আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয় বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি হারে জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে কোন কোম্পানিগুলো? এর উত্তরে আপনাকে অবশ্যই বলতে হবে বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির নাম। কেননা বর্তমানে যেসব কোম্পানি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে তার মধ্যে ওষুধ কোম্পানিগুলো রয়েছে প্রথম সারিতে। একসময় বাংলাদেশকে প্রচুর পরিমাণে বিদেশি ঔষধ আমদানি করতে হতো। কিন্তু বর্তমানে সেই চিত্র বদলে গেছে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে ঘটেছে ব্যাপক বিপ্লব। দেশের জনগণের চাহিদা মিটিয়েও এখন বাংলাদেশের কোম্পানিগুলোতে তৈরি হওয়া ঔষধ বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।আজকে আমরা জানবো বাংলাদেশের সেরা ১০ টি ঔষধ কোম্পানি সম্পর্কে।
স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যাল লিমিটেড
আমাদের তালিকার প্রথমে রয়েছে ১৯৫৮ সালে স্যমসন এইচ চৌধুরি ও তার বন্ধুর সহযোগে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যাল লিমিটেড। বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ওষুধ কোম্পানির নাম এটি। বর্তমানে দোকানে গেলেই যেকোনো ওষুধ কেনার আগে মানুষ চেক করে নেয় এটি স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যাল লিমিটেডের নাকি অন্য কোম্পানির। বুঝতে পারছেন ভরসা জায়গাটা কত দূর। আর এই ভরসা একদিনে অর্জিত হয়নি। যুগে যুগে মানুষকে সেরা সেবা দেওয়ার মাধ্যমেই এই আশ্বাস অর্জন করে নিয়েছে বাংলাদেশ স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যাল লিমিটেড। তবে এই কোম্পানি সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিতি লাভ করে ১৯৯১ সালের পর থেকে।
কেননা ১৯৯১ সালের পর থেকেই তারা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ মার্কেটে প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার উন্মুক্ত করে। আর এর মাধ্যমেই স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড একটি পাবলিক কোম্পানিতে রূপান্তরিত হয়। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানের সদর দপ্তর ঢাকার মহাখালীতে। স্কয়ার কোম্পানির সবচেয়ে জনপ্রিয় ঔষধ হলো এদের তৈরি এন্টিবায়োটিক গুলো। বিশ্বমানের এন্টিবায়োটিক তৈরিতে স্কয়ার সর্বাধিক জনপ্রিয়।
কৃমির ঔষধ খাবার নিয়ম এবং কৃমি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় কি? জানতে পড়ুন।
স্কয়ার কোম্পানির বর্তমান মার্কেট ক্যাপিটাল প্রায় ১.৭ বিলিয়ন ডলার। আর তাদের নেট ইনকাম প্রতিবছর প্রায় ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। দেশি-বিদেশী মিলে স্কয়ার কোম্পানিতে বর্তমানে প্রায় ৯২৩৪ জন কর্মরত রয়েছেন। শুধুমাত্র বাংলাদেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যাল লিমিটেড প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় ৪২ টি দেশে নিয়মিত ওষুধ রপ্তানি করছে।
এসবের মধ্যে এশিয়ার ১৯ টি দেশ, আমেরিকার ছয়টি, ওশেনিয়া অঞ্চলে তিনটি, আফ্রিকার ১৩ টি দেশ এবং এমনকি যুক্তরাজ্যের বাজারে স্কয়ার কোম্পানির ওষুধের বেশ কদর রয়েছে। এর মাধ্যমে শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠানের লাভ কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক গৌরব অর্জিত হয় না। আমাদের দেশ বিশ্বের মধ্যে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। শুধুমাত্র ওষুধ কোম্পানি নয় স্কয়ার গ্রুপের এর বাইরেও রয়েছে আরও ২০ টির ও বেশি অন্যান্য প্রতিষ্ঠান।
ইনসেপ্টা ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেড
বাংলাদেশের জেনেরিক ঔষধ তৈরি করা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড অন্যতম। ইনসেপ্টা কোম্পানি প্রথম ১৯৯৯ সালে একটি প্রাইভেট কোম্পানি হিসেবে যাত্রা শুরু করে। ইনসেটটা কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল মুক্তাদির। রাজধানী ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় রয়েছে ইনসেপ্টা কোম্পানির সদর দপ্তর। এছাড়াও তাদের রয়েছে আরও দুইটি উৎপাদন কেন্দ্র। এগুলোর একটি সাভারে এবং আরেকটি ঢাকার আমরাই এলাকায় অবস্থিত।
প্রথম দেখে কোম্পানি যখন তৈরি হয় তখন তারা কেবলমাত্র বাংলাদেশে ঔষধ সাপ্লাই দিত। বর্তমানে ঔষধের পাশাপাশি ইনসেপ্টা ফার্মাসিটিক্যাল লিমিটেডের অধীনে আরো বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা নিয়মিত বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন প্রোডাক্ট সাপ্লাই দিচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ওষুধ তৈরি করার জন্য ইনসেপ্টা কোম্পানির বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। এছাড়াও ২০১৫ সালে এই প্রতিষ্ঠানটি জার্মান একটি ঔষধ কোম্পানির সাথে বায়ো ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে একসাথে কাজ করার জন্য চুক্তি করেছে। বাংলাদেশের একটি কোম্পানির জন্য এটি অনেক বড় একটি অর্জন।
ঔষধ খাওয়ার নিয়ম- যা মেনে না চললেই নয়। জানতে পড়ুন।
এছাড়াও দেশের সুনাম তো রয়েছেই। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে রংপুর রাইডার্স এর প্রধান স্পন্সর হিসেবে কাজ করে ইনসেপ্টা ফার্মাসিটিক্যাল লিমিটেড। বর্তমানে ইনসেপ্টা ফার্মাসিটিক্যাল লিমিটেড কোম্পানিতে কর্মরত রয়েছেন সারা দেশের প্রায় ছয় হাজারের বেশি মানুষ। ঔষধ কোম্পানির পাশাপাশি ইনসেপ্টা বর্তমানে প্রতিষ্ঠা করেছে একটি বিশ্বমানের ভ্যাকসিন লিমিটেড কোম্পানি। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে হিউম্যান ভ্যাকসিন উৎপাদনের সুবিধা সমৃদ্ধ এই কোম্পানিটি দেশের বাইরেও ভ্যাকসিন রপ্তানি করা শুরু করেছে।
বাংলাদেশের বাজারে মানুষের টিকা চালু করে ইনসেপ্টা কোম্পানি ২০১১ সালে। ইনসেপ্টা ভ্যাকসিন লিমিটেড বাংলাদেশের ইতিহাসে ভ্যাকসিন তৈরির প্রযুক্তি অর্জনকারী সর্বপ্রথম দেশীয় কোম্পানি হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। ধারণা করা হয় বর্তমানে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানি হল স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যাল লিমিটেড। সংস্থাটি বর্তমানে অবশ্য তরি পাশাপাশি আর বিভিন্ন রকম পণ্য তৈরি করছে যা দেশীয় ও বিদেশি বাজারেও বেশ চাহিদা রয়েছে।
বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যাল লিমিটেড
বাংলাদেশের ওষুধ কোম্পানিগুলোর মধ্যে আরেকটি অন্যতম জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান হল বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যাল লিমিটেড। বেক্সিমকো গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান এটি। এই কোম্পানির প্রতিষ্ঠাকাল ১৯৮০ সাল। বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যাল লিমিটেড এর সদর দপ্তর হল ঢাকার ধানমন্ডি এলাকায়। বর্তমানে কোম্পানিটির চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন নাজমুল হাসান পাপন। সীমিত পর্যায়ে বিশ্বমানের ওষুধ তৈরির জন্য কোম্পানিতে বিখ্যাত।
বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেন এ এস এফ রহমান এবং সালমান এফ রহমান ১৯৮০ সালে। বাংলাদেশে সর্বপ্রথম বেক্সিমকো কোম্পানিই দেশের জনগণের ঔষধের চাহিদা মেটাতো। অত্যন্ত উচ্চমানের ঔষধ তৈরির জন্য কোম্পানিটির জনপ্রিয়তা দেশের বাইরে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের চাহিদা মিটিয়ে বর্তমানে বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যাল লিমিটেড দেশের বাইরে প্রায় ১০০ টিরও বেশি দেশে ঔষধ রপ্তানি করে থাকে।
ঔষধ নিয়ে বাড়াবাড়ি করবেন না-খুব ছোট বাচ্চার ঔষধ নিয়ে পরামর্শ।
বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যাল লিমিটেড কোম্পানির হাত ধরেই প্রতিষ্ঠা লাভ করে বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় টেলিভিশন চ্যানেল ইন্ডিপেন্ডেন্ট নিউজ। তাছাড় অনলাইন ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম bdnews24.com এর প্রতিষ্ঠাতাও বেক্সিমকো কোম্পানি। বর্তমানে এটি বেক্সিমকো ফার্মা নামেও বেশ পরিচিত। বাংলাদেশের এটি সর্বপ্রথম ঔষধ কোম্পানি ইউ এস বাজারে ওষুধ রপ্তানি শুরু করে। মানুষের জীবন বাঁচাতে বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যাল লিমিটেড এর অবদান অপরিসীম।
সাম্প্রতিক তথ্যমতে বেক্সিমকো কোম্পানির বাৎসরিক রেভিনিউ প্রায় ২২.৮ বিলিয়ন ডলার। এছাড়াও প্রতিবছর কোম্পানিটি ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি ইনকাম করে থাকে। দেশি-বিদেশে প্রায় ৪৫২৩ জনের মতো কর্মী নিয়মিতভাবে কাজ করে চলেছেন এবং বেক্সিমকো কোম্পানিকে আরো সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। বিদেশি ওষুধ বাজারে বাংলাদেশের নাম বেক্সিমকো কোম্পানির হাত ধরেই এসেছে।
অপসোনিন ফার্মা লিমিটেড
বাংলাদেশের পরিচিত আরেকটি ঔষধ কোম্পানির নাম হল অপসোনিন ফার্মাসিটিক্যাল লিমিটেড। ১৯৫৬ সালে আব্দুল খালেক খান দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয় অপসোনিন ফার্মা লিমিটেড। বর্তমানে কোম্পানিটির সদর দপ্তর ঢাকার ৩০ নিউ ইস্কাটন এলাকার মধ্যে। ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং সার্ভিস বা আই এম এস এর তথ্য মতে বর্তমানে বাংলাদেশের চতুর্থ বৃহত্তম কোম্পানি হল অপসোনিন। দেশি-বিদেশি বাজারে এই কোম্পানির ঔষধের বেশ চাহিদা রয়েছে। নিয়মিত বিদেশে ঔষধ রপ্তানি করে দেশে অর্থনীতি চাকাকে সচল রাখছে অপসোনিন ফার্মা লিমিটেড।
কম দামে ভালো এবং বিশ্বমানের ওষুধ তৈরি করার জন্য ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে এই কোম্পানিটি। আর এই কারণেই মূলত কোম্পানিটি বর্তমানে এ পর্যায়ে আসতে পেরেছে। বর্তমানে কোম্পানিটি ৩৫০ টিরও অধিক ব্যান্ডের প্রায় ৮০০ ভেরিয়েশনের প্রোডাক্ট তৈরি করে থাকে। বাংলাদেশের বাইরে আরো ২৫ টিরও বেশি দেশের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ঔষধ রপ্তানি করছে অপসোনিন ফার্মা লিমিটেড। বর্তমানে এই কোম্পানিটিতে কর্মরতর রয়েছেন প্রায় ৬২৪১ জনের মত কর্মী। প্রতিষ্ঠানটির বাৎসরিক রেভিনিউ প্রায় এক বিলিয়ন ডলারের মত।
ভ্যাকসিন কিভাবে কাজ করে ,ভ্যাকসিন কিভাবে তৈরি করা হয় এবং মানুষের কেন এত অনীহা।
ওষুধ তৈরির পাশাপাশি বর্তমানে অপসোনিন ফার্মা লিমিটেড গবেষণা কাজেও হাত বাড়িয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের বাজারে তারা এনেছে থার্ড জেনারেশন এন্টিবায়োটিক সেফট্রিয়াক্সোন। প্রথম স্থানীয়ভাবে সাপোজিটরি ফর্মুলেশন তৈরি করে এই প্রতিষ্ঠানটি। স্থানীয়ভাবে বরিশালের আব্দুল খালেক প্রতিষ্ঠিত অপসোনিন ফার্মা লিমিটেড বর্তমানে দেশের বাজার ছড়িয়েও বাংলাদেশকে বিশ্বের ওষুধ বাজারে তুলে ধরছে।
রেনেটা ফার্মাসিটিক্যাল লিমিটেড
১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত রেনেটা ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেড বর্তমানে বাংলাদেশ ঔষধ কোম্পানিগুলোর মধ্যে আরেকটি পপুলার নাম। শুরুর দিকে এই কোম্পানিটির নাম ছিল ফায়জার ল্যাবরেটরীজ লিমিটেড। মানুষের ওষুধ তৈরির পাশাপাশি পশু পাখির ওষুধ তৈরি জন্য রেনেটা কোম্পানির বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। আর এসব কারণে বাংলাদেশের সেরা 10 টি ঔষধ কোম্পানির তালিকায় রেনেটা কোম্পানির স্থান অন্যতম।
প্রথমদিকে রেনেটা কোম্পানি অর্থাৎ ১৯৭২ সালের দিকে ফাইজার লিমিটেডের সহায়ক হিসেবে কাজ শুরু করেছিল। তারপর একটানা প্রায় ২ দশক এটি ফাইজারের অত্যন্ত সফল একটি সহায়ক হিসেবে চলমান ছিল। পরবর্তীতে ১৯৯০ দশকের শেষের দিকে এটি ফোকাস ফর্মুলেশন থেকে সরে গিয়ে গবেষণায় হাত লাগায়। আর এর ফলে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশে ফাইজারের স্বার্থ বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে পড়ে। তারপর স্থানীয় শেয়ারহোল্ডারদের কাছে মালিকানাধীন স্থানান্তর করায় কোম্পানিটির নামে পরিবর্তন আসে। নতুন নাম রাখা হয় রেনেটা ফার্মাসিটিক্যাল লিমিটেড।
পশুদের চিকিৎসা বাদেও রেনেটা কোম্পানি পশু পাখিদের জন্য পুষ্টি বর্ধক বিভিন্ন প্রোডাক্ট উৎপাদন করে থাকে। এসব ছাড়াও তাদের তৈরি হরমোন, সাইটোটক্সিক ঔষধ এবং বিভিন্ন স্টেরয়েড দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। বর্তমানে রেনেটা কোম্পানির প্রধান নির্বাহী পরিচালক হলেন সৈয়দ এস কায়সার কবির। কোম্পানিটি সদর দপ্তর অবস্থিত ঢাকার মিরপুরে। দেশি-বিদেশি মিলে বর্তমানে কোম্পানিটিতে কর্মরত রয়েছেন প্রায় ৩ হাজার ৮৮৫ জনের অধিক কর্মী।
এসিআই লিমিটেড
দেশীয় ঔষধ বাজারের জনগণের আস্থার আরেকটি নাম এসিআই লিমিটেড। এসিআই এর পূর্ণরূপ হলো অ্যাডভান্স কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ। এটি একটি উচ্চমানের শিল্প গ্রুপ। ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে ঔষধ উৎপাদনের পাশাপাশি তৈরি করছে বিভিন্ন রকম ভোগ্য পণ্য, খাদ্য পণ্য এবং ইলেকট্রনিক নানান রকম প্রডাক্ট। বর্তমানে কোম্পানিটির চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন মিস্টার মোহাম্মদ আনিসুদ্দৌল্লা।
শুরুর দিকে কোম্পানিটি ব্যাপক লোকসান এর সম্মুখীন হয়। তবে যখন থেকে আনিসুদ্দৌল্লা চেয়ারম্যান পদে এসেছেন তখন থেকেই এ সি আই বাজারে একটি পরিচিত মুখ হয়ে ওঠে। প্রথমদিকে এডভান্স কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কেবলমাত্র ঔষধ ও কৃষি শিল্পের বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য তৈরি করত। তবে বর্তমানে এই কোম্পানিটির অধীনে রয়েছে আরো বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। যার সবগুলাই এসেছে আনিসুদ্দৌল্লা এর হাত ধরে।
দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বর্তমানে এসিআই কোম্পানি বিদেশেও তাদের পণ্য এবং ঔষধ রপ্তানি করা শুরু করেছে। পৃথিবীর প্রায় দশটিরও বেশি দেশে বর্তমানে এসিআই কোম্পানির ঔষধ বিক্রি হয়। সারাদেশ থেকে প্রায় তিন হাজারেরও বেশি মানুষ এখানে কর্মরত রয়েছেন। দেশের বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর ওর সাথে চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি এক বিরাট অংশকে এসিআই কোম্পানি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে। তাই দেশের জনগণের কাছে একটি আস্থার নাম হল অ্যাডভান্স কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিস বা এসিআই।
এস কে এফ ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেড
এটি একটি বাংলাদেশের প্রাইভেট কোম্পানি লিমিটেড। বর্তমানে এস কে ফার্মাসিটিক্যালস কোম্পানির প্রধান নির্বাহী পদে আছেন সিমেন রহমান। এটি এস কে এফ ট্রান্সকম কোম্পানির একটি অংশ হিসেবে যাত্রা শুরু করে ১৯৯০ সালের দিকে। মানুষের ঔষধের চাহিদা দোকানের পাশাপাশি এটি বিভিন্ন পশু ও প্রাণীর ওষুধ তৈরি করে থাকে। ওষুধ তৈরি পাশাপাশি এটি বর্তমানে বিভিন্ন পুষ্টিবর্ধক ও থেরাপিতে ব্যবহৃত মেডিসিন উৎপাদন করছে। পশু চিকিৎসকদের কাছে এস কে এফ কোম্পানি একটি পরিচিত নাম।
কোম্পানিটির সদর দপ্তর বর্তমানে ঢাকার গুলশানে অবস্থিত। বিশ্বমানের ঔষধ তৈরির জন্য দেশীয় এই কোম্পানিটি বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকাকে ঘুরাচ্ছে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে। সারা বিশ্বের প্রায় ২১ টির বেশি দেশে এস কে এফ কোম্পানির ঔষধ রপ্তানি করা হয়ে থাকে। এছাড়াও দেশের বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের উৎস এই কোম্পানিটি। সারা দেশের প্রায় ৪০০০ মানুষের আই রোজগারের উৎসব এস কে এফ ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেড।
ঢাকার গুলশানে সদর দপ্তরের পাশাপাশি সারা দেশে রয়েছে আরও পাঁচটি বিশাল শাখা প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানগুলোতে কেবলমাত্র ওষুধ তৈরি করা হচ্ছে না। এক বিরাট জনগোষ্ঠীকে বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দেশে ও বিদেশের একেকজন দক্ষ কর্মী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অবদান রাখছে এই কোম্পানিটি। কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠা করেন লতিফুর রহমান। দেশব্যাপী এই কোম্পানিটির ওষুধের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সাধারণ মানুষের কাছে ভরসার আরেকটি নাম এস কে এফ ফার্মাসিটিক্যাল লিমিটেড।
জেনারেল ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড
বাংলাদেশ ও পৃথিবীর আরো বেশ কয়েকটি দেশে ওষুধের যোগান দিচ্ছে জেনারেল ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেড। কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে 1987 সালে। তারপর থেকে এ প্রতিষ্ঠানটিকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রায় দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে অত্যন্ত সফলভাবে দেশের জনগণকে ঔষধ সরবরাহ করে চলেছে জেনারেল ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেড। অত্যন্ত আধুনিক এবং উন্নত মানের প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তৈরিকৃত ঔষধ দেশে ও বিদেশে বেশ চাহিদা রয়েছে।
বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ প্রোডাকশন ফ্যাসিলিটিস সমৃদ্ধ কোম্পানি এটি। প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ বিশ্বমানের ঔষধ তৈরির জন্য স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে চলেছে জেনারেল ফার্মা। এই ফ্যাক্টরিতে বর্তমানে ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানিজশন এর গাইডলাইন মেনে চলে সর্বপ্রথম স্টরাইডাল এবং নস্টেরাইডাল জাতীয় অপথমেমিক প্রিপারেশন তৈরি করা হয়েছে। আর এর জন্য নির্মাণ করা হয়েছে সম্পূর্ণ আলাদা প্রযুক্তি সম্পন্ন একটি ডেডিকেশন প্রোডাকশন এরিয়া।
জেনারেল ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেড কোম্পানিটি ব্যবহার করে স্টেট অফ দ্য আর্ট টেকনোলজি সমৃদ্ধ আধুনিক এবং প্রগতিশীল কিছু নিয়ম এবং নির্দেশিকা। আর এর ফলে এই কোম্পানির ঔষধ গুলো হয় সর্বোচ্চ গুণগত মানসম্পন্ন। তাই দাম কিছুটা বেশি হলেও এই কোম্পানির ঔষধ গুলোর প্রতি জনগণের রয়েছে বিশেষ একটি আস্থা। কোয়ালিটি ইনশিওর করার জন্য জেনারেল ফার্মাতে ব্যবহার করা হয় আলাদা কোয়ালিটি ইনশিওরেন্স ডিপার্টমেন্ট। যা তাদের ওষুধের গুনাগুন এবং কার্যবলী ব্যাপকভাবে সমৃদ্ধ করে তোলে।
দেশের জনগণের চাহিদা মিটিয়েও বর্তমানে জেনারেল ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেড এর ঔষধ এবং অন্যান্য চিকিৎসা সম্পর্কিত প্রোডাক্ট বিদেশের বাজারেও অত্যন্ত সফলভাবে রপ্তানি করা হচ্ছে। এছাড়াও দেশীয় একটি বিরাট জনগোষ্ঠীকে জেনারেল কোম্পানি দিয়েছে কর্মসংস্থানের সুযোগ। যেখানে তারা পাচ্ছে বিশ্বমানের ট্রেনিং এবং যুগোপযোগি সুযোগ-সুবিধা। তাই আমাদের আজকের বাংলাদেশের সেরা দশটি ঔষধ কোম্পানির নামের তালিকায় সাগৌরবে স্থান করে নিয়েছে জেনারেল ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেড।
একমি ল্যাবরেটরীজ লিমিটেড
আপনারা যারা নিয়মিত ফার্মেসির দোকানে আসা-যাওয়া করেন তাদের কাছে নিঃসন্দেহে একমি একটি অত্যন্ত পরিচিত নাম। ১৯৫৪ সালে হামিদুর রহমান সিনহা এই প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণ করেন। একটি স্বত্বাধিকারী সংস্থা হিসেবে একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড যাত্রা শুরু সেই পাকিস্তানি আমলে। যদিও সেই পাকিস্তানি আমলে এরকম একটি প্রতিষ্ঠান চালনা করা ছিল অত্যন্ত কঠিন একটি ব্যাপার। কারণ পরিবেশ ও পরিস্থিতি তখন এখনকার মত এতটা অনুকূলে ছিল না। কিন্তু বাংলার কৃতি সন্তান জনাব হামিদুর রহমান সিনহা দেখিয়েছেন অদম্য উদ্যোগের সাহস।
তাই তার প্রবল ইচ্ছা এবং উৎসাহের কাছে সব বাধা থেমে যায়। দেশের জনগণের কাছে একটি সফল কোম্পানি হিসেবে পরিচিত লাভ করে একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড। বর্তমানে কোম্পানিটি এন্টিবায়োটিক ওষুধ নির্মাণের জন্য বিখ্যাত। অত্যন্ত কোয়ালিটি সম্পন্ন এবং বিশ্বমানের ওষুধ তৈরি করার কারণে দেশীয় জনগণের পাশাপাশি বর্তমানে এটি প্রায় ৪০টিরও বেশি দেশে ঔষধ রপ্তানি করছে। আর এই সফলতার পেছনে অদম্য নেতৃত্বের অবদান রেখেছেন কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠাতা জনাব হামিদুর রহমান সিনহা।
বাংলাদেশের স্বনামধন্য এই ঔষধ কোম্পানিটি বর্তমানে তৈরি এবং বিক্রি করছে প্রায় পাঁচশ ধরনের প্রোডাক্ট। আর এর সবগুলোই প্রায় অত্যন্ত গুণগতমান সম্পন্ন। শুরুর দিকে কোম্পানিটির সদর দপ্তর ছিল ঢাকার নারায়ণগঞ্জ এলাকায়। তবে বর্তমানে এটি কল্যাণপুর শিফট করা হয়েছে। সারাদেশ হতে প্রায় সাত হাজারেরও বেশি মানুষ এখানে কর্মরতা রয়েছেন। মানব ঔষধ তৈরীর পাশাপাশি একমি কোম্পানি তৈরি করছে বিভিন্ন রকম গবাদি পশুর কীট, ঔষধ, হারবাল এবং এমনকি আয়ুর্বেদিক ঔষধ। তাই অন্যান্য ঔষধ কোম্পানির তুলনায় দিন দিন এটি ব্যাপক প্রসার এবং পরিচিতি লাভ করছে দেশে ও বিদেশে।
ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড
ইতিমধ্যে আমরা আমাদের আজকের তালিকার শেষ প্রান্তে চলে এসেছি। বাংলাদেশের ঔষধ কোম্পানি গুলোর মধ্যে আরেকটি জনপ্রিয় নাম হল ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড। অন্যান্য ঔষধ প্রতিষ্ঠান গুলোর মত এটি তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি। তবে অত্যন্ত সফলতার সাথে দেশে ও বিদেশে ঔষধ যোগান দিয়ে চলেছে ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড। এটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে ১৯৭৪ সালে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে এর কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৮৩ সালের পর থেকে। প্রথম দিকে তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মোতাবেক ওষুধ তৈরি করলেও বর্তমানে এটি নিজস্ব প্রোডাক্ট তৈরি করা শুরু করেছে।
এটি বাংলাদেশের সর্বপ্রথম কোম্পানি যারা বাংলাদেশে সফট ক্যাপসুল প্রবর্তন করে। এই কোম্পানিতে প্রতিষ্ঠাতা হলেন ডাক্তার এস এম আমজাদ হোসাইন। তবে বর্তমানে ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড এর চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন এম এ হায়দার হোসাইন। তার হাত ধরেই ধীরে ধীরে কোম্পানিতে দেশে ওষুধ বাজারে সাড়া ফেলতে শুরু করে। বর্তমানে এটি মানব ঔষধ তৈরীর পাশাপাশি গবাদিপশুর পুষ্টি বর্ধক এবং অন্যান্য চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করে চলেছে।
এছাড়াও ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড সাধারণ ওষুধ তৈরির পাশাপাশি নানান রকম ইউনানী এবং হারবাল ওষুধ তৈরি করা শুরু করেছে। যার ফলে এটি হোমিও চিকিৎসকদের কাছে অত্যন্ত পরিচিত একটি নাম হিসেবে গড়ে উঠছে। সারা দেশের প্রায় ৫০০০ জনের বেশি মানুষ এই ওষুধ কোম্পানিটিতে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে কাজ করে চলেছেন। বাংলাদেশের সাধারণ জনগোষ্ঠীর জন্য ঔষধ যোগানের পাশাপাশি বিশ্বের প্রায় ১৫ থেকে ২০ টি দেশে নিয়মিত ঔষধ রপ্তানি করছে ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড। বাংলাদেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই কোম্পানিটির অবদান অপরিসীম। কেননা প্রথমদিকের ঔষধ কোম্পানিগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি নাম হল ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড।
উপসংহার
আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করলাম বাংলাদেশের সেরা ১০ টি ঔষধ কোম্পানি এর নাম এবং তাদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। তবে বর্তমানে বাংলাদেশে নিবন্ধিত ঔষধ কোম্পানির সংখ্যা প্রায় ২৫০ টিরও বেশি। আমরা চেষ্টা করেছি এসবের মধ্যে যে কোম্পানিগুলো মানুষের কাছে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় এবং দেশে ও বিদেশে চাহিদা সম্পন্ন সেগুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরা। তাদের সার্ভিস, রেপুটেশন এবং অন্যান্যজরিপের উপর ভিত্তি করে আমরা তৈরি করেছি এই তালিকাটি। আপনার পছন্দের কোনো ঔষধ কোম্পানির নাম আমাদের শর্টলিস্ট এ না আসলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ।