রাতকানা রোগ
জেরোপথ্যালমিয়া নামের এক ধরনের রোগ যা ভিটামিন “এ” এর অভাবে হয়ে থাকে। এই রোগের মোট ৮ থেকে ৯ টি পর্যায় রয়েছে। এর মধ্যে শেষ পর্যায় চোখের কর্নিয়া একদম নষ্ট হয়ে যায়। এবং রোগী সম্পূর্ণরূপে দৃষ্টিশক্তি হারায়। তবে এই রোগের প্রথম পর্যায়টি হচ্ছে রাতকানা রোগ।
ভিটামিন “এ” এর অভাবে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে শিশুর রাতকানা রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। আমাদের দেশে ছয় বছর বয়সের শিশুরা রাতকানা রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। শুরুর দিকে রাতে অথবা অল্প আলোতে কিছু দেখতে পায় না। এবং এক পর্যায়ে রাতে অথবা অল্প আলোতে দেখার শক্তি হারিয়ে ফেলে। বেশ আগে থেকেই রাতকানা রোগের সাথে আমরা কমবেশি পরিচিত। তবে সচেতনতার অভাবে দিন কে দিন রাতকানা রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েই চলেছে।

 

ঔষধ নিয়ে বাড়াবাড়ি করবেন না খুব ছোট বাচ্চার ঔষধ নিয়ে পরামর্শ

রাতকানা রোগের কারণ

রাতকানা রোগের বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম কারণ হচ্ছে:
  • শরীরে ভিটামিন এ এর অভাব।
  • বাচ্চা অল্প ওজনের জন্ম হলে অর্থাৎ অপুষ্টিতে ভোগা শিশুরা এই রোগে আক্রান্ত বেশি হয়।
  • নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ইত্যাদি রোগ হলে শরীরে ভিটামিন “এ” এর অভাব দেখা যায়। সুতরাং এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর রাতকানা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
  • বাড়ন্ত বয়সের শিশুদের অতিরিক্ত খাদ্যের চাহিদা পূরণ না হলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

রাতকানা রোগের লক্ষণ

  • প্রথমে ভোরে এবং সন্ধ্যার অল্প আলোতে দেখতে অসুবিধা হয়।
  • চোখে ছোট-ছোট ছাই রংয়ের বুদবুদ দেখা দেয় এগুলোকে বিট টস স্পট বলা হয়ে।
  • কর্নিয়ায় ঘা হয়।
  • কর্নিয়া ঘোলাটে হয়ে।
  • কর্নিয়া ফোড়ার মত বেরিয়ে আসে এবং এক পর্যায়ে ফুটো হয়ে যেতে পারে। অবশেষে সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
রাতকানা রোগ প্রতিরোধের উপায়
সুতরাং প্রথম থেকেই সর্তকতা অবলম্বন না করলে রোগী সম্পূর্ণরূপে দৃষ্টিশক্তি হারতে পারে! যেহেতু শিশুরাই রাতকানা রোগে বেশি আক্রান্ত হয়, সুতরাং শিশুদের পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন “এ” এর সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
আমাদের দেশে প্রত্যেক বছর ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়। যদিওবা ক্যাপসুল খাওয়ানোর নির্দিষ্ট একটি নিয়ম রয়েছে। এক বছরের বেশি বয়সের শিশুদের প্রথম দিন একটি, দ্বিতীয় দিন দুইটি; অর্থাৎ দুই সপ্তাহে ১৪ টি ক্যাপসুল খাওয়াতে হবে। এবং এক বছরের কম বয়সী শিশুদের একই নিয়মে অর্ধেক ভিটামিন এ ক্যাপসুল অর্থাৎ প্রতিবার চার ফোঁটা করে খাওয়াতে হবে।
একটু সর্তকতা অবলম্বন করলেই রাতকানা রোগ থেকে দুরে থাকা যাবে। রাতকানা রোগ প্রতিরোধের বেশ কিছু উপায় রয়েছে।

রাতকানা রোগ থেকে বাঁচার উপায়

  • প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ হচ্ছে সন্তানকে জন্মের প্রথম পাঁচ সপ্তাহ মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। সম্ভব হলে ২বছর পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।
  • সন্তান জন্মের দুই সপ্তাহের মধ্যে মাকে ২ লক্ষ আই ইউ ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়াতে হবে।
  • শিশুকে কোনভাবে অপুষ্টিতে ভুগতে যাওয়া যাবেনা।
  • ছোটবেলা থেকে ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে হবে।
  • বাচ্চার হাম, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হলে দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
  • অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে বাচ্চার চোখের কোন অস্বাভাবিক পরিবর্তন না হয়। বিশেষ করে চোখ ঘোলা হয়ে, আসা চোখের ছিদ্র সাদা হয়ে ওঠা ইত্যাদি।
  • শিশুর জন্মের পর মায়ের শাল দুধ খেতে দিতে হবে ।

রাতকানা রোগ থেকে বেঁচে থাকার বিকল্প

যদিও আমাদের বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষেরই ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ প্রাণীজ খাবার কেনার সামর্থ্য নেই। সেই কারণেই তার বিকল্প উৎস বের করতে হবে। এবং সেই মোতাবেক নিয়মিত ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার মা এবং শিশুর উভয়েরই গ্রহণ করতে হবে।
আর সে কারণেই বাড়ির আঙ্গিনায় শাকসবজি, ফলমূল ইত্যাদি গাছ রোপণ করতে হবে। সামর্থ্য থাকলেও বেশি দামের ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবারের বদলে সমমান সমৃদ্ধ ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার যেমন শাক সবজি ফলমূল যেমন : পাকা কাঁঠাল, পাকা আম, হলুদ ইত্যাদি ইত্যাদি খাবার বেছে নেওয়ার মানসিকতা ভালো।
তবে রাতকানা রোগ যদি জেরোপথ্যালমিয়া রোগের শেষ পর্যায়ে পৌঁছায় তাহলে চোখে অস্ত্রোপচার ব্যতীত অন্য কোন চিকিৎসা থাকে না।
Previous articleফেসবুক আইডি নিরাপদ রাখার কৌশল জেনে রাখুন
Next articleএকটা ভাল ফরেক্স ব্রোকার এর কি কি গুন থাকে?
টুকিটাকি লেখালখি করি!