শপথ বাক্য

শপথ বাক্য কথাটি  শুনলেই আমাদের সবার মনে প্রথমে যেটি মনে পরে তা হল স্কুল জীবনের প্রতিদিনের এসেম্বলি কিংবা সমাবেশের কথা। আমরা সবাই যারা স্কুল-কলেজের গন্ডি পেরিয়েছি ভোর বেলা ক্লাস শুরুর আগে মাঠের এসেম্বলিতে শপথ বাক্য পাঠ করেছি, যেখানে ডান হাত সামনের দিকে তুলে কিছু বাক্য আমরা উচ্চারন করেছি। আমাদের সবার পাঠ করা শপথ বাক্যটি কম বেশি নিচের মত ছিল আশা করি।

আজকের লেখায় যা থাকছে

বাংলাদেশের নতুন শপথ বাক্য নমুনা

“আমি শপথ করিতেছি যে, মানুষের সেবায় সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রাখিব। দেশের প্রতি অনুগত থাকিব দেশের একতা এবং সংহতি বজায় রাখিবার জন্য সচেষ্ট থাকিব। অন্যায় ও দুর্নীতি করিব না এবং অন্যায় ও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিব না। হে প্রভু, আমাকে শক্তি দিন, আমি যেন বাংলাদেশের সেবা করিতে পারি, বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী ও আদর্শ রাষ্ট্র হিসাবে গড়িয়া তুলিতে পারি- আমীন।“

শপথ বাক্য কি ও কেন করানো হয়?

শপথ বাক্য হল একগুচ্ছ শব্দ বা কয়েকটি বাক্য যা কোন ব্যক্তিকে পড়ানো হয় কোন বিশেষ দায়িত্ব দেবার সময়। ধারনা করা হয় তিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত হবার পর তার করা শপথের মর্যাদা রাখবেন এবং যথাযথভাবে তার দায়িত্ব পালন করবেন।

কোন কোন দেশে শপথ বাক্য পাঠ করানোর সময় ধর্মীয় গ্রন্থ হাতে স্পর্শ করানও হয়ে থাকে। মনে করা হয়, ধর্মীয় গ্রন্থ স্পর্শ করার মাধ্যমে শপথকারী তার শপথ সৃষ্টিকর্তার সাথে করছেন বলে মনে করবেন এবং সৃষ্টিকর্তার ভয়ে হলেও তিনি তার দায়িত্ব পালনে অবহেলা করবেন না।

আর আমি আজ যে শপথ বাক্যের কথা বলছি তা হল আমাদের ছোট বেলায় স্কুলের মাঠে সমাবেশে করা সম্মিলিত কন্ঠের শপথ বাক্য। স্কুলের শপথ বাক্য পাঠ আমরা সবাই করেছি।

শপথ বাক্য পাঠ করান হয় কেন? প্রতিদিন ভোরে এসেম্বলিতে সম্মিলিত কন্ঠে আমরা শপথ করে যাচ্ছি, অবশ্যই তার কোন উদ্দেশ্য রয়েছে। শপথে করা পাঁচটি বাক্য আরও একবার পড়ে দেখুন।

শপথের প্রতিটি বাক্য আমাদের পড়ান হয় দেশের কল্যানের জন্য। মানুষের সেবা করার মাধ্যমে, দেশের আইন-কানুন মেনে চলে কোন প্রকার বিশৃংঙ্খলা না করে অন্যায়কে রুখে দিয়ে দেশকে একটি আদর্শ রাষ্ট্রে পরিনত করে তোলার জন্য।

আপনার বাচ্চা খেতে না চাইলে কি করবেন, দেখুন ভিডিওতে।

উপরের ভিডিওটি ফিল্মোরা ব্যবহার করে এডিট করা হয়েছে। ভিডিও এডিট করার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ইছু সফটওয়্যার ইয়ে জানুন।

শপথ বাক্যে আমরা কি পড়ছি?

ছোট বেলায় স্কুলের মাঠে প্রতিদিন সম্মিলিত কন্ঠে করা শপথ বাক্যটি আরেকবার মনে করে দেখুন। প্রতিটি লাইন নিয়ে একটু একটু করে ভাবুন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শপথ বাক্য পাঠ নিচের মতই ছিল সবার।

“আমি শপথ করিতেছি যে, মানুষের সেবায় সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রাখিব।

দেশের প্রতি অনুগত থাকিব।

দেশের একতা এবং সংহতি বজায় রাখিবার জন্য সচেষ্ট থাকিব।

অন্যায় ও দুর্নীতি করিব না এবং অন্যায় ও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিব না।

হে প্রভু, আমাকে শক্তি দিন, আমি যেন বাংলাদেশের সেবা করিতে পারি,

বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী ও আদর্শ রাষ্ট্র হিসাবে গড়িয়া তুলিতে পারি- আমীন।“

প্রথম বাক্যঃ “আমি শপথ করিতেছি যে, মানুষের সেবায় সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রাখিব।“

কত বড় একটি কথা, ভেবে দেখেছেন? “আমি শপথ করিতেছি যে, মানুষের সেবায় সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রাখিব।“ শপথের করা প্রথম বাক্যটিই হল মানুষের সেবায় সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রাখিব। তার মানে আমার জীবনের মূল উদ্দেশ্যই হল মানুষের সেবা করা। আমার ধ্যান-ধারনা সবই মানুষের সেবাকে কেন্দ্র করে ঘূর্ণায়মান হবে। আমি যাই করি না কেন, আমার পেশা যাই হোক না কেন, আমার মূল উদ্দেশ্যই হবে মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখা।

দ্বিতীয় বাক্যঃ “দেশের প্রতি অনুগত থাকিব।“

শপথের দ্বিতীয় বাক্যটি এসেছে আমার দেশকে নিয়ে, দেশের প্রতি অনুগত থাকাকে নিয়ে, মানে, আমি সবসময়ই আমার দেশের প্রতি অনুগত থাকিব। এটাকে আরেকটু বিস্তারিতভাবে বললে হয়ত বুঝাবে, দেশের আইন-কানুন, নিয়ম নীতি মেনে চলব এবং দেশের যেকোন সিদ্ধান্ত আমি মাথা পেতে নিব।

তৃতীয় বাক্যঃ “দেশের একতা এবং সংহতি বজায় রাখিবার জন্য সচেষ্ট থাকিব।“

একতা ও সংহতি শব্দটি একটু বিশ্লেষণ যোগ্য। মানে আমি এমন কিছু করব না যাতে দেশের একতা ও সংহতি নষ্ট হয়। সবসময়  আমার চেষ্টা থাকবে একতা বজায় রাখার, কারণ একতাই বল। কোন অরাজকতা করব না, বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয় এমন কোন কাজ আমার দ্বারা হবে না।

চতুর্থ বাক্যঃঅন্যায় ও দুর্নীতি করিব না এবং অন্যায় ও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিব না।

এই বাক্যটি আসলে আমাদের জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বর্তমান সময়ে। এই বাক্য শপথ করার মাধ্যমে এক আমরা অন্যায় ও দুর্নীতি না করার অঙ্গিকার করছি এবং দুই, সাথে সাথে আমার সামনে অন্য কেও অন্যায় ও দুর্নীতি করলে তা প্রতিহত করার অঙ্গিকার করার শপথ করে নিচ্ছি।

পঞ্চম ও শেষ বাক্যঃ “হে প্রভু, আমাকে শক্তি দিন, আমি যেন বাংলাদেশের সেবা করিতে পারি, বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী ও আদর্শ রাষ্ট্র হিসাবে গড়িয়া তুলিতে পারি-আমীন।”

শেষ বাক্যে আমরা আমাদের সৃষ্টি কর্তার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি এবং সাহায্য চাচ্ছি তিনি যেন আমাকে শক্তি দেন যাতে আমি আমার দেশ বাংলাদেশের সেবা করতে পারি সাথে এও বলছি আমার দেশ বাংলাদেশকে যেন একটি শক্তিশালী ও আদর্শ রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তুলতে পারি। দেশকে গড়ে তোলার এক বিশাল দায়িত্ব আমি নিয়ে নিচ্ছি।

এবার নিজেকে প্রশ্ন করুন

আপনি কি মানুষের সেবায় সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন?

দেশের প্রতি অনুগত থেকেছেন?

দেশের একতা এবং সংহতি বজায় রাথার জন্য সচেষ্ট থেকেছেন?

নিজে অন্যায় ও দুর্নীতি করেছেন কিংবা অন্যায় ও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়েছেন?

বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী ও আদর্শ রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আপনার অবদান কি?

ছোটবেলায় চিৎকার করে করা শপথটি আপনি কতটুকু মনে রাখতে পেরেছেন? না পারলে কেন পারেন নি? এই দায় কার? রাষ্ট্র আপনাকে শিশুকালেই শপথ করিয়ে নিয়েছে, বড় হয়ে সেই শপথের বরখেলাপ আপনি নিজে করেছেন। এই দায় আপনার নিজের।

আরও পড়ুনঃ আমার জীবন থেকে নেয়া কিছু কথা পর্ব -০৪ (সততা)

নিজের করা শপথ আমি কেন রাখতে পারছি না

এই শপথ বাক্যের উদ্দেশ্য কি? কেন আমরা এই শপথ বাক্য পাঠ করছি আর এই শপথ পাঠ করে আদৌ কি আমরা আমাদের জীবনে পরবর্তীতে কোথাও মনে রাখতে পারছি? না না পারলে কেন পারছিনা? আর যদি নাই পারি তাহলে সম্মিলিত কন্ঠে রোজ শপথ করে আমাদের লাভ কি? অযথা সময়ের অপচয় নয় কি?

হ্যা প্রিয় পাঠক, আপনার মত আমার মনেও এই একই প্রশ্ন? সমস্যাটা আসলে কোথায়? আমার মনে হয়েছে শুধুমাত্র স্কুলের মাঠে সম্মিলিত কন্ঠে শপথ করাই যথেষ্ট নয়। আমরা শুধুই মুখস্ত শপথ করে যাচ্ছি কিন্তু  শপথ বাক্যে করা এই পাঁচটি বাক্য আমাদের অন্তরে গেঁথে যাচ্ছে না।

তাহলে এর সমাধান কি?

কি করলে শপথের প্রতিটি বাক্য আমাদের মগজে গেঁথে দিতে পারি। প্রথমত এটি একদিনে করা সম্ভব নয় অন্ততঃ পক্ষে ২৫-৩০ বছরের একটা প্রজেক্ট হাতে নিতে হবে। তাহলে আশা করা যায় ৩০ বছর পর যে প্রজন্ম গড়ে উঠবে তারা আমাদের নতুন বাংলাদেশ উপহার দিতে পারবে। এই ৩০ বছর আমরা কি করব?

এই ত্রিশ বছরের জন্য আমরা একটা লম্বা পরিকল্পনা হাতে নিব। ২০টি ভিন্ন ভিন্ন সেক্টর থেকে অভিজ্ঞ ২০ জন সৎ এবং যোগ্য লোককে আমরা বাছাই করে নিব যারা আমাদের জন্য একটি সিলেবাস তৈরি করে দিবেন। হয়ত এই কাজেই আমাদের ২/৩ বছর চলে যেতে পারে।

পরবর্তী ধাপে আমরা আমাদের শিক্ষকদের প্রশিক্ষন দিব। শিক্ষকতা যে একটি মহান পেশা তা তাদের মাঝে গেঁথে দিব। শুধুমাত্র অর্থ উপার্জনের জন্যই শিক্ষকতা নয়। আমাদের তৈরি নতুন সিলেবাসের জন্য শিক্ষকদের তৈরি করতে চলে যাবে আরও ৫-৭ বছর।

শিক্ষকদের চাকুরির জন্য বাছাই পরীক্ষার পদ্ধতির পরিবর্তন আনতে হবে। শুধুমাত্র তারাই শিক্ষক হতে পারবেন যারা এই মহান পেশায় নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারবেন। খুঁজে নিলে এমন লোক পাওয়া কঠিন কিছু হবে না।

কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা পদ্ধতির বদলে বিকল্প পদ্ধতিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিটি ধাপ পার করার পদ্ধতি বের করতে হবে। মুখস্ত বিদ্যা এবং পরীক্ষা পদ্ধতি আমাদের গ্রাস করে ফেলেছে, এখান থেকে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে  বাঁচাতে হবে।

আরও ভাবতে হবে, সারা বিশ্ব যেখানে এগিয়ে গিয়েছে আমরা যুগ যুগ ধরে শুধুই পিছিয়ে যাচ্ছি। এখান থেকে রেহাই পেতে আসুন আমরা নিজেরা বদলে যাই আর আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে বদলে যেতে সহয়ায়তা করি নয়ত তারা আমাদের ক্ষমা করবেনা।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করেও আমাদের উৎসাহিত করতে পারেন। ইউটিউব চ্যানেল লিংক এখানে। আশা করি অবশ্যই ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে আমাদের সহযোগীতা করবেন। তাহলে আমরা উৎসাহিত হয়ে আরও লেখা পাবলিশ করব।

ছোটবেলায় সম্মিলিত কন্ঠে উচ্চারন করা শপথ বাক্যটি নিজে নিজে আরেকবার পড়ি-

“আমি শপথ করিতেছি যে, মানুষের সেবায় সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রাখিব। দেশের প্রতি অনুগত থাকিব।দেশের একতা এবং সংহতি বজায় রাখিবার জন্য সচেষ্ট থাকিব। অন্যায় ও দুর্নীতি করিব না এবং অন্যায় ও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিব না। হে প্রভু, আমাকে শক্তি দিন, আমি যেন বাংলাদেশের সেবা করিতে পারি,বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী ও আদর্শ রাষ্ট্র হিসাবে গড়িয়া তুলিতে পারি- আমীন।“

Previous articleপ্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণ ও ফলাফল নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী লেখা
Next articleনজরুলের নিষিদ্ধ গ্রন্থ – বাংলা সাহিত্যের অনবদ্য সৃষ্টি।
যে ব্যর্থ সে অজুহাত দেখায়, যে সফল সে গল্প শোনায়। আমি অজুহাত নয় গল্প শোনাতে ভালবাসি। আসুন কিছু গল্প শুনি, নিজের গল্প অন্যকে শুনাই।

2 COMMENTS