ফরেক্স ট্রেডিং কি বাংলাদেশে বৈধ

ফরেক্স ট্রেডিং কি বাংলাদেশে বৈধ ? বাংলাদেশে ফরেক্স ট্রেডিং এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে যারা অনলাইনে আয় করতে চান তারা ধীরে ধীরে ফরেক্স ট্রেডিং এর দিকে ঝুঁকছেন। অনেকেই দীর্ঘদিন যাবত ফরেক্স ট্রেডিং করে যাচ্ছেন। কিন্তু সবার মনে একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খায়, তা হল ফরেক্স ট্রেডিং কি বাংলাদেশে বৈধ ? এই প্রশ্নের উত্তর পরিস্কারভাবে কেও দিতে পারেনা। বাংলাদেশে ফরেক্স ট্রেডিং অবৈধ নাকি বৈধ সেই প্রশ্নের উত্তর যারা খুঁজছেন, তাদের জন্য আমার আজকের এই অনুসন্ধানী ব্লগ- ফরেক্স ট্রেডিং কি বাংলাদেশে বৈধ ? আসুন জানার চেষ্টা করি।

আপনারা যারা এই ব্লগটি পড়তে আসেছেন তারা হয়ত অনেকেই ফরেক্স ট্রেডিং নিয়ে তেমন কিছুই জানেন না, তাদের সুবিধার্থে ফরেক্স ট্রেডিং নিয়ে কিছু সাধারণ আলোচনা করা যাক প্রথমে, কিন্তু তা অবশ্যই খুবই সংক্ষেপে।

এছাড়াও আমাদের দেশে অনেকেই বিট কয়েন কেনাবচা করে থাকেন এবং প্রতারনার শিকার হন। আজকের ব্লগে আমি আপনাদের বিটকয়েন নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কি বলে সে ব্যাপারেও আলোচনা করব।

ফরেক্স ট্রেডিং কি?

ফরেক্স ট্রেডিং মূলত বিদেশি মুদ্রা অনলাইনে কেনা-বেচা করার একটি আন্তর্জাতিক পদ্ধতি। আপনারা অবশ্যই জেনে থাকবেন, বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উপর নির্ভর করে সেই দেশের মুদ্রার মানের কম বেশি হয়ে থাকে। আপনি চাইলে কোন ব্রোকারের মাধ্যমে কোন মুদ্রা কেনা বেচার মাধ্যমে লাভবান হতে পারেন।

আসলে এটাই মূলত ফরেক্স ট্রেডিং। শুনতে যতটা সহজ মনে হচ্ছে আসলে ব্যাপারটা এত সহজ নয়। ফরেক্স মার্কেট এতটাই ভোলাটাইল এবং রিস্কি আপনার যদি ফরেক্স মার্কেট নিয়ে সঠিক জ্ঞান না থাকে তাহলে মুহূর্তের মাঝেই আপনার লাখ টাকা শেষ হয়ে যেতে পারে।

তাই আপনি যদি ফরেক্স ট্রেডিং করতে চান, আপনার উচিত হবে আগে ফরেক্স ট্রেডিং ভালভাবে শিখে তারপর মাঠে নামা।

বিট কয়েন কি?

বিট কয়েন একপ্রকার ভার্চুয়াল মুদ্রা ব্যবস্থা। যা কোন দেশের কেন্দ্রিয় ব্যাংক বা বিশ্ব ব্যাংক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়। এই মুদ্রা কখনই কোন ব্যাংকে জমা রাখতে হবেনা, মুদ্রা সংরক্ষণের জন্য আপনি ব্যবহার করতে পারেন আপনার পেন ড্রাইভ কিংবা ক্লাউড কিংবা কোন ই-ওয়ালেট। আপনি সম্পূর্ণ অপরিচিত ব্যক্তিকেও আপনার বিট কয়েন অনলাইনে ট্রান্সফার করে দিতে পারেন। কেও কিছুই জানবেনা।

এব্যাপারে একটি তথ্য আপনাদের দিয়ে রাখি, বিট কয়েন কিন্তু নিজেই ঘরে বসে তৈরি করা যায়। আপনার হয়ত অনেকেই জানেননা। এই প্রসেসকে বলা হয় মাইনিং। কষ্ট করে একটু গুগল করলেই আপনারা এ ব্যাপারে জানতে পারবেন। নিচের ভিডিও থেকে  বিট কয়েন ও মাইনিং নিয়ে জানতে পারবেন।

একারনে অবৈধ লেনদেনের ক্ষেত্রে অনেকেই বিট কয়েন কেই বেঁছে নিয়েছেন। বিশেষ করে যারা অবৈধ চোরা কারবারি কিংবা অস্র ব্যাবসার সাথে জড়িত তারা বিট কয়েন ব্যবহার করতে উৎসাহী হচ্ছেন। এছাড়াও অনেক দেশ বিট কয়েনকে বৈধতা দিয়েছে।

কিন্তু আমাদের দেশ বাংলাদেশে বিট কয়েনে অবৈধ। বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী এসব ভার্চুয়াল মুদ্রার ব্যবহার বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রন আইন ১৯৪৭, সন্ত্রাস বিরোধী আইন ২০০৯ এবং মানি লন্ডারিং আইন ২০১২ দ্বারা সমর্থিত নয়। তাই বাংলাদেশ ব্যাংক এসব মুদ্রায় লেনদেনের করার ব্যাপারে অনুৎসাহিত করেছে।

ফরেক্স ট্রেডিং কি বাংলাদেশে বৈধ

এবারে আসুন ফরেক্স ট্রেডিং কি বাংলাদেশে বৈধ কিনা এটা নিয়ে আলোচনা করা যাক। বাংলাদেশ ব্যাংক ফরেক্স ট্রেডিংকে অবৈধ ঘোষনা করে একটি সতর্কতামূলক গনবিজ্ঞপ্তি দেয়। যেখানে বলা হয় ইন্টারনেটে forex Trading/dealing থেকে বড় মাত্রায় লাভের প্রলোভন দেখিয়ে যারা বিজ্ঞাপন প্রচার করছে তাদের বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে কেও যেন প্রতারিত না হন সে ব্যাপারে জনসাধারণকে সাবধান করা হয়েছে এবং বিজ্ঞাপন দাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। গনবিজ্ঞপ্তিটি নিচে সরাসরি তুলে ধরা হল।

গন বিজ্ঞপ্তিতে এসব বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেনের জন্য শুধুমাত্র বৈধ মানি এক্সচেঞ্জের সহায়তা করতে বলা হয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে একটি প্রশ্ন থেকেই যায়। আমাদের দেশে বৈধ মানি এক্সচেঞ্জ শুধুমাত্র ফিজিকাল মুদ্রার লেনদেনের কাজ করে থাকে। অনলাইনে ব্যাংকের মাধ্যমে ফরেক্স ব্রোকারে ডলার ডিপোজিট করার কোন মাধ্যম আমাদের দেশে নেই।

তবে, আশা করা যায় খুব শীঘ্রই পেপাল কিংবা অন্য কোন ভার্চুয়াল কারেন্সি বাংলাদেশে অনুমোদন পাবে। সেক্ষেত্রে ডলার ডিপোজিট করার ঝামেলা থেকে আমরা বাংলাদেশিরা মুক্তি পাব। সেদিন হয়ত আর দেরি নয়।

তবে, এখনও যে পেপাল/নেটেলার ডলারের কেনা বেচা হচ্ছে না তা নয়। এখনও অনেক ব্যক্তি বা গোষ্ঠি পেপাল/নেটেলারের মত ডলার কেনা-বেচা করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী যা সম্পূর্ণ রুপে অবৈধ।

কিভাবে করবেন ফরেক্স ট্রেডিং

এক্ষেত্রে কি করার আছে? আপনি কিভাবে ফরেক্স ট্রেডিং করবেন? হ্যা, উপায় অবশ্যই রয়েছে। আপনি যদি ফরেক্স ট্রেডিং সত্যি করতে চান, নিজে কোন ফরেক্স ব্রোকারে একাউন্ট খুলে বাইরের কোন বন্ধুর মাধ্যমে আপনার নেটেলার/পেপাল একাউন্টে ডলার ট্রান্সফার করে নিতে পারবেন।

তারপর আপনার ফরেক্স ট্রেডিং একাউন্ট আপনি অপারেট করবেন, ফরেক্স ট্রেড থেকে প্রফিট করে আপনার নেটেলার/পেপাল একাউন্টে ডলার উইথড্র করে আবার বন্ধুর একাউন্টে ট্রান্সফার করে নিতে পারেন। আপনার বন্ধু তার একাউন্ট থেকে ডলার ব্যাংকে ট্রান্সফার করে বৈধ উপায়ে আপনাকে রেমিটেন্স আকারে আপনার ব্যাংকে পাঠিয়ে দিতে পারে।

বৈধ উপায়ে ফরেক্স ট্রেডিং করার এর চেয়ে ভাল আর কোন উপায় হতে পারেনা। বাংলাদেশের কোন ভিসা বা মাস্টার কার্ড দিয়ে ফরেক্স এ ডিপোজিট করা যায় না।

ফরেক্স নিয়ে সতর্কতা

সবই তো জানলেন? এবারে আমি আপনাকে কিছু ব্যাপারে সতর্ক করে দেই। এই কথাগুলো অবশ্যই খুব মনোযোগ দিয়ে পড়বেন। যদি আপনি ফরেক্স করতে চান, কথাগুলো আপনাদের খুবই কাজে দেবে বলে আমার বিশ্বাস।

প্রথমেই মনে রাখবেন, ফরেক্স ট্রেডিং মানেই এমন জায়গা নয় যে আপনি হুট করে অনেক টাকা ইনকাম করে ফেলবেন। অনেক পড়াশোনা এবং এনালাইসিসের ব্যাপার রয়েছে। আপনি যদি এনালাইটিকাল মেন্টালিটির না হয়ে থাকেন এই মার্কেট আপনার জন্য নয়।

মনে রাখবেন, এখানে রিস্ক ফ্যাক্টর খুব হাই। আপনি যেমন একদিনে অনেক প্রফিট করতে পারেন তেমনি, একইদিনে অনেক টাকা লোকসান করার সুযোগ করেছে যদি আপনার মানি ম্যানেজমেন্ট ঠিক না থাকে। প্রপার মানি ম্যানেজমেন্ট ঠিক রাখা তাই খবই জরুরী।

যারা ফরেক্স ট্রেডিং করেন তাদের শতকরা ৯৫ ভাগ ট্রেডার লোকসান করে থাকেন। মাত্র ৫ ভাগ ট্রেডার লাভের মুখ দেখেন। তাই শুরু করার আগেই সাবধান হোন। ট্রেড করার আগে ভাল মত বুঝে শুনে শিখে নিন। আগেই টাকার রিস্ক নেবেন না। প্রয়োজনে ডেমো একাউন্ট খুলে ডেমো ট্রেড করে প্রশিক্ষন নিন।

ফরেক্স ট্রেডিং কি হালাল

ফরেক্স ট্রেডিং হালাল নাকি হারাম এ ব্যাপারে ভিন্ন ভিন্ন মত দেখেছি। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে যারা এ ব্যাপারে মতামত বা ফতোয়া দিয়েছেন তাদের কেউই ফরেক্স ট্রেডিং নিয়ে তেমন খুব একটা ভাল ধারনা রাখেন না। তবে, এ ব্যাপারে সঠিক নির্দেশনা থাকাটা খুবই জরুরী। তাহলে অনেকেই হালাল হারামের বিষয়ে সাবধান হতে পারেন।

আমি বেশ কিছু হুজুরদের লেকচার শুনেছি তারা যারা ফরেক্স ট্রেডিং কে হারাম বলেছেন তারা কেওই ফরেক্স ট্রেডিং নিয়ে তেমন কিছুই জানেন না। আপনাদের যদি এব্যাপারে ভাল কোন আলেমের নির্দেশনা থাকে নিচার কমেন্ট বক্সে জানিয়ে যেতে ভুলবেন না। আশা করি আমি সহ অনেকের কাজে লাগবে।

পরিশেষে, আশা করি আমার আজকের লেখা আপনাদের ভাল লেগেছে। যদি ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের লেখাটি আপনার ফেসবুক পেইজে শেয়ার করে লাইক দিবেন। আমার আজকের ব্লগটি পড়ার জন্য আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। ভাল থাকবেন, সুস্থ্য থাকবেন।

Previous articleসেরা দশ ধনী ক্রিকেটার : কার চেয়ে কে বেশি ধনী ২০২২ সালে ।
Next articleফরেক্স ট্রেডিং থেকে আয় করা কি আদৌ সম্ভব?
যে ব্যর্থ সে অজুহাত দেখায়, যে সফল সে গল্প শোনায়। আমি অজুহাত নয় গল্প শোনাতে ভালবাসি। আসুন কিছু গল্প শুনি, নিজের গল্প অন্যকে শুনাই।