের হাতটা যেন উষ্ণ থাকে কারণ উষ্ণ হাত দিয়ে করমর্দন করলে বিপরীতজন আমাদেরকে কিছুটা আত্মবিশ্বাসী ভাবে, আমাদেরকে ব্যক্তিত্ববান ব্যক্তি হিসেবে মনে করবে।তাই আমাদেরকে সব সময় হাত শুষ্ক এবং উষ্ণ রাখার চেষ্টা করতে হবে।

প্রথম ও শেষ ইম্প্রেশন ভালো রাখুন

আমরা মানব জাতি সবসময় প্রথম ও শেষ ঘটনাকে মনে রাখি। মাঝে যে কি ঘটনা ঘটে সেটা অনেক সময় আমাদের  মনেই থাকে না। তাই আমাদেরকে চেষ্টা করতে হবে প্রথম ও শেষ ইম্প্রেশন ভালো রাখার জন্য কারণ একজনের সাথে দেখা হলে মানুষ প্রথম ও শেষ ইম্প্রেশন দিয়ে অন্যকে বিচার করে ,মাঝে কি হলো সে দিকে অনেক সময় মানুষ খেয়াল রাখে না। সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে।

রাগান্বিত মানুষকে ম্যানেজ  করার সহজ টিপস

আমরা অনেক সময় দেখি যে রাগান্বিত মানুষজন যেকোনো খারাপ কাজ করতে পারে। তাই আমাদের প্রথম কাজ হবে রাগান্বিত মানুষকে শান্ত রাখা এবং তার সাথে সঠিকভাবে ব্যবহার করা। রাগান্বিত সঙ্গীদের শান্ত রাখতে আমাদের প্রথমেই নিজেদেরকে শান্ত থাকতে হবে। পরিবেশ থেকে যদি সে রাগের কোনো উপাদান না পাই তবে দেখা যাবে সে একসময় নিজে থেকেই শান্ত হয়ে যাবে। সে যখন শান্ত হবে তখন আপনি তাকে বোঝাতে পারবেন। তাই আমাদেরকে রাগান্বিত সঙ্গী-সাথীদের সামনে সবসময় শান্ত হয়ে বসে থাকতে হবে।

কোন বিষয় দীর্ঘস্থায়ীভাবে মনে রাখবেন কিভাবে

আমরা অনেক সময় দেখি যে নিজে ভালোভাবে একটা বিষয় শিখলেও সেটা ভুলে যায়। কিন্তু কারো মনে প্রশ্ন জাগে কেন এমন হয়? সেজন্য আমাদের প্রধান কাজই হবে নিজে যখন আমরা একটা বিষয় শিখবো তখন সাথে সাথে অন্যকে শিখাব। যখন অন্যকে শেখানো শুরু করব তখন আমরা বুঝতে পারব আমাদের কি দুর্বলতা ছিল শেখার ভেতর । আমরাও নিজে থেকেই শেখার চেষ্টা করতে সক্ষম হব। নিজের যদি কোন একটি বিষয়ে দক্ষতা থাকে তবে সেই বিষয়টা আমরা অন্যকে শিখাব, এতে করে আমাদের মনে রাখতে খুবই ভালো হবে এবং আমরা সহজেই যেকোন বিষয় মনে রাখতে পারব। এর ফলে নিজের যেমন উপকার হবে তেমনি অন্যেরও উপকার হবে।

প্রত্যেককে তার নাম ধরে ডাকুন

আমাদেরকে সব সময় অন্যদেরকে তার নাম ধরে ডাকতে হবে। কারণ নাম ধরে ডাকলে তার প্রতি আমাদের একটা মনোযোগ রয়েছে সেটা বোঝাই। বন্ধুদের আমরা ব্রো,বন্ধু,মামা ইত্যাদি অনেক নামেই ডাকি। কিন্তু আমাদের চেষ্টা করতে হবে বন্ধুদেরকে তাদের নিজেদের নামে ডাকতে। এতে করে সম্পর্কে একটু অন্যরকম নতুন মাত্রা যোগ হবে‌।

রাগী কাস্টমারকে হ্যান্ডেল করার সাইকোলজিকাল ট্রিকস

আমরা যারা ব্যবসা করি তারা হয়তোবা জানেন যে অনেক সময় আমাদেরকে রাগি কাস্টমারের মুখোমুখি হতে হয়। কিন্তু কাস্টমারকে তো আর  রাগানো যাবে না এবং তারসাথে রাগী গলায় কথা বলা যাবে না। সেক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই রাগী কাস্টমারকে দক্ষতার সাথে সামলাতে হবে। কিছু সাইকোলজিকাল ট্রিকসের মাধ্যমে খুব সহজে আমার রাগী কাস্টমারদের ম্যানেজ করতে পারব। আমরা দোকানে সবসময় বড় আয়না ঝুলিয়ে রাখবো ।রাগী কাস্টমার তার রাগান্বিত চেহারা আয়নায় দেখে নিজেই নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করবে। আপনারা এটা চেষ্টা করে দেখতে পারেন।

যেকোন সমস্যার সমাধানের সাইকোলজিকাল ট্রিকস

আমরা অনেক সময়  সমস্যায় পড়ি। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য আমরা চেষ্টা করি কারো কাছে বিষয়টা শেয়ার করতে। আমার যদি  এমন জায়গায় সমস্যাটা শেয়ার করি যেখানে অনেক মানুষ আছে তবে সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে আমরা হাসিঠাট্টার পাত্রে পরিণত হতে পারি।  এক জায়গায় বেশি মানুষ থাকলে তারা অনেকে সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে একে অন্যের ওপর দোষ চাপাতে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তাই আমাদেরকে একজনের কাছে সমস্যাটা শেয়ার করতে হবে।যদি সে সমস্যার সমাধানে ইচ্ছুক হয় তবে অবশ্যই সে আপনার সমস্যাটা সমাধান করে দিতে সক্ষম হবে। অবশ্যই আপনারা আপনাদের জীবনের সমস্যাগুলো কাটিয়ে সুন্দর জীবন যাপনের অধিকারী হবেন।

কম ঘুমিয়েও সারাদিন ফ্রেশ থাকার সাইকোলজিকাল ট্রিকস

আপনি যদি কোনদিন কম ঘুমিয়ে থাকেন তবে  আপনি আপনার মস্তিষ্ককে বলুন যে ” আজকের দিনটাতে ভাল ঘুম হয়েছে, আমার অনেক ফ্রেশ লাগছে ” দেখবেন খুবই কাজ হবে। আপনি কিছুটা ভালো অনুভব করবেন।

নেতিবাচক চিন্তা থেকে মুক্তির উপায়

আমাদের মনে অনেক সময় নেতিবাচক চিন্তা ভর করে ।এসব  নেতিবাচক চিন্তা  আমাদের প্রাত্যহিক জীবন থেকে অনেকটা দূরে ঠেলে দেয। এমন সময় আমাদের নিজেদেরকে যৌক্তিকভাবে প্রশ্ন করতে হবে যে এই চিন্তা আসলে  আমার দরকার কিনা এবং এটা আমাদের জীবনে কি ক্ষতি করছে। দেখবেন এভাবে এক সময় নেতিবাচক চিন্তা আর মনে স্থান পাচ্ছে না।

প্রান খুলে হাসুন, মানসিকভাবে সুস্থ্য থাকুন

স্ট্রেস পরিস্থিতি থেকে মুক্ত থাকার জন্য মুখে হাসি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।মুখের ছোট্ট হাসি আমাদেরকে স্ট্রেস পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করে।এটা আমাদের সব সময় পজিটিভ এনার্জি প্রদান করে।

উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো আমাদের সাধারণ জীবনযাপনের চলার জন্য কিছু সাইকোলজিকাল ট্রিকস। আমরা যদি  সচেতন হয়ে জীবনযাপনের ধরনে একটু পরিবর্তন আনি তাহলে আমরা  সুন্দর জীবনের অধিকারী হব এবং জীবনের অনেক অনাকাঙ্খিত সমস্যা এড়াতে পারব।আমাদের চলার পথের সমস্যা থাকবেই কিন্তু আমরা সেই সমস্যা অবশ্যই কাটিয়ে উঠব এবং সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলবো ।

Previous articleধূমপান কে না বলিঃ ধূমপান মুক্ত সমাজ গড়ি
Next articleব্লগ থেকে আয় কতটুকু কঠিন এবং আয়ের রাস্তাসমূহ (পর্ব ০১)