প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণ

যুদ্ধ শব্দটি কানে আসলেই প্রথমে আমরা যে কথা মনে করি তা হলো ক্ষয়ক্ষতি। হ্যাঁ, যুদ্ধের কারণ যাইহোক না কেনো এর পরিণতি সব সময় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি। আর তা যদি হয় পুরো পৃথিবীর একসাথে হয়ে যুদ্ধ তাহলে তো কথাই থাকে না। বিশ্বযুদ্ধ শব্দটি শুনলেইন মহাসমুদ্রের কথা মনে পড়ে। মহাসমুদ্র যত বড়, মহাযুদ্ধও তত গভীর। এ সম্পর্কে লিখে শেষ করা শুধু কঠিন নয়, অসম্ভবও বটে। তবুও মানুষ থেমে থাকে না। নিজে যা জানে অন্যকে জানাতে তাঁর ভালো লাগে। সেই ভালো লাগা থেকেই লিখছি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণ ও ফলাফল নিয়ে। আশা করি ব্লগের পাঠকেরা উপকৃত হবেন।

আজকের লেখায় যা থাকছে

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এর ব্যাপ্তি

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ কে ইংরেজিতে গ্রেট ওয়ার, ওয়ার অব দ্য নেশন্স এবং ওয়ার টু এন্ড অল ওয়ার্স হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। ১৯১৪ সালের আগস্টে শুরু হওয়া এই যুদ্ধের শেষ হয়েছিলো ১৯১৮ সালের ১১ নভেম্বরে। যুদ্ধে মিত্রপক্ষ, সেন্ট্রাল পাওয়ার্স এর বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করে। মিত্রশক্তি নেতৃত্বে ছিলো ফ্রান্স, ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্র এবং সেন্ট্রাল পাওয়ার্স এ ছিলো জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও অটোমান সাম্রাজ্য।

এই যুদ্ধে ইউরোপের মানচিত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন সূচিত হয়। জলে, স্থলে যুদ্ধের পাশাপাশি প্রথমবারের মত আকাশ পথেও সূচিত হয় যুদ্ধের। যুদ্ধে ৯০ লক্ষ সৈন্য ও ৫০ লক্ষ বেসামরিক মানুষের মৃত্যু ডেকে আনে। একদিকে অটোমান সাম্রাজ্যের পতন ঘটলেও উত্থান হয় রাশিয়ার নেতৃত্বে  কমিউনিজমের।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণ

১৯১৪ সালের ২৮ জুন অস্ট্রিয়ার আর্চডিউক ও অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় সিংহাসনের উত্তরাধিকারী ফ্রাঞ্চ ফার্ডিনান্দ হত্যাকাণ্ডের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া প্রথম বিশ্বযুদ্ধের তাৎক্ষণিক কারণ হলেও ঐতিহাসিকরা এ যুদ্ধের জন্য আরো বেশ কিছু কারণ তুলে ধরেছেন। এসব কারণের মধ্যে রয়েছে জাতীয় রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও ঊনবিংশ শতাব্দীতে তৈরি বিভিন্ন জোটের ভারসাম্যহীনতা। তবে আরো কিছু কারণ ঐতিহাসিকগণ যুদ্ধের জন্য দায়ী বলে মনে করে থাকেন। যেমনঃ

জাতীয়তাবাদ ভাবধারার উত্থান

যুদ্ধ পূর্ববর্তী বছরগুলোতে কিছু আদর্শের উত্থান হয় যা দেশগুলোকে যুদ্ধের দিকে নিয়ে যায়৷ জাতীয়তাবাদ ও দেশপ্রেমকে জনপ্রিয় আদর্শগত ধারণা হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে৷ যেমনঃ ফরাসী বিপ্লবের পর ফ্রান্স শুধু ইউরোপ জয় করা নয় সবগুলো দেশে তাদের জাতীয়তাবাদ আদর্শও প্রতিষ্ঠা করতে চেষ্টা করে।

সামাজিক ডারউইনবাদ

ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে সামাজিক ডারউইনবাদ, সংখ্যালঘু ও বর্ণগত গ্রুপগুলোর মধ্যে সামাজিক পর্যায়ে প্রতিযোগিতার উপর জোর দেয়া হয়। ডারউইন যোগ্যতমদের টিকে থাকার পক্ষে মত প্রকাশ করেন। তিনি অভিমত দেন যে, টিকে থাকার লড়াইয়ে শক্তিশালীদের হাতে দুর্বলের ধ্বংস নিশ্চিত। মতবাদটি শক্তিশালী হয়ে উঠে ধীরেধীরে। ঐতিহাসিকগণ মনে করে থাকেন এই মতবাদ দেশগুলোকে যুদ্ধের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।

বস্তুগত কারণ

মার্কসবাদ ও অন্যান্য ঐতিহাসিক মতবাদে ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর পরদেশের সম্পদের প্রতি সীমাহীন লোভকে যুদ্ধের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে৷

উপনিবেশ সম্প্রসারণ

১৮ শতকের প্রথনদিকে সাম্রাজ্যবাদ সম্প্রসারণের প্রতিযোগিতা চলতে থাকে৷ জার্মানির চ্যান্সেলর বিসমার্ক নির্দিষ্ট গ্রুপের চাপে বিদেশে সাম্রাজ্য স্থাপনে সম্মত হন। এতে ব্রিটিশরা ক্ষতির সম্ভাবনা অনুধাবন করে। যা পরবর্তীতে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে বাধ্য করে৷

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বিবাদমান দেশগুলোর সামরিক শক্তি

মার্কিন সামরিক বাহিনী

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ
মার্কিন সৈন্য

১৯১৪ সালে মার্কিন সৈন্যবাহিনীতে সৈন্য সংখ্যা ছিলো ৯৪ হাজার যার অর্ধেক ছিলো বিদেশে মোতায়েন করা৷ পরবর্তীতে সৈন্য সংখ্যা বাড়ানোর জন্য নিয়োগ পক্রিয়া শুরু হয়৷ ২১ থেকে ৩০ বছরের সবাইকে বাধ্যতামূলক সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়া হয়৷ সর্বশেষ ২০ লক্ষ আমেরিকান ইউরোপে পৌছায়।

১৯১৭ সালে যুদ্ধ ঘোষণার সময়ে আমেরিকার এয়ার সার্ভিসে ১ হাজার ১৮৫ জন বৈমানিক ও ২৬০ টি বিমান ছিলো৷ যুদ্ধ জাহাজ ছিলো ৩০০ টি যা তখনকার সময়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ।

বৃটিশ সামরিক বাহিনী

১৯১৪ সালের আগস্ট নাগাদ বৃটিশ সৈন্য ছিলো ২ লাখ ৪৭ হাজার ৪২৩ জন নিয়মিত সৈন্য। সর্বশেষ যোগদান সহ শেষের দিকে সৈন্য ছিলো প্রায় ২৬ লক্ষ। বৃটিশদের প্রায় ১৬ লক্ষ সৈন্য হতাহত হয়।

বৃটিশদের বিমানবাহিনী সম্পর্কে তেমন নির্দিষ্ট তথ্য না পাওয়া গেলেও সেই সময়ের সেরা নৌবাহিনী ছিলো তাদের৷  ১৯১৪ সালের শুরুতে ১৮ টি আধুনিক ড্রীডনট, ১০ টি ব্যাটলক্রূজার, ২০ টি টাউন ক্রূজার, ১৫ টি স্কাউট ক্রূজার এবং আগের আরো ১৫০ টি ক্রূজার ছিলো৷     ক্রূজার

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ
ব্রিটিশ ট্যাংক

ফরাসী সামরিক বাহিনী

১৯১৪ সালে জানুয়ারিতে ফরাসী সেনাবাহিনীতে ছিলো এটাচড ক্যাভালরি ও ফিল্ড আর্টিলারি সহ প্রায় ৭ লক্ষ ৭৭ হাজার ফরাসী ও ৪৬ হাজার উপনিবেশিক সৈন্য। পরবর্তীতে আরো ২৯ লক্ষ সৈন্য সমাবেশ করা হয় যুদ্ধের কারণে৷

প্রথমদিকে প্রতিটি ফিল্ড আর্মিতে ৬ টি করে বিমান ছিলো। মোট ছিলো ১৩২ টি৷ ১৯১৫ সালে ২ হাজার ৩ শ’র মত বিমান নির্মাণের অর্ডার দেয়া হয়। পরবর্তীতে ১৯১৮ সালে যুদ্ধ বিরতি নাগাদ ৩,২২২ টি বিমান ছিলো। প্রথম বিশযুদ্ধের  শুরুতে ফ্রান্সের ছিলো ১৯ টি যুদ্ধ জাহাজ, ৩২ টি ক্রূজার ও ৮৬ টি ডেস্ট্রয়ার, ৩৪ টি সাবমেরিন ও ১১৫ টি টর্পেডো বোট।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ
ফরাসি সৈন্য

তুর্কী সামরিক বাহিনী

তুর্কী সেনাবাহিনী গড়ে উঠেছিলো তুর্কী, আরব, আর্মেনিয়,  কুর্দী ও সিরীয়দের নিয়ে। যুদ্ধের সূচনা কালে তিনটি আর্মিতে ৩৬ টি ডিভিশন গঠন করা যায়। যা প্রায় ১৫ লক্ষের মত। তুর্কী সরকার হতাহতদের সঠিক হিসেব রাখেনি। তবে ৪ থেকে ৫ লাখের মধ্যেই ধরা হয়ে থাকে হতাহতের সংখ্যা।

জার্মান সামরিক বাহিনী

১৯১৪ সালে জার্মানির সেনাবাহিনীকে অত্যন্ত দক্ষ সেনাবাহিনী হিসেনে স্বীকৃতি দেয়া হতো। ঐ বছর ৭ লক্ষ সৈন্য নিয় সেনাবাহিনী গঠিত হলেও ১৯১৬ সালে আগস্ট নাগাদ পশ্চিম রণাঙ্গনে ২৮ লাখ ৫০ হাজার এবং পূর্ব রণাঙ্গনে আরো ১৭ লাখ সৈন্য মোতায়েন ছিলো।

১৯১৪ সালে জার্মান নৌবাহিনী ছিলো বিশ্বে ২য় বৃহত্তম। ছিলো ১৭ টি আধুনিক ড্রীডনট, ৫ টি ব্যাটল ক্রূজার, ২৫ টি ক্রূজার ও ২০ টি যুদ্ধ জাহাজ।

জার্মান বিমানবাহিনী শুরুর দিকে ছিলো নিরস্ত্র। শুধু গোয়েন্দা তৎপরতায় বিমান ব্যবহার হতো। তবে বিমান উৎপাদন বৃদ্ধি করে ১৯১৭ সালের মার্চ নাগাদ পশ্চিম রণাঙ্গনে বিমান বাহিনীতে ৩ হাজার ৬৬৮ টি বিমান সংযোজিত হয়।

পুরুষ ছদ্মবেশে একমাত্র বৃটিশ মহিলা সৈন্য

ডরোথি লরেন্স, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের এক মাত্র নারী সৈনিক। পরবর্তী কালে যুদ্ধে অনেক নারীর অংশগ্রহণ থাকলেও প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তা ছিলো প্রথম। সেবিকা হিসেবে তাদের সাহসিকতা পূর্ণ কার্যক্রমের জন্য বেশকিছু দেশে তাদের ভোটাধিকার দেয়া হয়।

যুদ্ধের শুরুতে তিনি ছিলেন প্যারিসে। যুদ্ধে অগ্রবর্তী অবস্থানে একজন সংবাদদাতা হওয়ার ইচ্ছা ছিলো তার। কিন্তু তখনকার সময়ে এটি ছিলো অসম্ভব। তাই তিনি পুরুষের ছদ্মবেশ ধারণ করে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন৷ কিন্তু পরবর্তীতে তার মাথায় চিন্তা আসে যে, সে যদি মারা যায়  তাহলে তার পুরুষ সহযোদ্ধারা সমস্যায় পড়বে।

১০ দিন  পরিখা খননকারী চাকুরী করে তিনি তার কমান্ডিং সার্জেন্টের কাছে হাজির হয়ে নিজের পরিচয় প্রকাশ করলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেখানে তাকে অনেক জিজ্ঞাসাবাদ করার পর লন্ডনে পাঠানো হয়৷ প্রতিশ্রুতি নেয়া হয় তিনি যেন এই ঘটনা কোথাও প্রকাশ না করেন৷ কারণ সন্দেহ  করা হচ্ছিল ঘটনা জানাজানি হলে অন্য মহিলারাও এই কাজে আগ্রহী হয়ে উঠবে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং বিমানবাহিনী

বিমামবাহিনীর জন্য প্রথম বিশ্বযুদ্ধের জন্য ছিলো শৈশবকাল। স্থল ও নৌ পথে যুদ্ধ হলেও এবারই প্রথম বিমান বাহিনীর ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন কাজে ব্যবহারসহ এবারই প্রথম রণতরীতে বিমান ব্যহার করা হয়।বৃটিশ জঙ্গী বিমানগুলো রয়্যাল নেভির এইচএমএস ফিউরিয়াস এর ডেক থেকে  উড্ডয়ন করে শত্রূ বিমান মোকাবেলা ও ধাওয়া করতো।

মিত্রবাহিনীর ব্যবহৃত কয়েকটি বিমান

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত একটি বিমান

ফাইটার ও ইন্টারসেপ্টার

এডি স্কাউটী এয়ারকো ডি এইচ-, আর্মস্ট্রং হোয়াইটওয়ার্থ সিসকিন, সোপউয়িথ ডলফিন, সোপউয়িথ পাপ, রয়্যাল এয়ারক্রাফট ফ্যাক্টরি এফই-২, মোরেন সাইলনিয়ার টাইপ পি ইত্যাদি।

বোমারু এন্ড গ্রাউন্ড এটাক

এডি সীপ্লেন টাইপ ১০০০, এয়ারকো  ডিএইচ ৪, ভাইকার্স ভিমি, হ্যান্ডলি পেজ ৫ ইত্যাদি

সেন্ট্রাল পাওয়ার্সের  ব্যবহৃত কয়েকটি বিমান

ফাইটার ও ইন্টারসেপ্টার

এলবাট্রস ডি-১, এলবাট্রস ডি-১১, ফকার ডি-৫, সিমেন্স ডি আল-১,জেপেলিন- লিন্ডাউ দি-১, কনডর ডি-৬ ইত্যাদি।

বোমারু এন্ড গ্রাউন্ড এটাক

গোথা জি ফাইভ, এইজি  জি ১, এইজি আর আই, জেপেলিন স্টাকেন আর ৬ ইত্যাদি।

মিত্র বাহিনীর বিজয়

১৯১৮ সালের গ্রীষ্ম ও শরৎকালীন অভিযানে মিত্র বাহিনী জার্মানির উপর চূড়ান্ত বিজয় লাভ করে৷ আমেরিকা প্রথম দিকে সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করলেও সব ধরনের সুবিধা ও সাহায্য দিয়ে আসছিলো মিত্র বাহিনীকে৷ কিন্তু জার্মানির আনরেস্ট্রিক্টেড সাবমেরিন ওয়ারফেয়ারের বাণিজ্যিক জাহাজ নিমজ্জিত হতে থাকায় আমেরিকা যুদ্ধে নামতে বাধ্য হয়৷

১৯১৭ সালের ৬ এপ্রিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। প্রেসিডেন্ট উইলসন অস্ট্রো-হাঙ্গেরীর সঙ্গে শান্তি বজায় রাখতে চাইলেও তারা জার্মানির সঙ্গে মিত্রতা করায় আমেরিকা ১৯১৭ সালের ডিসেম্বরে অস্ট্রো-হাঙ্গেরির বিরুদ্ধেও যুদ্ধ ঘোষণা করেন।

১৯১৮ সালের ৮ আগস্ট ‘হান্ড্রেড ডেজ অফেন্সিভ’ নামে পরিচিত অভিযানের মধ্যে দিয়ে মিত্রবাহিনীর বিজয় শুরু হয়৷ জার্মানির জ্বালানি ও খাদ্যে সরবরাহ কমে গেলে অভিযান শ্লথ হয়ে পড়ে। ২ লক্ষ ৬০ হাজার আমেরিকান  সৈন্য মিত্রবাহিনীতে যোগ দিলে জার্মানি ও তার মিত্রদের মনোবল ভেঙ্গে যায়।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ফলাফল

জার্মানির উপর অবরোধ

১৯১৮ সালের ১১ নভেম্বর সকাল ১১ টায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার মধ্য দিয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসান ঘটে। যুদ্ধ বিরতির পর মিত্র শক্তি জার্মানির উপর নৌ অবরোধ অব্যাহত রাখে৷  এই অবরোধের ফলে জার্মানিতে অনেক বেসামরিক লোক মারা যায়৷ ইতিহাসবিদদের অনেকেই এই অবরোধকে ২য় বিশ্বযুদ্ধের কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা করে থাকেন৷

ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারী

ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মহামারী আকার নেয়৷ প্রথমে এই রোগটি ধরা পড়ে আমেরিকারতে। ধারণা করা হয় আমেরিকান সৈন্য দের মাধ্যমেই ইউরোপে এই রোগটি ছড়িয়ে পড়ে৷

অটোমান সাম্রাজ্য

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর অটোমান সাম্রাজ্য পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়ে। ১৯২০ সালের ১০ আগস্ট সেভার্স চুক্তির মাধ্যমে মিত্র শক্তি নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে নেয়। আনাতোলিয়ার অংশ দেয়া হয় গ্রীস ও ইতালিকে। কিন্তু পরবর্তীতে কামাল পাশার নেতৃত্বে তাদেরকে তাড়িয়ে স্বাধীনতা অর্জন করতে সক্ষম হয় তুর্কীরা। লাউসের চুক্তির মাধ্যমে আধুনিক তুরস্কের জন্ম হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের পরিণতি

প্রথন বিশ্বযুদ্ধের পর দেশটির রাজনীতিতে আইসোলিজম বা আন্তর্জাতিক বিষয়াদি থেকে হাত গুটিয়ে আনার একটি প্রবণতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। ১৯২৯ সালে স্টক মার্কেটের ধস নাগাদ একটি প্রাথমিক মুদ্রাস্ফীতির ধকল কাটিয়ে দেশটি কয়েক বছর ভারসাম্যহীন অর্থনৈতিক অগ্রগতি প্রত্যক্ষ করে। আমেরিকান ব্যবসায়ীরা জার্মান পুর্নগঠনের জন্য তহবিল সংগ্রহ করলেও ১৯৩৩ সালে যখন নাৎসিরা ক্ষমতায় আসে তখন তাদের সম্পর্কে চিড় ধরে৷

জার্মানিকে পেছন থেকে ছুরিকাঘাত করার তত্ত্ব

প্রথন বিশ্বযুদ্ধে বিজয় লাভের সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও সেন্ট্রাল পাওয়ার্সের মূল শক্তি জার্মানি পরাজিত হয়৷ জার্মান জনগণ এ পরাজয় মেনে নিতে পারেনি৷ তারা বিশ্বাস করতো, পেছন থেকে ছুরিকাঘাত করার কারণেই তারা পরাজিত হয়েছে৷ পরাজিত হওয়ার এই ধারণা ‘ডোলচেস্টসলিজেন্ডি তত্ত্ব‘ হিসেবে পরিচিত।

একে জার্মান ভাষায় ‘ডোলচেস্টোবলি জেন্ডি’ বলা হয় যার অর্থ পিছন থেকে ছুরিকাঘাত করা। পরবর্তীতে এই ধারণা ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠলে এই তত্ত্বকে হিটলারের ক্ষমতায় উত্থানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

যুদ্ধ মানেই ধ্বংস ও ক্ষতি৷ এই ধ্বংস ও ক্ষতির কারণে অনেকে শিক্ষা নিলেও পরাজিত শক্তির মাঝে প্রতিহিংসার আগুন সুপ্ত ভাবে থেকেই যায়৷ যার ফলে পরবর্তীতে আবারো সংঘাতের আশঙ্কা থেকে যায়। বাস্তবেও দেখায় যায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে জার্মানির এই প্রতিহিংসাই ২য় বিশ্বযুদ্ধের প্রধান কারণ হয়ে দাড়ায়৷ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুধু ক্ষতিই বয়ে আনেনি, সাথে নিয়ে এসেছিলো পৃথিবীর মানচিত্রে বড় ধরনের পরিবর্তনও৷

এই লেখাটি পড়ে উপকৃত হয়ে আপনি যদি রেডিটুরিডিং ব্লগকে ডোনেট করতে চান তাহলে বিকাস-০১৬১৪১৭১৭৬৫ অথবা নগদ-০১৭১৪১৭১৭৬৫ অথবা ইউক্যাশ-০১৭১৪১৭১৭৬৫ এ আপনার ডোনেশন পাঠাতে পারেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে একটি গবেষনাধর্মী লেখা পড়ুন- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ – কারণ, প্রভাব ও ফলাফল। আশা করি আপনাদের ভাল লাগবে।

সবাইকে ধন্যবাদ।

Previous articleষ্টুডিও জিবলী নিয়ে যত কথা
Next articleশপথ বাক্য – স্কুলে পড়ানো আমাদের জাতীয় শপথ বাক্য। কতটুকু মেনে চলি আমরা?
আমি মোঃ হাবিবুর রহমান রাসেল৷ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ অধ্যয়নরত। বই পড়তে ভালোবাসি। বইয়ের গ্রুপ গুলোতে মাঝে মাঝে রিভিউ লিখি৷ যা পড়ি, তা সবাইকে জানাতে ইচ্ছে করে। সেই আগ্রহ থেকেই টুকটাক লেখার চেষ্টা করি।