পানি খাওয়ার নিয়ম

একজন সুস্থ মানুষের আসলে কতটুকু পানি খাওয়া প্রয়োজন? সঠিকভাবে এই প্রশ্নের উত্তর দেয়াটা একটু কঠিনই, কারণ মানুষের পানি খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা নির্ভর করে তার আশপাশের আবহাওয়া, পরিবেশ, কাজের পরিমান এবং তার শারীরিক অবস্থার উপর। কম পানি পান করা যেমন ক্ষতিকর তেমনি বেশি পানি পান করাও আপনার জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই আমাদের সবার উচিত পানি খাওয়ার নিয়ম জেনে নিয়ম ও পরিমানমত পানি পান করা।

আজকের লেখায় যা থাকছে

শরীরে পানির চাহিদা অনুযায়ী পানির ভারসাম্য রক্ষা করতে না পারলে কি হতে পারে, নিচের ভিডিও থেকে জেনে নিন।

দেহের পানির চাহিদা নিয়ন্ত্রন করে কে

মজার ব্যাপার হল, আমাদের শরীরে পানি পান নিয়ন্ত্রন করার জন্য মস্তিস্কে একটা অংশ রয়েছে যার নাম থার্স্ট সেন্টার বা পিপাসাকেন্দ্র। এটি হাইপোথ্যালামাস অংশে রয়েছে। এই থার্স্ট সেন্টার বা পিপাসাকেন্দ্রই আমাদের জানিয়ে দেয় আমাদের কখন পানি পান করা প্রয়োজন। থার্স্ট সেন্টার বা পিপাসাকেন্দ্র যদি এক্টিভ থাকে তাহলে কারও শরীরে কখনই পানির অভাব কিংবা পানির আধিক্য হবেনা।

অপারেশন কিংবা অন্য কোন কারনে কারও মস্তিস্কের থার্স্ট সেন্টার বা পিপাসাকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেটা বিপদের কারণ হতে পারে। শরীরে পানির প্রয়োজনের মাত্রার চেয়ে মাত্র ২% হেরফের হলেই তা ক্ষতির কারণ হতে পারে।

আপনার শরীরের প্রয়োজনীয় পানি যেমন শরীরের কাজে লাগে তেমনি অতিরিক্ত পানি কিডনির মাধ্যমে প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে শরীর থেকে বের করে দেয় শরীর। কিডনি যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে তাহলে অতিরিক্ত পানি শরীরে জমা বেধে সমস্যার কারণ হতে পারে।

এসব কারনে পানি খাওয়ার নিয়ম জানাটা খুবই জরুরী।

আপনার কতটুকু পানি খাওয়া উচিত

বাংলাদেশের মত উষ্ণ আবহাওয়ার দেশের মানুষের জন্য যারা মোটামোটি পরিশ্রমের কাজ করে, তাদের দুই থেকে তিন লিটার পানি খাওয়া উচিত প্রতিদিন। তবে এটিও নির্ভর করে তার শরীর কি পরিমান পানি নির্গত করে তার উপর। পানি খাওয়ার নিয়ম জেনে পানি খান সুস্থ থাকুন।

কেন পানি খাবেন

  • আপনার শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে যদি জ্বর হয়ে থাকে তাহলেও বেশি বেশি পানি পান করুন।
  • কোষ্ঠ কাঠিন্য হলেও বেশি বেশি পানি পান করুন।
  • কিছু কিছু ঔষধ খেলে যেমন এন্টিবায়োটিক খেলে বেশি পানি পান করা উচিত।
  • আপনার প্রস্রাবের রঙ যদি লালচে কিংবা হলুদ হয় আপনাকে বুঝতে হবে আপনার শরীর পানি শূন্যতায় ভুগছে। কোন কিছু চিন্তা না করে বেশি বেশি পানি পান করুন।
  • ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে পানি পান করুন বেশি বেশি।
  • ক্ষুদামন্দা, বদহজম, উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা, হৃদরোগ ইত্যাদি রোগে বেশি বেশি পানি পান করুন।
  • খাবার পরে অতিরিক্ত পানি না করাই ভাল।
  • ওজন নিয়ন্ত্রন করার জন্য নিয়িমিত পরিমানমত পানি পান করুন।
  • গোসলের আগে পানি পান করুন এতে রক্তচাপ হ্রাস পায়।
  • পানি খাওয়ার নিয়ম জেনে সঠিক নিয়মে পানি পান করুন।

কখন পানি খাবেন

যখন তখন পানি না খেয়ে পানি পানের জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলুন, পানি খাওয়ার নিয়ম মেনে পানি খান। এতে আপনার শরীর ও মন ভাল থাকবে।

খালি পেটে সকাল বেলা পানি পান করুন। এতে আমাদের শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিক উপাদান বের হয়ে যায়, খাটি বাংলায় বললে মুখে সারারাত ঘুমানোর কারনে যেসব ব্যাক্টেরিয়া জন্মায় তা প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে বের হয়ে যায়। ।

খাবার আগে, খাবার কিছুক্ষন পরে পর্যাপ্ত পরিমানে পানি খাবেন। ঘুমানোর আগে সামান্য পরিমান পানি খাবেন। যেকোন রকম শারীরিক পরিশ্রমের পর অবশ্যই পানি খাবেন।

বেশি পানি খেলে কি ক্ষতি

অতিরিক্ত যেমন কোন কিছুই ভাল না, তেমনি অতিরিক্ত পানি পানের কারনেও আপনার শারীরিক সমস্যায় পরতে পারেন। অতিরিক্ত পানি পানে আপনার ত্বক সাদাটে হয়ে যেতে পারে।বেশি পানি পানের কারনে আপনার শরীর থেকে প্রস্রাবের মাধ্যমে প্রচুর খনিজ পদার্থ বের হয়ে যেতে পারে। এতে আপনি শারিরিকভাবে দুর্বল বোধ করতে পারেন।

অতিরিক্ত পানি পান আপনার কিডিনির উপর বেশি চাপ সৃষ্টি করতে পারে, এমনকি অতিরিক্ত পানি পান আপনার হৃৎপিণ্ড ও রক্তনালির উপরেও বাড়তি চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

দিনের প্রথম ভাগে বেশি পানি খাবেন। সন্ধার পরে পানি খাওয়া কমিয়ে দিন। রাতে ঘুমানোর আগে আর বেশি পানি খাবেন না। পানি খাওয়ার নিয়ম জানা তাই খুব জরুরী।

জানেন কি নাকের এলারজি কেন হয়? নাকের এলারজি নিয়ে বিস্তারিত পড়ুন

পানি খাওয়ার নিয়ম

কেস স্টাডিতে দেখা গেছে, অনেকেই পরিমানমত পানি পান করেও নানাবিধ ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে থাকেন। কিন্তু কেন? এর আসল কারণ তারা নিয়ম মেনে পানি খান না। কথায় আছে সঠিক নিয়মে জলযোগ এবং সল বিয়োগ আপনাকে অনেক রোগ থেকে বাঁচিয়ে দেবে। জেনে নিন পানি খাওয়ার সঠিক নিয়মঃ

বিশুদ্ধ পানি পান করুন

আসলে বিশুদ্ধ পানির অপর নাম জীবন। খাওয়ার মানে পান করার জন্য অবশ্যই বিশুদ্ধ পানি বেছে নিন। আমাদের যত ধরনের রোগ হয় তার বেশিরভাগ রোগই পানি বাহিত। তাই অবশ্যই বিশুদ্ধ পানির উপর জোড় দিন। কখনই বিশুদ্ধ নয় এমন পানি খাবেন না।

দাঁড়িয়ে পানি খাবেন না

অনেকেই দাঁড়িয়ে পানি পান করে থাকেন। এটাও মোটেই উচিত না। দাঁড়িয়ে পানি পান করলে দেহের ভেতরের পানির ভারসাম্য ঠিক থাকেনা। বিভিন্ন জয়েন্টে পানি জমে আর্থ্রাইটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।

ঢক ঢক গিলে না পানি খাবেন চুমুকে

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে তারা ঢক ঢক করে একসাথে অনেক পানি খেয়ে থাকেন। এর কারনে যা হয় তা হল হঠাত করে শরীরে চাপ বেড়ে যায়, নানা অঙ্গের ক্ষতির সম্ভাবনা রয়ে যায়।

ঘুম থেকে উঠে পানি খান

সকালে ঘুম থেকে উঠে অবশ্যই পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। খালি পেটের এক গ্লাস পানি আপনাকে সারাদিন সজীব রাখবে- একথা গ্যারান্টি দিয়ে বলা যায়।

গরমকালে বেশি পানি খান

যখন পরিবেশের তাপমাত্রা বেশি থাকে তখন বেশি বেশি পানি পান করুন। পরিবেশের তাপমাত্রা বেশি থাকলে ঘামের মাধ্যমে অনেক পানি বের হয়ে যায় তাই অতিরিক্ত পানি পান করে শরীরে পানির ভারসাম্য বজায় রাখা খুব জরুরী।

খুব ছোট বাচ্চার ঔষধ নিয়ে পরামর্শ যা সব বাবা-মায়ের পড়া উচিত।

ওজন বুঝে পানি খান

শরীরে পানির ভারসাম্য বজায় রাখতে আপনার ওজন বুঝে পানি খাবেন। যার ওজন যত বেশি তার তত বেশি পানি পান করা উচিত। যেমন- আপনার ওজন যদি ২০০ পাউন্ড হয় তাহলে এর দুই- তৃতীয়াংশ (২০০*২/৩)=১৩৩ আউন্স পানি পান করা আপনার উচিত। মনে রাখবেন, ১ লিটার= প্রায় ৩৪ আউন্স।

তবে আমরা অন্যান্য যেসব খাবার খাই সেখান থেকেও আমরা পানি পেয়ে থাকি।

কাজের মাত্রা বুঝে পানি খান

আপনি কতটুকু শারীরিক পরিশ্রম করছেন তার উপর ভিত্তি করে আপনার শরীরের পানির চাহিদা নির্ভর করে। যেমন আপনি যদি এসি রুমে চেয়ার টিবিলে বসে কাজ করে থাকেন তাহলে আপনার শরীরে পানির চাহিদা একরকম হবে আবার আপনি যদি সারাদিন বাইরে সূর্যের তাপে বাইরে কাজ করেন আপনার শরীরের পানি চাহিদা আরেক রকম হবে। তাই পানি খাওয়ার নিয়ম মেনে পানি খান।

খাবারের আগে পানি খান

এক গবেষনায় দেখা গেছে যারা খাবার আগে পানি খান তাদের পেটে গ্যাসের সমস্যা কম হয়, তাই খাওয়ার আগে পানি খাওয়ার অভ্যাস করুন।

এছাড়া খাওয়ার আগে পানি পান করলে আপনার ওজনও নিয়ন্ত্রনে থাকবে।

খাবার সাথে সাথে পানি খাবেন না

খাওয়ার সময় একই সাথে পানি খাবেন না। এতে পাকস্থলীতে এঞ্জাইমগুলো খাবারের সাথে সঠিক অনুপাতে মিশে হজম ক্রিয়া ব্যহত হতে পারে।

ঘুমের আগে সামান্য পানি পান করুন

ঘুমের আগে সামান্য পরিমান পানি খাবেন। এতে আপনি স্ট্রোকের বা হার্ট এটাকের হাত থেকে বেঁচে যেতে পারেন। আপনার যদি ঘুম নিয়ে সমস্যা থাকে, ঘুমের সমস্যা নিয়ে পড়ুন।

কফি বা অ্যালকোহল পানির চাহিদা মেটায় না

অনেকেই মনে করে থাকেন চা, কফি, অ্যালকোহল বা কোমল পানীয় শরীরে পানির চাহিদা মেটায়, কিন্তু না মনে রাখবেন কফি বা অ্যালকোহল কখনই পানির চাহিদা মেটায় না। কফি বা অ্যালকোহল শুধুই  প্রস্রাবের পরিমান বাড়ায় যা আপনার শরীরে কোন কাজে লাগেনা। তবে, চা কিছুটা পানির চাহিদা মেটায়।

পানি সমৃদ্ধ ফল বেশি খান

পানি সমৃদ্ধ ফল ও সবজি যেমন- ব্রকলি, গাজর, শসা, পিচ, পাম ও তরমুজ ইত্যাদি বেশি খান। এসব ফল ও সবজিতে শতকরা নব্বই ভাগের চেয়েও বেশি পানি থাকে। এ থেকে আপনি একই সাথে ভিটামিন ও মিনারেল দুইই পেতে পারেন।

কিভাবে বুঝবেন পানি কম খাওয়া হচ্ছে

প্রত্যেক পূর্ণ বয়স্ক মানষের সারাদিনে দুই থেকে আড়াই লিটার পানি পান করা উচিত। আপনার পানি পানের মাত্রা ঠিক আছে কিনা কিভাবে বুঝবেন। খুব সহজেই এটা সম্ভব। কিভাবে? আপনার প্রস্রাবের রঙ নজর রাখুন। যদি দেখেন আপনার প্রস্রাবের রঙ লালচে বা হলুদ তাহলেই বুঝবেন আপনার পানি পান কম হয়ে যাচ্ছে।

এছাড়া আপনার ঠোঁট যদি শুস্ক হয়ে যায় বুঝবেন আপনার শরীরে পানির প্রয়োজন হয়েছে। পানি খাওয়ার নিয়ম মানুন সুস্থ্য থাকুন।

পানি ঠান্ডা খাবেন নাকি গরম?

ঠান্ডা পানি পরিহার করুন। সবসময় স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি খাবেন, খুব ভাল হয় হালকা গরম বা উষ্ণ পানি পান করলে যা কিনা শরীরের তাপমাত্রার সাথে মানান সই।

আমাদের মস্তিস্কের অক্সিজেন প্রয়োজন কিন্তু মজার ব্যাপার হল এই অক্সজেন মস্তিস্ক শ্বাসযন্ত্রের থেকে নেয় না। মস্তিস্ক পানি নেয় পানি থেকে। আমাদের পান করা পানির ৪০ শতাংশই ব্যবহার করে পানি। আশা করি পানি পানের গুরুত্ব কেমন তা আপনি উপলব্ধি করতে পারছেন।

পানি স্বল্পতার কারনে শারীরিক সমস্যা

আমাদের শরীরে প্রয়োজনীয় পানির পরিমান মাত্র ২ শতাংশ কমে গেলেই ডিহাইড্রেশন হতে পারে। স্বল্প সময়ের জন্য স্মৃতিলোপ, অংক কষতে না পারা, সহয বিষয় বুঝতে না পারা, ছোট লেখা পড়তে না পারা, ঝাপসা দেখা ইত্যাদি ডিহাইড্রেশনের কারনেই হয়ে থাকে।

এরকম সমস্যা হলে দ্রুত পানি খান, বেশি সমস্যা হলে ডাক্তার দেখান। মনে রাখবেন, পরিমানমত পানি পান করলে মলাশয়ের ক্যান্সারের ঝুঁকি ৪৫%, স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি ৭৯%, ব্লাড ক্যান্সারের ঝুঁকি ৫০% কমে যায়। পানি খাওয়ার নিয়ম অনুযায়ী পানি পান করুন।

পানি খাওয়ার সুন্নাহ

পানি খাওয়া নিয়ে কম বেশি কিছু হাদিস আমরা সবাই জানি, তার পরও আমি মনে করিয়ে দিচ্ছি। পানি খাওয়ার ক্ষেত্রে এই সুন্নাহগুলো মেনে চলুন-

  • পানি দেখে নিন, ময়লা আছে কিনা।
  • পানি পানের শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়ুন।
  • ডান হাতে পানি পান করুন।
  • কখনও দাঁড়িয়ে পানি খাবেন না, বসে পানি পান করুন।
  • তিন ঢোকে পানি পান করুন, এক নিঃশ্বাসে পানি পান করবেন না।
  • পানির গ্লাসে নিঃশ্বাস ছাড়বেন না।
  • পানি খাওয়া শেষে আলামদুলিল্লাহ পড়ুন।

পানি খাওয়ার নিয়ম নিয়ে এই পোস্ট যদি আপনার উপকারে লাগে অবশ্যই নিয়ে কমেন্ট বক্সে আপনার ভাল লাগা জানিয়ে যেতে পারেন।

Previous articleগুগল এ সর্বাধিক সার্চ করা ১০০০ প্রশ্ন – “Most Asked Questions On Google”
Next articleপিপ ভ্যালু ক্যালকুলেটর – Pip value Calculator Online
যে ব্যর্থ সে অজুহাত দেখায়, যে সফল সে গল্প শোনায়। আমি অজুহাত নয় গল্প শোনাতে ভালবাসি। আসুন কিছু গল্প শুনি, নিজের গল্প অন্যকে শুনাই।