ভিসা কার্ড কি

বর্তমান আধুনিক যুগে টাকার ব্যবহার কমে যাচ্ছে ধীরে ধীরে এবং সেই জায়গা দখল করে নিচ্ছে প্লাস্টিক মানি। এতে সাধারণ মানুষের টাকা বহন করার ঝামেলা যেমন থাকছেনা তেমনি টাকা হারিয়ে যাওয়া কিংবা ছিড়ে বা অন্য কোন উপায়ে নষ্ট হয়ে যাওয়ারও ভয় থাকছেনা। আর এই সুযোগটি করে দিচ্ছে ভিসা কার্ড, মাষ্টার কার্ড সহ অন্যান্য আরও কিছু কার্ড, এছাড়া বিট কয়েন এর কথা ত আপনারা শুনেছেন অবশ্যই। আমাদের আজকের ব্লগে আমরা আমাদের পাঠকদের জন্য আলোচনা করব ভিসা কার্ড কি – কিভাবে ভিসা কার্ড পাবেন এবং এর বহুবিধ ব্যবহার নিয়ে। আশা করি আজকের ব্লগটি আপনাদের ভাল লাগবে।

বিট কয়েন নিয়ে না জানা থাকলে নিচের ভিডিও দেখে জেনে নিতে পারেন। বিট কয়েন যে ঘরে বসেই তৈরি করা যায় তা হয়ত অনেকেই জানেন না। নিচের ভিডিও দেখুন।

প্রথমেই জানতে হবে ভিসা কার্ড কি?

ভিসা ইনকর্পোরেটেড বা ভিসা হল একটি আমেরিকান বহুজাতিক আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান যার সদর দপ্তর আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত। এই আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সারা পৃথিবীতে ইলেক্ট্রনিক উপায়ে সকল সরঞ্জাম, যন্ত্রপাতি, সফটওয়্যার সরবরাহ করে থাকে। সাথে সারা বিশ্বের মানুষকে ভিসা ডেবিট এবং ক্রেডিট কার্ড সরবরাহ করে।

যদিও আগেই বলেছি তারা সারা বিশ্বের মানুষকে ভিসা ডেবিট কিংবা ক্রেডিট কার্ড সরবরাহ করে থাকে কিন্তু তারা মোটেই সরাসরি সাধারণ মানুষকে এই সেবা দেয়না।

তারা বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে তাদের কাষ্টোমারদের ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দিয়ে থাকে। বিভিন্ন দেশের এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের গ্রাহকদের প্রয়োজন/ সুবিধামত এই এই কার্ড দিয়ে থাকে।

আশা করি ভিসা কার্ড কি সে সম্পর্কে আপনার একটি ভাল ধারনা আপনার হয়ে গেছে।

ভিসা কার্ড কত প্রকার

প্রধানতঃ ভিসা কার্ড মূলত দুই প্রকার।

  • ভিসা ডেবিট কার্ড
  • ভিসা ক্রেডিট কার্ড

ভিসা ডেবিট কার্ড

কোন ব্যাংকে যদি আপনার যেকোন ধরনের একাউন্ট থাকে তাহলেই আপনি ডেবিট কার্ডের মালিক হতে পারেন। তবে বিভিন্ন ব্যাংক ভিন্ন ভিন্ন ব্র্যান্ডের কার্ড সরবরাহ করে থাকে। যেমনঃ ভিসা, মাস্টার কার্ড, নেক্সাস, এমেক্স ইত্যাদি। কিভাবে খুলবেন ব্যাংক একাউন্ট। সরাসরি ব্যাংকে চলে যান, একাউন্ট খোলার জন্য যে বুথ আছে সেখানে যোগাযোগ করুন। ব্যাংকে একাউন্ট খোলার জন্য আপনার কিছু কাগজপত্রগুলো লাগতে পারে, তাই যাবার সময় নিচের কাগজপত্র সংগে রাখুন।

  • ন্যাশনাল আইডি কার্ডের ফটোকপি
  • তিন কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি (একাউন্ট হোল্ডারের)
  • নমিনির ছবি ( যাকে নমিনি করবেন তার ছবি)
  • বাসার যেকোন ইউটিলিটি বিলের কপি
  • টিনের (TIN) কপি
  • ব্যাংকের নির্ধারিত ফর্ম পূরন
  • প্রাথিমিক ডিপোজিট (২০০০ থেকে ৫০০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে)

ভিসা ডেবিট কার্ড কিভাবে পাবেন

একাউন্ট খোলার তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যেই ( কোন কোন ব্যাংকে দশ দিনও লাগতে পারে) আপনি আপনার নামে ডেবিট কার্ড, চেক বই ইত্যাদি পেয়ে যাবেন। আপনার ডেবিট কার্ডটি ভিসা কিংবা মাস্টার কার্ড কিংবা অন্য যেকোন রকম যেমন নেক্সাস বা এমেক্সও হতে পারে। আপনি যদি যদি ভিসা কার্ড চান তাহলে একাউন্ট খোলার সময় ব্যাংকের কর্মকর্তাকে বলে রাখুন।

ভিসা ডেবিট কার্ড কিভাবে এক্টিভ করবেন

কার্ডটি আপনার হাতে পাবার পর সাথে দেয়া ইন্সট্রাকশনগুলো পড়ে নিন ভাল ভাবে। নিরাপত্তার খাতিরে আপনার কার্ডটি ইনেক্টিভ অবস্থায় থাকবে, আপনাকে এক্টিভ করে নিতে হবে। বেশির ভাগ ব্যাংকের কার্ড এক্টিভ করার জন্য ঐ ব্যাংকের কাস্টমার হেল্পলাইনে ফোন দিয়ে এক্টিভ করে নিতে হয়।

কাস্টমার হেল্পলাইনে ফোন দিলে তারা আপনার নাম, মায়ের নাম, জন্ম তারিখ, কার্ডের নাম্বার এবং কার্ডের ভ্যালিডিটি তারিখ জানতে চাইতে পারে। আপনি সঠিক তথ্য দিয়ে সহায়তা করলে কাস্টমার কেয়ার থেকে সয়ংক্রিয়ভাবে কার্ডটি এক্টিভ করে দিবে।

আপনার কার্ডের সাথে আরেকটি খাম থাকবে যেটা খুললে আপনার কার্ডের পিন নম্বর পেয়ে যাবেন। কিছু কিছু ব্যাংকের ভিসা কার্ডের পিনও হেল্পলাইনে কল করে জেনারেট করে নিতে হয়। সেক্ষেত্রে সতর্কতার সাথে পিন কোড নির্বাচন করে নিতে ভুলবেন না।

খাম থেকে পিন নম্বর দেখে নিয়ে পিন নম্বরটি মুখস্ত করে ফেলুন এবং খামটি ছিড়ে ফেলুন। আপনার পিন নম্বর কারও সাথে শেয়ার করবেন না কখনই।

এছাড়া আপনা চেক বইও ইনেক্টিভ অবস্থায় থাকবে। হেল্পলাইনে ফোন দিয়ে চেকবইও এক্টিভ করে নিতে ভুলবেন না।

অনেকেই তার ভিসা ডেবিট কার্ড অনলাইনে ট্রানজেকশনে ব্যবহার করতে চান। তারা ভিসা কার্ড হাতে পেয়েই হেল্পলাইনে কল করে এটা জানাতে ভুলবেন না। কারণ বেশির ভাগ সময়ই অনলাইন ট্রানজেকশনের গেটওয়ে বন্ধ করা থাকে। রিকোয়েষ্ট করে এই গেটওয়ে খুলে নিতে হয়।

ভিসা ক্রেডিট কার্ড

ক্রেডিট কার্ড নিয়ে আমার আরেকটি ব্লগ রয়েছে, যারা ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিস্তারিত জানতে চান তাদেরকে নিচের লিংক থেকে ব্লগটি পড়ে দেখার অনুরোধ করছি।

ক্রেডিট কার্ড কি? আধুনিক যুগের সুদি মহাজন এই ক্রেডিট কার্ড।

এই ব্লগে আমি সংক্ষিপ্ত আকারে জানিয়ে দিচ্ছি।

ক্রেডিট কার্ড কি প্রথমে সেটা জেনে নেই। ক্রেডিট কার্ড হল এমন একটি একাউন্ট যে একাউন্টে টাকা না থাকলেও আপনি একটি নির্দিষ্ট পরিমান টাকা কিছু নির্দিষ্ট শর্ত সাপেক্ষে আপনি খরচ করতে পারবেন লোন হিসেবে পাবেন।

নির্দিষ্ট পরিমান টাকা মানে আপনার মান্থলি লিমিট যা ব্যাংক আপনার সামাজিক মর্যাদা বুঝে আপনাকে প্রদান করবে। আর নির্দিষ্ট শর্ত মানে হল আপনি আপনার বিল তারিখের ১৫ দিনের মধ্যে টাকা শোধ করতে হবে, না করতে পারলে আপনার তার জন্য ইন্টারেস্ট দিতে হবে।

এছাড়াও আরও কিছু শর্ত এবং নিয়ম রয়েছে যা আমি এখানে আর বলছি না। উপরের লিংক থেকে আপনি ডিটেইল জেনে নিন।

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, বাংলাদেশ কি কি প্রকার ভিসা ক্রেডিট কার্ড তার গ্রাহকদের দিয়ে থাকে এই লিংকে গিয়ে দেখে নিতে পারেন।

ভিসা ক্রেডিট কার্ড কিভাবে পাবেন

ডেবিট কার্ডের মত ক্রেডিট কার্ড পাবার নিয়মও একই। তবে এখানে আপনার সামাজিক মর্যাদাও বিবেচনায় আসে। আপনার কোন ব্যবসা বা চাকুরি না থাকলে আপনি ক্রেডিট কার্ড নাও পেতে পারেন। তবে হ্যা, ব্যাংকে আপনার ফিক্সড ডিপোজিট থাকলে তার বিপরীতে আপনি ভিসা ডেবিট কার্ড পেতে পারেন।

আপনি যদি চাকুরীজীবী হয়ে থাকেন তাহলে আপনার লিমিট নির্ভর করবে, আপনার মাসিক বেতনের উপর, আপনি যদি ব্যবসায়ী হন তাহলে ট্রাঞ্জেকশনের উপর ভিত্তি করে লিমিট দেবে, আবার আপনার ফিক্সড ডিপোজটের উপর ভিত্তি করে আপনাকে আপনার লিমিট প্রদান করবে।

ভিসা ডেবিট কার্ড পেতে যেসব কাগজপত্র লাগে এক্ষেত্রেও তাই লাগবে, এখানে আরও লাগবে আপনার ব্যাংক স্টেট্মেন্ট এবং আপনার আফিসের স্যালারি সার্টিফিকেট। যে ব্যাংকে আপনার স্যালারি হয় সেই ব্যাংকের স্টেটমেন্ট হলে ভাল হয়।

মনে রাখবেন, আপনার ক্রেডিট কার্ডটি ভিসা, মাস্টার, এমেক্স, নেক্সাস ইত্যাদি যেকোন ব্রান্ডেরই হতে পারে।

ভিসা ক্রেডিট কার্ড কিভাবে এক্টিভ করবেন

ভিসা ডেবিট কার্ড যেভাবে এক্টিভ করেছেন একই পদ্ধতিতে আপনি আপনার ভিসা ক্রেডিট কার্ড এক্টিভ করে নিবেন। এখানেও চেক বই থাকবে। চেক বইও এক্টিভ করে নিতে ভুলবেন না।

ডুয়েল কারেন্সি কার্ড

দেশের বাইরের কোন ওবসাইটে যদি আপনার লেনদেন করতে হয় তাহলে অবশ্যই আপনার কার্ডটি ডুয়েল কারেন্সির হতে হবে। লোকাল কারেন্সির কার্ড দিয়ে আপনি বাইরের কোন লেনদেন করতে পারবেন না।

তাছাড়া ডুয়েল কারেন্সির ডলার পার্ট সাধারণত ইনেক্টিভ থাকে।

কিভাবে এক্টিভেট করবেন? এজন্য আপনাকে একটু কষ্ট করতে হবে। আপনার যদি পাসপোর্ট না থাকে সেক্ষেত্রে হয়ত এটা সম্ভব না হতে পারে। কারণ ডলার পার্ট এক্টিভ করাতে হলে আপনাকে আপনার পাসপোর্ট সাথে নিয়ে ব্যাংকে যেতে হবে।

ব্যাংকে গেলে আপনার পাসপোর্টের বিপরীতে নির্দিষ্ট ডলার এন্ডোরস করে দেয়া হবে। এরপর আপনি হেল্পলাইনে ফোন দিয়ে আপনার কার্ডটি এক্টিভেট করে নেবেন। মনে রাখবেন, আপনি এক ট্রাঞ্জেকশনে সর্বোচ্চ ৩০০ ডলারের লেনদেন করতে পারবেন।

কোন প্রয়োজন না থাকলে আপনার ডলার পার্ট ওপেন না করাই ভাল। যখন ওপেন করবেন তারপর কাজ শেষ হয়ে গেলে আবার বন্ধ করে দিন। এতে আপনি নিরাপদ থাকবেন। কোন প্রকার হ্যাকিং এর হাত থেকে আপনি বেঁচে যাবেন।

কোন কার্ড নিবেন- ভিসা নাকি মাস্টার কার্ড

আপনার হাতে সুযোগ থেকে যাচ্ছে পছন্দ করার। কোন কার্ড নেবেন? ভিসা কার্ড, মাস্টার কার্ড, এমেক্স নাকি নেক্সাস? আসলে বিভিন্ন ধরনের কার্ড আপনাকে ভিন্ন ভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেবে।

যেমন ভিসা এবং এমেক্স কার্ডে আপনি কেনা-কাটায় বিভিন্ন শপিংমলে ছাড় পাবেন। আবার মাস্টার কার্ডে আপনি হোটেল বুকিং এ ডিস্কাউন্টের সুবিধা পেতে পারেন।

তবে, অনলাইন ট্রানজেকশনে আপনি ভিসা অথবা মাস্টার উভয় কার্ডেই সমান সুবিধা পেতে পারেন। সুতরাং আমার মনে আপনার জন্য ভিসা কিংবা মাস্টার কার্ডই ভাল হবে। এমেক্স কিংবা নেক্সাস তেমন খুব একটা প্রচলিত নয় সারা বিশ্বে।

ভিসা কার্ড দিয়ে অনলাইন কেনা-কাটায় সাবধান

মনে রাখবেন, ভিসা কিং মাস্টার কার্ড যাই ব্যবহার করেন না কেন আপনাকে একটু সাবধান হতেই হবে। নইলে হ্যাকিং এর পাল্লায় পড়তে পারেন। ভুলেও আপনি আপনার ভিসা কার্ডের নাম্বার, পিন নম্বর কাওকে দেবেন না। ভিসা কার্ডের বিপরীত পাশে যে CVV নাম্বার থাকে সেটিও নয়।

যেকোন ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন করার জন্য আপনার আপনার নাম, ভিসা কার্ড নম্বর, মেয়াদ এবং CVV নাম্বারই যথেষ্ট। যে কেও আপনার কার্ড দিয়ে অনলাইনে কিছু কিনে ফেলতে আরে। তাই আপনার ভিসা কার্ডের ছবি অনলাইনে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন।

অনলাইনে ভিসা কার্ডের ইনফরমেশন দেয়ার আগে অবশ্যই দেখে নেবেন সাইটটি সিকিউরড কিনা। এটা বুঝার সবচেয়ে সহজ উপায় হল যে সাইটে পেমেন্ট করছেন সেই সাইটের এড্রেসের আগে “https” আছে কিনা। যদি শুধু “http” থাকে “s” না থাকে তাহলে সেই সাইটে পেমেন্ট না করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।

আশা করি আমার আজকের এই ব্লগ থেকে ভিসা কার্ড কি এবং এই কার্ড নিয়ে আপনার যত অজানা তথ্য জানতে পেরেছেন। ব্লগটি পড়ার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ।

Previous articleমোবাইল দিয়ে টাকা ইনকাম বিকাশ রিচার্জ ৫০০ টাকা প্রতিদিন।
Next articleচুক্তিপত্র লেখার নিয়ম – কেন চুক্তিপত্র করবেন?
যে ব্যর্থ সে অজুহাত দেখায়, যে সফল সে গল্প শোনায়। আমি অজুহাত নয় গল্প শোনাতে ভালবাসি। আসুন কিছু গল্প শুনি, নিজের গল্প অন্যকে শুনাই।