সফলতা

 

আমরা সবসময় সফলতার গল্প শুনতে অভ্যস্ত। কিন্তু সফলতার কারণ খুঁজতে গেলে আপনি দেখবেন রুটিন মাফিক কঠোর পরিশ্রম ছাড়া কেউ সফল হতে পারেনি। সফলতার সূত্রে এর বাইরে কিছু নেই। কিন্তু ব্যর্থতার গল্প গুলোতে দেখবেন একেক জনের কত বদ অভ্যাস ছিল। কত কত কারণে তারা পিছিয়ে. সেগুলোর অনেক কিছুই নিজের মাঝে খুঁজে পাবেন। সফলতা পেতে হলে তাই এগুলো এড়িয়ে চলুন।

তাই সময় করে ব্যর্থ, পিছিয়ে আছে এমন মানুষদের সাথে কথা বলবেন, কেনো তারা পিছিয়ে তা বের করে আনবেন, দেখবেন আপনার সফলতার পথ কিছুটা হলেও সহজ হবে। আত্মসমালোচনা করতে পারাও ভালো। তাই আপনাদের সামনে এবার নিজের আত্মসমালোচনা করবো, নিজের পিছিয়ে পড়ার কাহিনি শোনাবো আপনাদের। যেনো ভুল থেকে শিক্ষা নিতে পারেন আপনারাও। আর ভবিষৎ চলার পথে আমিও যেনো কিছুটা এগিয়ে যেতে পারি সেই চেষ্টাও থাকবে।

সফলতা

ঘুম থেকে উঠেই মোবাইল ব্যবহার

ঘুম থেকে উঠেই সব কিছুর আগেই আমি মোবাইল হাতে নেই৷ ফলাফল আমার সারা দিনের রুটিন/প্ল্যান নষ্ট হয়ে যায়। ফেসবুকে একটা কমন কথা ঘুরতে দেখবেন যে ফেসবুক/ইউটিউবে  ঢুকলেই ঘন্টাখানেক কীভাবে চলে যায় বোঝা যায় না। আমার সাথে সেইম বিষয়টা হয়। ক্যাম্পাসের পাশে থাকা বন্ধুদের ক্লাস মিস হলে আমি তাদের কারণ জিজ্ঞেস করে যে কথাটা বেশি পেয়েছি তা হলো ঘুম থেকে উঠে একটু মোবাইল নিয়েছিলো। সময় কীভাবে চলে গেলো তারা বুঝতেই পারেনি। কেউ কেউ বাসও মিস করতো এর জন্য। মোবাইলে প্রয়োজনীয় বার্তা বা কাজ থাকতেই পারে৷ তবে অবশ্যই একটু সময় নিয়ে ফ্রেশ হয়ে তারপর ধরবেন।

সময়ের কাজ সময়ে না করা

আজ কত সুন্দর আবহাওয়া। কাজ গুলো থাক। কাল করবো৷ বা সারাদিন তো বাইরেই ছিলাম আজ না পড়ে কাল থেকে শুরু করবো৷ আমার এই কাল আর আসে না৷ কতশত রুটিন আমার করা আছে। কিন্তু ঐযে সময়ের কাজটা সময় মতো না করার কারণে রুটিন আর শেষ হয় নাই। এখন রুটিন করাই বাদ দিয়েছি। দিন শেষে এখন উপলব্ধি করতে পারি, না কাজটা ঠিক হয়নি। পিছিয়ে পড়েছি আমি। অনেক পিছিয়ে।

সকালের নাস্তা না করা

সকালের নাস্তাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জীবনে অনেক কিছু করতে পারবেন, অনেক পড়তে পারবেন কিন্তু সকালের খাবারের ক্ষতি পূরণ করে উঠা মুশকিল। এই ক্ষতি আপনাকে ভবিষ্যৎ উন্নতিতে বাধা তৈরি করবে। আমি আমার কলেজ লাইফের পুরোটাই সকালের খাবার না খেয়ে কাটিয়েছি। খেলেও শুধু একটা সিঙ্গারা। এর ফলে আমাকে নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগতে হচ্ছে। তাছাড়া সকালের নাস্তা আমাদের সারাদিনের খাবারের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি বিজ্ঞান দ্বারা প্রমাণিত। তাই আর যাই করুন সকালের খাবার মিস দিবেন না।

অতিরিক্ত/ অযথা চিন্তা করা

কাজ করার সময় চিন্তা করবেন না? এটা কি হয়? অবশ্যই চিন্তা করতে হবে৷ চিন্তা ছাড়া কোনো কাজই করা যাবে না। কোনো কাজ সঠিক ভাবে করার মূল ভিত্তি হলো আগে থেকেই চিন্তা ভাবনা করা। কিন্তু অতিরিক্ত বা অযথা চিন্তা করা যাবে না৷ এতে আপনার কাজ ঠিক হওয়ার বদলে বেঠিক হয়ে যেতে পারে। কিংবা নির্দিষ্ট আউটপুট না পেলে হতে পারেন হতাশ৷ যা আপনার পরবর্তী কাজে প্রভাব ফেলবে৷ ধরুন আপনি অসুস্থ। এখন কোথায় ডাক্তার দেখাবেন বা কোন ডাক্তার দেখাবেন তা নিয়ে একটু চিন্তা করাই যায়। কিন্তু ডাক্তার দেখায়া লাভ হবে কি হবে না এটা একদম অযথা ফালতু চিন্তা। আবার দেখা গেলো চিন্তা করতে করতে আপনার অসুস্থতাই বেড়ে গেলো৷ তখন কিন্তু আপনি নিজেই বিপদে পড়বেন। ঠিক সেম কাজ আমি করে অনেক ভুগেছি লাইফে। কলেজ এডমিশন থেকে শুরু করে বিবিএর ফাইনাল পর্যন্ত এই কাজটা আমাকে পিছিয়ে দিয়েছে অনেক। তাই বিবিএ শেষ করে উপলব্ধি করতে পারলেও খুব বেগ পেতে হচ্ছে। তাই আগে থেকেই সাবধান।

অপরিকল্পিত কাজ

কাজ করতে হবে পরিকল্পনা মত৷ পরিকল্পনার বাইরে কাজ করলেই ধরা খেতে হবে৷ কথায় আছে পরিকল্পনা অনুযায়ী একরার কাজ করা অপরিকল্পিত  দশ রাতের কাজের সমান। আবার সব কাজ একসাথে না করে একটা একটা বা গুরুত্ব অনুযায়ী করতে হবে । সঠিক পরিকল্পনা আপনার যেকোন কাজের রিস্ক ফ্যাক্টর কমিয়ে দিতে পারে, বেড়ে যাবে সফলতা পাবার হার।

ভুল থেকে শিক্ষা না নেওয়া

ভুল থেকে শিক্ষা না নিলে জীবনে আর যাইহোক এগোতে পারবেন না।  আমার ছোট জীবনে আমি একই ভুল প্রতিবার করেছি৷ কখনো বুঝে কখনো না বুঝে। টেবিলের যে জায়গাটায় মোবাইল রাখলে পড়ে যেতে পারে আমি ঠিক সেই জায়গারেই মোবাইল রেখে মোবাইল নষ্ট করি। গত ৪ বছরে পরীক্ষার হলে আমি কি পরিমাণ সময় শুধু বসে থেকে নষ্ট করেছি তা আমার পিছনে বসা বন্ধু আমাকে প্রায়ই মনে করিয়ে দেয়৷ এমন না যে সব পরীক্ষাতেই কিছুই কমন পড়তো না। আর পরীক্ষার প্রথম শর্ত কমন না পড়লেও লিখে আসতে হবে৷ কিন্তু আমি কী করেছি? প্রথম সেমিস্টার থেকেও যখন শিক্ষা নেই নাই এখন বিবিএ শেষে আবার এটা ভেবেই সময় নষ্ট করি। যা একদমই কাম্য নয়। ভুল হতেই পারে। মানুষ মাত্রই ভুল। তবে মানুষ মানেই ভুল থেকে শিক্ষা নেয়াও। এটা মাথায় ঢুকাতে হবে।  আশা করছি ভুল থেকে শিক্ষা নিবেন। ভুল নিয়ে পড়ে থাকবেন না, দেখবেন সফলতা আসবেই।

অতীত নিয়ে পড়ে থাকা

আমি সব সময় অতীত নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরিক্ষাতে আমি বেশ কয়েকটি প্রশ্ন দেখিই নাই। এখনও এটা নিয়া আমি পড়ে আছি। অথচ এটা কোনো বিষয়ই না। কারণ প্রতিষ্ঠান আমাকে কিছুই দিবে না যদি না আমি নিজে কিছু করি। তাই যদি কোনো  স্বপ্ন পূরণ না হয় সেটা নিয়ে ভেবে লাভ নেই। নতুন করে নতুন কিছু ভেবে সামনে এগিয়ে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। যারা অতীত নিয়ে পরে থাকে সফলতা তাদের ধরা দেয়না।

এক্সট্রা কারিকুলাম না করা

শিক্ষা জীবনে এই কাজগুলো না করা মানে বিপদ হাতে নিয়ে চলাফেরা করা। এক্সট্রা কারিকুলাম করলে অন্য কাজ করা যায় না এটা ভাবা বোকামি। ৪ বছরে দৈনিক ৩০ মিনিটও যদি এদিকটায় সময় দিন, তাহলে সরকারি চাকরির দীর্ঘসূত্রিতায় হতাশ হতে হবে না। সরকারি জবের নিয়োগে সময় লাগে অনেক প্লাস অল্প কিছু পোস্ট। ভার্সিটি লাইফটার একটু সময় যদি এদিকটায় দেন আশা করতে পারেন আপনাকে অন্তত খুব হতাশায় পড়তে হবে না। ট্রাস্ট মি। অনেকেই এই সকল কাজ গুলো নিয়ে মজা করে যা একদমই উচিত নয়। রেজাল্ট হওয়ার আগে কোম্পানিতে জব হতে পারে সরকারি জব কিন্তু সম্ভব না৷ সো লোকের কথায় কান দিবেন না। ৪ বছরে আমি যখন কিছুই করিনি, এখন বসে বসে হতাশ হচ্ছি তখন আমার অনেক ফ্রেন্ডই টুকটাক ইনকাম করছে। আপনার কোনো কাজই ফেলা যাবে না। নিজের আনন্দের জন্য হলেও এক্সট্রা কাজ শিখুন। পিছিয়ে থাকবেন না বিশ্বাস রাখতে পারেন।

ধর্মের পথে থাকা

আপনি যে ধর্মেরই হতে পারেন। সকল ধর্মেই শান্তির কথা বলা আছে। সেটাকে পালন করুন। মন থেকে, সবকিছু মেনে নিয়ে ধর্ম পালন করুন। আমাদের সমাজে এখন যে চরম হতাশা যাচ্ছে সেটার মূল কারণ আমরা ধর্ম থেকে সরে আসতেছি। আমাদের সব লাগবে, আমরা সব করতে রাজি কিন্তু ধর্মের ব্যাপারে উদাসীন। আমি নিজেই নামাজ পড়ি তো পড়ি না, কিছু মানি তো মানি না। এগুলো আমার জীবনে একটা অরাজকতা তৈরি করে রেখেছে। যার কারণে আমি ঠিক এগোতে পারছি না বলে মনে হয়। একটু খেয়াল করে দেখবেন ধার্মীক মানুষ গুলা অনেক বড়লোক না হলেও কেমন যেনো শান্তিতে থাকে৷ তাদের মুখে সেটা স্পষ্ট ফুটে উঠে৷ তাই বিষয়টি মাথায় রাখবেন। ধর্মকে বাদ দিয়ে নয়, ধর্ম নিয়ে এগিয়ে যাওয়াই সফলতা সহজ করে দিবে।

ভাই/আপু, সফলতা র পথ আপেক্ষিক। সবাই একভাবে সফল হতে পারে না। আবার সবার কাছেই সফলতার সংজ্ঞা এক না। আমার কথাগুলো মানলেই সফল হবেন এমন কোনো কথা নেই৷ আবার অনেক বড় বড় মোটিভেশন বক্তাদের বক্তব্যও অনেককে বদলাতে পারে না। উপরে যে বিষয়গুলো আলোচনা করা হয়েছে সেখানে আপনার ক্ষতি হবে বা শান্তি নষ্ট হবে এমন কিছু নেই। আমাদের ম্যাম বলতো ৭০০ কোটি মানুষের চিন্তা ভাবনা ৭০০ কোটি রকম, পার্সোনালিটি ৭০০ কোটি ধরনের৷ সুনরাং আপনার মনের মতো না হলেই সে একদম ভুল তা কিন্তু বলা যায় না। তাছাড়া আমরা সবাই এক জীবন কাটাই না, একই পরিবেশে বড় হই না। সুতরাং ভিন্নতা থাকবেই। সেখান থেকে খাপ খাইয়ে নিজেকে মানিয়ে জীবনে চলতে হবে। সবার জন্য শুভ কামনা। আমার জন্য দোয়া করবেন। 😍

Previous articleহারপার লী-র ‘টু কিল এ মকিং বার্ড’ এবং একগুচ্ছ অজানা তথ্য
Next articleব্লগ কি? ব্লগ থেকে কি সত্যি উপার্জন করা যায়?
আমি মোঃ হাবিবুর রহমান রাসেল৷ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ অধ্যয়নরত। বই পড়তে ভালোবাসি। বইয়ের গ্রুপ গুলোতে মাঝে মাঝে রিভিউ লিখি৷ যা পড়ি, তা সবাইকে জানাতে ইচ্ছে করে। সেই আগ্রহ থেকেই টুকটাক লেখার চেষ্টা করি।